এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “তাপমণ্ডল বা তাপবলয় কাকে বলে? পৃথিবীর বিভিন্ন তাপমণ্ডলগুলির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। “তাপমণ্ডল বা তাপবলয় কাকে বলে? পৃথিবীর বিভিন্ন তাপমণ্ডলগুলির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের দ্বিতীয় অধ্যায় “বায়ুমণ্ডল – বায়ুমণ্ডলের তাপ, উষ্ণতা ও বিশ্ব উষ্ণায়ন” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

তাপমণ্ডল বা তাপবলয় কাকে বলে? পৃথিবীর বিভিন্ন তাপমণ্ডলগুলির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
পৃথিবীর তাপমণ্ডল –
পৃথিবীর নিরক্ষরেখা থেকে মেরু অঞ্চলে সূর্যরশ্মির পতনকোণের তারতম্যের জন্য উষ্ণতার পার্থক্য দেখা যায়। এই উষ্ণতার পার্থক্যের জন্য বিভিন্ন অক্ষাংশ বরাবর পৃথিবীকে কয়েকটি নির্দিষ্ট তাপ অঞ্চলে ভাগ করা হয়। এই তাপ অঞ্চলকে বলে তাপমণ্ডল বা তাপবলয়।
ভূপৃষ্ঠের সর্বত্র বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা সমান নয়। এর কোথাও বেশি এবং কোথাও কম উষ্ণতা অনুভূত হয়। উষ্ণতার তারতম্য অনুসারে মূলত অক্ষাংশের ওপর ভিত্তি করে পৃথিবীকে তিনটি তাপমণ্ডলে ভাগ করা যায়। যথা –
উষ্ণমণ্ডল –
পৃথিবীর মাঝ বরাবর অর্থাৎ নিরক্ষরেখার উভয় পাশে উত্তরে 23½° উত্তর অক্ষাংশ থেকে দক্ষিণে 23½° দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যবর্তী অঞ্চল উষ্ণমণ্ডল নামে পরিচিত।
বিশেষত্ব –
- এই অঞ্চলে সারাবছরই সূর্যরশ্মি প্রায় লম্বভাবে (60°-90° কোণে) পতিত হয় এবং মধ্যবর্তী অঞ্চলে বছরে অন্তত দুদিন সূর্যরশ্মি লম্বভাবে পতিত হয়।
- সারাবছর ধরে এখানে দিন রাত্রির দৈর্ঘ্যের হ্রাসবৃদ্ধি খুব কম হয়। অর্থাৎ প্রায় সমান থাকে। এবং গড় উষ্ণতার প্রসর খুব কম (2°-3° সে) হয়।
- এই অঞ্চলের বার্ষিক গড় তাপমাত্রা 27° সে-30° সে -এর মধ্যে থাকে এবং অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় উষ্ণতা অধিক থাকায় এই অঞ্চলটিকে উষ্ণমণ্ডল বা গ্রীষ্মমণ্ডল বলা হয়।
নাতিশীতোষ্ণমণ্ডল –
উত্তর গোলার্ধে কর্কটক্রান্তি রেখা থেকে সুমেরু বৃত্ত (\( 23\frac{1^\circ}2 \) উঃ থেকে \( 66\frac{1^\circ}2 \) উঃ অক্ষরেখা) পর্যন্ত এবং দক্ষিণ গোলার্ধে মকরক্রান্তি রেখা থেকে কুমেরু বৃত্ত (\( 23\frac{1^\circ}2 \) দঃ থেকে \( 66\frac{1^\circ}2 \) দঃ অক্ষরেখা) পর্যন্ত অঞ্চল নাতিশীতোষ্ণমণ্ডল নামে পরিচিত।
বিশেষত্ব –
এই অঞ্চলে সূর্যরশ্মি কখনই লম্বভাবে পতিত হয় না, বরং অপেক্ষাকৃত তির্যকভাবে (20°-60° কোণে) পতিত হয়।
সারাবছর এখানকার গড় উষ্ণতা 0°-27° সে -এর মধ্যে থাকে। অর্থাৎ মাঝারি উত্তাপ এই অঞ্চলের প্রধান বৈশিষ্ট্য।
কর্কটক্রান্তি রেখা ও মকরক্রান্তি রেখার কাছাকাছি ( \( 23\frac{1^\circ}2 \) উঃ ও দঃ থেকে 45° উঃ ও দঃ) অঞ্চলে উষ্ণতা বেশি থাকায় একে গ্রীষ্মপ্রধান নাতিশীতোষ্ণমণ্ডল এবং মেরু বৃত্তের কাছে (45° উঃ ও দঃ থেকে \( 66\frac{1^\circ}2 \) উঃ ও দঃ) উষ্ণতা কম থাকে বলে শীতপ্রধান নাতিশীতোষ্ণমণ্ডল বলা হয়।

হিমমণ্ডল –
উত্তরে সুমেরু বৃত্ত থেকে সুমেরু বিন্দু ( \( 66\frac{1^\circ}2 \) উঃ থেকে 90° উঃ) এবং দক্ষিণে কুমেরু বৃত্ত থেকে কুমেরু বিন্দু ( \( 66\frac{1^\circ}2 \) দঃ থেকে 90° দঃ) পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চল হিমমণ্ডল নামে পরিচিত।
বিশেষত্ব –
- উষ্ণতা কম বলে এই দুই অঞ্চলের ভূমিভাগ সারাবছর তুষারাবৃত থাকে।
- এই দুই অঞ্চলে সূর্যরশ্মি অপেক্ষাকৃত তির্যকভাবে পতিত হয় বলে উষ্ণতা খুবই কম থাকে (হিমাঙ্কের নীচে)।
- একটানা পর্যায়ক্রমে দুই অঞ্চলে 6 মাস দিন ও 6 মাস রাত্রি বিরাজ করে বলে বার্ষিক গড় উষ্ণতা 0° সে এরও কম থাকে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
তাপমণ্ডল বা তাপবলয় কাকে বলে?
পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে সূর্যরশ্মির পতনকোণের তারতম্যের কারণে উষ্ণতার পার্থক্য দেখা যায়। এই উষ্ণতার ভিত্তিতে অক্ষাংশ অনুযায়ী পৃথিবীকে কয়েকটি তাপ অঞ্চলে ভাগ করা হয়, যাকে তাপমণ্ডল বা তাপবলয় বলে।
পৃথিবীর প্রধান তাপমণ্ডলগুলি কী কী?
পৃথিবীকে প্রধানত তিনটি তাপমণ্ডলে ভাগ করা হয় –
1. উষ্ণমণ্ডল (গ্রীষ্মমণ্ডল)।
2. নাতিশীতোষ্ণমণ্ডল।
3. হিমমণ্ডল (শীতমণ্ডল)।
উষ্ণমণ্ডল কোথায় অবস্থিত? এর বৈশিষ্ট্য কী?
অবস্থান – নিরক্ষরেখার উভয় পাশে 23.5° উত্তর (কর্কটক্রান্তি) থেকে 23.5° দক্ষিণ (মকরক্রান্তি) পর্যন্ত।
বৈশিষ্ট্য –
1. সূর্যরশ্মি প্রায় লম্বভাবে পড়ে, তাই উষ্ণতা বেশি (27°C-30°C)।
2. দিন-রাত্রির দৈর্ঘ্য প্রায় সমান।
3. গড় উষ্ণতার পার্থক্য খুব কম (2°C-3°C)।
নাতিশীতোষ্ণমণ্ডলের বিশেষত্ব কী?
অবস্থান –
1. উত্তরে 23.5° উত্তর থেকে 66.5° উত্তর (সুমেরু বৃত্ত) পর্যন্ত।
2. দক্ষিণে 23.5° দক্ষিণ থেকে 66.5° দক্ষিণ (কুমেরু বৃত্ত) পর্যন্ত।
বৈশিষ্ট্য –
1. সূর্যরশ্মি তির্যকভাবে পড়ে (20°-60° কোণে)।
2. গড় উষ্ণতা 0°C-27°C -এর মধ্যে।
3. গ্রীষ্মপ্রধান (কর্কটক্রান্তি/মকরক্রান্তি সংলগ্ন) ও শীতপ্রধান (মেরু বৃত্তের কাছাকাছি) অঞ্চল রয়েছে।
হিমমণ্ডল কোথায় অবস্থিত? কেন এটি শীতল?
অবস্থান –
1. উত্তরে 66.5° উত্তর থেকে 90° উত্তর (সুমেরু) পর্যন্ত।
2. দক্ষিণে 66.5° দক্ষিণ থেকে 90° দক্ষিণ (কুমেরু) পর্যন্ত।
বৈশিষ্ট্য –
1. সূর্যরশ্মি অত্যন্ত তির্যকভাবে পড়ে, তাই উষ্ণতা হিমাঙ্কের নিচে থাকে।
2. 6 মাস দিন ও 6 মাস রাত্রি হয়।
3. ভূমি তুষারে আবৃত থাকে।
কোন তাপমণ্ডলে সবচেয়ে বেশি জীববৈচিত্র্য দেখা যায়?
উষ্ণমণ্ডলে (গ্রীষ্মমণ্ডল) সবচেয়ে বেশি জীববৈচিত্র্য দেখা যায়, কারণ এখানে উষ্ণতা ও আর্দ্রতা বেশি, যা উদ্ভিদ ও প্রাণীর বৃদ্ধির জন্য অনুকূল।
নাতিশীতোষ্ণমণ্ডলকে কেন গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়?
নাতিশীতোষ্ণমণ্ডলে মৌসুমি পরিবর্তন স্পষ্ট (গ্রীষ্ম, শীত, বসন্ত, শরৎ)। এখানে উন্নত কৃষি, শিল্প ও জনবসতি বেশি দেখা যায়, যেমন — ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা ও এশিয়ার অনেক অংশ।
হিমমণ্ডলে বসবাসকারী কিছু প্রাণীর নাম বলুন।
হিমমণ্ডলে বসবাসকারী প্রাণীদের মধ্যে রয়েছে —
1. মেরু ভালুক (সুমেরু অঞ্চলে)।
2. পেঙ্গুইন (কুমেরু অঞ্চলে)।
3. সিল।
4. হিমশীতল অঞ্চলের পাখি (স্নো আউল)।
পৃথিবীর কোন তাপমণ্ডলে ভারত অবস্থিত?
ভারত মূলত উষ্ণমণ্ডল ও নাতিশীতোষ্ণমণ্ডলের সংযোগস্থলে অবস্থিত। ভারতের দক্ষিণ অংশ (নিরক্ষীয় অঞ্চল) উষ্ণমণ্ডলে এবং উত্তর অংশ (হিমালয়ের কাছে) নাতিশীতোষ্ণমণ্ডলে পড়ে।
তাপমণ্ডল বিভাজনের প্রধান কারণ কী?
তাপমণ্ডল বিভাজনের প্রধান কারণ সূর্যরশ্মির পতনকোণের তারতম্য, যা অক্ষাংশের উপর নির্ভর করে। নিরক্ষরেখায় সূর্যরশ্মি লম্বভাবে পড়ে, তাই উষ্ণতা বেশি; মেরু অঞ্চলে তির্যকভাবে পড়ে, তাই শীতল।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “তাপমণ্ডল বা তাপবলয় কাকে বলে? পৃথিবীর বিভিন্ন তাপমণ্ডলগুলির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “তাপমণ্ডল বা তাপবলয় কাকে বলে? পৃথিবীর বিভিন্ন তাপমণ্ডলগুলির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের দ্বিতীয় অধ্যায় “বায়ুমণ্ডল – বায়ুমণ্ডলের তাপ, উষ্ণতা ও বিশ্ব উষ্ণায়ন” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।