এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “শ্রীরামপুর মিশন প্রেস কীভাবে একটি অগ্রণী মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হল?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “শ্রীরামপুর মিশন প্রেস কীভাবে একটি অগ্রণী মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হল?“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের পঞ্চম অধ্যায় “বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

শ্রীরামপুর মিশন প্রেস কীভাবে একটি অগ্রণী মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হল?
উনিশ শতকের গোড়ায় শ্রীরামপুরে মুদ্রণযন্ত্র বা ছাপাখানার প্রতিষ্ঠা বহুমাত্রিক অভিধায় বাংলাকে প্রাণচঞ্চল করে তুলেছিল।
শ্রীরামপুর মিশনে মুদ্রণযন্ত্রের প্রতিষ্ঠা –
1800 খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুর মিশন ও প্রেসের প্রতিষ্ঠা হলেও শ্রীরামপুর ব্যাপটিস্ট মিশনের প্রাণপুরুষ উইলিয়াম কেরি এর অন্তত দুবছর আগে থেকেই কাঠের মুদ্রণযন্ত্র ও দেশীয় ভাষা অর্থাৎ বাংলা হরফ সংগ্রহের ব্যবস্থা করেছিলেন।
শ্রীরামপুর মিশনের প্রকাশনা –
‘শ্রীরামপুর ত্রয়ী’ নামে পরিচিত উইলিয়াম কেরি, জোশুয়া মাশম্যান ও উইলিয়াম ওয়ার্ডের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় শ্রীরামপুর মিশন প্রেস অচিরেই বাংলার অগ্রণী মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। প্রথম দিকে এই মিশন মূলত ধর্মীয় বই অনুবাদ করত। এখান থেকে প্রথম ছাপা বই ছিল বাইবেলের বঙ্গানুবাদ ‘মঙ্গল মতীয়ের সমাচার’। ক্রমে এখান থেকে ছাত্রদের জন্য অসংখ্য পাঠ্যপুস্তক, পত্রপত্রিকা যেমন-মাসিক পত্র ‘দিগ্দর্শন’, সাপ্তাহিক পত্র ‘সমাচার দর্পণ’ প্রভৃতি ছাড়াও অন্যান্য গ্রন্থ যেমন – মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কারের ‘বত্রিশ সিংহাসন’, ‘রাজাবলি’, রামরাম বসু রচিত ‘লিপিমালা’, কেরির ‘বাংলা ব্যাকরণ’ প্রভৃতি প্রকাশিত হয়।
শ্রীরামপুর মিশনের বাণিজ্যিক বিকাশ –
প্রথমে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ ও কিছুদিন পরে ‘ক্যালকাটা স্কুল বুক সোসাইটি’র সহযোগী হিসেবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পাঠ্যপুস্তক প্রকাশনায় শ্রীরামপুর মিশন প্রেস উদ্যোগী হয়। একটিমাত্র কাঠের মুদ্রণযন্ত্রকে সম্বল করে শ্রীরামপুর মিশন প্রেস তার যাত্রা শুরু করলেও 1820 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে এখানে মুদ্রণযন্ত্রের সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল 18 টিতে। 1801 খ্রিস্টাব্দ থেকে 1832 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে শ্রীরামপুর মিশন প্রেস থেকে চল্লিশটি ভাষায় লক্ষাধিক বই প্রকাশিত হয়েছিল।
শ্রীরামপুর মিশনের মন্তব্য –
1800 খ্রিস্টাব্দ থেকে 1837 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রায় চার দশক ধরে বাংলা মুদ্রণ ও প্রকাশনার ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেছে শ্রীরামপুর মিশন প্রেস। বঙ্গীয় নবজাগরণে তাদের পরোক্ষ অবদান কোনো মতেই অস্বীকার করা যায় না।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
শ্রীরামপুর মিশন প্রেস কে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন?
উইলিয়াম কেরি, জোশুয়া মাশম্যান ও উইলিয়াম ওয়ার্ড—এই তিন মিশনারি, যারা “শ্রীরামপুর ত্রয়ী” নামে পরিচিত, শ্রীরামপুর মিশন প্রেস প্রতিষ্ঠা করেন।
শ্রীরামপুর মিশন প্রেস কখন প্রতিষ্ঠিত হয়?
1800 খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হলেও উইলিয়াম কেরি এর দুই বছর আগে থেকেই বাংলা হরফ ও কাঠের মুদ্রণযন্ত্র সংগ্রহ করেছিলেন।
শ্রীরামপুর মিশন প্রেস থেকে প্রকাশিত প্রথম বই কোনটি?
প্রথম প্রকাশিত বই ছিল বাইবেলের বাংলা অনুবাদ ‘মঙ্গল সমাচার’ (The Gospel of Matthew)।
শ্রীরামপুর মিশন প্রেসের উল্লেখযোগ্য প্রকাশনা কী কী?
শ্রীরামপুর মিশন প্রেসের উল্লেখযোগ্য প্রকাশনা হল –
1. ধর্মীয় – বাইবেলের বাংলা অনুবাদ।
2. শিক্ষামূলক – উইলিয়াম কেরির বাংলা ব্যাকরণ, পাঠ্যপুস্তক।
3. সাহিত্য – মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কারের বত্রিশ সিংহাসন, রামরাম বসুর লিপিমালা।
4. পত্রিকা – দিগ্দর্শন (মাসিক), সমাচার দর্পণ (সাপ্তাহিক)।
শ্রীরামপুর মিশন প্রেস কীভাবে বাণিজ্যিকভাবে বিকশিত হয়?
ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ ও ক্যালকাটা স্কুল বুক সোসাইটির সহযোগিতায় পাঠ্যপুস্তক প্রকাশের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ভিত্তি গড়ে তোলে। 1820 নাগাদ এখানে 18টি মুদ্রণযন্ত্র চালু হয়।
শ্রীরামপুর মিশন প্রেসের ভাষাগত অবদান কী?
1801–1832 সালের মধ্যে 40টি ভাষায় (সংস্কৃত, বাংলা, অসমিয়া, হিন্দি প্রভৃতি) 1 লক্ষেরও বেশি বই প্রকাশ করে।
শ্রীরামপুর মিশন প্রেসের ঐতিহাসিক গুরুত্ব কী?
এটি বাংলার মুদ্রণ ও প্রকাশনা জগতে বিপ্লব এনেছিল এবং বাংলা নবজাগরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
শ্রীরামপুর মিশন প্রেস কত বছর সক্রিয় ছিল?
1800 থেকে 1837 সাল পর্যন্ত প্রায় 37 বছর এটি সক্রিয় ছিল।
মিশন প্রেসের প্রযুক্তিগত উন্নতি কী ছিল?
শুরুতে কাঠের মুদ্রণযন্ত্র ব্যবহার করলেও পরে আধুনিক ধাতব যন্ত্রপাতি যোগ করে উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ায়।
শ্রীরামপুর মিশনের সাংস্কৃতিক প্রভাব কী?
এটি বাংলা ভাষার প্রমিতকরণ, শিক্ষার প্রসার এবং স্থানীয় সাহিত্য ও সাংবাদিকতার বিকাশে সহায়তা করে।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “শ্রীরামপুর মিশন প্রেস কীভাবে একটি অগ্রণী মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হল?” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “শ্রীরামপুর মিশন প্রেস কীভাবে একটি অগ্রণী মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হল?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের পঞ্চম অধ্যায় “বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন