পশ্চিম উপকূলের সমভূমির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও

নমস্কার বন্ধুরা! আজকের আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করবো পশ্চিম উপকূলের সমভূমি সম্পর্কে। দশম শ্রেণীর মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য এই অংশটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” অধ্যায়ের “ভারতের ভূপ্রকৃতি” বিভাগে এই প্রশ্নটি বারবার দেখা যায়।

পশ্চিম উপকূলের সমভূমি

পশ্চিম উপকূলের সমভূমির অবস্থান ও পরিচয় –

  • উত্তরে কচ্ছের রান অঞ্চল থেকে দক্ষিণে কন্যাকুমারী পর্যন্ত পশ্চিম উপকূল সমভূমি বিস্তৃত।
  • পূর্ব সীমায় আছে পশ্চিমঘাট পর্বতশ্রেণি এবং পশ্চিম সীমায় আরব সাগর।
  • পূর্ব উপকূলের সমভূমির তুলনায় এই সমভূমিটি বেশ সংকীর্ণ।
  • উত্তরে কচ্ছের রান অঞ্চল থেকে দক্ষিণে সমভূমিটি ক্রমশ সংকীর্ণ হয়েছে।
  • এখানে নদী বদ্বীপ নেই বললেই চলে।
পশ্চিম উপকূলের সমভূমি

উপ-অঞ্চল ও ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য –

পশ্চিম উপকূলের সমভূমি অঞ্চলকে চারটি অংশে ভাগ করা যায় –

গুজরাত উপকূলের সমভূমি –

  • পশ্চিম উপকূলের উত্তরাংশের নাম গুজরাত উপকূলের সমভূমি।
  • অঞ্চলটি উত্তরে গুজরাত রাজ্যের কচ্ছ ও কাথিয়াবাড় উপদ্বীপ থেকে দক্ষিণে মহারাষ্ট্রের উত্তর সীমা পর্যন্ত বিস্তৃত।
  • কচ্ছ উপদ্বীপে আছে এক বিস্তীর্ণ অগভীর লবণাক্ত জলাভূমি বা রান। এর উত্তর ভাগের নাম বৃহৎ রান এবং দক্ষিণ ভাগের নাম ক্ষুদ্র রান।
  • কাথিয়াবাড় উপদ্বীপটি যথেষ্ট প্রশস্ত ও মাঝখানটি উঁচু। ওই অংশে গিরনার ও গির নামে দুটি পাহাড় আছে।
  • সবরমতী, মাহী, নর্মদা, তাপ্তী প্রভৃতি পশ্চিমবাহিনী নদী দ্বারা বিপুল পরিমাণ পলিরাশি বাহিত হয়ে খাম্বাত উপসাগরে অবক্ষেপিত হওয়ায় এই সমভূমির সীমানা ক্রমশ পশ্চিমদিকে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

কোঙ্কন উপকূলের সমভূমি –

  • মহারাষ্ট্রের উত্তর সীমা, অর্থাৎ সুরাতের কিছুটা দক্ষিণ থেকে গোয়া পর্যন্ত কোঙ্কন উপকূল সমভূমি বিস্তৃত।
  • সমভূমিটি খুব সংকীর্ণ এবং ভগ্ন। অধিকাংশ জায়গায় এই সমভূমি পাথর দ্বারা গঠিত। ঔ স্থানে স্থানে কাদাগুতি পাওয়া যায়।
  • স্থানে স্থানে ছোটো ছোটো বালিয়াড়ি, কাদাগঠিত নিম্নসমভূমি, জলাভূমি, বালুকাময়য় তটভূমি, সামুদ্রিক চড়া এবং লাভা গঠিত পাহাড় প্রভৃতি কোঙ্কন উপকূলের সমভূমিতে বৈচিত্র্যপূর্ণ করে তুলেছে।

কর্ণাটক উপকূলের সমভূমি –

  • গোয়ার দক্ষিণে কারওয়ার উপকূল থেকে কান্নানোর পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চল কৰ্ণাটক বা কারওয়ার উপকূলের সমভূমি নামে পরিচিত।
  • এর দৈর্ঘ্য প্রায় 225 কিমি।
  • এই উপকূলও বেশ সংকীর্ণ, তবে ম্যাঙ্গালোরের পর থেকে অংশটি কিছুটা চওড়া।
  • উপকূলের স্থানে স্থানে বালুকাময় তটভূমি আছে, কোনো কোনো স্থানে আবার পশ্চিমঘটি পর্বতমালা সমুদ্রের তীর পর্যন্ত নেমে এসেছে।
  • ম্যাঙ্গালোরের কাছে নেত্রাবতী নদীর মোহানায় এই উপকূলের একমাত্র বদ্বীপ দেখতে পাওয়া যায়।
  • স্থানে স্থানে ছোটো ছোটো বালিয়াড়ি, কাদাগঠিত নিম্নসমভূমি, ছোটো ছোটো উপহ্রদ, সঙ্কীর্ণ নদী উপত্যকা এবং পশ্চিমঘাট পর্বতের পাদদেশবর্তী ল্যাটেরাইট গঠিত নিম্ন মালভূমি হল কর্ণাটক উপকূলের উল্লেখযোগ্য ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য।
মালাবার উপকূলের সমভূমি – 
  • কান্নানোর থেকে একেবারে দক্ষিণে কন্যাকুমারী পর্যন্ত মালাবার উপকূলের সমভূমি বিস্তৃত।
  • কোঙ্কন ও কর্ণাটক উপকূলের তুলনায় এই উপকূল বেশ চওড়া, গড়ে 25 কিমি।
  • এখানকার উপকূলভূমিতে অনেক বালিয়াড়ি, জলাভূমি, হ্রদ ও উপহ্রদ বা লেগুন আছে। উপকূলের নিস্তরঙ্গ জলাভূমি ব্যাকওয়াটার্স নামে পরিচিত। স্থানীয় অধিবাসীরা উপহ্রদগুলিকে কয়াল বলে, যেমন — কোচিনের কাছে ভেমবানাদ কয়াল এবং কোল্লামের কাছে অষ্টমুদি কয়াল বিখ্যাত।

পশ্চিম উপকূলের সমভূমি ভারতের ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কৃষি, মৎস্য, খনিজ সম্পদ এবং পর্যটন সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এটি অবদান রাখে। দশম শ্রেণীর মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য এই অঞ্চল সম্পর্কে জ্ঞান অত্যন্ত জরুরী। পরীক্ষার প্রস্তুতির সময় এই আর্টিকেলটি আপনাকে সাহায্য করবে বলে আশা করি।

Share via:

মন্তব্য করুন