পাবনা কৃষক বিদ্রোহ কী কারণে ঘটেছিল? পাবনা কৃষক আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য

Gopi

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “পাবনা কৃষক বিদ্রোহ কী কারণে ঘটেছিল? পাবনা কৃষক আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো। নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “পাবনা কৃষক বিদ্রোহ কী কারণে ঘটেছিল? পাবনা কৃষক আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের তৃতীয় অধ্যায় “প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ – বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

পাবনা কৃষক বিদ্রোহ কী কারণে ঘটেছিল? পাবনা কৃষক আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।

পাবনা কৃষক বিদ্রোহ কী কারণে ঘটেছিল?

1870 -এর দশকে সংঘটিত পাবনার কৃষক বিদ্রোহের মূল কারণ ছিল দুটি। প্রথমত, জমিদারদের দ্বারা খাজনার হার অতিরিক্ত বৃদ্ধি করা হয়, যা সাধারণ কৃষকদের উপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করে। দ্বিতীয়ত, রায়তদের (কৃষকদের) দখলীস্বত্ব, অর্থাৎ তাদের জমির উপর অধিকার, জমিদাররা অস্বীকার করতে শুরু করে। এই দুই কারণ একত্রে কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ ছড়িয়ে দেয় এবং শেষ পর্যন্ত তারা বিদ্রোহে ফেটে পড়ে।

পাবনা কৃষক আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।

ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী ও ঔপনিবেশিক প্রক্রিয়ায় সবথেকে বেশি জর্জরিত হয়েছিল কৃষকশ্রেণি। প্রাক্‌-ব্রিটিশ পর্বে ভারতের কৃষিব্যবস্থা এবং কৃষকশ্রেণির যে অবস্থা ছিল, কোম্পানির একশো বছরের (1757-1857 খ্রিঃ) শাসন ও ও শোষণে তা ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। ইতিপূর্বে জমির উপর কৃষকের কোনো ব্যক্তিগত মালিকানাস্বত্ব ছিল না ঠিকই, কিন্তু জমির সাথে কৃষকের সম্পর্ক ছিল ঘনিষ্ঠ। তখন রাজস্ব হিসেবে কৃষকেরা সামন্তপ্রভুদের প্রদান করত উৎপাদনের নির্দিষ্ট একটা অংশ। কিন্তু কোম্পানির আমলে ভূমিরাজস্বকে মুদ্রার পরিমাপে নির্দিষ্ট করা হয়। ফলে কৃষকশ্রেণি কেবল খাজনা প্রদানকারী প্রজায় পরিণত হয়। ঊনবিংশ শতকের মধ্যভাগে ভারতের কৃষি ও কৃষক-সমাজের অবস্থা হয়ে ওঠে শোচনীয়। অশিক্ষিত ও দরিদ্র হলেও ভারতের কৃষক-সম্প্রদায় বিদেশি শাসন ও শোষণ দীর্ঘকাল মুখ বুজে সহ্য করেনি। বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্তভাবে হলেও কৃষকশ্রেণি শোষণের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ-আন্দোলন গড়ে তোলে।

ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়ায় স্থানীয় জমিদাররা কম খাজনা প্রদানের লোভ দেখিয়ে বহু কৃষককে পাবনা অঞ্চলের জমিতে চাষ করার জন্য নিয়ে আসে। উদ্দেশ্য গ্রামের পত্তন হলে অনাবাদী জমি ফসল দেবে। জমিপিছু ফসল এবং টুকিটাকি আদায়ে জমিদারের প্রাথমিক লোকসান হলেও আখেরে লাভ হবে। আবাদ বাড়ল, গ্রাম গড়ে উঠল। মাথাপিছু খাজনার খাজনার যোগফলে যোগফলে আয়বৃদ্ধি হলেও জমি বা ফসলের অর্থমূল্যের তুলনায় তা অকিঞ্চিৎকর হয়ে এল। ফলে উপরি আদায় হয়ে উঠল জমিদারদের খাজনা বাড়াবার পরোক্ষ হাতিয়ার। দীর্ঘকাল ধরে সর্বস্তরের প্রজা এই উপরি দিতে নারাজ হয়নি। কিন্তু এই অলিখিত বন্দোবস্তের সুযোগ নিয়ে জমিদার যখনই লোভের হাত বাড়িয়ে চাষীর সর্বস্ব গ্রাস করতে চেয়েছেন, তখনই লড়াই অনিবার্য হয়ে উঠেছে।

পাবনার কৃষক অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট বিচার করলে একটা ব্যাপার পরিষ্কার হয়ে ওঠে যে জমিদার সম্প্রদায়ের অতিরিক্ত শোষণ ও অত্যাচার এবং ক্রমাগত কর বৃদ্ধি কৃষককুলকে বীতশ্রদ্ধ করে তুলেছিল। অধ্যাপক সুনীল সেন “ভারতের কৃষক আন্দোলন” -এ এই প্রসঙ্গে বলেছেন যে 1793 থেকে 1872 সালের মধ্যে করের পরিমাণ প্রায় সাতগুণ বেড়ে যায়। তবে কোন অঞ্চলে কি পরিমাণে কর আদায় করা হত তার কোনও প্রামাণ্য তথ্য নেই। 1859 সালে যে আইন পাস হয় তাতে কর বৃদ্ধির সুযোগ কিছুটা কমে যায়। তখন জমিদাররা সরাসরি করের হার না বাড়িয়ে বিভিন্নভাবে উপরি অর্থ সংগ্রহ করতেন। কৃষকরা তো বটেই, সরকারও এইভাবে অবৈধ উপায়ে অর্থ আদায়ের বিরোধী ছিলেন।

1872 সালে সরকার এই অবৈধ কর আদায় বন্ধ করে দিলে জমিদাররা অন্য পথ অবলম্বন করে। তারা প্রজাদের মূল খাজনার সাথে এই বাড়তি টাকা জুড়ে আদায় করতে তৎপর হয়। এছাড়া জমিদাররা কৃষকদের জমি নতুন করে জরিপ করা শুরু করে। এই জরিপ এমনভাবে হয় যে কৃষকদের জমির পরিমাণ আয়তনে হ্রাস পায়। সেই বাড়তি জমি দেওয়া হয় অন্য কৃষকদের এবং তা থেকে খাজনা আদায় করা শুরু হয়। ফলে জমিদার ও কৃষকদের সম্পর্ক তিক্ত হয়ে ওঠে।

পাবনা-কৃষক বিদ্রোহের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি ঘটে সদর মহকুমার গোপালনগর এবং ফরিদপুর গ্রামে 1873 সালের 27 জুন। স্থানীয় জমিদার মজুমদারের জামিদারিতে বিদ্রোহী কৃষকেরা প্রথমে হানা দেয় এবং অবস্থা আয়ত্বে আনতে দারোগার অধীনে অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী পাঠাতে হয়। এর ফল হয় উল্টো। মারমুখী প্রজা ধুবুডী নাকালিয়াতে দুবার কনস্টেবলকে মারধর করে এবং পরে প্রায় হাজার জন মথুরা থানা আক্রমণ করে। বারোশ জনের আরেক দল শাগুরকাঁদিতে জনৈক গোবিন্দ দত্তর বাড়ীতে চড়াও হয়।

সিরাজগঞ্জের সংঘর্ষই প্রকৃতপক্ষে পাবনা বিদ্রোহের সূচনা বলে ধরা হয়। সালপে সংগঠক চাষীদের এক সভা বসে এবং তাদের কিছু স্বেচ্ছাসেবী আশেপাশের গ্রামের চাষীদের আন্দোলনে সামিল না হবার জন্য ধমকায়। উলীপাড়ায় বিদ্রোহী চাষীদের সভা ডাকা হত শিঙা বাজিয়ে এবং এর উদ্দেশ্য ছিল ভীতির সঞ্চার করা। জমিদারের কাছারির লোকজন বিনা রক্তপাতেই পালাতে শুরু করেছিল। মৌপুরের সমস্ত প্রজাই আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল তাই সেখানে কোন সংঘর্ষ বাধেনি। শাজাদপুরের ঠাকুর জমিদারেরা খুবই ভীত হয়ে পড়েন এবং নিরাপত্তার জন্য পুলিসের কাছে সরাসরি এবং সংবাদপত্রের মাধ্যমে সরকারের কাছে বারবার আবেদন করতে থাকেন।

পাবনা জেলার সিরাজগঞ্জ মহকুমার শাসক, পাবনার জেলা শাসকের জবানবন্দী এবং তৎকালীন সাময়িক পত্র-পত্রিকা গুলিতে কৃষক সম্প্রদায়ের ক্ষোভ এবং জমিদারদের অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের মনোবৃত্তির কথা বলা হয়েছে। গ্রামবার্তা প্রকাশিকা, সোমপ্রকাশ, সুলভসমাচার প্রভৃতি পত্রিকাগুলি জমিদারদের উৎপীড়নের তীব্র সমালোচনা করে। চিত্রব্রত পালিত বলেন যে, যদিও পাবনা বিদ্রোহের মূল কারণ ছিল অধিক পরিমাণে খাজনা আদায় তাহলেও জমিদারদের একটা বিরাট অংশের খাজনা বাড়ানো ছাড়া কিছু করার ছিল না। ঢাকা, ফরিদপুর, রাজসাহী, সিরাজগঞ্জ এই সমস্ত জেলার জমিদাররা অধিকাংশই বিভিন্ন কারণে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। অপরদিকে সম্পন্ন কৃষককূল আর্থিক স্বচ্ছলতা, বাড়িয়ে চলেছিল। ফলে অর্থ আদায়ের জন্য জমিদাররা বর্ধিত হারে খাজনার দায় তাদের উপর চাপিয়ে দেয়।

কল্যাণকুমার সেনগুপ্ত পাবনা বিদ্রোহের মূল কারণকে অন্যভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। তাঁর মতে 1859 সালে সরকার আইন কৃষকদের বেশ কিছু সুযোগ সুবিধা দিয়েছিল। প্রজাস্বত্ত্ব দিয়েছিল, কাজেই কৃষকরা মনে করেছিল যে জমিদাররা আর খাজনা বাড়াবে না। কিন্তু জমিদাররা তাদের খাজনা দশম আইনকে বাঁকিয়ে-চুরিয়ে বাড়িয়ে চলেছিল। বাড়তি খাজনা না দিলে প্রজাস্বত্ত্ব নাশেরও প্রয়াস ছিল। কৃষকরা তাদের প্রাপ্য অধিকারের উপর জমিদারের এই উপেক্ষা মানতে রাজী ছিল না। ফলে তারা অভ্যুত্থানের পথ বেছে নেয়।

মূলত 1872 সালের সরকারী আইনে উপরি পাওনা নিষিদ্ধ হলে জমিদারেরা এই উপরি পাওনা পুরনো নীচু হারের খাজনার সঙ্গে জুড়ে নতুন বাড়তি খাজনা চালু করায় উদ্যোগী হন আইন বলবৎ হবার আগেই। সেই সুযোগে চাষীদের নতুন কবুলিয়তে জবরদস্তি সই করাতে থাকেন। পাবনা জেলায় 1872-1873 সালে 1672টি নতুন কবুলিয়ত রেজিস্ট্রী হয় যার ফলে স্বাক্ষরকারীদের প্রজাস্বত্ব লোপ পায়। এছাড়াও খাজনার রসিদ দিতে অস্বীকার করা এবং স্বল্পমেয়াদী ইজারা দেওয়া ইত্যাদির মধ্যেও প্রজাস্বত্ব আইন লঙ্ঘন করা হয়। এর ফলে ইচ্ছামত প্রজা বিতাড়ন এবং খাজনা বাড়ানো সম্ভব এবং প্রজাদের উপর সম্পূর্ণ আধিপত্য করা যায়।

ডঃ সেনগুপ্ত প্রজাস্বত্ব এবং স্বাধিকারের প্রশ্নটিকে যতটা গুরুত্ব দিয়েছেন, বিনয়ভূষণ চৌধুরী তার চেয়ে জমিদারী নিপীড়ন এবং বাড়তি খাজনা আদায়ের অছিলাকেই বড় করে দেখিয়েছেন। আবার সেনগুপ্ত অহিংসাত্মক, আইনগত অধিকার আদায়কেই সংগ্রামের প্রধান ধারা মনে করলেও চৌধুরী হিংসাত্মক ঘটনাবলীকেই মূল সংগ্রাম বলে বর্ণনা করেছেন। যদিও সেনগুপ্ত যাকে রায়তদের অপরাধ প্রবণতার পরিচয় বলে মনে করেছেন সেই অর্থে চৌধুরী খোলামাঠের লড়াইকে ব্যাখা করেননি। তবে উভয়েই একমত যে সাংগঠনিক ও অংশগ্রহণের দিক থেকে এটি ছিল পাবনার রায়ত চাষীদের সর্ববৃহৎ সংগ্রাম।

পাবনার কৃষকরা স্থির করে যে তারা কর দেবে না। তারা কৃষক সমিতি গড়ে তোলে। 1873 সালে পাবনা জেলায় প্রায় সর্বত্র এই সমিতি গড়ে ওঠে। বিক্ষুব্ধ প্রজারা এই সমিতিতে চাঁদা দিয়ে একটি অর্থভাণ্ডার গড়ে তুলেছিল। আদালতের মাধ্যমে তাদের দাবী সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য মামলা মোকদ্দমায় যে খরচ হত তা মেটানো হত এই অর্থভাণ্ডার থেকে। অনিচ্ছুক বিদ্রোহ বিরোধী প্রজাকে বিদ্রোহের সামিল হওয়ার জন্য বাধ্য করা হত। জমিদারদের বিরুদ্ধে পাবনার বিদ্রোহী ধনী কৃষকরা অত্যন্ত সুসংহতভাবে সংগঠন করে তুলেছিল। সম্পন্ন কৃষকরা এই বিদ্রোহের নেতৃত্বে এগিয়ে এসেছিল। এইসব নেতাদের মধ্যে দৌলতপুরের ঈষাণচন্দ্র রায়, মেঘুল্লা গ্রামের প্রধান শম্ভুনাথ পাল ইত্যাদির নাম উল্লেখযোগ্য।

ঐতিহাসিক সুমিত সরকার পাবনা কৃষক বিদ্রোহকে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দেখছেন। তাঁর মতে পাবনা সমিতি ও অন্যান্য জেলার একই ধরনের আন্দোলন বাঙালি ও অন্যান্য জেলার একই ধরনের আন্দোলন বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে খুবই বিচিত্র প্রতিক্রিয়া জাগায়। জমিদার-প্রধান ব্রিটিশ-ভারতীয় সভা ছিল ঘোর শত্রু ভাবাপন্ন। তার মুখপাত্র ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট -এ পাবনা আন্দোলনকে হিন্দু ভূস্বামীদের বিরুদ্ধে মুসলমান চাষীদের সাম্প্রদায়িক বিক্ষোভ হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করা হয়। আসলে, ঘটনাচক্রে পাবনার চাষীদের বড় অংশই যদিও সত্যিই ছিলেন মুসলমান, আর তাঁদের জমিনদাররা হিন্দু, তাহলেও সাম্প্রদায়িক উপাদন তখন পর্যন্ত প্রায় ছিলই না। 

বিদ্রোহের প্রকৃতি কি ধরনের ছিল তা নিয়েও যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। বিনয় চৌধুরী এবং সুপ্রকাশ রায়ের মতে এই অভ্যুত্থান ছিল হিংসাত্মক। আবার কল্যাণকুমার সেনগুপ্ত বলেছেন যে এর অনেকটাই ছিল আইনের লড়াই। সরকার প্রথমদিকে জমিদার বিরোধী ও বিদ্রোহীদের পক্ষে থাকলেও পরবর্তীকালে তারা জমিদারদের সমর্থনে এগিয়ে আসে। ফলে বিদ্রোহী নেতারা ধৃত হয় এবং নেতৃত্বের অভাবে অভ্যুত্থান ক্রমশঃ নিস্তেজ হতে থাকে।

পাবনার কৃষক অভ্যুত্থান কিন্তু জমিদার ও কৃষকদের সম্পর্ককে আইনের মাধ্যমে একটা নির্দিষ্ট জায়গায় নিয়ে এসেছিল। এই অভ্যুত্থানই 1885 সালের প্রজাস্বত্ব আইনের পথ প্রস্তুত করেছিল যার ফলে কৃষকরা অনেক সুযোগ সুবিধা লাভ করেছিল। সরকার বুঝতে পেরেছিলেন যে এই অভ্যুত্থান জমিদারদের শোষণের বিরুদ্ধে। এই অভ্যুত্থান ব্রিটিশ বিরোধী নয়। কাজেই তারা কৃষকদের স্বার্থরক্ষায় ব্রতী হয়েছিলেন। অনেকে পাবনার কৃষক বিদ্রোহকে একটি সাম্প্রদায়িক বিদ্রোহ বলতে চেয়েছেন – যেহেতু জমিদাররা ছিলেন হিন্দু এবং অধিকাংশ কৃষকরা ছিল মুসলমান। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ঘটনাটি ভিন্ন। কারণ হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়গত বিরোধ হলে হিন্দু নেতা ঈষাণ চন্দ্র রায় বা শম্ভুনাথ পাল বিদ্রোহীদের নেতৃত্ব দিকে এগিয়ে আসতেন না। এই বিদ্রোহ ছিল সম্পূর্ণভাবে ধর্মনিরপেক্ষ অর্থনৈতিক।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

পাবনা কৃষক বিদ্রোহ কখন হয়েছিল?

পাবনা কৃষক বিদ্রোহ মূলত 1873 সালে সংঘটিত হয়েছিল, তবে এর প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছিল 1870 -এর দশক থেকে।

পাবনা বিদ্রোহের প্রধান কারণ কী ছিল?

পাবনা বিদ্রোহের প্রধান কারণ ছিল –
1. জমিদারদের অতিরিক্ত খাজনা বৃদ্ধি,
2. কৃষকদের দখলীস্বত্ব অস্বীকার করা,
3. জমিদারদের নতুন করে জরিপ করে জমি কেড়ে নেওয়া।

পাবনা বিদ্রোহ কি সাম্প্রদায়িক ছিল?

না, এটি ছিল সম্পূর্ণ অর্থনৈতিক আন্দোলন। যদিও বেশিরভাগ কৃষক মুসলমান এবং জমিদাররা হিন্দু ছিলেন, তবুও হিন্দু নেতারাও এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

পাবনা বিদ্রোহে ব্রিটিশ সরকারের ভূমিকা কী ছিল?

পাবনা বিদ্রোহে ব্রিটিশ সরকারের ভূমিকা –
1. প্রথমে সরকার কৃষকদের পক্ষে ছিল, কিন্তু পরে জমিদারদের সমর্থন করে।
2. সরকার 1872 সালের আইনে জমিদারদের অবৈধ উপরি আদায় বন্ধ করে দেয়।

পাবনা বিদ্রোহের অন্যতম প্রধান ঘটনা কী ছিল?

সিরাজগঞ্জের সংঘর্ষকে পাবনা বিদ্রোহের সূচনা হিসেবে ধরা হয়, যেখানে কৃষকরা জমিদারদের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ হয়েছিল।

পাবনা বিদ্রোহের ঐতিহাসিক গুরুত্ব কী?

পাবনা বিদ্রোহের ঐতিহাসিক গুরুত্ব –
1. এটি ছিল বাংলার প্রথম সংগঠিত কৃষক আন্দোলন।
2. এটি প্রমাণ করেছিল যে কৃষকরাও তাদের অধিকারের জন্য সংঘবদ্ধ হতে পারে।
3. এটি পরবর্তীকালে নীল বিদ্রোহ, তেভাগা আন্দোলন -এর পথ প্রশস্ত করে।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “পাবনা কৃষক বিদ্রোহ কী কারণে ঘটেছিল? পাবনা কৃষক আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “পাবনা কৃষক বিদ্রোহ কী কারণে ঘটেছিল? পাবনা কৃষক আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের তৃতীয় অধ্যায় “প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ – বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল সম্পর্কে টীকা লেখো।

কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল সম্পর্কে টীকা লেখো।

সারা ভারত কিষান সভা কী উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল?

সারা ভারত কিষান সভা কী উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল?

বারদৌলি সত্যাগ্রহ - টীকা লেখো। অথবা, বারদৌলি সত্যাগ্রহের প্রতি জাতীয় কংগ্রেসের কীরূপ মনোভাব ছিল?

বারদৌলি সত্যাগ্রহের প্রতি জাতীয় কংগ্রেসের কীরূপ মনোভাব ছিল?

About The Author

Gopi

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল সম্পর্কে টীকা লেখো।

সারা ভারত কিষান সভা কী উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল?

বারদৌলি সত্যাগ্রহের প্রতি জাতীয় কংগ্রেসের কীরূপ মনোভাব ছিল?

‘একা’ আন্দোলন সম্পর্কে টীকা লেখো।

সত্যাগ্রহ বলতে কী বোঝো? ভারতবর্ষে গান্ধিজি পরিচালিত প্রথম তিনটি সত্যাগ্রহ কী কী?