অধঃক্ষেপণ কাকে বলে? অধঃক্ষেপণের রূপভেদ গুলি আলোচনা করো।

Rahul

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “অধঃক্ষেপণ কাকে বলে এর রূপভেদ গুলি আলোচনা করো। শিশির, কুয়াশা প্রভৃতি অধঃক্ষেপণ নয় কেন?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। “অধঃক্ষেপণ কাকে বলে এর রূপভেদ গুলি আলোচনা করো। শিশির, কুয়াশা প্রভৃতি অধঃক্ষেপণ নয় কেন?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের দ্বিতীয় অধ্যায় “বায়ুমণ্ডল – আর্দ্রতা ও অধঃক্ষেপণ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

শিশির, কুয়াশা প্রভৃতি অধঃক্ষেপণ নয় কেন
শিশির, কুয়াশা প্রভৃতি অধঃক্ষেপণ নয় কেন

অধঃক্ষেপণ কাকে বলে? অধঃক্ষেপণের রূপভেদ গুলি আলোচনা করো।

অধঃক্ষেপণ – বায়ুমণ্ডলে অবস্থিত জলীয় বাষ্প ঘনীভূত বা জমে সৃষ্ট জলকণা বা বরফকণা যখন পৃথিবীর অভিকর্ষজ টানে তরল বা কঠিন অবস্থায় ভূপৃষ্ঠে পতিত হয়, তখন তাকে অধঃক্ষেপণ (Precipitation) বলে।

অধঃক্ষেপণের পদ্ধতি

  1. বায়ুমণ্ডলের জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলকণায় পরিণত হয়।
  2. এই জলকণাগুলি একত্রিত হয়ে মেঘ গঠন করে।
  3. মেঘের মধ্যে জলকণাগুলি পরস্পরের সাথে সংঘর্ষিত ও সংযুক্ত হয়ে ক্রমশ বৃহদাকার হয়।
  4. এই বৃহদাকার জলকণাগুলি বায়ুতে ভাসমান থাকতে পারে না।
  5. অবশেষে এগুলি পৃথিবীর অভিকর্ষজ টানে ভূপৃষ্ঠের দিকে পতিত হয়। এই পতনই অধঃক্ষেপণের বিভিন্ন রূপে (যেমন বৃষ্টিপাত, তুষারপাত, শিলাবৃষ্টি ইত্যাদি) প্রকাশ পায়।

