আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘সাম্প্রতিক জলসংকট’ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করব। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় এই রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। একবার ভালোভাবে আয়ত্ত করলে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি—যেকোনো ক্লাসের পরীক্ষাতেই তোমরা এই রচনার প্রশ্নের উত্তর সহজেই লিখতে পারবে।
সাম্প্রতিক জলসংকট – প্রবন্ধ রচনা
‘সুপ্রভাত নয়। ‘কেমন আছেন’ নয়। ইদানীং চেন্নাইয়ের
– আনন্দবাজার পত্রিকা, 3 জুলাই, 2019
সৌজন্যমূলক প্রথম প্রশ্ন জল এসেছে?’
ভূমিকা –
‘জলই জীবন।’ কিন্তু ভারত সরকারের নীতি আয়োগের সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী আগামী বছর থেকে ভয়ানক জলসংকটের মুখোমুখি হতে চলেছে দেশের একুশটি শহর। 2020 খ্রিস্টাব্দ নাগাদ মাদ্রাজ, বাঙ্গালোর, হায়দরাবাদ, দিল্লির মতো শহরগুলো সম্পূর্ণ জলশূন্য হয়ে যাবে। আর 2030 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে দেশের মোট জনসংখ্যার চল্লিশ শতাংশ মানুষের কাছে পানীয় জল পাওয়ার কোনো সুযোগই থাকবে না।
শেষের শুরু –
19 জুন, 2019 চেন্নাই নগর নিগমের পক্ষ থেকে চেন্নাইকে জলশূন্য ঘোষণা করা হয়। যে চারটি জলাধার থেকে শহরে জলসরবরাহ করা হয় সেগুলো সম্পূর্ণ শুকিয়ে যাওয়ার কারণেই এই অবস্থা। গত বছর বৃষ্টি কম হওয়ার এর একটা বড়ো কারণ। নব্বই লক্ষ মানুষের শহরে জলের জন্য হাহাকার তীব্র হয়ে ওঠে। ভূগর্ভস্থ জলের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার বিপদকে ভয়াবহ করে তোলে। বেঙ্গালুরুতেও তীব্র হয় জলসংকট। ভূগর্ভের জলস্তরের অস্বাভাবিক নেমে যাওয়া, আর জনসংখ্যার অসম্ভব বেড়ে যাওয়ার কারণে নিকট ভবিষ্যতে বেঙ্গালুরু আর মানুষের বাসযোগ্য থাকবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ সায়েন্স-এর বিশেষজ্ঞরা। রাজধানী দিল্লিতেও সংকটের ছায়া ক্রমশই দীর্ঘতর হচ্ছে। প্রতিবছর 10 সেমি করে জলস্তর নেমে যাচ্ছে সেখানে। বদরপুর, দ্বারকা ইত্যাদি অঞ্চলে তীব্র জলকষ্ট দেখা দিয়েছে।
এই রাজ্যের কথা –
2013 খ্রিস্টাব্দের এক সমীক্ষা দেখিয়েছে যে, ভূগর্ভস্থ জলের নিরিখে রাজ্যে আধা সংকটজনক ব্লকের সংখ্যা ছত্রিশ থেকে বেড়ে হয়েছে সাতাত্তর। মুরশিদাবাদের একটি ব্লকে অতি সংকটজনক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু একইসঙ্গে এই সতর্কতাও জারি করা হয়েছে যে, উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, পূর্ব মেদিনীপুরের মতো জল নিয়ে আপাত নিশ্চিন্ত জেলাগুলোতেও দ্রুত নামছে ভূগর্ভের জলস্তর। পুরুলিয়া, বাঁকুড়ার মতো জেলাগুলো এমনিতেই জলসংকটে থাকে, বিশেষত গ্রীষ্মকালে। তবে সবথেকে চিন্তার কারণ অবশ্যই কলকাতা। কলকাতার জলস্তর ইতিমধ্যেই অনেকটা নেমে গেছে।
সংকটের কারণ –
নগরায়ণের কারণে পুকুর এবং জলাভূমি বোজানো হয়েছে নির্বিচারে। বন্ধ হয়েছে জলের উৎস। বৃষ্টির জলও ভূগর্ভের প্রবেশের কোনো পথ পাচ্ছে না। আর তাই জলের উপর নির্ভরতা বেড়েছে গভীর নলকূপের। নির্মাণক্ষেত্রে এবং কৃষিজমিতে মাত্রাছাড়া নলকূপের ব্যবহার ভূগর্ভের জলস্তরকে নামিয়ে দিচ্ছে। নদী মজে যাওয়া জলসংকটের আরেকটি কারণ। আর এই সংকট আরও বাড়িয়ে তুলছে নাগরিকদের সচেতনতার অভাব। শুধু শহর কলকাতাতেই, পুরসভার হিসেব অনুযায়ী প্রতিদিন দৈনিক 20 লক্ষ টাকার জল অপচয় হয়।
সমাধানের লক্ষ্যে –
অনিয়ন্ত্রিত নগরায়ণ বন্ধ করতে হবে। বিপন্ন বেঙ্গালুরু আগামী দশ বছর নতুন আবাসন তৈরি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পুকুর-জলাশয় বোজানো বন্ধ করতে হবে। নদীর সংস্কারও জরুরি। বৃষ্টির জলের ব্যবহারও অতি প্রয়োজনীয়। সবমিলিয়ে জলের বিকল্প উৎস খুঁজে নিতে হবে। কৃষিক্ষেত্রে জলের ব্যবহার সর্বাধিক। পশ্চিমবঙ্গ সরকার ইতিমধ্যেই জল বাঁচাতে বোরো ধানের বদলে ভুট্টা চাষে জোর দিয়েছে। 1018-2019 খ্রিস্টাব্দে কেন্দ্রীয় বাজেটে মাটির তলায় জল ফেরানোর জন্য বরাদ্দ হয়েছিল 2,146 কোটি টাকা। রাজ্য সরকার নদী সংস্কারে 2 হাজার 700 কোটি টাকা খরচের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু সকলের আগে দরকার নাগরিক সচেতনতা। জলের অপচয় বন্ধ না হলে সকলেরই ধ্বংস নিশ্চিত।
উপসংহার –
আমাদের দেশে প্রতি 9 জন লোকের মধ্যে একজনের পরিশ্রুত পানীয় জল জোটে না। প্রাপ্ত জলের পরিমাণের নিরিখে ভারতের স্থান পৃথিবীতে 132। এরপরে সেই জলটুকুও জুটবে না। আমরা বোধহয় সেই শেষের দিনের অপেক্ষায় আছি। “কোথায় লুকোবে? ধু ধু করে মরুভূমি/ক্ষয়ে ক্ষয়ে ছায়া মরে গেছে পদতলে।/আজ দিগন্তে মরীচিকাও যে নেই।” (সুধীন্দ্রনাথ দত্ত)
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘সাম্প্রতিক জলসংকট’ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করেছি। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় ‘সাম্প্রতিক জলসংকট’ রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা।
আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন