সমভূমি ও মালভূমি কি? সমভূমি ও মালভূমির গুরুত্বের তুলনা

আজকের আলোচনার বিষয় হল সমভূমি ও মালভূমি। দশম শ্রেণীর মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য এই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” অধ্যায়ের “ভারতের ভূপ্রকৃতি” বিভাগে এই বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

এই আলোচনায় আমরা সমভূমি ও মালভূমির সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য, পার্থক্য এবং তাদের গুরুত্ব সম্পর্কে জানবো। পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য এই বিষয়টি সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকা অপরিহার্য।

সমভূমি ও মালভূমি

সমভূমি

সমুদ্রপৃষ্ঠের একই সমতলে অথবা সামান্য উঁচুতে, 300 মিটারের মধ্যে অবস্থিত সমতল স্থলভাগকে সমভূমি বলে। পৃথিবীর বেশিরভাগ সমভূমি সমুদ্র উপকূল এবং নদী অববাহিকায় গড়ে উঠেছে।

সমভূমির বৈশিষ্ট্য

  • সমভূমির উপরিভাগ সাধারণত সমতল থাকে।
  • সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সমভূমির উচ্চতা বেশি হয় না।
  • কিছু সমভূমি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বেশ উঁচুতে অবস্থিত। উদাহরণস্বরূপ, উত্তর আমেরিকার রকি পর্বতের পাদদেশের সমভূমি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বেশ খানিকটা উঁচু।
  • আবার কিছু সমভূমি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে কিছুটা নীচে অবস্থিত। উদাহরণস্বরূপ, এশিয়া মহাদেশের কাস্পিয়ান সাগরের উপকূল ভাগের সমভূমি সমুদ্রপৃষ্ঠের চেয়ে নীচু।
  • কখনও কখনও সমভূমি সামান্য ঢেউ খেলানো হয়। উদাহরণস্বরূপ, বর্ধমান জেলার সমভূমি কিছুটা ঢেউ খেলানো।
  • সমভূমি কৃষিকাজের জন্য বেশ অনুকূল।
  • সমভূমিতে জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি থাকে।
  • সমভূমিতে যাতায়াত ব্যবস্থা সহজে স্থাপন করা যায়।
  • বিভিন্ন শিল্প-প্রতিষ্ঠান সমভূমিতে স্থাপন করা হয়।

মালভূমি

সাধারণত সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩০০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত, বিস্তৃত ভূ-ভাগ যার পৃষ্ঠদেশ প্রায় সমতল বা কিছুটা তরঙ্গায়িত এবং চারপাশ খাড়া ঢালযুক্ত তাকে মালভূমি (Plateau) বলা হয়।

মালভূমি

মালভূমির বৈশিষ্ট্য

  • উচ্চতা: ৩০০ মিটারের বেশি (কয়েক হাজার মিটার পর্যন্ত হতে পারে)
  • আকৃতি: টেবিলের মতো, সমতল পৃষ্ঠদেশ, চারপাশে খাড়া ঢাল
  • বিস্তৃতি: বিশাল
  • উদাহরণ: তিব্বত মালভূমি (৪৫০০ মিটার উঁচু, পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু), লাডাক মালভূমি (৩৫০০ মিটার উঁচু, ভারতের সবচেয়ে উঁচু)
  • মালভূমি বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গঠিত হয়, যেমন পর্বতমালা ক্ষয়, প্লেট টেকটোনিক্স, এবং ज्वालामुखी ক্রিয়া।
  • বিভিন্ন ধরণের জলবায়ু এবং উদ্ভিজ্জ জীবন মালভূমিতে পাওয়া যায়।
  • খনিজ সম্পদের জন্য মালভূমি গুরুত্বপূর্ণ।
  • জনবসতি ঘনত্ব কম, কৃষি, পশুপালন, এবং খনিজ উত্তোলনের উপর নির্ভরশীল।

সমভূমি ও মালভূমির গুরুত্বের তুলনা

তুলনার বিষয়সমভূমিমালভূমি
সম্পদের প্রাপ্যতাসমভূমি সাধারণত খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ হয় না। তবে খনিজ তেল বা প্রাকৃতিক গ্যাস পাওয়া যায়।
 
মালভূমি লোহা, কয়লা প্রভৃতি খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ।
কৃষিকাজনদী, জলাশয় সহজলভ্য বলে সমভূমি কৃষিকাজে খুবই উন্নত হয়।মালভূমি কৃষিকাজে খুব একটা উন্নত নয়। জলসেচের ব্যবস্থা করলে কিছুটা কৃষিকাজ করা যায়।
পরিবহণ ব্যবস্থাসমভূমিতে সহজেই রেল ও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায় ৷মালভূমিতে রেল ও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা যথেষ্ট কঠিন।
জনবসতিসমভূমি অঞ্চল সাধারণত খুবই ঘনবসতিপূর্ণ হয়।প্রতিকূল প্রাকৃতিক পরিবেশের কারণে মালভূমি অঞ্চলে জনবসতির ঘনত্ব কম হয়।
 

আজকের আলোচনা আমাদের দুটি প্রধান ভূ-প্রকৃতি – সমভূমি ও মালভূমি – সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করিয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের তুলনায় নিম্ন উচ্চতায় অবস্থিত বিস্তৃত সমতল ভূমি হলো সমভূমি। এটি কৃষিকাজ, জনবসতি, শিল্প-প্রতিষ্ঠান স্থাপনের জন্য উপযোগী। নদী, বন্যা ও পলিবাহিত মাটির প্রভাবেই সমভূমি গঠিত হয়। বিশ্বের কয়েকটি বিখ্যাত সমভূমি হলো ভারতের গাঙ্গেয় সমভূমি, মিসরের সমভূমি এবং যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপি-মিজুরি সমভূমি।

4/5 - (1 vote)


Join WhatsApp Channel For Free Study Meterial Join Now
Join Telegram Channel Free Study Meterial Join Now

মন্তব্য করুন