অধঃক্ষেপণের রূপভেদ

  1. বৃষ্টিপাত (Rain)
    • মেঘের জলকণাগুলি সংযুক্ত হয়ে যথেষ্ট বড় (সাধারণত 0.5 মিমি বা তার বেশি ব্যাসবিশিষ্ট) ও ভারী হয়ে গেলে তা তরল অবস্থায় ভূপৃষ্ঠে পতিত হয়। একে বৃষ্টিপাত বলে।
    • এটি অধঃক্ষেপণের সর্বাধিক পরিচিত ও সাধারণ রূপ।
  2. গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি / সূক্ষ্মবৃষ্টি (Drizzle)
    • মেঘ থেকে অত্যন্ত ক্ষুদ্রাকার (সাধারণত 0.5 মিমির চেয়ে কম ব্যাসবিশিষ্ট), অভিন্ন আকারের জলকণা ভূপৃষ্ঠে ধীরে ধীরে ও অবিচ্ছিন্নভাবে পতিত হলে তাকে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি বা সূক্ষ্মবৃষ্টি বলে।
    • এই জলকণাগুলি এতই হালকা যে বাতাসে কিছুক্ষণ ভেসেও থাকতে পারে।
  3. তুষারপাত (Snow)
    • যখন বায়ুমণ্ডলের উঁচু স্তরে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের (0° সেলসিয়াস) নিচে নেমে যায়, তখন জলীয় বাষ্প সরাসরি জমে ক্ষুদ্র বরফ স্ফটিক বা তুষারকণায় পরিণত হয় (এই প্রক্রিয়াকে ঊর্ধ্বপাতন বলে)।
    • এই বরফ স্ফটিক/তুষারকণাগুলি একত্রিত হয়ে বৃহদাকার তুষারপাতের আকারে ভূপৃষ্ঠে পতিত হলে তাকে তুষারপাত বলে।
    • এটি শীতপ্রধান অঞ্চল ও উচ্চ পার্বত্য এলাকায় বেশি দেখা যায়।
  4. শিলাবৃষ্টি (Hail)
    • এটি সাধারণত শক্তিশালী ঊর্ধ্বমুখী বায়ুপ্রবাহযুক্ত ঘন কুমুলোনিম্বাস মেঘে ঘটে।
    • মেঘের নিচের দিকের জলকণা ঊর্ধ্বমুখী বায়ুপ্রবাহে উপরের দিকে উৎক্ষিপ্ত হয়, যেখানে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের অনেক নিচে থাকে। সেখানে জলকণাগুলি দ্রুত জমে বরফে পরিণত হয়।
    • এই বরফের গোলক বা শিলা আবার নিচের দিকে নামতে থাকে, পথে আরও জলকণার সংস্পর্শে আসে, যা তার গায়ে জমে শিলার আকার বাড়ায়। এভাবে একাধিকবার ঊর্ধ্বে ওঠা-নামার পর শিলার টুকরোগুলি যখন এত ভারী হয়ে যায় যে ঊর্ধ্বমুখী বায়ুপ্রবাহ আর ধরে রাখতে পারে না, তখন সেগুলি ভূপৃষ্ঠে পতিত হয়। একেই শিলাবৃষ্টি বলে।
    • শিলার টুকরোগুলি গোলাকার বা অনিয়মিত আকৃতির এবং প্রায়ই বেশ বড় (কয়েক মিমি থেকে কয়েক সেমি) হতে পারে।
  5. স্লিট / কর্কশ বৃষ্টি (Sleet)
    • যখন উপরের বায়ুমণ্ডল স্তরে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে থাকে, কিন্তু ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি বায়ুস্তরের তাপমাত্রা হিমাঙ্কের উপরে থাকে, তখন ঘটে।
    • উপরে পড়ন্ত তুষারকণা বা বরফকণা ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি অপেক্ষাকৃত উষ্ণ বায়ুস্তর ভেদ করার সময় আংশিক গলে জলকণায় পরিণত হয়, কিন্তু সম্পূর্ণ গলে তরল অবস্থায় আসতে পারে না।
    • ফলে ভূপৃষ্ঠে পতিত হয় স্বচ্ছ বরফকণা ও জলের মিশ্রণ বা আংশিক গলা বরফকণা (গলিত তুষার) হিসেবে। একে স্লিট বা কর্কশ বৃষ্টি বলে। এটি পড়ার সময় কর্কশ শব্দ করে।

শিশির, কুয়াশা প্রভৃতি অধঃক্ষেপণ নয় কেন?

শিশির, কুয়াশা প্রভৃতি অধঃক্ষেপণ নয়, কারণ –

বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত জলীয়বাষ্প ঊর্ধ্বাকাশে অনুকূল পরিবেশে শীতল হলে ঘনীভূত হয়ে কঠিন বা তরলাকারে মাধ্যাকর্ষণ বলের টানে ভূপৃষ্ঠে অধঃক্ষিপ্ত হলে তাকে অধঃক্ষেপণ বলে। সুতরাং অধঃক্ষেপণ সংঘটিত হতে জলীয়বাষ্পকে কয়েকটি পর্যায় অতিক্রম করতে হয়। যেমন – জলীয়বাষ্পের উৎপত্তি, ঊর্ধ্বগমন, শীতলীভবন, সম্পৃক্তকরণ, ঘনীভবন এবং অবশেষে জলকণার অধঃক্ষেপণ। শিশির ও কুয়াশা সৃষ্টির ক্ষেত্রে এই পর্যায়গুলি ঘটে না। এক্ষেত্রে জলীয়বাষ্প ঊর্ধ্বগামী হয়ে শীতল বা ঘনীভূত হয় না, আবার ঘনীভূত জলকণা মাধ্যাকর্ষণ বলের টানে ভূপৃষ্ঠে অধঃক্ষিপ্তও হয় না। জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হয়ে গাছের পাতা বা ঘাসের ডগায় শিশির আকারে জমে এবং কুয়াশা বাতাসে ভেসে বেড়ায়। তাই এদের অধঃক্ষেপণের অন্তর্ভুক্ত করা যায় না।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

অধঃক্ষেপণ কাকে বলে?

পৃথিবীর অভিকর্ষের টানে বায়ুমণ্ডল থেকে জলকণা বা বরফকণা তরল বা কঠিন অবস্থায় ভূপৃষ্ঠে নেমে আসলে তাকে অধঃক্ষেপণ (Precipitation) বলে।

অধঃক্ষেপণ কীভাবে ঘটে?

1. মেঘে থাকা ক্ষুদ্র জলকণাগুলো একত্রিত হয়ে বড় জলকণা বা বরফকণায় পরিণত হয়।
2. এগুলি বাতাসে ভেসে থাকতে না পেরে অভিকর্ষজ বলের প্রভাবে ভূপৃষ্ঠে পড়ে।

অধঃক্ষেপণের প্রধান রূপভেদগুলি কী কী?

অধঃক্ষেপণের প্রধান রূপগুলি হলো —
1. বৃষ্টিপাত (Rainfall)।
2. গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি (Drizzle)।
3. তুষারপাত (Snowfall)।
4. শিলাবৃষ্টি (Hailstorm)।
5. স্লিট (Sleet)।

তুষারপাত কাকে বলে?

শীতল অঞ্চলে জলীয় বাষ্প হিমাঙ্কের নিচে তাপমাত্রায় সরাসরি বরফে পরিণত হয়ে ভূপৃষ্ঠে পড়লে তাকে তুষারপাত বলে।

শিলাবৃষ্টি কীভাবে সৃষ্টি হয়?

ঊর্ধ্বমুখী বায়ুর প্রভাবে মেঘের জলকণা উপরে উঠে জমে বরফের টুকরো (শিলা) তৈরি করে। পরে তা বৃষ্টির সাথে ভূপৃষ্ঠে পড়লে শিলাবৃষ্টি হয়।

স্লিট কী?

জলকণা ও তুষারকণার মিশ্রিত রূপকে স্লিট বলে। এটি সাধারণত শীতকালে দেখা যায়।

শিশির ও কুয়াশাকে অধঃক্ষেপণ বলা হয় না কেন?

1. শিশির ও কুয়াশা অধঃক্ষেপণ নয়, কারণ এগুলির জন্য জলীয় বাষ্পের ঊর্ধ্বগমন ও ঘনীভবন প্রয়োজন হয় না।
2. শিশির ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বস্তুতে জমে, আর কুয়াশা বাতাসে ভেসে থাকে। এগুলি মাধ্যাকর্ষণ দ্বারা পতিত হয় না।

অধঃক্ষেপণের জন্য কী কী শর্ত প্রয়োজন?

1. বায়ুতে জলীয় বাষ্পের উপস্থিতি।
2. বায়ুর ঊর্ধ্বগমন ও শীতলীকরণ।
3. ঘনীভবনের মাধ্যমে জলকণা বা বরফকণা তৈরি।
4. কণাগুলির আকারে বৃদ্ধি ও ভারী হয়ে পতন।

অধঃক্ষেপণের গুরুত্ব কী?

1. মিষ্টি জলের প্রধান উৎস।
2. কৃষিকাজ, নদী ও ভূগর্ভস্থ জলপূর্ণ করে।
3. প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করে।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “অধঃক্ষেপণ কাকে বলে এর রূপভেদ গুলি আলোচনা করো। শিশির, কুয়াশা প্রভৃতি অধঃক্ষেপণ নয় কেন?” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “অধঃক্ষেপণ কাকে বলে এর রূপভেদ গুলি আলোচনা করো। শিশির, কুয়াশা প্রভৃতি অধঃক্ষেপণ নয় কেন?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের দ্বিতীয় অধ্যায় “বায়ুমণ্ডল – আর্দ্রতা ও অধঃক্ষেপণ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

সক্রিয় সেনসর ও নিষ্ক্রিয় সেনসর বলতে কী বোঝো

সক্রিয় সেনসর ও নিষ্ক্রিয় সেনসর বলতে কী বোঝো? সক্রিয় সেনসর ও নিষ্ক্রিয় সেনসরের মধ্যে পার্থক্য

জিওস্টেশনারি ও সান-সিনক্রোনাস উপগ্রহ বলতে কী বোঝো

জিওস্টেশনারি ও সান-সিনক্রোনাস উপগ্রহ কী? জিওস্টেশনারি ও সান-সিনক্রোনাস উপগ্রহের মধ্যে পার্থক্য

ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র ও উপগ্রহ চিত্র বলতে কী বোঝো

ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র ও উপগ্রহ চিত্র কী? ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র ও উপগ্রহ চিত্রের পার্থক্য

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

তোমার জীবনের একটি স্মরণীয় অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

একটি গ্রামের ভ্রমণের অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

অরণ্য ভ্রমণের অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

র‍্যাগিং ও ছাত্রসমাজ – প্রবন্ধ রচনা

আলোর প্রতিসরণ কাকে বলে? প্রতিসরণের সূত্রসমূহ