এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “নিরক্ষীয় বৃষ্টি অরণ্য অঞ্চলের প্রকৃতি উল্লেখ করো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। “নিরক্ষীয় বৃষ্টি অরণ্য অঞ্চলের প্রকৃতি উল্লেখ করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের দ্বিতীয় অধ্যায় “বায়ুমণ্ডল – আর্দ্রতা ও অধঃক্ষেপণ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

নিরক্ষীয় বৃষ্টি অরণ্য অঞ্চলের প্রকৃতি উল্লেখ করো।
নিরক্ষীয় বৃষ্টি অরণ্য অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য –
নিরক্ষরেখার উভয়পাশে 5°-10° অক্ষাংশে সারাবছর উষ্ণ ও আর্দ্র, ঋতুবৈচিত্র্যহীন জলবায়ুকে নিরক্ষীয় জলবায়ু বলে। নিরক্ষীয় বৃষ্টি অরণ্য অঞ্চল এই জলবায়ুর অন্তর্গত। এই জলবায়ুর বৈশিষ্ট্যগুলি নীচে আলোচনা করা হল।
উষ্ণতা সংক্রান্ত বৈশিষ্ট্য –
- বার্ষিক উষ্ণতা – সারাবছর উষ্ণতা অধিক এবং একই রকম হয়। গড় মাসিক উষ্ণতা 24°C-27°C এবং গড় বার্ষিক উষ্ণতা 26°C-28°C হয়।
- রাত্রিকালীন স্বল্প উষ্ণতা – সূর্যোদয়ের সময় উষ্ণতা থাকে 20°C যা বৃদ্ধি পেয়ে মধ্যাহ্নে সর্বোচ্চ হয় অর্থাৎ 38°C হয়। বিকেলে 29°C-34°C এবং রাত্রে 20°C-24°C হয়। তবে কখনও 15°C -এর নীচে নামে না। ফলে রাত্রিকালে শীত অনুভূত হয়। আবহাওয়া আরামদায়ক হয়। এজন্য রাতকে ক্রান্তীয় অঞ্চলের শীতকাল বলা হয়।
- শিশির ও কুয়াশা – ভোরের দিকে ভূপৃষ্ঠ শীতল হয়ে ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু ঘনীভূত হয়ে শিশির ও কুয়াশা সৃষ্টি হয়।
- অস্বস্তিকর আবহাওয়া – অত্যধিক উষ্ণতা, প্রায় নিশ্চল বায়ু, তীব্র আলো ও অত্যধিক আপেক্ষিক আর্দ্রতার জন্য বিকেল বেলায় আবহাওয়া গুমোট, অস্বস্তিকর ও অসহনীয় হয়ে পড়ে।
- উষ্ণতার দৈনিক ও বার্ষিক প্রসরতা – উষ্ণতার প্রসর খুবই কম। তবে বার্ষিক অপেক্ষা দৈনিক প্রসর 2-5 গুণ বেশি। বার্ষিক প্রসর 2°C-3°C এবং দৈনিক প্রসর 5°C-15°C হয়। তবে ক্রমশ উত্তর বা দক্ষিণে বার্ষিক প্রসর বৃদ্ধি পায়। আবার দ্বীপ ও উপকূলে খুবই কম হয়।
- ঋতুবৈচিত্র্যের অনুপস্থিতি – উচ্চ ও একই উষ্ণতা এবং উষ্ণতার স্বল্প প্রসরের জন্য কোনো ঋতু পরিবর্তন ঘটে না। সারাবছর আর্দ্র গ্রীষ্মকাল বিরাজ করে।
বায়ুচাপ ও বায়ুপ্রবাহ সংক্রান্ত বৈশিষ্ট্য –
- শক্তিশালী নিম্নচাপ বলয়ের সৃষ্টি – সারাবছর অধিক উষ্ণতা, অধিক আর্দ্রতা ও সর্বাধিক আবর্তন গতিবেগের জন্য এখানে স্থায়ী ও শক্তিশালী নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয় সৃষ্টি হয়েছে। গড় বায়ুচাপ 1009-1012 মিলিবার।
- আন্তঃক্রান্তীয় মিলন অঞ্চলের অবস্থান – ক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব আয়নবায়ু নিরক্ষরেখা বরাবর মিলিত হয়ে উত্তপ্ত হয় এবং ঊর্ধ্বগামী পরিচলন বায়ুস্রোত সৃষ্টি করে। তাই একে আন্তঃক্রান্তীয় মিলন অঞ্চল (ITCZ) বলে।
- শীতল সামুদ্রিক বায়ুর প্রাধান্য – দিনের বেলায় উপকূল অঞ্চলের সর্বত্র, 48-96 কিমি অভ্যন্তর পর্যন্ত শীতল সমুদ্রবায়ু প্রবাহিত হয়।
- বজ্র-বিদ্যুৎসহ বৃষ্টিপাত – মাঝে মধ্যে বজ্র, ঝড় ও বৃষ্টির সঙ্গে দমকা বায়ুর আগমন ঘটলে ভ্যাপসা গরমের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
- দুর্বল নিরক্ষীয় পশ্চিম বায়ু – সর্বত্র এক প্রকার দুর্বল নিরক্ষীয় পশ্চিমা বায়ু চলাচল করে যা জলভাগ অপেক্ষা স্থলভাগের ওপর বেশি শক্তিশালী হয়।
- স্থানীয় বায়ুর উপস্থিতি – আফ্রিকার গিনি উপকূলে রাত্রিবেলায় সাহারা অঞ্চল থেকে শুষ্ক ও মৃদু শীতল স্থানীয় বায়ু হারমাট্টান প্রবাহিত হয়।

মেঘাচ্ছন্নতা সংক্রান্ত বৈশিষ্ট্য –
- বর্ষব্যাপী মেঘাচ্ছন্নতা – বর্ষব্যাপী মেঘাচ্ছন্নতা এই জলবায়ুর একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। আকাশ প্রতিদিন গড়ে 50%-60% মেঘাচ্ছন্ন থাকে। সবসময় এক অনুজ্জ্বল ধূসর মেঘাচ্ছন্নতা থাকে। মেঘের পরিমাণ বিকেল ও সন্ধ্যায় বেশি এবং রাত ও সকালে কম হয়।
- কিউমুলাস মেঘের আধিক্য – ঊর্ধ্বগামী উষ্ণ ও আর্দ্র পরিচলন বায়ুস্রোতে প্রতিদিন দুপুর থেকে মেঘ জমতে শুরু করে এবং বিকেলবেলায় পুরো আকাশ জুড়ে গাঢ় কালো অতি উঁচু কিউমুলাস ও কিউমুলোনিম্বাস মেঘ সৃষ্টি হয়।
আর্দ্রতা –
উচ্চ উষ্ণতা, জলভাগের আধিক্য ও উচ্চ বাষ্পীভবন হারের জন্য বায়ুতে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ অনেক বেশি। আপেক্ষিক আর্দ্রতা অনেক বেশি। গড়ে 80-90 শতাংশ। ফলে ঘর্মাক্ত ও অসহনীয় আবহাওয়া সৃষ্টি হয়।
বৃষ্টিপাত –
- প্রবল বৃষ্টিপাত – জলভাগের আধিক্য ও লম্ব সূর্যকিরণের জন্য বায়ু জলীয়বাষ্পপূর্ণ, আর্দ্র ও হালকা হয়। ঊর্ধ্বগামী পরিচলন বায়ুস্রোতে বিকেলের দিকে গভীর মেঘ সৃষ্টি হয়ে প্রতিদিন 3-4 টার মধ্যে ঝড়, বজ্রবিদ্যুৎসহ মুষলধারায় প্রবল পরিচলন বৃষ্টিপাত হয়। তাই একে 4O’Clock Rain বলে। বৃষ্টিপাত অত্যন্ত ক্ষণস্থায়ী (30-90 মিনিট)।
- শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত – নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়ের আকর্ষণে আয়নবায়ু এখানে ছুটে আসে। আর্দ্র আয়নবায়ু তার গতিপথের আড়াআড়ি পর্বতে বাধা পেয়ে প্রতিবাত ঢালে প্রচুর শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত ঘটায়। যথা – আফ্রিকার ক্যামেরুন পার্বত্য অঞ্চলে বার্ষিক 1000 সেমি বৃষ্টি হয়।
- পুবালি তরঙ্গের আবির্ভাব ও ঘূর্ণিবৃষ্টি – দুর্বল ঘূর্ণবাত ও পুবালি তরঙ্গের আবির্ভাবে দীর্ঘস্থায়ী প্রবল ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত সংঘটিত হয়।
- বৃষ্টিবলয়ের স্থান পরিবর্তন – বৃষ্টিপাত সূর্যের অনুগামী হয়। সূর্যের উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়নের সঙ্গে ITCZ সামান্য উত্তর ও দক্ষিণে সরে যাওয়ায় বৃষ্টিবলয়ও স্থান পরিবর্তন করে।
- বৃষ্টিপাতের অসম বণ্টন – বৃষ্টিপাতের বণ্টন সর্বত্র সমান নয়। পেরুর ইকুইটসে গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ প্রায় 261 সেমি। কিন্তু আকাসায় এর পরিমাণ প্রায় 365 সেমি। আফ্রিকায় ক্যামেরুন পর্বতের পাদদেশে পরিমাণ প্রায় 1000 সেমি বৃষ্টিপাত হয়। স্থলভাগ অপেক্ষা জলভাগে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
নিরক্ষীয় বৃষ্টি অরণ্য অঞ্চল কোথায় অবস্থিত?
নিরক্ষরেখার উভয় পাশে 5°-10° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশে এই অরণ্য অঞ্চল বিস্তৃত। যেমন — আমাজন অববাহিকা (দক্ষিণ আমেরিকা), কঙ্গো অববাহিকা (আফ্রিকা), ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার কিছু অংশ।
নিরক্ষীয় বৃষ্টি অরণ্য অঞ্চলের জলবায়ু কেমন?
1. উষ্ণ ও আর্দ্র (সারাবছর গড় তাপমাত্রা 26°C-28°C)।
2. ঋতুবৈচিত্র্যহীন (কোনো শীতকাল নেই)।
3. প্রতিদিন বজ্রবিদ্যুৎসহ বৃষ্টিপাত হয় (বিকেল 3-4টার দিকে)।
4. আপেক্ষিক আর্দ্রতা 80%-90%।
এই অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের ধরন কেমন?
1. প্রবল পরিচলন বৃষ্টিপাত (প্রতিদিন বিকেলে)।
2. শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত (পর্বতের প্রতিবাত ঢালে, যেমন ক্যামেরুনে 1000 সেমি বৃষ্টিপাত)।
3. ঘূর্ণিবৃষ্টি (পুবালি তরঙ্গ ও দুর্বল ঘূর্ণবাতের কারণে)।
নিরক্ষীয় অরণ্যে গাছপালা ও উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য কী?
1. সবুজ চিরহরিৎ বৃক্ষ (সারাবছর পাতা ঝরে না)।
2. বহুস্তরবিশিষ্ট বনভূমি (উঁচু গাছ, মাঝারি গাছ, লতা-গুল্ম ইত্যাদি)।
3. ব্যাপক জৈববৈচিত্র্য (অসংখ্য প্রজাতির গাছ, পোকামাকড়, পাখি ও প্রাণী)।
এই অঞ্চলে বায়ুচাপ ও বায়ুপ্রবাহ কেমন?
1. স্থায়ী নিম্নচাপ বলয় (আন্তঃক্রান্তীয় মিলন অঞ্চল বা ITCZ -এর প্রভাবে)।
2. দুর্বল নিরক্ষীয় পশ্চিমা বায়ু প্রবাহিত হয়।
3. সমুদ্রবায়ুর প্রভাব বেশি (উপকূলীয় অঞ্চলে)।
নিরক্ষীয় অরণ্যে মেঘাচ্ছন্নতা কেমন থাকে?
1. সারাবছর আকাশ মেঘাচ্ছন্ন (50%-60% মেঘে ঢাকা)।
2. কিউমুলোনিম্বাস মেঘ বিকেলে সৃষ্টি হয়, যা বজ্রবৃষ্টি ঘটায়।
এই অঞ্চলে উষ্ণতার প্রসর কত?
1. বার্ষিক উষ্ণতার প্রসর মাত্র 2°C-3°C (সারাবছর একই রকম উষ্ণতা)।
2. দৈনিক প্রসর 5°C-15°C (রাতে কিছুটা শীতল, দিনে গরম)।
নিরক্ষীয় অরণ্যকে “পৃথির ফুসফুস” বলা হয় কেন?
এই অরণ্য প্রচুর পরিমাণে কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে ও অক্সিজেন উৎপন্ন করে, যা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ভারসাম্য রক্ষা করে।
এই অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের বণ্টন সমান নয় কেন?
1. ভূপ্রকৃতি (পর্বতের অবস্থান, যেমন ক্যামেরুনে বেশি বৃষ্টি)।
2. সূর্যের অবস্থান (ITCZ -এর সামান্য উত্তর-দক্ষিণ সরণ)।
3. সমুদ্র থেকে দূরত্ব (উপকূলীয় অঞ্চলে বেশি বৃষ্টি)।
নিরক্ষীয় অরণ্য ধ্বংসের প্রধান কারণ কী?
1. বন উজাড় (কৃষি, শিল্প ও বসতি সম্প্রসারণের জন্য)।
2. জলবায়ু পরিবর্তন (বৃষ্টিপাতের ধরন পরিবর্তন)।
3. খনিজ সম্পদ উত্তোলন (তেল, সোনা, কাঠের জন্য বন ধ্বংস)।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “নিরক্ষীয় বৃষ্টি অরণ্য অঞ্চলের প্রকৃতি উল্লেখ করো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “নিরক্ষীয় বৃষ্টি অরণ্য অঞ্চলের প্রকৃতি উল্লেখ করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের দ্বিতীয় অধ্যায় “বায়ুমণ্ডল – আর্দ্রতা ও অধঃক্ষেপণ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন