আমরা আজ এই আর্টিকেলে আপনার জীবনের স্মরণীয় ঘটনা প্রবন্ধ রচনা নিয়ে আলোচনা করবো। মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষা এবং স্কুল পরীক্ষায় প্রায়শই এই ধরণের প্রবন্ধ দেখা যায়।
আপনার জীবনের স্মরণীয় ঘটনা প্রবন্ধ রচনা একটি গুরুত্বপূর্ণ রচনা। এই রচনাটি প্রায়শই পরীক্ষায় দেখা যায় এবং একবার মুখস্ত করলে আপনি ক্লাস ৬ থেকে ১২ পর্যন্ত যেকোনো পরীক্ষায় এই প্রশ্নের উত্তর লিখতে পারবেন।
এই প্রবন্ধে আপনাকে আপনার জীবনের একটি এমন ঘটনা বর্ণনা করতে হবে যা আপনার মনে গেঁথে আছে। ঘটনাটি যেকোনো হতে পারে,
তোমার জীবনের স্মরণীয় ঘটনা – প্রবন্ধ রচনা
ভূমিকা –
বহতা নদীর মতো এগিয়ে চলে মানুষের জীবন। প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির চড়াই উতরাই ভেঙে সে চলা নতুনের উপকূলে। কিন্তু পথ চলতে চলতে বারবার পিছন ফিরে তাকায় এই মানুষই। সেখানে ভেসে ওঠে কত মুখ, কত ঘটনা। স্মৃতির উত্তাপে সঞ্জীবিত হয় সে।
আমার কথা –
আমার এই সংক্ষিপ্ত জীবনেও ভিড় করে আছে কত ঘটনা। সেখানে প্রথম রাজ্য ছাড়িয়ে বেড়াতে যাওয়া, প্রথম বইমেলা দেখা, প্রথম প্লেনে চড়া কিংবা প্রথমবার বন্ধুদের সঙ্গে পুজোর ঠাকুর দেখতে যাওয়ার স্মৃতি যেমন আজও সজীব হয়ে আছে, ঠিক তার পাশে চোখে ভেসে ওঠে একদিন সকালে চা খেতে খেতে দাদুর মৃত্যু। হাসি-কান্নার আলোছায়ার এই আবহে একটিমাত্র স্মরণীয় ঘটনা বেছে নিতে বললে সেটি হল আমার প্রথমদিন হাই স্কুলে যাওয়া।
সলতে পাকানোর কাল –
আমি আমার প্রাথমিক শিক্ষা নিয়েছি টাকি সরকারি বিদ্যালয়ে। সকাল সাড়ে ছ-টায় আমার স্কুল শুরু হত। নিত্যদা ঢং ঢং করে ঘণ্টা দিতেন আর আমরা গিয়ে দাঁড়াতাম স্কুল গ্রাউন্ডে প্রার্থনা সংগীতের জন্য। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি-কৃষ্ণ স্যার, বলাই স্যার, মেনকা ম্যাডাম এঁদের স্নেহচ্ছায়ায় কেটে গেছে আমার জীবন। তারপর পঞ্চম শ্রেণির রেজাল্ট বেরোনো। বাবা বললেন আমার সকালে আসার দিন শেষ। শুরু আমার হাই স্কুলের জীবন।
প্রথম সে দিন –
স্কুলের নতুন পোশাক পরে বাবার সঙ্গে স্কুলে পৌঁছোলাম ঠিক সাড়ে দশটায়। সেই একই বিল্ডিং, একই ক্লাসঘর, শুধু মানুষগুলোই আলাদা। চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে বড়ো বড়ো দাদারা। মাথা উঁচু করে দেখতে হয়, এগারো-বারো ক্লাসে পড়ে ওরা। পাশে বাবাও নেই। জনারণ্যে কেমন যেন একা একা লাগতে শুরু করল। প্রার্থনাশেষে এগারোটায় ক্লাশ শুরু হল। দীর্ঘদেহী একজন শিক্ষকমশাই রোলকলের খাতা নিয়ে ঘরে ঢুকলেন’। গম্ভীর গলা, পরে জেনেছি নাম দুর্গাদাস বাবু। ইংরেজি গ্রামার পড়ালেন। কিছু গল্পও করলেন। তারপর একে একে এলেন বাংলা, ইতিহাস, ভূগোল আর আঁকার স্যার। ইতিহাসের স্যার তারকবাবু খুব মজা করেছিলেন। আস্তে আস্তে মনের ভয়টা কেটে গেল। শুধু টিফিনের সময় মাঠে যাইনি, কারণ ওখানে বড়োরা খেলছিল। এরই মধ্যে একবার হেডস্যার ক্লাসে ঘুরে গেলেন। পিঠে হাত দিয়ে আমাদের কেমন লাগছে জানতেও চাইলেন। ঠিক চারটেয় ছুটি হল। গেটের বাইরে গিয়ে বাবার হাত ধরলাম।
উপসংহার –
সেদিনের আড়ষ্টতা কাটিয়ে আমি এখন ক্লাস টেন। স্কুলমাঠে খেলতে এখন আর আমার কোনো দ্বিধা নেই। বাংলার বিজয়বাবু, অংকের চঞ্চলবাবু, ইতিহাসের তারকবাবু-স্যারেদের নামগুলোই শুধু জানিনি, পেয়েছি তাদের স্নেহ-ভালোবাসা। এখন আমি নিজেই স্কুলে আসি। এ বছর মাধ্যমিক দেব। স্যারেরা বলেন আসল পরীক্ষা এবারই শুরু হবে। স্কুল ছাড়িয়ে কলেজ, কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়-এগিয়ে চলবে জীবন। কিন্তু স্কুলের ঘাসে প্রথমবার রেখে যাওয়া আমার পায়ের ছাপ, প্রথম দিনের সমস্ত ঘটনা সে তো স্মৃতি থেকে বারবার আমাকে ডাকে। বিদ্যালয়ের প্রথম দিনের এই স্মৃতি চিরভাস্বর, চির অমলিন হয়ে থাকবে আমার জীবনে।
আপনার জীবনের স্মরণীয় ঘটনা প্রবন্ধ রচনা শুধু পরীক্ষার প্রশ্নের উত্তর লেখার চেয়ে অনেক বেশি কিছু। এটি আত্ম-অন্বেষণ এবং আত্ম-প্রকাশের একটি মাধ্যম। এই প্রক্রিয়াটির মাধ্যমে আপনি নিজেকে আরও ভালভাবে বুঝতে পারবেন এবং আপনার অভিজ্ঞতাগুলি অন্যদের সাথে শেয়ার করতে পারবেন। তাই, পরীক্ষার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এই রচনা লেখার বাইরেও, নিজের জীবনের গল্প লেখার জন্য নিয়মিত সময় বের করুন।
এই রচনা লেখার সময় সত্যবাদী এবং নিখুঁত হওয়ার চেষ্টা করুন। আপনার আবেগ এবং অনুভূতিগুলিকে গোপন করবেন না। মনে রাখবেন, আপনার অভিজ্ঞতা অনন্য এবং মূল্যবান। আপনার গল্প শেয়ার করে আপনি অন্যদের অনুপ্রাণিত করতে পারেন এবং বিশ্বকে আরও ভালো জায়গা করে তুলতে পারেন।