এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে দীপালি সংঘ কীরূপ ভূমিকা পালন করেছিল?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে দীপালি সংঘ কীরূপ ভূমিকা পালন করেছিল?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের সপ্তম অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে দীপালি সংঘ কীরূপ ভূমিকা পালন করেছিল?
সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীসমাজের যোগদান প্রসঙ্গে ‘দীপালি সংঘ’-এর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
দীপালি সংঘের প্রতিষ্ঠা –
বিপ্লবী দেশনেত্রী লীলা নাগ (রায়) 1923 খ্রিস্টাব্দে ঢাকায় দীপালি সংঘের প্রতিষ্ঠা করেন।
দীপালি সংঘের উদ্দেশ্য –
নারী শক্তি জাগরণ, নারীর আত্মপ্রতিষ্ঠা সর্বোপরি সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারী সমাজকে শামিল করাই এই সংঘের মূল উদ্দেশ্য ছিল।
দীপালি সংঘের কর্মধারা
- স্ত্রী শিক্ষার প্রসার – ‘দীপালি সংঘ’ -এর তরফে পাড়ায় পাড়ায় স্টাডি সার্কেল গড়ে তোলা হয়। এই কার্যক্রমে ধারাবাহিকভাবে অনেক স্কুল প্রতিষ্ঠা, শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন, বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র প্রভৃতি গড়ে ওঠে।
- সশস্ত্র বিপ্লববাদের দীক্ষা – মহিলাদের সাহস ও শক্তিবৃদ্ধির উদ্দেশ্যে দীপালি সংঘের তরফে লাঠি খেলা, শরীর চর্চা, অস্ত্র চালনা প্রভৃতির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। বীরাঙ্গনা প্রীতিলতা প্রথম জীবনে এখানেই অস্ত্রচালনার পাঠ নেন।
- দীপালি প্রদর্শনী – দীপালি সংঘের উদ্যোগে 1924 খ্রিস্টাব্দ থেকে শুরু হয় ‘দীপালি প্রদর্শনী’। মেয়েদের তৈরি দ্রব্য সামগ্রী এখানে বিক্রি করে তাদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
- দীপালি ছাত্রী সংঘ – 1926 খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হয় ‘দীপালি ছাত্রী সংঘ’। উল্লেখ্য, এটিই ছিল বাংলা তথা ভারতের প্রথম ছাত্রী সংগঠন। রেনুকা সেন, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, বীণাপাণি রায় প্রমুখ ছিলেন এর উল্লেখযোগ্য সদস্যা।
- দীপালি ছাত্রী ভবন – 1930 খ্রিস্টাব্দে দীপালি সংঘের উদ্যোগে কলকাতায় স্থাপিত হয় ‘দীপালি ছাত্রীভবন’ – মহিলা কর্মী ও ছাত্রীদের বাসস্থান। পরে এটি নারী বিপ্লবীদের অন্যতম মিলন কেন্দ্রে পরিণত হয়।
- দীপালি সংঘের পত্রিকা প্রকাশ – দীপালি সংঘের তরফে 1931 খ্রিস্টাব্দ থেকে লীলা নাগের সম্পাদনায় একটি পত্রিকা প্রকাশিত হতে থাকে। এই পত্রিকা বিপ্লববাদের প্রচারের পাশাপাশি নারী জাতির সার্বিক বিকাশ ও নারী শিক্ষার সপক্ষে প্রচার চালায়। কবিগুরুর প্রেরণায় লীলা নাগ এই পত্রিকার নামকরণ করেন ‘জয়শ্রী’।
দীপালি সংঘের মন্তব্য –
দীপালি সংঘের পতাকা তলে দলে দলে নারীরা সমবেত হয়। তাদের সাহসী সংগ্রামে বাংলার আকাশ-বাতাস মুখরিত হয়েছে বহুকাল।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
দীপালি সংঘ কী এবং কে এটি প্রতিষ্ঠা করেন?
দীপালি সংঘ ছিল একটি নারী-কেন্দ্রিক বিপ্লবী সংগঠন, যা 1923 সালে ঢাকায় লীলা নাগ (রায়) প্রতিষ্ঠা করেন।
দীপালি সংঘের মূল উদ্দেশ্য কী ছিল?
দীপালি সংঘের মূল উদ্দেশ্য ছিল –
1. নারীদের মধ্যে স্বাধীনতা সংগ্রামের চেতনা জাগরণ।
2. নারীদের সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে যুক্ত করা।
3. নারী শিক্ষা ও স্বাবলম্বিতা বৃদ্ধি করা।
দীপালি সংঘ কীভাবে নারীদের বিপ্লবী আন্দোলনে প্রস্তুত করত?
সংঘের মাধ্যমে নারীদের লাঠি খেলা, শরীরচর্চা, অস্ত্র চালনা (যেমন – রিভলভার, বোমা) ইত্যাদির প্রশিক্ষণ দেওয়া হত। প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার -এর মতো বিপ্লবীরা এখানেই প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন।
দীপালি সংঘের শিক্ষা ও অর্থনৈতিক উদ্যোগগুলি কী ছিল?
দীপালি সংঘের শিক্ষা ও অর্থনৈতিক উদ্যোগগুলি হল –
1. স্ত্রী শিক্ষার প্রসার – স্কুল, বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র, শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন।
2. দীপালি প্রদর্শনী (1924 সাল থেকে) – নারীদের হস্তশিল্প বিক্রির মাধ্যমে স্বাবলম্বী করা।
3. দীপালি ছাত্রী সংঘ (1926 সাল) – বাংলার প্রথম ছাত্রী সংগঠন, যেখানে রেনুকা সেন, বীণাপাণি রায় প্রমুখ সদস্যা ছিলেন।
দীপালি ছাত্রীভবন কী এবং এর গুরুত্ব কী ছিল?
1930 সালে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত দীপালি ছাত্রীভবন ছিল মহিলা কর্মী ও ছাত্রীদের আবাসস্থল। এটি পরবর্তীতে নারী বিপ্লবীদের মিলনকেন্দ্রে পরিণত হয়।
দীপালি সংঘের পত্রিকার নাম কী এবং এর ভূমিকা কী ছিল?
1931 সালে লীলা নাগ -এর সম্পাদনায় “জয়শ্রী” পত্রিকা প্রকাশিত হয়। এটি নারী শিক্ষা, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও বিপ্লবী আদর্শ প্রচার করত।
দীপালি সংঘের সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন বিখ্যাত নারী বিপ্লবীর নাম উল্লেখ করুন।
দীপালি সংঘের সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন বিখ্যাত নারী বিপ্লবীর নাম হল – প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার (চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার আক্রমণে নেতৃত্বদানকারী), রেনুকা সেন, বীণাপাণি রায়।
দীপালি সংঘের অবদান কীভাবে বাংলার নারী সমাজকে প্রভাবিত করেছিল?
দীপালি সংঘ নারীদের মধ্যে স্বাধীনতার চেতনা জাগিয়ে তোলে, তাদের সশস্ত্র সংগ্রামে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে এবং নারী শিক্ষা ও স্বাবলম্বিতার পথ প্রশস্ত করে।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে দীপালি সংঘ কীরূপ ভূমিকা পালন করেছিল?” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে দীপালি সংঘ কীরূপ ভূমিকা পালন করেছিল?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের সপ্তম অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন