এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “ওজোনোস্ফিয়ার ও আয়নোস্ফিয়ার কাকে বলে? ওজোনোস্ফিয়ার ও আয়নোস্ফিয়ারের পার্থক্য লেখো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। “ওজোনোস্ফিয়ার ও আয়নোস্ফিয়ার কাকে বলে? ওজোনোস্ফিয়ার ও আয়নোস্ফিয়ারের পার্থক্য লেখো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের দ্বিতীয় অধ্যায় “বায়ুমণ্ডল – উপাদান ও উষ্ণতার ভিত্তিতে বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

ওজোনোস্ফিয়ার ও আয়নোস্ফিয়ার কাকে বলে?
ওজোনোস্ফিয়ার –
ওজোন স্তর বা ওজোনোস্ফিয়ার – স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের 20-35 কিমি উচ্চতায় অতিবেগুনি রশ্মির উপস্থিতিতে দুটি অনুক্রমিক আলোক-রাসায়নিক বিক্রিয়ায় সবচেয়ে বেশি ঘনত্বযুক্ত যে গ্যাসের আস্তরণ, সৃষ্টি হয়েছে তা ওজোন স্তর বা Ozonosphere নামে পরিচিত।
গুরুত্ব –
- এই স্তর সূর্য থেকে আগত তিনটি (UV- A, B, C) ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মিকে শোষণ করে জীবজগৎকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে।
- এই স্তর ভূপৃষ্ঠ থেকে বিকিরিত দীর্ঘ তরঙ্গের অবলোহিত রশ্মির বিকিরণে বাধা দিয়ে বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতার ভারসাম্য বজায় রাখে।
আয়নোস্ফিয়ার –
আয়নোস্ফিয়ার (Ionosphere) – মেসোপজের ঊর্ধ্বে বায়ুমণ্ডলের চতুর্থ স্তরটিকে আয়নোস্ফিয়ার বলে।
বিস্তার – মেসোপজের ঊর্ধ্বে অর্থাৎ ভূপৃষ্ঠের 30 কিমি উচ্চতা থেকে 500 কিমি উচ্চতার মধ্যবর্তী অংশে এই স্তরটি অবস্থিত।
বিশেষত্ব –
- এই স্তরে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উষ্ণতা দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
- বায়ুমণ্ডলের সর্বাধিক উষ্ণতা এই স্তরে দেখা যায় তাই একে থার্মোস্ফিয়ার বলা হয়।
- এই স্তরে বস্তুকণা আয়নিত অবস্থায় থাকে বলে বেতার তরঙ্গ এখান থেকে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে পুনরায় পৃথিবীতে ফিরে আসে এবং বেতার সংযোগ ঘটায়। আয়নোস্ফিয়ারের 90-160 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত অঞ্চলটি ‘কেনেলি-হেভিসাইড’ স্তর নামে পরিচিত।
ওজোনোস্ফিয়ার ও আয়নোস্ফিয়ারের পার্থক্য লেখো।
ওজোনোস্ফিয়ার ও আয়নোস্ফিয়ারের মধ্যে পার্থক্য –
বিষয় | ওজোনোস্ফিয়ার | আয়নোস্ফিয়ার |
সংজ্ঞা | স্ট্যাটোস্ফিয়ারের 20-35 কিমি উচ্চতায় ওজোন গ্যাস সমৃদ্ধ স্তরকে ওজোনোস্ফিয়ার বলে। | মেসোস্ফিয়ারের ওপরে 80-500 কিমি উচ্চতার মধ্যবর্তী অংশে অবস্থিত বায়ুমণ্ডলীয় স্তরকে আয়নোস্ফিয়ার বলে। |
অবস্থান | স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের নিম্নাংশে অবস্থিত। | মেসোস্ফিয়ারের ওপরে অবস্থিত। |
স্তর | ওজোন গ্যাসের সর্বাধিক ঘনত্বযুক্ত স্তর। | ঋণাত্মক (−) ও ধনাত্মক (+) আয়নের বৈশিষ্ট্যযুক্ত বায়ুমণ্ডলের চতুর্থ স্তর। |
বিস্তার | 25-30 কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত। | ঊর্ধ্বাকাশে 85-500 কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত। |
গুরুত্ব | সূর্য থেকে আগত ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মিকে শোষণ করে জীবকুলকে রক্ষা করে। | এই স্তরে বেতার তরঙ্গ প্রতিফলিত হয়ে ভূপৃষ্ঠে ফিরে আসে এবং তড়িতাহত অণুর চৌম্বক বিক্ষেপে সুমেরু ও কুমেরু মেরুজ্যোতি সৃষ্টি হয়। |
অপর নাম | একে প্রাকৃতিক সৌরপর্দা বা পৃথিবীর রক্ষাকবচ বলা হয়। | মেসোপজের 500 কিমি ঊর্ধ্বে উষ্ণতা দ্রুত বৃদ্ধি পায় বলে একে থার্মোস্ফিয়ারও বলা হয়। |
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
ওজোনোস্ফিয়ার কি?
স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের 20-35 কিমি উচ্চতায় অবস্থিত ওজোন (O₃) গ্যাসের ঘন স্তরকে ওজোনোস্ফিয়ার বলে। এটি সূর্যের ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি (UV) শোষণ করে।
ওজোন স্তরের প্রধান কাজ কি?
1. UV – A, UV – B ও UV – C রশ্মি শোষণ করে জীবজগৎকে রক্ষা করে।
2. ভূপৃষ্ঠের তাপীয় ভারসাম্য বজায় রাখে।
ওজোন স্তর ক্ষয়ের কারণ কি?
CFC (ক্লোরোফ্লুরোকার্বন), হ্যালন, নাইট্রোজেন অক্সাইড ইত্যাদি রাসায়নিক পদার্থ ওজোন স্তর ধ্বংস করে।
ওজোন স্তর ধ্বংসের ফলে কি হয়?
1. ত্বকের ক্যান্সার, চোখের ক্ষতি (ক্যাটারাক্ট)।
2. উদ্ভিদের বৃদ্ধি ব্যাহত।
3. জলবায়ু পরিবর্তন।
আয়নোস্ফিয়ার কি?
মেসোস্ফিয়ারের উপরে 80-500 কিমি উচ্চতায় অবস্থিত বায়ুমণ্ডলের স্তর যেখানে গ্যাসীয় অণুগুলো আয়নিত অবস্থায় থাকে।
আয়নোস্ফিয়ারের প্রধান বৈশিষ্ট্য কি?
1. বেতার তরঙ্গ প্রতিফলিত করে (রেডিও যোগাযোগে সাহায্য করে)।
2. থার্মোস্ফিয়ার নামেও পরিচিত (তাপমাত্রা 1500°C পর্যন্ত)।
3. মেরুজ্যোতি (অরোরা) সৃষ্টি করে।
কেনেলি-হেভিসাইড স্তর কি?
আয়নোস্ফিয়ারের 90-160 কিমি উচ্চতায় অবস্থিত একটি স্তর যা রেডিও তরঙ্গ প্রতিফলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
আয়নোস্ফিয়ার কিভাবে যোগাযোগ ব্যবস্থায় সাহায্য করে?
এই স্তর থেকে বেতার তরঙ্গ প্রতিফলিত হয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসে, ফলে দূরবর্তী যোগাযোগ সম্ভব হয়।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “ওজোনোস্ফিয়ার ও আয়নোস্ফিয়ার কাকে বলে? ওজোনোস্ফিয়ার ও আয়নোস্ফিয়ারের পার্থক্য লেখো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “ওজোনোস্ফিয়ার ও আয়নোস্ফিয়ার কাকে বলে? ওজোনোস্ফিয়ার ও আয়নোস্ফিয়ারের পার্থক্য লেখো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের দ্বিতীয় অধ্যায় “বায়ুমণ্ডল – উপাদান ও উষ্ণতার ভিত্তিতে বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।