আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘সাম্প্রদায়িকতা এবং ছাত্রসমাজ’ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করব। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় এই রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। একবার ভালোভাবে আয়ত্ত করলে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি—যেকোনো ক্লাসের পরীক্ষাতেই তোমরা এই রচনার প্রশ্নের উত্তর সহজেই লিখতে পারবে।

সাম্প্রদায়িকতা এবং ছাত্রসমাজ – প্রবন্ধ রচনা
ভূমিকা –
সাম্প্রদায়িকতা সভ্য পৃথিবীতে আদিমতার আস্ফালন। ধর্মকে আশ্রয় করে সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে আসে হিংসার হানাহানি। রক্তাক্ত হয় মানুষের পৃথিবী, বিপর্যস্ত হয় দেশের অখণ্ডতা এবং সংহতির ধারণা।
সাম্প্রদায়িকতা কী?
যখন নিজ ধর্মের শ্রেষ্ঠত্বের প্রশ্নে অন্য ধর্মের মানুষকে হেয় করা অথবা আঘাত করার চেষ্টা হয় তখনই সাম্প্রদায়িকতার সৃষ্টি হয়। সাম্প্রদায়িকতায় ধর্মকে আশ্রয় করে হিংসার সৃষ্টি হয়। মানুষের অন্তর্গত দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে কিছু স্বার্থান্ধ মানুষ ধর্মীয় উগ্রতা তৈরি করে। কখনও এর সঙ্গে যুক্ত হয় সংকীর্ণ রাজনীতি, আর এর ফলে মৌলবাদের আত্মপ্রকাশে রক্তাক্ত হয় মনুষ্যত্ব।
সাম্প্রদায়িকতার দৃষ্টান্ত ও পরিণাম –
ভারতবর্ষে ধর্মীয় সংঘাতের বেশ কিছু নজির মধ্যযুগে পাওয়া যায়। কিন্তু তা শুধুই দুটি পৃথক ধর্মের মধ্যে ছিল না, একই ধর্মের অন্তর্গত বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যেও ছিল। ইংরেজরা সুকৌশলে ধর্মের এই দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে দেশের ঐক্য বিনষ্ট করতে সচেষ্ট হয় এবং তাদের চেষ্টা যে সফল হয়েছিল তা বোঝা যায় স্বাধীনতা সমকালীন দাঙ্গায়। এরপর বারেবারে এদেশে দাঙ্গার ঘটনা ঘটে। 1984 খ্রিস্টাব্দ থেকে 1989 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ছোটো-বড়ো এক হাজার সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ হয়। 1990 খ্রিস্টাব্দে এই সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পায়। 1992 খ্রিস্টাব্দে অযোধ্যায় বিতর্কিত বাবরি মসজিদ ভাঙাকে কেন্দ্র করে যে দাঙ্গা হয় বা পরবর্তীকালে গোধরা বা গুজরাটে যে দাঙ্গা হয় তা সভ্যতার লজ্জা। একদিকে অজস্র মৃত্যু বা জাতীয় সম্পত্তি ধ্বংসের ঘটনা যেমন ঘটে, তেমনই এই অনৈক্যের সুযোগ নিয়ে বৈদেশিক শক্তি দেশের সার্বভৌমত্ব নষ্ট করতে তৎপর হয়।
সাম্প্রদায়িকতার উলটোদিক –
ভারতবর্ষে পাল রাজত্বে ধর্মীয় সম্প্রীতির প্রকৃষ্ট উদাহরণ পাওয়া যায়। মোগল আমলে এবং বাংলায় মুসলিম শাসনে ধর্মীয় সমন্বয়বাদের অজস্র উদাহরণ আমরা দেখতে পাই। মধ্যযুগে চৈতন্য, কবির, দাদু থেকে লালন ফকির এই ধর্মসমন্বয়ের আদর্শই প্রচার করেছেন। সুরদাস আর তুলসীদাসের গানে এই সম্প্রীতির বাণীই প্রকাশ পায়। আধুনিক কালে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দের কবিতায়, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাসে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, মানবতার পক্ষে শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের বলিষ্ঠ কণ্ঠই প্রকাশিত হয়েছে।
ছাত্রসমাজের ভূমিকা –
মানবতার পরিপন্থী এই সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধে ছাত্রসমাজের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। যে অজ্ঞতা এবং অন্ধবিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি হয় তা দূর করতে ছাত্রসমাজ অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করতে পারে। মানুষের মধ্যে শিক্ষার এবং বিজ্ঞানচেতনার প্রসারের দ্বারাই এই কাজ সম্ভব হতে পারে। যেসব অশুভশক্তি সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়ায় তাদের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করে মহাপুরুষদের বাণী ও ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শের কথা প্রচার করে, সম্প্রীতির আবহাওয়ার বিকাশ ছাত্রসমাজই ঘটাতে পারে। তাই রবীন্দ্রনাথের কথায় –
ও তুই বারে বারে জ্বালাবি বাতি
হয়তো বাতি জ্বলবে না,
তা বলে ভাবনা করা চলবে না।
প্রগতির লক্ষ্যে মানুষের যে অনিঃশেষ যাত্রা তা মানবতাকে বাদ দিয়ে হতে পারে না। সাম্প্রদায়িকতা মানবতার অন্তরায়। তাই এই মধ্যযুগীয় বর্বরতা থেকে সমাজের মুক্তি সকলের প্রত্যাশিত।
উপসংহার –
প্রগতির লক্ষ্যে মানুষের যে অনিঃশেষ যাত্রা তা মানবতাকে বাদ দিয়ে হতে পারে না। সাম্প্রদায়িকতা মানবতার অন্তরায়। তাই এই মধ্যযুগীয় বর্বরতা থেকে সমাজের মুক্তি সকলের প্রত্যাশিত।
আরও পড়ুন – প্রতিবন্ধীদের প্রতি ছাত্রছাত্রীদের কর্তব্য – প্রবন্ধ রচনা
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘সাম্প্রদায়িকতা এবং ছাত্রসমাজ’ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করেছি। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় ‘সাম্প্রদায়িকতা এবং ছাত্রসমাজ’ রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা।
আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন