সমুদ্রস্রোত উৎপত্তির কারণ ব্যাখ্যা করো।

Rohit Mondal

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “সমুদ্রস্রোত উৎপত্তির কারণ ব্যাখ্যা করো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। “সমুদ্রস্রোত উৎপত্তির কারণ ব্যাখ্যা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের তৃতীয় অধ্যায় “বারিমণ্ডল – সমুদ্রস্রোত ও জোয়ারভাটা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

সমুদ্রস্রোত উৎপত্তির কারণ ব্যাখ্যা করো।
সমুদ্রস্রোত উৎপত্তির কারণ ব্যাখ্যা করো।
Contents Show

সমুদ্রস্রোত উৎপত্তির কারণ ব্যাখ্যা করো।

অথবা, সমুদ্রস্রোত উৎপত্তির যে-কোনো পাঁচটি কারণ ব্যাখ্যা করো।

সমুদ্রস্রোত উৎপত্তির কারণ –

কতকগুলি প্রাকৃতিক কারণে সমুদ্রের পৃষ্ঠ জলরাশি নিয়মিতভাবে নির্দিষ্ট দিকে প্রবাহিত হয়। একে সমুদ্রস্রোত বলে। আধুনিক সমুদ্রবিজ্ঞানীরা সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির যে কারণগুলি উল্লেখ করেছেন তা হল –

পৃথিবীর প্রকৃতি সম্বন্ধীয় –

  • মহাকর্ষীয় বল।
  • আবর্তন বল।
  • কোরিওলিস বল।

 বহিঃসামুদ্রিক বা বায়ুমন্ডলীয় –

  • বায়ুচাপের তারতম্য।
  • বায়ুপ্রবাহ।
  • অধঃক্ষেপণ।
  •  বাষ্পীভবন।

আন্তঃসামুদ্রিক কারণ –

  • সমুদ্রজলের চাপীয় ঢাল।
  • উষ্ণতার তারতম্য।
  • লবণাক্ততা ও ঘনত্বের তারতম্য।
  • হিমবাহের গলন।

সমুদ্রস্রোতের পরিবর্তন সংক্রান্ত কারণ –

  • উপকূলের আকৃতি।
  • বায়ুপ্রবাহের ঋতুগত পরিবর্তন।
  • সমুদ্র তলদেশের ভূপ্রকৃতি।
  • বিভিন্ন সমুদ্রস্রোতের মিলন।

মহাকর্ষীয় বল –

পৃথিবীর গোলাকৃতির জন্য সমুদ্রের জলরাশির ওপর মহাকর্ষীয় টান নিরক্ষীয় অঞ্চলে কম এবং মেরু অঞ্চলে বেশি হয়। ফলে স্রোতের গতি নিরক্ষীয় অঞ্চলে বেশি ও মেরু অঞ্চলে কম হয়। অন্যদিকে সমুদ্রের গভীর অংশের জলরাশির ওপর আকর্ষণ বল বেশি হওয়ায় ভারী ও ঘন জল লঘু ও হালকা জলের নীচে প্রবেশ করে এবং গভীর অংশে স্রোতের বেগ হ্রাস পায়।

পৃথিবীর আবর্তন ও কোরিওলিস বল –

পৃথিবীর আবর্তন গতির জন্য যে দিক বিক্ষেপক বল বা কোরিওলিস বল সৃষ্টি হয় তার প্রভাবে সমুদ্রস্রোত নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে মেরু অঞ্চলের দিকে সরাসরি উত্তর-দক্ষিণে প্রবাহিত না হয়ে ফেরল -এর সূত্রানুসারে উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বামদিকে বেঁকে প্রবাহিত হয়।

নিয়ত বায়ুপ্রবাহ –

নিয়ত বায়ুপ্রবাহ সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির প্রধান কারণ। নিয়ত বায়ু সমুদ্রের জলরাশিকে তার নিজের প্রবাহ পথের দিকে তাড়িত করে সমুদ্রস্রোত সৃষ্টি করে। যেমন – উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ুর প্রভাবে তিন মহাসাগরে পশ্চিমগামী নিরক্ষীয় স্রোত সৃষ্টি হয়েছে। পশ্চিমা বায়ু উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় স্রোত এবং মেরু বায়ু সুমেরু ও কুমেরু স্রোত সৃষ্টি করেছে।

সমুদ্রজলের উষ্ণতার তারতম্য –

সূর্যরশ্মির পতন কোণের পার্থক্যে সমুদ্রজলের উষ্ণতার পার্থক্য হয়। উষ্ণতার সমতা বজায় রাখার জন্যই সমুদ্রস্রোতের সৃষ্টি হয়। নিরক্ষীয় অঞ্চলে লম্ব সৌরকিরণে সমুদ্রজল অধিক উত্তপ্ত হালকা ও প্রসারিত হয়ে সমুদ্রজলের ওপর অংশ দিয়ে পৃষ্ঠ বা বহিঃস্রোত রূপে শীতল মেরু অভিমুখী হয়। জলের ওই শূন্যতা পূরণের জন্য মেরু অঞ্চলের শীতল ও ভারী জল সমুদ্রজলের তলদেশ দিয়ে নিরক্ষীয় ও ক্রান্তীয় অঞ্চলের দিকে অন্তঃস্রোত রূপে প্রবাহিত হয়।

সমুদ্রজলের উষ্ণতার তারতম্যের জন্য সমুদ্রস্রোত সৃষ্টি
সমুদ্রজলের উষ্ণতার তারতম্যের জন্য সমুদ্রস্রোত সৃষ্টি

সমুদ্রজলের লবণাক্ততা ও ঘনত্বের তারতম্য –

সমুদ্রজলে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পেলে ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়। বেশি লবণাক্ত ও বেশি ঘনত্বের ভারী জল অন্তঃস্রোত রূপে কম লবণাক্ত জলের দিকে প্রবাহিত হয়। যেমন – নিরক্ষীয় অঞ্চলের কম লবণাক্ত জল স্রোতের আকারে মেরু অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়।

হিমবাহের গলন –

মেরু অঞ্চলের সমুদ্রে প্রচুর পরিমাণ বরফের গলনে প্রচুর পরিমাণে স্বাদুজলের জোগানের ফলে সমুদ্রের জলতলের উচ্চতা বৃদ্ধি পায় এবং লবণাক্ততা হ্রাস পায়। এই জলরাশি নিম্নজলতল বিশিষ্ট অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়ে সমুদ্রস্রোতের সৃষ্টি করে। আটলান্টিক মহাসাগরে পূর্ব গ্রিনল্যান্ড স্রোত এই কারণে সৃষ্টি হয়েছে।

উপকূলের আকৃতি –

সমুদ্রস্রোতের গতিপথে মহাদেশ সমূহের উপকূলভাগ ও দ্বীপ বা দ্বীপপুঞ্জের অবস্থানের জন্য সমুদ্রস্রোত প্রতিহত হয়, দিক পরিবর্তিত হয় ও একাধিক শাখায় বিভক্ত হয়। যেমন – আটলান্টিক মহাসাগরের দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত ব্রাজিলের সাওরক অন্তরীপে বাধা পেয়ে দক্ষিণমুখী ব্রাজিল স্রোতের সৃষ্টি হয়।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

সমুদ্রস্রোত কী?

সমুদ্রের পৃষ্ঠ জলরাশি যখন নিয়মিতভাবে নির্দিষ্ট দিকে প্রবাহিত হয়, তাকে সমুদ্রস্রোত বলে। এটি সমুদ্রের ভিতরে নদীর মতো প্রবাহিত জলধারা।

সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির প্রধান কারণ কী?

সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির প্রধান কারণগুলি হল –
1. পৃথিবীর আবর্তন ও কোরিওলিস বল।
2. নিয়ত বায়ুপ্রবাহ (যেমন আয়ন বায়ু, পশ্চিমা বায়ু)।
3. সমুদ্রজলের উষ্ণতা ও লবণাক্ততার পার্থক্য।
4. মহাকর্ষীয় বলের প্রভাব।
5. সমুদ্রজলের চাপীয় ঢাল।

কোরিওলিস বল সমুদ্রস্রোতকে কীভাবে প্রভাবিত করে?

কোরিওলিস বলের প্রভাবে –
1. উত্তর গোলার্ধে সমুদ্রস্রোত ডানদিকে বেঁকে প্রবাহিত হয়।
2. দক্ষিণ গোলার্ধে বামদিকে বেঁকে প্রবাহিত হয়।
3. এই বলের কারণে নিরক্ষীয় অঞ্চলের স্রোত সরাসরি মেরু অভিমুখী না হয়ে বাঁক নেয়।

সমুদ্রস্রোত কত প্রকার ও কী কী?

মূলত দুই প্রকার –
1. উষ্ণ স্রোত – উষ্ণ অঞ্চল থেকে শীতল অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত (যেমন – গাল্ফ স্ট্রিম)
2. শীতল স্রোত – শীতল অঞ্চল থেকে উষ্ণ অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত (যেমন – ল্যাব্রাডর স্রোত)

নিয়ত বায়ুপ্রবাহ কীভাবে সমুদ্রস্রোত সৃষ্টি করে?

1. আয়ন বায়ু নিরক্ষীয় অঞ্চলে পশ্চিমমুখী নিরক্ষীয় স্রোত সৃষ্টি করে।
2. পশ্চিমা বায়ু মধ্য অক্ষাংশে পূর্বমুখী স্রোত সৃষ্টি করে।
3. মেরু অঞ্চলের বায়ু মেরু স্রোত সৃষ্টি করে।
4. বায়ু সমুদ্রপৃষ্ঠের জলের সাথে ঘর্ষণ সৃষ্টি করে স্রোতের গতিপথ নির্ধারণ করে।

উষ্ণতা ও লবণাক্ততার পার্থক্য কীভাবে স্রোত সৃষ্টি করে?

1. নিরক্ষীয় অঞ্চলের উত্তপ্ত জল হালকা হয়ে পৃষ্ঠ স্রোত রূপে মেরু অভিমুখে প্রবাহিত হয়।
2. মেরু অঞ্চলের শীতল, লবণাক্ত ও ভারী জল তলদেশে নিরক্ষীয় দিকে প্রবাহিত হয়।
3. এই প্রক্রিয়াকে “থার্মোহ্যালাইন সঞ্চালন” বলে।
4. লবণাক্ততা বেশি হলে জলের ঘনত্ব বাড়ে এবং তা নিচে নামে।

সমুদ্রস্রোতের গতিপথ পরিবর্তনের কারণ কী?

1. মহাদেশীয় বাধা (যেমন দক্ষিণ আমেরিকার অন্তরীপ)।
2. দ্বীপপুঞ্জের অবস্থান।
3. সমুদ্র তলদেশের ভূপ্রকৃতি।
4. ঋতুভিত্তিক বায়ুপ্রবাহের পরিবর্তন।
5. বিভিন্ন স্রোতের মিলন (যেমন কুরোশিও ও ওয়াশিও স্রোতের মিলন)।

সমুদ্রস্রোতের গুরুত্ব কী?

1. জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ (যেমন ইউরোপের উষ্ণতা)।
2. মৎস্য সম্পদের বিস্তার।
3. নৌপরিবহনে সাহায্য।
4. বৃষ্টিপাত নিয়ন্ত্রণ।
5. সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র রক্ষা।

এল নিনো কীভাবে সমুদ্রস্রোতকে প্রভাবিত করে?

1. এল নিনো অবস্থায় প্রশান্ত মহাসাগরের উষ্ণ স্রোতের গতিপথ পরিবর্তিত হয়।
2. পেরু স্রোত দুর্বল হয়ে পড়ে।
3. সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা বেড়ে যায়।
4. বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তিত হয়।

সমুদ্রস্রোতের গতি কীভাবে পরিমাপ করা হয়?

1. ভাসমান বুয়ের সাহায্যে।
2. স্যাটেলাইট ইমেজিং দ্বারা।
3. ডপলার কারেন্ট মিটার ব্যবহার করে।
4. ঐতিহাসিক নৌযানের রেকর্ড বিশ্লেষণ করে।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “সমুদ্রস্রোত উৎপত্তির কারণ ব্যাখ্যা করো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “সমুদ্রস্রোত উৎপত্তির কারণ ব্যাখ্যা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের তৃতীয় অধ্যায় “বারিমণ্ডল – সমুদ্রস্রোত ও জোয়ারভাটা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

জোয়ারভাটা কীভাবে সৃষ্টি হয় চিত্রসহ ব্যাখ্যা করো।

জোয়ারভাটা কীভাবে সৃষ্টি হয় চিত্রসহ ব্যাখ্যা করো।

মানবজীবনের ওপর সমুদ্রস্রোতের প্রভাব লেখো।

মানবজীবনের ওপর সমুদ্রস্রোতের প্রভাব লেখো।

ঘনীভবন ও অধঃক্ষেপণ কাকে বলে ঘনীভবন ও অধঃক্ষেপণের মধ্যে পার্থক্য লেখো।

ঘনীভবন ও অধঃক্ষেপণ কাকে বলে? ঘনীভবন ও অধঃক্ষেপণের মধ্যে পার্থক্য

About The Author

Rohit Mondal

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

জোয়ারভাটা কীভাবে সৃষ্টি হয় চিত্রসহ ব্যাখ্যা করো।

মানবজীবনের ওপর সমুদ্রস্রোতের প্রভাব লেখো।

সমুদ্রস্রোত উৎপত্তির কারণ ব্যাখ্যা করো।

ঘনীভবন ও অধঃক্ষেপণ কাকে বলে? ঘনীভবন ও অধঃক্ষেপণের মধ্যে পার্থক্য

নিরক্ষীয়, মৌসুমি, ভূমধ্যসাগরীয় ও তুন্দ্রা জলবায়ুর তুলনামূলক আলোচনা করো।