উষ্ণমণ্ডল, নাতিশীতোষ্ণমণ্ডল ও হিমমণ্ডলের বৈশিষ্ট্য

Rohit Mondal

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “উষ্ণমণ্ডল, নাতিশীতোষ্ণমণ্ডল ও হিমমণ্ডলের বৈশিষ্ট্য লেখো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। “উষ্ণমণ্ডল, নাতিশীতোষ্ণমণ্ডল ও হিমমণ্ডলের বৈশিষ্ট্য লেখো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের দ্বিতীয় অধ্যায় “বায়ুমণ্ডল – বায়ুমণ্ডলের তাপ, উষ্ণতা ও বিশ্ব উষ্ণায়ন” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

উষ্ণমণ্ডল, নাতিশীতোষ্ণমণ্ডল ও হিমমণ্ডলের বৈশিষ্ট্য লেখো।
উষ্ণমণ্ডল, নাতিশীতোষ্ণমণ্ডল ও হিমমণ্ডলের বৈশিষ্ট্য লেখো।
Contents Show

উষ্ণমণ্ডল, নাতিশীতোষ্ণমণ্ডল ও হিমমণ্ডলের বৈশিষ্ট্য লেখো।

উষ্ণমণ্ডল –

নিরক্ষরেখার উভয় পাশে 0°-30° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চল উষ্ণমণ্ডল নামে পরিচিত।

উষ্ণমন্ডলের বৈশিষ্ট্য –

  • এই অঞ্চলে সারাবছরই সূর্যরশ্মি প্রায় লম্বভাবে পতিত হয় এবং মধ্যবর্তী অঞ্চলে বছরে অন্তত দুদিন সূর্যরশ্মি লম্বভাবে পতিত হয়।
  • সারাবছর ধরে এখানে দিনরাত্রির দৈর্ঘ্যের হ্রাসবৃদ্ধি খুব কম হয়। অর্থাৎ তাপমাত্রা প্রায় সমান থাকে। এবং গড় উষ্ণতার প্রসর খুব কম (2°-3°C) হয়।
  • এই অঞ্চলের বার্ষিক গড় তাপমাত্রা 27°-30°C -এর মধ্যে থাকে এবং অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় উষ্ণতা অধিক থাকায় এই অঞ্চলটিকে উষ্ণমণ্ডল বা গ্রীষ্মমণ্ডল বলা হয়।
  • এই অঞ্চলে শীত ঋতু খুব একটা পরিলক্ষিত হয় না এবং প্রতিদিনই বিকালের দিকে এখানে ঝড়-বৃষ্টিসহ পরিচলন বৃষ্টিপাত সংঘটিত হয়।

নাতিশীতোষ্ণমণ্ডল –

উভয় গোলার্ধের 30°-60° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চল নাতিশীতোষ্ণমণ্ডল নামে পরিচিত।

নাতিশীতোষ্ণমন্ডলের বৈশিষ্ট্য –

  • এই অঞ্চলে সূর্যরশ্মি কখনই লম্বভাবে পতিত হয় না, বরং অপেক্ষাকৃত তির্যকভাবে (20°-60° কোণে) পতিত হয়।
  • সারাবছর এখানকার গড় উষ্ণতা 0°-27C -এর মধ্যে থাকে। অর্থাৎ মাঝারি উত্তাপ এই অঞ্চলের প্রধান বৈশিষ্ট্য।
  • এই অঞ্চলে দিনরাত্রির দৈর্ঘ্য গড়ে মাঝামাঝি ধরনের থাকে। তাই এখানে নাতিশীতোষ্ণ অবস্থা বিরাজ করে।
  • কর্কটক্রান্তিরেখা ও মকরক্রান্তিরেখার কাছাকাছি (232° উঃ ও দঃ থেকে 45° উঃ ও দঃ) অঞ্চলে উষ্ণতা বেশি থাকায় একে গ্রীষ্মপ্রধান নাতিশীতোষ্ণমণ্ডল এবং মেরু ও বৃত্তের কাছাকাছি অঞ্চলে (45° উঃ ও দঃ থেকে 66½° উঃ ও দঃ) উষ্ণতা কম থাকে বলে একে শীতপ্রধান নাতিশীতোষ্ণমণ্ডল বলা হয়।

হিমমণ্ডল –

উভয় গোলার্ধের 60°-90° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চল হিমমণ্ডল নামে পরিচিত।

হিমমণ্ডলের বৈশিষ্ট্য –

  • এই দুই অঞ্চলে সূর্যরশ্মি বেশ তির্যকভাবে পতিত হয় বলে উষ্ণতা খুবই কম থাকে।
  • একটানা পর্যায়ক্রমে দুই অঞ্চলে ছয়মাস দিন ও ছয়মাস রাত্রি বিরাজ করে বলে বার্ষিক গড় উষ্ণতা 0°C -এরও কম থাকে।
  • উষ্ণতা কম বলে এই দুই অঞ্চলের ভূমিভাগ সারাবছর তুষারাবৃত থাকে।
  • 6 মাস একটানা রাত্রি চলাকালীন অরোরা অস্ট্রালিস ও অরোরা বোরিয়ালিস -এর প্রভাবে এই দুই অঞ্চল মৃদু আলোকিত হয়।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

উষ্ণমণ্ডল কোথায় অবস্থিত?

এটি নিরক্ষরেখার উভয় পাশে 0°–30° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত।

উষ্ণমণ্ডলের প্রধান বৈশিষ্ট্য কী?

1. সূর্যরশ্মি প্রায় লম্বভাবে পড়ে, তাই তাপমাত্রা বেশি (27°–30°C)।
2. দিন-রাত্রির দৈর্ঘ্য প্রায় সমান থাকে।
3. পরিচলন বৃষ্টি ও ঝড়বৃষ্টি বেশি হয়।

উষ্ণমণ্ডলে শীতকাল অনুভূত হয় না কেন?

সূর্য সারাবছর প্রায় লম্বভাবে কিরণ দেয় বলে তাপমাত্রা স্থির থাকে এবং শীতের প্রভাব কম।

নাতিশীতোষ্ণমণ্ডলের অবস্থান কোথায়?

এটি 30°–60° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশে অবস্থিত।

নাতিশীতোষ্ণমণ্ডলের জলবায়ু কেমন?

1. সূর্যরশ্মি তির্যকভাবে পড়ে (20°–60° কোণে)।
2. গড় তাপমাত্রা 0°–27°C-এর মধ্যে থাকে।
3. গ্রীষ্ম ও শীতকাল স্পষ্টভাবে অনুভূত হয়।

নাতিশীতোষ্ণমণ্ডলকে আবার দুভাগে ভাগ করা যায় কেন?

1. গ্রীষ্মপ্রধান নাতিশীতোষ্ণমণ্ডল (23.5°–45° অক্ষাংশ) – বেশি উষ্ণ।
2. শীতপ্রধান নাতিশীতোষ্ণমণ্ডল (45°–66.5° অক্ষাংশ) – শীত বেশি।

হিমমণ্ডল কোথায় দেখা যায়?

এটি 60°–90° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশে (মেরু অঞ্চলে) অবস্থিত।

হিমমণ্ডলে তাপমাত্রা কেমন?

1. সূর্যরশ্মি অত্যন্ত তির্যকভাবে পড়ে, তাই তাপমাত্রা 0°C -এর নিচে থাকে।
2. ছয় মাস দিন ও ছয় মাস রাত হয়।

হিমমণ্ডলে অরোরা কী?

মেরুপ্রভা (অরোরা বোরিয়ালিস উত্তর মেরুতে, অরোরা অস্ট্রালিস দক্ষিণ মেরুতে) দেখা যায়, যা সৌরকণার সঙ্গে বায়ুমণ্ডলের সংঘর্ষে তৈরি হয়।

হিমমণ্ডলে বরফ জমে থাকে কেন?

সূর্য থেকে কম তাপ পেয়ে তাপমাত্রা সর্বদা হিমাঙ্কের নিচে থাকে, ফলে বরফ গলে না।

এই তিন মণ্ডলের মধ্যে কোনটিতে জনবসতি বেশি?

নাতিশীতোষ্ণমণ্ডলে, কারণ এখানে জলবায়ু মানববাসের জন্য সহনশীল।

উষ্ণমণ্ডলে গাছপালা ঘন কেন?

উত্তাপ ও বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ায় ঘন বন (যেমন — অ্যামাজন রেনফরেস্ট) গড়ে ওঠে।

হিমমণ্ডলে প্রাণীরা কীভাবে বেঁচে থাকে?

পেঙ্গুইন, মেরু ভালুকের মতো প্রাণীরা মোটা চর্বি ও ফুরের মাধ্যমে ঠান্ডা সহ্য করে।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “উষ্ণমণ্ডল, নাতিশীতোষ্ণমণ্ডল ও হিমমণ্ডলের বৈশিষ্ট্য লেখো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “উষ্ণমণ্ডল, নাতিশীতোষ্ণমণ্ডল ও হিমমণ্ডলের বৈশিষ্ট্য লেখো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের দ্বিতীয় অধ্যায় “বায়ুমণ্ডল – বায়ুমণ্ডলের তাপ, উষ্ণতা ও বিশ্ব উষ্ণায়ন” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Job Posts

পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি স্থানীয় বায়ুর পরিচয় দাও।

পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি স্থানীয় বায়ুর পরিচয় দাও।

আকস্মিক বায়ু বা অনিয়মিত বায়ুপ্রবাহের সংজ্ঞা দাও

আকস্মিক বায়ু বা অনিয়মিত বায়ুপ্রবাহ কাকে বলে? আকস্মিক বায়ুর শ্রেণিবিভাগ

সাময়িক বায়ুর সংজ্ঞা দাও। সাময়িক বায়ুর শ্রেণিবিভাগ আলোচনা করো।

সাময়িক বায়ু কাকে বলে? সাময়িক বায়ুর শ্রেণিবিভাগ

About The Author

Rohit Mondal

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি স্থানীয় বায়ুর পরিচয় দাও।

আকস্মিক বায়ু বা অনিয়মিত বায়ুপ্রবাহ কাকে বলে? আকস্মিক বায়ুর শ্রেণিবিভাগ

সাময়িক বায়ু কাকে বলে? সাময়িক বায়ুর শ্রেণিবিভাগ

নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয় ও মেরুদেশীয় উচ্চচাপ বলয় সৃষ্টির কারণ লেখো।

পৃথিবীর বায়ুচাপ বলয়গুলির সঙ্গে নিয়ত বায়ুপ্রবাহের সম্পর্ক আলোচনা করো।