প্রতিবন্ধীদের প্রতি ছাত্রছাত্রীদের কর্তব্য – প্রবন্ধ রচনা

Rahul

আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা প্রতিবন্ধীদের প্রতি ছাত্রছাত্রীদের কর্তব্য – প্রবন্ধ রচনা নিয়ে আলোচনা করবো। প্রবন্ধ রচনা মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষা এবং স্কুল পরীক্ষার একটি নিয়মিত অংশ। “প্রতিবন্ধীদের প্রতি ছাত্রছাত্রীদের কর্তব্য” – এই বিষয়টি একটি গুরুত্বপূর্ণ রচনা। এই রচনাটি বারবার পরীক্ষায় দেখা যায়। তাই, ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত যেকোনো পরীক্ষায় এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারার জন্য, এই রচনাটি মুখস্ত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রতিবন্ধীদের প্রতি ছাত্রছাত্রীদের কর্তব্য - প্রবন্ধ রচনা

প্রতিবন্ধীদের প্রতি ছাত্রছাত্রীদের কর্তব্য – প্রবন্ধ রচনা

“কোথাও রয়েছে যেন অবিনশ্বর আলোড়ন;
এ মাটির কোলে ছাড়া অন্য স্থানে নয়;
সেখানে মৃত্যুর আগে হয় না মরণ।”

– জীবনানন্দ দাশ

ভূমিকা –

পৃথিবীতে মানুষের যে অনিবার্য শ্রেষ্ঠত্ব, তা সম্ভব হয়েছে শক্তি আর বুদ্ধির মিশ্রণে। পরিশ্রম আর মানসিক দক্ষতার সঠিক প্রয়োগই হল মানুষের সাফল্যের রসায়ন। অথচ মানুষের এই গর্বিত বিচরণের পাশাপাশি থেকে গেছে অন্য মানুষেরা, যাদের শারীরিক বা মানসিক বিকাশ কোনো-না-কোনো কারণে ব্যাহত হয়েছে। মুক, বধির, পঙ্গু বা দৃষ্টিশক্তিহীন কিংবা জড়বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষেরাই সমাজে ‘প্রতিবন্ধী’ হিসেবে চিহ্নিত। আলোকিত মানবসভ্যতার আড়ালে এ এক হতাশার অন্ধকারময় কাহিনি।

পৃথিবীর প্রেক্ষাপটে –

পৃথিবীতে এই মুহূর্তে ৬০০ মিলিয়ন মানুষ আছেন যারা শারীরিক বা মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী। এই সংখ্যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার দশ শতাংশ। ২০০৫ খ্রিস্টাব্দের জাতীয় নমুনা সমীক্ষা দেখিয়েছে যে, ভারতের মোট জনসংখ্যার ২.৩ শতাংশ মানুষ প্রতিবন্ধী। ২০১১-র জনগণনায় প্রতিবন্ধী মানুষের মোট সংখ্যা ২.৬৮ কোটি। বর্তমানে আধুনিক মানুষের গতিময় জীবন এবং খাদ্যাভ্যাস বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম দিচ্ছে। নানা কারণে পারমাণবিক দূষণ কিংবা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ও বিকলাঙ্গতার সৃষ্টি করে। শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী হিসেবে জন্মানোর অপর একটি কারণ হল অপুষ্টি। প্রতিবন্ধীদের সমাজের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে দেশ এবং আন্তর্জাতিক স্তরে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দকে ‘আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী বর্ষ’ হিসেবে ঘোষণা করেছে রাষ্ট্রসংঘ। ওই সময় থেকেই প্রতিবছর ১৫ মার্চ দিনটিকে ‘আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস’ হিসেবে পালন করা হচ্ছে। ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দ-এই সময়কালকে চিহ্নিত করা হয়েছে ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জ দশক’ হিসেবে। এদের উন্নতির জন্য গ্রহণ করা হয়েছে বিশ্বব্যাপী কার্যক্রম। শিক্ষা, কর্মসংস্থান, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক নিরাপত্তা, বিনোদন ও ক্রীড়া ইত্যাদি বারোটি ক্ষেত্রকে প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে ‘টার্গেট এরিয়া’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ভারতেও প্রতিবন্ধীদের উন্নতির জন্য কেন্দ্রীয় ও রাজ্য স্তরে আলাদা দপ্তর রয়েছে, চাকরিতে সংরক্ষণের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

ছাত্রছাত্রীদের কর্তব্য –

প্রতিবন্ধীদের সামাজিক পুনর্বাসনে ছাত্রসমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। সহানুভূতি বা অনুকম্পা নয়, ছাত্রছাত্রীরাই পারে পিছিয়ে থাকা মানুষগুলির দিকে বন্ধুত্বের হাত প্রসারিত করে দিতে। এই বিষয়ে ছাত্রছাত্রীরাই নাগরিক সচেতনতা তৈরি করতে পারে। দ্বিতীয়ত, প্রতিবন্ধীদের পাশে থেকে তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তোলার কাজও তাদের পক্ষেই করা সম্ভব। ইংলিশ চ্যানেলজয়ী সাঁতারু মাসুদুর রহমান কিংবা বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংস হতে পারেন শিখরজয়ের প্রেরণা। এ ছাড়া এলাকায় প্রতিবন্ধী-ক্রীড়া সংগঠন, প্রতিবন্ধীদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান-এসবের মধ্য দিয়ে ছাত্রছাত্রীরা তাদের ‘বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন বন্ধু’দের জন্য নিয়ে আসতে পারে আনন্দ আর খুশির বার্তা। স্কুলে সহপাঠী হিসেবে যদি এমন কোনো ছাত্রছাত্রী থাকে তাকে কোনোভাবেই উপেক্ষার চোখে না দেখে, বরং তার দিকে সহৃদয়তার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।

উপসংহার –

প্রতিবন্ধীদের সমাজে মান্যতা ও প্রতিষ্ঠা দেওয়া একটি মানবিক প্রয়াস। আর সেই প্রয়াসে ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থহীন সক্রিয় অংশগ্রহণ এই প্রয়াসকে সার্থক করে তুলবে।

আরও পড়ুন – দেশগঠনে ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা – প্রবন্ধ রচনা

আজকের আলোচনায়, আমরা প্রতিবন্ধীদের প্রতি ছাত্রছাত্রীদের কর্তব্য সম্পর্কে জানতে পেরেছি। প্রবন্ধ রচনা মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষা এবং স্কুল পরীক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, এবং “প্রতিবন্ধীদের প্রতি ছাত্রছাত্রীদের কর্তব্য” প্রায়ই একটি আলোচিত বিষয়। এই রচনাটি মুখস্থ করে রাখলে, ৬ষ্ঠ থেকে ১২ষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত যেকোনো পরীক্ষায় এই প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম হবেন।

তবে, মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে কেবল মুখস্থ করাই যথেষ্ট নয়। প্রতিবন্ধীদের প্রতি আমাদের কর্তব্য সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা থাকা এবং সেই অনুযায়ী আচরণ করা জরুরি। আমাদের সকলের উচিত সহানুভূতিশীল এবং সহায়ক মনোভাবাপন্ন হওয়া, যাতে প্রতিবন্ধীরা সমাজের সমান সদস্য হিসেবে জীবনযাপন করতে পারে।

এই লক্ষ্য অর্জনে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ তৈরি করা এবং তাদের সম্ভাবনা বিকাশে সহায়তা করা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব।

শেষ কথা, প্রতিবন্ধীদের প্রতি আমাদের কর্তব্য শুধু পরীক্ষার প্রশ্নের উত্তর নয়, বরং মানবিকতার প্রতি আমাদের দায়িত্ব। আসুন আমরা সকলেই মিলে একটি সকলের জন্য সমন্বিত সমাজ গড়ে তুলতে কাজ করি।

JOIN US ON WHATSAPP

JOIN US ON TELEGRAM

Please Share This Article

About The Author

Related Posts

এলআইসি

এলআইসি (LIC) কি? এলআইসি এর ইতিহাস

Padmashri Award 2010 Winner List

পদ্মশ্রী পুরস্কার ২০১০ – Padmashri Award 2010 Winner List

সাম্প্রতিক জলসংকট - প্রবন্ধ রচনা

সাম্প্রতিক জলসংকট – প্রবন্ধ রচনা

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

Trending Now

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Class 9 – English Reference – Tom Loses a Tooth – Question and Answer

Class 9 – English Reference – The North Ship – Question and Answer

Class 9 – English – His First Flight – Question and Answer

Class 9 – English – A Shipwrecked Sailor – Question and Answer