আজকের আলোচনার বিষয় হল সমভূমি ও মালভূমি। দশম শ্রেণীর মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য এই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” অধ্যায়ের “ভারতের ভূপ্রকৃতি” বিভাগে এই বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এই আলোচনায় আমরা সমভূমি ও মালভূমির সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য, পার্থক্য এবং তাদের গুরুত্ব সম্পর্কে জানবো। পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য এই বিষয়টি সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকা অপরিহার্য।
![সমভূমি ও মালভূমি কি? সমভূমি ও মালভূমির গুরুত্বের তুলনা 1 সমভূমি ও মালভূমি](http://solutionwbbse.com/wp-content/uploads/2024/04/ভারতের-পূর্ব-ও-পশ্চিম-উপকূল-সমভূমির-শ্রেণিবিভাগ-করো-2.webp)
সমভূমি
সমুদ্রপৃষ্ঠের একই সমতলে অথবা সামান্য উঁচুতে, 300 মিটারের মধ্যে অবস্থিত সমতল স্থলভাগকে সমভূমি বলে। পৃথিবীর বেশিরভাগ সমভূমি সমুদ্র উপকূল এবং নদী অববাহিকায় গড়ে উঠেছে।
সমভূমির বৈশিষ্ট্য
- সমভূমির উপরিভাগ সাধারণত সমতল থাকে।
- সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সমভূমির উচ্চতা বেশি হয় না।
- কিছু সমভূমি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বেশ উঁচুতে অবস্থিত। উদাহরণস্বরূপ, উত্তর আমেরিকার রকি পর্বতের পাদদেশের সমভূমি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বেশ খানিকটা উঁচু।
- আবার কিছু সমভূমি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে কিছুটা নীচে অবস্থিত। উদাহরণস্বরূপ, এশিয়া মহাদেশের কাস্পিয়ান সাগরের উপকূল ভাগের সমভূমি সমুদ্রপৃষ্ঠের চেয়ে নীচু।
- কখনও কখনও সমভূমি সামান্য ঢেউ খেলানো হয়। উদাহরণস্বরূপ, বর্ধমান জেলার সমভূমি কিছুটা ঢেউ খেলানো।
- সমভূমি কৃষিকাজের জন্য বেশ অনুকূল।
- সমভূমিতে জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি থাকে।
- সমভূমিতে যাতায়াত ব্যবস্থা সহজে স্থাপন করা যায়।
- বিভিন্ন শিল্প-প্রতিষ্ঠান সমভূমিতে স্থাপন করা হয়।
মালভূমি
সাধারণত সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩০০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত, বিস্তৃত ভূ-ভাগ যার পৃষ্ঠদেশ প্রায় সমতল বা কিছুটা তরঙ্গায়িত এবং চারপাশ খাড়া ঢালযুক্ত তাকে মালভূমি (Plateau) বলা হয়।
![সমভূমি ও মালভূমি কি? সমভূমি ও মালভূমির গুরুত্বের তুলনা 2 মালভূমি](http://solutionwbbse.com/wp-content/uploads/2024/02/ব্যবচ্ছিন্ন-মালভূমি-Dissected-Plateau.webp)
মালভূমির বৈশিষ্ট্য
- উচ্চতা: ৩০০ মিটারের বেশি (কয়েক হাজার মিটার পর্যন্ত হতে পারে)
- আকৃতি: টেবিলের মতো, সমতল পৃষ্ঠদেশ, চারপাশে খাড়া ঢাল
- বিস্তৃতি: বিশাল
- উদাহরণ: তিব্বত মালভূমি (৪৫০০ মিটার উঁচু, পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু), লাডাক মালভূমি (৩৫০০ মিটার উঁচু, ভারতের সবচেয়ে উঁচু)
- মালভূমি বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গঠিত হয়, যেমন পর্বতমালা ক্ষয়, প্লেট টেকটোনিক্স, এবং ज्वालामुखी ক্রিয়া।
- বিভিন্ন ধরণের জলবায়ু এবং উদ্ভিজ্জ জীবন মালভূমিতে পাওয়া যায়।
- খনিজ সম্পদের জন্য মালভূমি গুরুত্বপূর্ণ।
- জনবসতি ঘনত্ব কম, কৃষি, পশুপালন, এবং খনিজ উত্তোলনের উপর নির্ভরশীল।
সমভূমি ও মালভূমির গুরুত্বের তুলনা
তুলনার বিষয় | সমভূমি | মালভূমি |
সম্পদের প্রাপ্যতা | সমভূমি সাধারণত খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ হয় না। তবে খনিজ তেল বা প্রাকৃতিক গ্যাস পাওয়া যায়। | মালভূমি লোহা, কয়লা প্রভৃতি খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ। |
কৃষিকাজ | নদী, জলাশয় সহজলভ্য বলে সমভূমি কৃষিকাজে খুবই উন্নত হয়। | মালভূমি কৃষিকাজে খুব একটা উন্নত নয়। জলসেচের ব্যবস্থা করলে কিছুটা কৃষিকাজ করা যায়। |
পরিবহণ ব্যবস্থা | সমভূমিতে সহজেই রেল ও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায় ৷ | মালভূমিতে রেল ও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা যথেষ্ট কঠিন। |
জনবসতি | সমভূমি অঞ্চল সাধারণত খুবই ঘনবসতিপূর্ণ হয়। | প্রতিকূল প্রাকৃতিক পরিবেশের কারণে মালভূমি অঞ্চলে জনবসতির ঘনত্ব কম হয়। |
আজকের আলোচনা আমাদের দুটি প্রধান ভূ-প্রকৃতি – সমভূমি ও মালভূমি – সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করিয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের তুলনায় নিম্ন উচ্চতায় অবস্থিত বিস্তৃত সমতল ভূমি হলো সমভূমি। এটি কৃষিকাজ, জনবসতি, শিল্প-প্রতিষ্ঠান স্থাপনের জন্য উপযোগী। নদী, বন্যা ও পলিবাহিত মাটির প্রভাবেই সমভূমি গঠিত হয়। বিশ্বের কয়েকটি বিখ্যাত সমভূমি হলো ভারতের গাঙ্গেয় সমভূমি, মিসরের সমভূমি এবং যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপি-মিজুরি সমভূমি।
মন্তব্য করুন