আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘তোমার জীবনের স্মরণীয় ঘটনা’ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করব। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় এই রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। একবার ভালোভাবে আয়ত্ত করলে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি—যেকোনো ক্লাসের পরীক্ষাতেই তোমরা এই রচনার প্রশ্নের উত্তর সহজেই লিখতে পারবে।

তোমার জীবনের স্মরণীয় ঘটনা – প্রবন্ধ রচনা
ভূমিকা –
বহতা নদীর মতো এগিয়ে চলে মানুষের জীবন। প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির চড়াই উতরাই ভেঙে সে চলা নতুনের উপকূলে। কিন্তু পথ চলতে চলতে বারবার পিছন ফিরে তাকায় এই মানুষই। সেখানে ভেসে ওঠে কত মুখ, কত ঘটনা। স্মৃতির উত্তাপে সঞ্জীবিত হয় সে।
আমার কথা –
আমার এই সংক্ষিপ্ত জীবনেও ভিড় করে আছে কত ঘটনা। সেখানে প্রথম রাজ্য ছাড়িয়ে বেড়াতে যাওয়া, প্রথম বইমেলা দেখা, প্রথম প্লেনে চড়া কিংবা প্রথমবার বন্ধুদের সঙ্গে পুজোর ঠাকুর দেখতে যাওয়ার স্মৃতি যেমন আজও সজীব হয়ে আছে, ঠিক তার পাশে চোখে ভেসে ওঠে একদিন সকালে চা খেতে খেতে দাদুর মৃত্যু। হাসি-কান্নার আলোছায়ার এই আবহে একটিমাত্র স্মরণীয় ঘটনা বেছে নিতে বললে সেটি হল আমার প্রথমদিন হাই স্কুলে যাওয়া।
সলতে পাকানোর কাল –
আমি আমার প্রাথমিক শিক্ষা নিয়েছি টাকি সরকারি বিদ্যালয়ে। সকাল সাড়ে ছ-টায় আমার স্কুল শুরু হত। নিত্যদা ঢং ঢং করে ঘণ্টা দিতেন আর আমরা গিয়ে দাঁড়াতাম স্কুল গ্রাউন্ডে প্রার্থনা সংগীতের জন্য। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি-কৃষ্ণ স্যার, বলাই স্যার, মেনকা ম্যাডাম এঁদের স্নেহচ্ছায়ায় কেটে গেছে আমার জীবন। তারপর পঞ্চম শ্রেণির রেজাল্ট বেরোনো। বাবা বললেন আমার সকালে আসার দিন শেষ। শুরু আমার হাই স্কুলের জীবন।
প্রথম সে দিন –
স্কুলের নতুন পোশাক পরে বাবার সঙ্গে স্কুলে পৌঁছোলাম ঠিক সাড়ে দশটায়। সেই একই বিল্ডিং, একই ক্লাসঘর, শুধু মানুষগুলোই আলাদা। চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে বড়ো বড়ো দাদারা। মাথা উঁচু করে দেখতে হয়, এগারো-বারো ক্লাসে পড়ে ওরা। পাশে বাবাও নেই। জনারণ্যে কেমন যেন একা একা লাগতে শুরু করল। প্রার্থনাশেষে এগারোটায় ক্লাশ শুরু হল। দীর্ঘদেহী একজন শিক্ষকমশাই রোলকলের খাতা নিয়ে ঘরে ঢুকলেন’। গম্ভীর গলা, পরে জেনেছি নাম দুর্গাদাস বাবু। ইংরেজি গ্রামার পড়ালেন। কিছু গল্পও করলেন। তারপর একে একে এলেন বাংলা, ইতিহাস, ভূগোল আর আঁকার স্যার। ইতিহাসের স্যার তারকবাবু খুব মজা করেছিলেন। আস্তে আস্তে মনের ভয়টা কেটে গেল। শুধু টিফিনের সময় মাঠে যাইনি, কারণ ওখানে বড়োরা খেলছিল। এরই মধ্যে একবার হেডস্যার ক্লাসে ঘুরে গেলেন। পিঠে হাত দিয়ে আমাদের কেমন লাগছে জানতেও চাইলেন। ঠিক চারটেয় ছুটি হল। গেটের বাইরে গিয়ে বাবার হাত ধরলাম।
উপসংহার –
সেদিনের আড়ষ্টতা কাটিয়ে আমি এখন ক্লাস টেন। স্কুলমাঠে খেলতে এখন আর আমার কোনো দ্বিধা নেই। বাংলার বিজয়বাবু, অংকের চঞ্চলবাবু, ইতিহাসের তারকবাবু-স্যারেদের নামগুলোই শুধু জানিনি, পেয়েছি তাদের স্নেহ-ভালোবাসা। এখন আমি নিজেই স্কুলে আসি। এ বছর মাধ্যমিক দেব। স্যারেরা বলেন আসল পরীক্ষা এবারই শুরু হবে। স্কুল ছাড়িয়ে কলেজ, কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়-এগিয়ে চলবে জীবন। কিন্তু স্কুলের ঘাসে প্রথমবার রেখে যাওয়া আমার পায়ের ছাপ, প্রথম দিনের সমস্ত ঘটনা সে তো স্মৃতি থেকে বারবার আমাকে ডাকে। বিদ্যালয়ের প্রথম দিনের এই স্মৃতি চিরভাস্বর, চির অমলিন হয়ে থাকবে আমার জীবনে।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘তোমার জীবনের স্মরণীয় ঘটনা’ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করেছি। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় ‘তোমার জীবনের স্মরণীয় ঘটনা’ রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা।
আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন