এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “স্বাধীনতার পরে ভাষার ভিত্তিতে ভারত কীভাবে পুনর্গঠিত হয়েছিল? অথবা, ভাষার ভিত্তিতে রাজ্য পুনর্গঠনের উদ্যোগ কেন নিতে হয়েছিল?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “স্বাধীনতার পরে ভাষার ভিত্তিতে ভারত কীভাবে পুনর্গঠিত হয়েছিল? অথবা, ভাষার ভিত্তিতে রাজ্য পুনর্গঠনের উদ্যোগ কেন নিতে হয়েছিল?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের অষ্টম অধ্যায় “উত্তর-ঔপনিবেশিক ভারত: বিশ শতকের দ্বিতীয় পর্ব (1947-1964)“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

স্বাধীনতার পরে ভাষার ভিত্তিতে ভারত কীভাবে পুনর্গঠিত হয়েছিল?
অথবা, ভাষার ভিত্তিতে রাজ্য পুনর্গঠনের উদ্যোগ কেন নিতে হয়েছিল?
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে প্রশাসনিক কাজে স্থানীয় ভাষার ব্যবহার যথেষ্টই সুবিধাজনক। এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই স্বাধীনতার পর ভারতের নানা প্রান্তে ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠনের দাবিকে কেন্দ্র করে জোরদার আন্দোলন গড়ে ওঠে।
ভাষার ভিত্তিতে রাজ্য পুনর্গঠনের উদ্যোগে দার কমিশন –
ভাষাভিত্তিক প্রদেশ গঠনের প্রয়োজনীয়তা ও যৌক্তিকতা খতিয়ে দেখার জন্য 1948 খ্রিস্টাব্দে বিচারপতি এস. কে. দারের নেতৃত্বে ‘ভাষাভিত্তিক প্রদেশ কমিশন’ (দার কমিশন) গঠিত হয়। কিন্তু এই কমিশন ভাষাভিত্তিক প্রদেশ গঠনের বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করলে দেশব্যাপী জোরদার আন্দোলন গড়ে ওঠে।
ভাষার ভিত্তিতে রাজ্য পুনর্গঠনের উদ্যোগে অন্ধ্রপ্রদেশে আন্দোলন –
অন্ধ্রপ্রদেশের বিশিষ্ট গান্ধীবাদি নেতা পোট্টি শ্রীরামালু 1952 খ্রিস্টাব্দে মাদ্রাজের তেলেগুভাষী 11টি জেলা নিয়ে পৃথক অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্য গঠনের দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করেন। দীর্ঘ 58 দিন অনশন চালানোর পর তিনি মৃত্যু বরন করলে আন্দোলন আরোও তীব্রতর হয়ে ওঠে। আন্দোলনের তীব্রতায় শেষপর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু পৃথক অন্ধ্রপ্রদেশ গঠনের দাবী মেনে নেন। 1953 খ্রিস্টাব্দে জন্ম নেয় পৃথক অন্ধ্রপ্রদেশ।
রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন –
অন্ধ্রের সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে অন্যান্য ভাষাগোষ্ঠী ভাষাভিত্তিক রাজ্যের দাবীতে দেশব্যাপী জোরালো আন্দোলনে সামিল হলে জওহরলাল নেহরু 1953 খ্রিস্টাব্দে রাজ্য রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন গঠন করতে বাধ্য হন। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ফজল আলির সভাপতিত্বে কে. এম. পানিক্কর ও হৃদয়নাথ কুঞ্জরু-কে নিয়ে গঠিত তিন সদস্যের কমিশন যে রিপোর্ট পেশ করে, তার ভিত্তিতেই 1956 খ্রিস্টাব্দে পাশ হয় রাজ্য পুনর্গঠন আইন।
ভাষার ভিত্তিতে রাজ্য পুনর্গঠনের উদ্যোগে বোম্বাইতে আন্দোলন –
রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠনের যে সূত্র অনুমোদন করেছিল তা মানা হয়নি বোম্বাই ও পাঞ্জাব রাজ্য পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে। অচিরেই বোম্বাই প্রদেশের মারাঠি ও গুজরাটি ভাষাভাষিদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ বাধে। আন্দোলনের চাপে শেষ পর্যন্ত 1960 খ্রিস্টাব্দে কেন্দ্রীয় সরকার বোম্বাইকে ভেঙে দুটি নতুন প্রদেশ গঠন করেন-মহারাষ্ট্র ও গুজরাট।
ভাষার ভিত্তিতে রাজ্য পুনর্গঠনের উদ্যোগে পাঞ্জাবে আন্দোলন –
পাঞ্জাবে তিনটি ভাষার চল ছিল – পাঞ্জাবি, হিন্দি ও পাহাড়ি। নেহরুর মৃত্যুর পর 1966 সালে পাঞ্জাবকে তিনটি ভাষাভিত্তিক অঞ্চলে ভাগ করে যথাক্রমে পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও হিমাচল প্রদেশ নামে তিনটি পৃথক রাজ্য গঠন করা হয়।
মন্তব্য –
স্বাধীনতার আগে থেকেই যে রাজ্য পুনর্গঠনের দাবি উঠেছিল স্বাধীনতার পর নেহরুযুগ অতিক্রম করে আজও তা অব্যাহত আছে। গোর্খাল্যান্ড প্রভৃতি স্বতন্ত্র রাজ্যের দাবি তারই প্রমাণ।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
ভাষার ভিত্তিতে রাজ্য পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তা কেন দেখা দিয়েছিল?
ভাষার ভিত্তিতে রাজ্য পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছিল কারণ –
1. গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় স্থানীয় ভাষায় প্রশাসনিক কাজকর্ম সুবিধাজনক।
2. বিভিন্ন ভাষাভাষী অঞ্চলের মানুষ তাদের ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার জন্য স্বতন্ত্র রাজ্যের দাবি তোলে।
দার কমিশন কী ছিল এবং এর সুপারিশ কী ছিল?
1948 সালে বিচারপতি এস. কে. দার-এর নেতৃত্বে গঠিত হয় ভাষাভিত্তিক প্রদেশ কমিশন। এই কমিশন ভাষার ভিত্তিতে রাজ্য গঠনের বিরোধিতা করায় তা গ্রহণযোগ্যতা পায়নি এবং দেশজুড়ে আন্দোলন তীব্র হয়।
অন্ধ্রপ্রদেশ গঠনের পেছনে কোন আন্দোলন ভূমিকা রেখেছিল?
1. 1952 সালে পোট্টি শ্রীরামালু তেলেগুভাষী অঞ্চল নিয়ে পৃথক অন্ধ্রপ্রদেশের দাবিতে আমরণ অনশন করেন এবং মৃত্যুবরণ করেন।
2. তাঁর আত্মত্যাগের পর 1953 সালে অন্ধ্রপ্রদেশ গঠিত হয়।
রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন (1953 সাল) কে গঠন করেন এবং এর ভূমিকা কী ছিল?
1. প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু 1953 সালে ফজল আলি কমিশন গঠন করেন।
2. এই কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে 1956 সালে রাজ্য পুনর্গঠন আইন পাস হয়, যার মাধ্যমে ভাষার ভিত্তিতে রাজ্য সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হয়।
বোম্বাই রাজ্য কীভাবে বিভক্ত হয়েছিল?
মারাঠি ও গুজরাটি ভাষাভাষীদের মধ্যে সংঘর্ষের পর 1960 সালে বোম্বাই ভেঙে মহারাষ্ট্র (মারাঠিভাষী) ও গুজরাট (গুজরাটিভাষী) রাজ্য গঠিত হয়।
পাঞ্জাব বিভক্তির কারণ কী ছিল?
পাঞ্জাবি, হিন্দি ও পাহাড়ি ভাষার ভিত্তিতে 1966 সালে পাঞ্জাবকে তিন ভাগে ভাগ করা হয় –
1. পাঞ্জাব (পাঞ্জাবিভাষী),
2. হরিয়ানা (হিন্দিভাষী),
3. হিমাচল প্রদেশ (পাহাড়ি অঞ্চল)।
বর্তমানে ভাষার ভিত্তিতে নতুন রাজ্য গঠনের দাবি আছে কি?
হ্যাঁ, গোর্খাল্যান্ড (পশ্চিমবঙ্গ), বোড়োল্যান্ড (অসম), বিদর্ভ (মহারাষ্ট্র) প্রভৃতি অঞ্চলে এখনও ভাষা ও জাতিগত পরিচয়ের ভিত্তিতে পৃথক রাজ্যের দাবি চলছে।
ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠনের সুবিধা ও অসুবিধা কী?
1. ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠনের সুবিধা – প্রশাসনিক সুবিধা, স্থানীয় সংস্কৃতি রক্ষা, আঞ্চলিক উন্নয়ন।
2. ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠনের অসুবিধা – রাজনৈতিক বিভাজন, আঞ্চলিক বিবাদ, ছোট রাজ্যগুলির অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “স্বাধীনতার পরে ভাষার ভিত্তিতে ভারত কীভাবে পুনর্গঠিত হয়েছিল? অথবা, ভাষার ভিত্তিতে রাজ্য পুনর্গঠনের উদ্যোগ কেন নিতে হয়েছিল?” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “স্বাধীনতার পরে ভাষার ভিত্তিতে ভারত কীভাবে পুনর্গঠিত হয়েছিল? অথবা, ভাষার ভিত্তিতে রাজ্য পুনর্গঠনের উদ্যোগ কেন নিতে হয়েছিল?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের অষ্টম অধ্যায় “উত্তর-ঔপনিবেশিক ভারত: বিশ শতকের দ্বিতীয় পর্ব (1947-1964)” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন