নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ সম্পর্কে লেখো

Rahul

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “নদীর ক্ষয়কাজের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপগুলি আলোচনা করো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। “নদীর ক্ষয়কাজের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপগুলি আলোচনা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের প্রথম অধ্যায় “বহির্জাত প্রক্রিয়া ও তার দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ – নদীর বিভিন্ন কাজ ও তাদের সংশ্লিষ্ট ভূমিরূপ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ সম্পর্কে লিখো

নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ

নদী তার প্রবাহের ফলে ভূমির উপর বিভিন্ন ধরনের ক্ষয়কার্য করে। এই ক্ষয়কার্যের ফলে বিভিন্ন ধরনের ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়। নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ গুলি হলো –

‘I’ আকৃতির উপত্যকা বা ক্যানিয়ন

শুষ্ক বা প্রায়-শুষ্ক পার্বত্য অঞ্চলে নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে ‘I’ আকৃতির উপত্যকা সৃষ্টি হয়। এই অঞ্চলে বৃষ্টিপাত খুব কম হওয়ায় নদীর পার্শ্বক্ষয় (দুই পাশের ক্ষয়) প্রায় হয় না বললেই চলে। কিন্তু, ভূমির ঢাল অত্যন্ত বেশি হওয়ায় নদী প্রবল বেগে শুধু নিচের দিকেই ক্ষয় করে, যাকে নিম্নক্ষয় বলা হয়। এর ফলে উপত্যকাটি সংকীর্ণ ও অত্যন্ত গভীর হয়ে ইংরেজি ‘I’ অক্ষরের আকার ধারণ করে।

খুব গভীর ‘I’ আকৃতির উপত্যকাকে ক্যানিয়ন (Canyon) বলা হয়। যেমন – মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো নদীর গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন।

'I' আকৃতির উপত্যকা

V’ আকৃতির উপত্যকা বা গিরিখাত

আর্দ্র পার্বত্য অঞ্চলে নদীর পার্বত্য প্রবাহে ‘V’ আকৃতির উপত্যকা গঠিত হয়। এখানে ভূমির ঢাল বেশি হওয়ায় নদী শক্তিশালী নিম্নক্ষয়ের মাধ্যমে উপত্যকাকে গভীর করে। একই সাথে, প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে আবহবিকার, পুঞ্জিত ক্ষয় এবং ধসের মাধ্যমে উপত্যকার দুই পাড়ের শিলাস্তর ক্রমাগত ক্ষয়প্রাপ্ত ও চওড়া হতে থাকে। নিম্নক্ষয়ের ফলে গভীরতা এবং পার্শ্বক্ষয়ের ফলে প্রস্থ—উভয়ই বাড়তে থাকায় উপত্যকাটি ইংরেজি ‘V’ অক্ষরের আকৃতি লাভ করে।

অত্যন্ত গভীর ও সংকীর্ণ ‘V’ আকৃতির উপত্যকাকে গিরিখাত (Gorge) বলা হয়। যেমন – নেপালের কালীগণ্ডকী নদীর গিরিখাত।

V - আকৃতির উপত্যকা

জলপ্রপাত (Waterfall)

নদীর গতিপথে আড়াআড়িভাবে কঠিন ও কোমল শিলাস্তর পরপর অবস্থান করলে, নদীর স্রোতে কোমল শিলাস্তরটি কঠিন শিলাস্তরের থেকে অনেক দ্রুত ক্ষয় পায়। এর ফলে দুই শিলাস্তরের মধ্যে উচ্চতার পার্থক্য সৃষ্টি হয় এবং নদীর জল খাড়া ঢাল বরাবর প্রবল বেগে নীচে পড়তে থাকে। ওপর থেকে নীচে জল পড়ার এই প্রবাহকেই জলপ্রপাত (Waterfall) বলা হয়।

উদাহরণ – ভেনেজুয়েলার কারাও নদীর শাখা পথে সৃষ্ট অ্যাঞ্জেল ফলস্ (Angel Falls) পৃথিবীর উচ্চতম জলপ্রপাত।

অনুভূমিক শিলাস্তরে (কঠিন ও কোমল) জলপ্রপাত সৃষ্টি

পটহোল বা মন্থকূপ (Pothole)

পার্বত্য প্রবাহে নদীর প্রবল স্রোতের সঙ্গে বাহিত শিলাখণ্ড বা পাথরখণ্ডগুলি নদীখাতে বাধার সম্মুখীন হলে সেখানে ঘুরতে থাকে। অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় ক্রমাগত ঘুরতে থাকার ফলে নদীগর্ভে মসৃণ ও গোলাকার গর্তের সৃষ্টি হয়। এই গর্তগুলিকে পটহোল (Pothole) বা মন্থকূপ বলা হয়।

উদাহরণ – তিস্তা নদীর পার্বত্য প্রবাহে এবং আফ্রিকার ব্লাইড নদীতে এমন অনেক মন্থকূপ দেখা যায়।

নদীর বুকে ছোটো ছোটো গর্ত বা 'পটহোল'

অন্তর্বদ্ধ শৈলশিরা (Interlocking Spur)

পার্বত্য অঞ্চলে নদীর গতিপথে কঠিন শিলা দ্বারা গঠিত পাহাড় বা শৈলশিরা বাধা সৃষ্টি করলে, নদী সেটিকে সরাসরি ক্ষয় না করে পাশ কাটিয়ে এঁকেবেঁকে প্রবাহিত হয়। এর ফলে উপত্যকার বিপরীত দিকে অবস্থিত শৈলশিরাগুলিকে দূর থেকে দেখলে মনে হয় যেন তারা একে অপরের মধ্যে প্রবিষ্ট হয়ে একটি শৃঙ্খল তৈরি করেছে। নদীর গতিপথে সৃষ্ট এই ভূমিরূপকে অন্তর্বদ্ধ শৈলশিরা (Interlocking Spur) বলে।

অন্তর্বদ্ধ শৈলশিরা

কর্তিত শৈলশিরা (Truncated Spur)

সাধারণত, একটি নদী উপত্যকার মধ্যে দিয়ে যখন হিমবাহ প্রবাহিত হয়, তখন সেটি অন্তর্বদ্ধ শৈলশিরার প্রান্তগুলিকে সরাসরি কেটে বা ক্ষয় করে সোজা পথে এগিয়ে যায়। এর ফলে শৈলশিরাগুলির সম্মুখভাগ অত্যন্ত খাড়া ও চ্যাপ্টা প্রকৃতির হয়ে যায়। হিমবাহ দ্বারা কর্তিত বা কাটা এই শৈলশিরাগুলিকে কর্তিত শৈলশিরা (Truncated Spur) বলা হয়।

উদাহরণ – হিমালয়ের বিভিন্ন হিমবাহ উপত্যকায় এই ধরনের কর্তিত শৈলশিরা দেখা যায়।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “নদীর ক্ষয়কাজের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপগুলি আলোচনা করো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “নদীর ক্ষয়কাজের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপগুলি আলোচনা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের প্রথম অধ্যায় “বহির্জাত প্রক্রিয়া ও তার দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ – নদীর বিভিন্ন কাজ ও তাদের সংশ্লিষ্ট ভূমিরূপ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

চুম্বকের উপর তড়িৎপ্রবাহের ক্রিয়া দেখাতে ওরস্টেডের পরীক্ষাটি বর্ণনা করো।

চুম্বকের উপর তড়িৎপ্রবাহের ক্রিয়া দেখাতে ওরস্টেডের পরীক্ষাটি বর্ণনা করো।

বৈদ্যুতিক ফিউজ তারের কার্যনীতি ব্যাখ্যা করো।

বৈদ্যুতিক ফিউজ তারের কার্যনীতি ব্যাখ্যা করো।

একটি বৈদ্যুতিক বাতির বর্ণনা দাও।

একটি বৈদ্যুতিক বাতির বর্ণনা দাও।

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

চুম্বকের উপর তড়িৎপ্রবাহের ক্রিয়া দেখাতে ওরস্টেডের পরীক্ষাটি বর্ণনা করো।

বৈদ্যুতিক ফিউজ তারের কার্যনীতি ব্যাখ্যা করো।

একটি বৈদ্যুতিক বাতির বর্ণনা দাও।

ইলেকট্রিক ইস্ত্রির বর্ণনা দাও। ইলেকট্রিক ইস্ত্রি কীভাবে কাজ করে?

ওহমের সূত্রের সীমাবদ্ধতা লেখো।