এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “পরিচলন, শৈলোৎক্ষেপ ও ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত বলতে কী বোঝো? পরিচলন, শৈলোৎক্ষেপ ও ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাতের মধ্যে পার্থক্য লেখো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। “পরিচলন, শৈলোৎক্ষেপ ও ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত বলতে কী বোঝো? পরিচলন, শৈলোৎক্ষেপ ও ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাতের মধ্যে পার্থক্য লেখো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের দ্বিতীয় অধ্যায় “বায়ুমণ্ডল – আর্দ্রতা ও অধঃক্ষেপণ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

পরিচলন বৃষ্টিপাত –
ভূপৃষ্ঠের জলরাশি সূর্যের তাপে উত্তপ্ত হয়ে জলীয় বাষ্পরূপে ঊর্ধ্বাকাশে উঠে সম্পৃক্ত, শীতল ও ভারী হয়ে সেই স্থানেই বৃষ্টিপাত রূপে পতিত হলে তাকে পরিচলন বৃষ্টিপাত বলে।
সূর্যের উত্তাপে ভূপৃষ্ঠের সমুদ্র, হ্রদ, নদী, পুকুর, খাল, বিল প্রভৃতি জলাশয়ের জল জলাবাষ্পে পরিণত হয়। সাধারণ বাতাসের তুলনায় জলাবাষ্প হালকা হওয়ায়, জলাবাষ্পপূর্ণ বাতাস সরাসরি উপরের দিকে উঠে যায়। উপরের বায়ুমণ্ডলের শীতল বাতাসের সংস্পর্শে এসে ঘনীভবন ঘটে, জলাবাষ্প ক্ষুদ্র জলকণায় পরিণত হয় এবং বায়ুর ধূলির কণাকে আশ্রয় করে মেঘের আকারে আকাশে ভেসে থাকে। জলকণাগুলি পরস্পরের সঙ্গে মিশে বড় জলকণা তৈরি করলে, নিজেদের ভার ও পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবে আর ভেসে থাকতে পারে না। মেঘ থেকে এই জলকণা প্রধানত জলের ফোঁটার আকারে ঝরে ভূপৃষ্ঠে পতিত হয়, যাকে পরিচলন বৃষ্টিপাত বলা হয়।

পরিচলন বৃষ্টিপাতের বৈশিষ্ট্য –
পরিচলন বৃষ্টিপাতের বৈশিষ্ট্যগুলি হল—
- অঞল – নিরক্ষরেখার উভয়দিকে 0° থেকে 5° বা 10° অক্ষাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত অঞলে এইজাতীয় বৃষ্টি বেশি হয়। এ ছাড়া ক্রান্তীয় ও নাতিশীতােষ্ণ অঞলেও মাঝে মাঝে এই বৃষ্টিপাত হয়।
- সময়কাল – গ্রীষ্মের শুরুতে ক্রান্তীয় ও নাতিশীতােষ্ণ অঞলে এবং সারাবছর ধরে নিরক্ষীয় অঞ্চলে এইপ্রকার বৃষ্টিপাত ঘটে।
- পরিমাণ – নিরক্ষীয় অঞ্চলে বছরে প্রায় 200-300 সেমি পরিচলন বৃষ্টিপাত হয়।
- নামকরণ – প্রায় প্রতিদিন বিকেলে 4টে নাগাদ পরিচলন বৃষ্টিপাত বেশি হয় বলে নিরক্ষীয় অঞ্চলে একে 4 o’clock rain বলে।
- মেঘ – সাধারণত কিউমুলােনিম্বাস মেঘ থেকে এই ধরনের বৃষ্টি হয়।
- বজ্রপাত – এই ধরনের বৃষ্টিতে বজ্রপাত ঘটে, যেমন—জাভা দ্বীপের বোগর-এ বছরে 322 দিন বজ্রপাতের রেকর্ড আছে।
- বৃষ্টির প্রকৃতি – বৃষ্টি স্বল্পস্থায়ী হলেও পরিমাণে অনেক বেশি হয়। বৃষ্টির পর আকাশ মেঘমুক্ত হয়ে যায়।
পরিচলন বৃষ্টিপাতের কারণ –
- নিরক্ষরেখার উভয় পাশে 0°–30° উত্তর-দক্ষিণ অক্ষাংশে সূর্য সারা বছর লম্বভাবে তীব্র কিরণ ফেলে, যা ভূমির তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে।
- এই অঞ্চলে স্থলভাগের তুলনায় জলভাগ বেশি হওয়ায়, দিনের বেলা সূর্যের তাপে জল বাষ্পীভূত হয়ে বায়ুমণ্ডলে মিশে থাকে।
- নিরক্ষীয় নিম্নচাপ অঞ্চলে উষ্ণ ও হালকা বাতাস দ্রুত উপরে উঠে। শীতল বায়ুমণ্ডলের সংস্পর্শে বাষ্প জলকণা হয়ে মেঘের সৃষ্টি করে, যা পরে বৃষ্টির প্রধান কারণ হয়।
- জলকণাগুলির আকার বৃদ্ধি হলে ভারের কারণে ধুমকেতুর মতো মেঘ ভেঙে জলের ফোঁটায় ঝরে পতন ঘটে।
নিরক্ষীয় অঞ্চলে পরিচলন বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ার কারণ –
- বায়ুমণ্ডলে উষ্ণতা ও নিরবচ্ছিন্ন সূর্যালোকের কারণে জল বাষ্পীভূত হওয়ার প্রবণতা বেশি।
- এই অঞ্চলে প্রচুর জলাশয়ের উপস্থিতি বাষ্পীভবনের চাপ বাড়িয়ে দিয়ে বৃষ্টির সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে।
উদাহরণ –
- কঙ্গো ও আমাজন নদীর অববাহিকা, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর ইত্যাদিতে সারা বছর পরিচলন বৃষ্টি দেখা যায়। অপরাহ্নে বজ্রবিদ্যুৎসহ তীব্র বৃষ্টিপাত এর প্রধান বৈশিষ্ট্য।
- নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে গ্রীষ্মের শুরুতে এবং ভারতীয় উপমহাদেশে শরৎকালে এই ধরনের বৃষ্টি দেখা যায়।
শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত –
‘শৈল‘ শব্দের অর্থ পর্বত এবং ‘উৎক্ষেপ‘ -এর অর্থ ওপরে ওঠা। জলীয়বাষ্পপূর্ণ বায়ুর প্রবাহপথে পর্বতের অবস্থান থাকলে সেই বায়ু পর্বতের ঢাল বরাবর উপরে ওঠে এবং শীতলতার সংস্পর্শে এসে বৃষ্টিপাত ঘটায়, একে শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত বলে।

যখন জলাবাষ্পপূর্ণ আর্দ্র বাতাস ভূপৃষ্ঠের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়, তখন বাতাসের প্রবাহের পথে উঁচু পর্বত, পাহাড় বা মালভূমি থাকলে, বাতাস সেখানে বাধা পায় এবং পর্বত বা মালভূমির ঢাল বেয়ে উপরে উঠতে বাধ্য হয়। উপরের শীতল বাতাসের সংস্পর্শে এসে উষ্ণ আর্দ্র বাতাস শীতল হয়ে ঘনীভূত হয় এবং পর্বতের প্রতিবাতি ঢালে (বা বায়ুমুখী ঢালে) বৃষ্টির রূপ নেমে আসে। পর্বত বা শৈলরাশির অবস্থানের কারণে বৃষ্টির সৃষ্টি হওয়ার জন্য এই বৃষ্টিপাতকে শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত বলে।
শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাতের প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ –
শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত হলো জলাবাষ্পপূর্ণ বাতাসের সাথে পর্বতের সংঘর্ষের ফলে ঘটে। এর প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নে সংক্ষেপে উল্লেখ করা হল –
- পর্বতের অবস্থান – পর্বতের অবস্থান এই বৃষ্টিপাতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বায়ুপ্রবাহের পথে পর্বত বা উচ্চভূমি অবস্থান করলে বাতাস পর্বতের ঢাল বেয়ে উপরের দিকে উঠে।
- প্রতিবাত ঢালে বৃষ্টি – পর্বতের যে ঢাল বায়ুর প্রবাহের দিকে থাকে, তাকে প্রতিবাত ঢাল বলে। এখানে শীতল বাতাসের সংস্পর্শে ঘনীভূত হয়ে প্রচুর বৃষ্টি ঘটে, যেমন ভারতের পশ্চিমঘাট এবং চেরাপুঞ্জি।
- অনুবাত ঢালে শুষ্কতা – পর্বতের বিপরীত ঢালে বায়ু উষ্ণ ও শুষ্ক হয়ে যায়, যাকে অনুবাত ঢাল বলে। এখানে খুব কম বৃষ্টি হয়, সৃষ্টি হয় বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল। উদাহরণ হিসেবে পশ্চিমঘাটের পূর্ব ঢালের অংশ উল্লেখ্য।
- বৃষ্টিপাতের স্থায়িত্ব – এই ধরনের বৃষ্টি সাধারণত নির্দিষ্ট অঞ্চলে সীমাবদ্ধ হয় এবং দীর্ঘকালীন হতে পারে। পর্বতের উচ্চতা ও বায়ুর আর্দ্রতার ওপর বৃষ্টিপাতের পরিমাণ নির্ভর করে।
- বায়ুর পরিবর্তন – এই প্রক্রিয়ায় বায়ুর উষ্ণতা ও আর্দ্রতা পরিবর্তিত হয়। প্রতিবাত ঢালে বাতাস শীতল ও আর্দ্র থাকে, অনুবাত ঢালে উষ্ণ ও শুষ্ক হয়, যা স্থানীয় আবহাওয়ার উপর প্রভাব ফেলে।
শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাতের কারণ –
- জলাবাষ্পপূর্ণ আর্দ্র বাতাস ভূপৃষ্ঠের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় যদি কোনো উঁচু পর্বত বা মালভূমির সামনে বাধা পায়, তবে বাতাস পর্বত বা মালভূমির ঢাল বেয়ে উপরে উঠতে বাধ্য হয় এবং উচ্চতা বাড়ার সাথে সাথে ধীরে ধীরে শীতল হয়ে যায়।
- যদি পর্বতের উচ্চ অংশ বরফাবৃত থাকে, তবে আর্দ্র বাতাস বরফের সংস্পর্শে এসে অথবা উচ্চতায় উঠার ফলে আরও শীতল হয়ে ঘনীভূত হয় এবং পর্বতের প্রতিবাতি ঢালে বা বায়ুমুখী ঢালে শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টি ঘটে।
- যদি সমুদ্রের কাছাকাছি উঁচু পর্বত বা মালভূমি থাকে, তবে তেজস্বী বেগে প্রবাহিত জলাবাষ্পপূর্ণ আর্দ্র বাতাস পর্বত বা মালভূমির সমকোণে বাধা পেলে, এবং পর্বতের শীর্ষ বরফাচ্ছন্ন থাকলে, শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টির সম্ভাবনা বেশি হয়।
- সাধারণত, মৌসুমি আর্দ্র বাতাসের অঞ্চলে শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টির সম্ভাবনা সর্বাধিক।
উদাহরণ – ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বাতাস হিমালয় পর্বতের সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটায় এবং বৃষ্টি ঘটায়, এবং দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বাতাসের আরব সাগরীয় শাখা পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢালে সংঘর্ষ ঘটায় যা প্রবল বৃষ্টির কারণ হয়।
ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত –
শীতল বায়ুর ঢাল বরাবর উষ্ণ বায়ু ঊর্ধ্বে উঠে ঘনীভূত হয়ে যে বৃষ্টিপাত ঘটায় তাকে ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত বলে।
জলীয়বাষ্পপূর্ণ উষ্ণ বায়ু ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত গভীর নিম্নচাপের আকর্ষণে দ্রুত ঊর্ধ্বগামী হয়। উপরে উঠে শীতল হওয়ার ফলে এই বায়ুর জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে যে ব্যাপক বৃষ্টিপাত ঘটায়, তাকেই ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টি বা ঘূর্ণবাত বৃষ্টি বলে। কোনো স্থানে প্রবল গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্র সৃষ্টি হলে চারপাশ থেকে জলীয়বাষ্পপূর্ণ উষ্ণ বায়ু দ্রুত সেই কেন্দ্রের দিকে প্রবাহিত হয়। এই উষ্ণ ও আর্দ্র বায়ু ঊর্ধ্বে উঠে শীতল ও ঘনীভূত হওয়ার ফলেই ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাতের সৃষ্টি হয়। ঘূর্ণবাত বৃষ্টি সাধারণত দীর্ঘ সময় ধরে ঝিরঝির করে পড়ে। পৃথিবীর প্রধানত দুটি অঞ্চলে এই ধরনের বৃষ্টিপাত বেশি হয় –
ক্রান্তীয় অঞ্চলের ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টি (ট্রপিক্যাল সাইক্লোনিক রেইন) –
ক্রান্তীয় অঞ্চলে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা খুব বেশি (সাধারণত 26.5°C. বা তার বেশি) হলে প্রবল গভীর নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। পার্শ্ববর্তী অঞ্চল থেকে প্রচুর জলীয়বাষ্পপূর্ণ উষ্ণ বায়ু দ্রুত গতিতে কুণ্ডলাকারে পাক খেতে খেতে নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে প্রবেশ করে। এই বায়ু কেন্দ্রের নিকটে অত্যন্ত দ্রুত ঊর্ধ্বগামী হলে, জলীয় বাষ্প ব্যাপকভাবে ঘনীভূত হয়ে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়। এই বৃষ্টি অতি প্রবল বর্ষণের আকারে হতে পারে এবং ঘূর্ণিঝড়/সাইক্লোনের সাথে যুক্ত থাকে।
উদাহরণ – পশ্চিমবঙ্গে এপ্রিল-মে মাসে কালবৈশাখী ঝড়ের সময় এই প্রকার প্রবল বৃষ্টিপাত ঘটে।
নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডলের ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টি (টেম্পারেট সাইক্লোনিক রেইন / ফ্রন্টাল রেইন) –
নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডলে ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রে সাধারণত একটি নিম্নচাপ থাকে যার সাথে উষ্ণ ও শীতল বায়ুর সীমান্ত (ফ্রন্ট) যুক্ত থাকে। উষ্ণ ও আর্দ্র বায়ু এবং শীতল ও অপেক্ষাকৃত শুষ্ক বায়ু বিপরীত দিক থেকে প্রবাহিত হয়ে এই সীমান্তে মিলিত হলে হালকা উষ্ণ বায়ুটি ভারী শীতল বায়ুর উপরে উঠতে বাধ্য হয়। ঊর্ধ্বগামী উষ্ণ বায়ু শীতল ও সম্পৃক্ত হয়ে ঘনীভূত হয় এবং বৃষ্টিপাত ঘটায়। যেহেতু এই বৃষ্টিপাত প্রধানত দুই ভিন্নধর্মী বায়ুর সংযোগ সীমান্ত বা ফ্রন্টে ঘটে, তাই একে সীমান্ত বৃষ্টি (Frontal Rain) ও বলা হয়। নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের এই ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টি সাধারণত মাঝারি থেকে হালকা হয় এবং দীর্ঘক্ষণ ধরে টিপটিপ করে পড়তে থাকে।
উদাহরণ – ইউরোপের নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে এই প্রকার বৃষ্টিপাত ঘটে। এছাড়াও, জুলাই থেকে অক্টোবর মাসের মধ্যে বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলে সৃষ্ট ঘূর্ণবাতের কারণে এই ধরনের দীর্ঘস্থায়ী বৃষ্টিপাত (ঘূর্ণবৃষ্টি) দেখা যায়।
পরিচলন, শৈলোৎক্ষেপ ও ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাতের মধ্যে পার্থক্য লেখো।
পরিচলন, শৈলোৎক্ষেপ ও ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাতের পার্থক্য –
বিষয় | পরিচলন বৃষ্টিপাত | শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত | ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত |
সংজ্ঞা | সূর্যতাপে জল ভাগের জল বাষ্পীভূত হয়ে উপরে উঠে ঘনীভূত হয়ে যে বৃষ্টিপাত ঘটায়, তাকে পরিচলন বৃষ্টিপাত বলে। | পর্বত গাত্রে জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু বাধা পেয়ে যে বৃষ্টিপাত ঘটায়, তাকে শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত বলে। | উষ্ণ ও শীতল বায়ু পরস্পর মিলিত হয়ে বা গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রে বায়ু প্রবেশ করে ঊর্ধ্বগামী হয়ে যে বৃষ্টিপাত ঘটায়, তাকে ঘূর্ণবাত জনিত বৃষ্টিপাত বলে। |
সময় | এটি প্রায় প্রতিদিন বিকেলে সংঘটিত হয়। | এটি বিশেষ ঋতুতে হয়। | বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘটে। |
উৎপত্তির কারণ | জলভাগ থেকে জলের বাষ্পীভবন ও ঊর্ধ্বগামী হয়ে ঘনীভবন। | জলীয়বাষ্পপূর্ণ বায়ু পর্বতে বাধাপ্রাপ্ত হয়। | উষ্ণ ও শীতল বায়ুর পরস্পর আগমন এবং নিম্নচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হয়। |
সংঘটনের স্থান | মূলত নিরক্ষীয় ও উপকূল অঞ্চলে সংঘটিত হয়। | যে-কোনো পার্বত্য অঞ্চলে সংঘটিত হয়। | ক্রান্তীয় ও নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে ঘটে। |
বৃষ্টিপাতের প্রকৃতি | কিছুক্ষণ বৃষ্টি হয়ে আকাশ পরিষ্কার হয়ে যায়। | কিছুক্ষণ সময় ধরে বৃষ্টি চলে। | ক্রান্তীয় অঞ্চলের ঘূর্ণিবৃষ্টি স্বল্পস্থায়ী এবং নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের ঘূর্ণিবৃষ্টি দীর্ঘস্থায়ী হয়। |
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
পরিচলন বৃষ্টিপাত কী?
ভূপৃষ্ঠের জল সূর্যের তাপে বাষ্পীভূত হয়ে উপরে উঠে শীতল ও ঘনীভূত হয়ে যে বৃষ্টিপাত ঘটায়, তাকে পরিচলন বৃষ্টিপাত বলে।
পরিচলন বৃষ্টিপাত কোথায় বেশি হয়?
নিরক্ষীয় অঞ্চল ও উষ্ণ উপকূলীয় এলাকায় (যেমন – আমাজন বেসিন, কঙ্গো অঞ্চল) এ ধরনের বৃষ্টিপাত বেশি হয়।
পরিচলন বৃষ্টিপাত কখন হয়?
সাধারণত বিকেল বা সন্ধ্যায় তাপমাত্রা বেশি থাকলে এই বৃষ্টিপাত হয়।
শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত কী?
জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু পর্বতের ঢাল বেয়ে উপরে উঠে শীতল হয়ে যে বৃষ্টিপাত ঘটায়, তাকে শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত বলে।
শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাতের উদাহরণ দাও।
ভারতের চেরাপুঞ্জি ও মৌসিনরামে (মেঘালয়) এই বৃষ্টিপাত হয়, কারণ বঙ্গোপসাগর থেকে আসা আর্দ্র বায়ু খাসি-জয়ন্তিয়া পাহাড়ে বাধা পায়।
শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাতের ফলে কী হয়?
পর্বতের একদিকে প্রচুর বৃষ্টি হয় (অভিমুখী ঢাল), অন্যদিকে বৃষ্টি কম হয় (প্রতিপাত ঢাল বা বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল)।
ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত কী?
উষ্ণ ও শীতল বায়ু মিলিত হয়ে বা নিম্নচাপ কেন্দ্রে বায়ু ঊর্ধ্বগামী হয়ে যে বৃষ্টিপাত ঘটায়, তাকে ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত বলে।
ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত কোথায় হয়?
ক্রান্তীয় অঞ্চলে সাইক্লোন (ঘূর্ণিঝড়) ও নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে ডিপ্রেশনের কারণে এই বৃষ্টিপাত হয়।
ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাতের বৈশিষ্ট্য কী?
1. ক্রান্তীয় অঞ্চলে স্বল্পস্থায়ী কিন্তু ভারী বৃষ্টি হয় (যেমন – টাইফুন, হারিকেন)।
2. নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী হালকা বৃষ্টি হয়।
পরিচলন ও শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাতের প্রধান পার্থক্য কী?
1. পরিচলন বৃষ্টিপাত তাপের কারণে হয়, সাধারণত সমতলে।
2. শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত পর্বতের কারণে হয়, আর্দ্র বায়ু পাহাড়ে বাধা পেলে।
ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত ও পরিচলন বৃষ্টিপাতের মধ্যে পার্থক্য কী?
1. পরিচলন বৃষ্টিপাত স্থানীয় তাপে হয়, স্বল্পস্থায়ী।
2. ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত বায়ুচাপের পার্থক্যে হয়, ব্যাপক এলাকাজুড়ে প্রভাব ফেলে।
কোন বৃষ্টিপাত সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী?
নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত দীর্ঘস্থায়ী হয়, ক্রান্তীয় অঞ্চলে তা স্বল্পস্থায়ী।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “পরিচলন, শৈলোৎক্ষেপ ও ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত বলতে কী বোঝো? পরিচলন, শৈলোৎক্ষেপ ও ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাতের মধ্যে পার্থক্য লেখো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “পরিচলন, শৈলোৎক্ষেপ ও ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত বলতে কী বোঝো? পরিচলন, শৈলোৎক্ষেপ ও ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাতের মধ্যে পার্থক্য লেখো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের দ্বিতীয় অধ্যায় “বায়ুমণ্ডল – আর্দ্রতা ও অধঃক্ষেপণ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন