এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার একটি ধাপ হল ‘চোঁয়ানো পরিস্রাবণ’ – ব্যাখ্যা করো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। “তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার একটি ধাপ হল ‘চোঁয়ানো পরিস্রাবণ’ – ব্যাখ্যা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের চতুর্থ অধ্যায় “বর্জ্য ব্যবস্থাপনা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার একটি ধাপ হল ‘চোঁয়ানো পরিস্রাবণ’ – ব্যাখ্যা করো।
অথবা, তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পদ্ধতিসমূহ আলোচনা করো।
তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা –
বর্জ্য সমন্বিত দূষিত জলকে শোধন করে পানের যোগ্য করতে হলে জলে উপস্থিত, জৈব ও অজৈব পদার্থ, ধাতব পদার্থ, বর্ণ বা গন্ধ সৃষ্টিকারী পদার্থগুলি দূর করা প্রয়োজন। এ ছাড়া পানের যোগ্য করতে গেলে ক্ষারমুক্ত ও জীবাণুমুক্ত হওয়া প্রয়োজন। জলে দ্রবীভূত বা ভাসমান পদার্থগুলি দূর করার তিনটি ধাপ রয়েছে, এই ধাপগুলি হল –
- প্রাথমিক শোধন।
- মাধ্যমিক শোধন।
- চূড়ান্ত শোধন।
নিম্নে তিনটি পদ্ধতি বিস্তারিত আলোচনা করা হল।
প্রাথমিক শোধন –
এই পদ্ধতিতে দূষিত জলে ভাসমান জৈব ও অজৈব কঠিন পদার্থের দূরীকরণ করা হয়। নোংরা জলের প্রবাহপথে ছাঁকনি ব্যবহার করে ভাসমান কঠিন পদার্থ সরিয়ে ফেলা হয়। ছোটো পাথর ও বালি জলের তলায় থিতিয়ে পড়ে।
মাধ্যমিক শোধন –
মাধ্যমিক শোধনের দুটি পদ্ধতি –
চোঁয়ানো পরিস্রাবণ পদ্ধতি – প্রাথমিক ধাপের শোধিত জল একটি বড়ো মাপের চোঙাকৃতি পাত্রে ফেলা হয়, যেখানে নুড়ি, পাথর ঘনসন্নিবিষ্ট অবস্থায় সাজানো থাকে। নুড়ি, পাথর স্তরের মধ্য দিয়ে জল পাঠানো হয়। এই স্তরে প্রচুর পরিমাণে বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা থাকে। জলে উপস্থিত আণুবীক্ষণিক জীব জৈব বস্তুকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। এই স্তরে প্রচুর বায়ু চলাচল থাকায় অণুজীবগুলি নুড়ি, পাথরের মধ্যে আটকে যায় এবং জল নীচের দিকে চুঁইয়ে চলে আসে। পরবর্তী সময়ে এই জলকে চূড়ান্ত শোধনের জন্য নির্দিষ্ট স্থানে পাঠানো হয়।

সক্রিয়গাদ পদ্ধতি – মাধ্যমিক শোধনের অপর পদ্ধতি হল সক্রিয়গাদ পদ্ধতি। সক্রিয়গাদ পদ্ধতিতে জলে উপস্থিত আণুবীক্ষণিক জীব দ্বারা জলের জৈব ক্ষয়িষ্ণু বস্তুগুলি ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং BOD কমে গ্রহণযোগ্য মাত্রায় আসে। তারপর নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে আণুবীক্ষণিক জীবের স্তরকে Sludge হিসেবে অধঃক্ষিপ্ত করা হয় এবং পরিষ্কার জল সংগ্রহ করা হয়।
চূড়ান্ত বা অন্তিম শোধন –
একটি উন্মুক্ত বিশাল জলাধারে মাধ্যমিক শোধিত জল O2 দ্বারা জারিত করা হয় এবং অম্লতা ও ক্ষারকীয়তাকে প্রশমিত করা হয়। এভাবে নাইট্রোজেন ফসফরাস, সায়ানাইড যৌগ প্রভৃতিকে দূর করা হয়।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কি?
তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা হল দূষিত জল বা বর্জ্য জলকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শোধন করে পরিবেশ ও মানবস্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ করে তোলার পদ্ধতি।
তরল বর্জ্য শোধনের প্রধান ধাপগুলি কি কি?
তিনটি প্রধান ধাপ –
1. প্রাথমিক শোধন (ভাসমান কঠিন পদার্থ দূরীকরণ)।
2. মাধ্যমিক শোধন (জৈব পদার্থের বিয়োজন, যেমন – চোঁয়ানো পরিস্রাবণ বা সক্রিয়গাদ পদ্ধতি)।
3. চূড়ান্ত শোধন (রাসায়নিক ও জীবাণুমুক্তকরণ)।
চোঁয়ানো পরিস্রাবণ (Trickling Filter) কি?
এটি মাধ্যমিক শোধনের একটি পদ্ধতি, যেখানে নুড়ি, পাথরের স্তরের মধ্য দিয়ে বর্জ্য জল প্রবাহিত করা হয়। এখানে অণুজীবগুলি জৈব বর্জ্য ভক্ষণ করে এবং শোধনকৃত জল নিচে জমা হয়।
চোঁয়ানো পরিস্রাবণে অণুজীবের ভূমিকা কি?
অণুজীবগুলি (ব্যাকটেরিয়া, প্রোটোজোয়া) পাথরের স্তরে বসবাস করে এবং জলের জৈব বর্জ্যকে ভেঙে CO₂, H₂O ও অন্যান্য সরল যৌগে পরিণত করে, ফলে BOD (Biochemical Oxygen Demand) কমে।
BOD কি? এটি শোধন প্রক্রিয়ায় কেন গুরুত্বপূর্ণ?
BOD (জৈব রাসায়নিক অক্সিজেন চাহিদা) হল জলদূষণের মাপকাঠি, যা নির্দেশ করে জলে কতটা অক্সিজেন জৈব বর্জ্য ভাঙ্গনে ব্যবহৃত হবে। শোধন প্রক্রিয়ায় BOD কমালে জল নিরাপদ হয়।
সক্রিয়গাদ পদ্ধতি (Activated Sludge Process) ও চোঁয়ানো পরিস্রাবণের পার্থক্য কি?
1. চোঁয়ানো পরিস্রাবণ – নুড়ি-পাথরের স্তরে অণুজীব স্থির থাকে, জল প্রবাহিত হয়।
2. সক্রিয়গাদ পদ্ধতি – অণুজীবগুলি গাদ (Sludge) আকারে জলের সাথে মিশে বর্জ্য ভাঙ্গে এবং পরে অধঃক্ষিপ্ত হয়।
চূড়ান্ত শোধনে কি করা হয়?
1. রাসায়নিক শোধন – ক্লোরিন বা ওজোন দিয়ে জীবাণুমুক্তকরণ।
2. অম্ল-ক্ষার প্রশমন – pH মান নিয়ন্ত্রণ।
3. অধঃক্ষেপণ – অবশিষ্ট কঠিন পদার্থ পৃথকীকরণ।
শোধিত জল পুনরায় ব্যবহার করা যায় কি?
হ্যাঁ, কৃষি, শিল্প বা অ-পানীয় কাজে (যেমন – টয়লেট ফ্লাশ) ব্যবহার করা যায়। তবে পানযোগ্য করতে অতিরিক্ত শোধন প্রয়োজন।
তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পরিবেশগত গুরুত্ব কি?
এটি জলদূষণ রোধ করে, জলাশয়ের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করে এবং মানবস্বাস্থ্যে রোগের ঝুঁকি কমায়।
বাংলাদেশে তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার চ্যালেঞ্জ কি?
1. অপর্যাপ্ত শোধন।
2. জনসচেতনতার অভাব।
3. শিল্পবর্জ্যের অনিয়ন্ত্রিত নিষ্কাশন।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার একটি ধাপ হল ‘চোঁয়ানো পরিস্রাবণ’ – ব্যাখ্যা করো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার একটি ধাপ হল ‘চোঁয়ানো পরিস্রাবণ’ – ব্যাখ্যা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের চতুর্থ অধ্যায় “বর্জ্য ব্যবস্থাপনা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন