দশম শ্রেণি – বাংলা – প্রলয়োল্লাস – অতিসংক্ষিপ্ত উত্তর ভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর

কাজী নজরুল ইসলামের লেখা প্রলয়োল্লাস কবিতাটি মাধ্যমিক বাংলা স্তরের একটি গুরুত্বপূর্ণ কবিতা। এই কবিতাটিতে কবি নজরুল ইসলাম পরাধীন ভারতবর্ষের মুক্তি ও নতুন সমাজব্যবস্থার আগমনকে প্রলয়ের মাধ্যমে চিত্রিত করেছেন।

Table of Contents

দশম শ্রেণি – বাংলা – প্রলয়োল্লাস – অতিসংক্ষিপ্ত উত্তর ভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর

প্রলয়োল্লাস কবিতাটি কাজী নজরুল ইসলামের কোন কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত?

প্রলয়োল্লাস কবিতাটি কাজী নজরুল ইসলামের অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত।

অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থটি কত খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়?

অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থটি ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর (কার্তিক, ১৩২৯ বঙ্গাব্দ) মাসে প্রকাশিত হয়।

কাজী নজরুল ইসলামের প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম কী?

কাজী নজরুল ইসলামের প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম অগ্নিবীণা (প্রকাশ- অক্টোবর, ১৯২২)।

কাজী নজরুল ইসলাম অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থটি কাকে উৎসর্গ করেন?

কাজী নজরুল ইসলাম অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থটি শ্রীবারীন্দ্রকুমার ঘোষকে উৎসর্গ করেন।

অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থের প্রচ্ছদপটের পরিকল্পনা কে করেন?

অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থের প্রচ্ছদপটের পরিকল্পনা করেন ‘চিত্রকর-সম্রাট’ অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রচ্ছদটি আঁকেন চিত্রশিল্পী শ্রীবীরেশ্বর সেন।

অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থের উৎসর্গ কবিতাটি গ্রন্থে সংযুক্ত হওয়ার আগে কোথায় প্রকাশিত হয়েছিল?

অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থের উৎসর্গ কবিতাটি গ্রন্থে সংযুক্ত হওয়ার আগে মাসিক উপাসনা পত্রিকায় ১৩২৮ বঙ্গাব্দের শ্রাবণ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল।

প্রলয়োল্লাস অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থের কত সংখ্যক কবিতা?

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘প্রলয়োল্লাস’ অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতা।

অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থে মোট ক-টি কবিতা রয়েছে?

অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থে মোট বারোটি কবিতা রয়েছে- ‘প্রলয়োল্লাস’, ‘বিদ্রোহী’, ‘রক্তাম্বরধারিণী মা’, ‘আগমনী’, ‘ধূমকেতু’, ‘কামালপাসা’, ‘আনোয়ার’, ‘রণভেরী’, ‘শাত্-ইল-আরব’, ‘খেয়াপারের তরণী’, ‘কোরবাণী’, ‘মোহররম’।

তোরা সব জয়ধ্বনি কর! – পঙ্ক্তিটিতে কাদের জয়ধ্বনি করতে বলা হয়েছে?
অথবা, তোরা সব জয়ধ্বনি কর! – কবি কাদের জয়ধ্বনি করতে বলেছেন?

কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় কবি দেশের স্বাধীনতার জন্য উন্মুখ তরুণ বিপ্লবীদের জয়ধ্বনি করতে বলা হয়েছে।

তোরা সব জয়ধ্বনি কর। — কার জয়ধ্বনি করার কথা বলা হয়েছে?

কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতা ‘প্রলয়োল্লাস’-এ ধ্বংস ও সৃষ্টির দেবতার জয়ধ্বনি করার কথা বলা হয়েছে।

ওই নূতনের কেতন ওড়ে – নূতনের কেতন ওড়ার সংবাদ কে বহন করে এনেছে?

কাজী নজরুল ইসলামের লেখা ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় ‘নূতনের কেতন’ ওড়ার সংবাদ কালবৈশাখীর ঝড় বহন করে এনেছে।

নূতনের কেতন ওড়া বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?

কাজী নজরুল ইসলাম ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় ‘নূতনের কেতন’ ওড়া বলতে বোঝাতে চেয়েছেন যে, পরাধীনতার বন্ধন থেকে, ঔপনিবেশিকতা থেকে মুক্তির দিন আসন্ন।

আসছে এবার – কে, কীভাবে আসছেন?

কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় প্রলয়ের নেশায় নৃত্যপাগল শিব সিন্ধুপারে সিংহ-দরজায় আঘাত করে আসছেন।

সিন্ধুপারের সিংহদ্বারে ধমক হেনে ভাঙল আগল – ‘সিন্ধুপারের সিংহদ্বার’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

কাজী নজরুল ইসলামের ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতার আলোচ্য অংশে ‘সিন্ধুপারের সিংহদ্বার’ বলতে সমুদ্রপারের আন্দামানের সেলুলার জেলের প্রবেশপথকে বোঝানো হয়েছে।

মহাকালের চণ্ড-রুপে – ‘চণ্ড-রূপ’ বলতে কী বোঝ?

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতার আলোচ্য অংশে ‘চণ্ড-রূপ’ বলতে অত্যন্ত ক্রুদ্ধ, ভীষণ, ভয়ানক, ভয়ংকর, উদ্ধত রূপকে বোঝায়।

আসছে ভয়ংকর। – ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় ভয়ংকরের রূপটি কেমন?

কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় ভয়ংকরের রূপটি অত্যন্ত ভীষণ ও উদ্ধত। তিনি বজ্রশিখার মশাল জ্বেলে অবতীর্ণ হন।

গগন দুলায় – গগন কীভাবে দুলে ওঠে?

কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় ধ্বংসের দেবতা শিবের কেশরাশির ঝাপটায় গগন অর্থাৎ সারা আকাশ দুলে ওঠে বলে কবি কল্পনা করেছেন।

ধূমকেতু তার চামর ঢুলায়। – ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় ‘ধূমকেতু’র কী কী বিশেষণ প্রযুক্ত হয়েছে?

কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় ধূমকেতুর ক্ষেত্রে ‘সর্বনাশী’ ও ‘জ্বালামুখী’ বিশেষণ দুটি প্রযুক্ত হয়েছে।

বিশ্বপাতার বক্ষ-কোলে/রক্ত তাহার কৃপাণ ঝোলে/ দোদুল দোলে। – পঙ্ক্তিগুলোর অর্থ বুঝিয়ে লেখো।

আলোচ্য পঙ্ক্তিগুলোর অর্থ হল-সর্বনাশী রূপ ধরে যে ধ্বংসের দেবতার আগমন ঘটে, তা বিশ্বপিতার বক্ষকে রঙাক্ত করে পৃথিবীকে আন্দোলিত করে তোলে।

ওরে ওই স্তব্ধ চরাচর! – ‘চরাচর’ স্তব্ধ কেন?

প্রলয়োল্লাস কবিতায় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ধ্বংসের দেবতা প্রলয়ংকর শিবের অট্টহাসির প্রচণ্ড শব্দে চরাচর অর্থাৎ গোটা পৃথিবী স্তব্ধ হয়ে পড়েছে বলে কল্পনা করেছেন।

দ্বাদশ রবির বহ্নিজ্বালা ভয়াল তাহার নয়নকটায় – ‘দ্বাদশ রবি’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

দ্বাদশ রবি বলতে সূর্যের বারোটি রূপ বা মূর্তির কথা বলা হয়েছে। হরিবংশ মতে, এই মূর্তিগুলি হল-সবিতা, আদিত্য, বিবস্বান, অর্যমা, পুষা, ত্বষ্টা, ভগ, ধাতা, বরুণ, মিত্র, পর্জন্য এবং বিষ্ণু।

দিগন্তরের কাঁদন লুটায় – কোথায় দিগন্তরের কাঁদন লুটিয়ে পড়ে?

কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় যে রুদ্রদেবের কল্পনা করেছেন, তাঁর ভয়াল আগুনরাঙা জটাজালে দিগন্তরের কাঁদন লুটিয়ে পড়ে।

সপ্ত মহাসিন্ধু দোলে/কপোলতলে! – কার কপোলতলে সপ্ত মহাসিন্ধু দুলে ওঠে?

উদ্ধৃতাংশে ভাঙনের দেবতা শিবের একফোঁটা চোখের জলে তাঁরই গালে ‘সপ্ত মহাসিন্ধু’ দুলে ওঠার কথা বলা হয়েছে।

বিশ্বমায়ের আসন তারই বিপুল বাহুর পর – উদ্ধৃতাংশের অর্থ পরিস্ফুট করো।

প্রলয়ংকর শিব সৃষ্টি ও রক্ষার কর্তা। বিশ্বমায়ের অস্তিত্বকে তিনি তাঁর বিপুল বাহুর সাহায্যে রক্ষা ও লালনপালন করে থাকেন।

হাঁকে ওই – কার হাঁক শোনা যাচ্ছে?

কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতার আলোচ্য অংশে ধ্বংসের দেবতা প্রলয়ংকর শিবের হাঁক শোনা যাচ্ছে।

জরায়-মরা মুমূর্ষুদের প্রাণ-লুকানো ওই বিনাশে – পঙ্ক্তিটির অর্থ পরিস্ফুট করো।

প্রলয়োল্লাস কবিতায় জগৎজুড়ে যে প্রলয় ঘনিয়ে আসছে, তার ধ্বংসলীলার শেষে জরা ও জীর্ণতার অবসান ঘটিয়ে নতুন প্রাণ জেগে উঠবে।

এবার মহানিশার শেষে – কোন্ দৃশ্য দেখা যাবে?

প্রলয়োল্লাস কবিতায় কবি আশা করেছেন যে ধ্বংসের কালরাত্রির শেষে নতুন ভোরের সূর্য বিপুল সম্ভাবনা জাগিয়ে হেসে উঠবে।

দিগম্বরের জটায় হাসে শিশু-চাঁদের কর – পঙ্ক্তিটির অর্থ বুঝিয়ে লেখো।

প্রলয়োল্লাস কবিতায় মহাদেবের জটায় ধৃত শিশু-চাঁদের নরম স্নিগ্ধ আলোয় সকলের ঘর ভরে উঠবে বলে কবি আশা প্রকাশ করেছেন।

বজ্রগানে ঝড়-তুফানে — কীসের শব্দ নিনাদিত হয়?

কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় ঝড়-তুফানের সাথে বজ্রপাতে মহাকালের রথের ঘোড়ার হ্রেষাধ্বনি নিনাদিত হয়।

উল্কা ছুটায় নীল খিলানে! – উল্কা কোথায় কীভাবে এসে পড়ে?

মহাকালের রথের ঘোড়ার খুরের দাপটে আকাশ থেকে জ্বলন্ত পাথর বা উল্কা এসে পড়েছে অন্ধ কারাগারের বন্ধ ঘরগুলিতে, দেবতার উদ্দেশে নিবেদিত যজ্ঞের হাড়িকাঠে এবং পাথরের স্তূপে।

এই তো রে তার আসার সময় – কীভাবে তা বোঝা যাচ্ছে?

প্রলয়ংকর মেঘের ঘর্ঘর শব্দে কবির মনে হয়েছে যেন মহাকালের রথের শব্দ তাঁর কানে আসছে। ধ্বংসের দেবতার আসার সম্ভাবনা এভাবেই কবিতায় সূচিত হয়েছে।

ধ্বংস দেখে ভয় কেন তোর? – ধ্বংস দেখে কেন ভয় করা উচিত নয় বলে কবি মনে করেন?

ধ্বংসের মধ্যেই নিহিত থাকে নতুন সৃষ্টির সম্ভাবনা। তাই প্রলয় বা ধ্বংসকে কবি ‘সৃজন-বেদন’ বা নতুন সৃষ্টির যন্ত্রণারূপে দেখেছেন।

প্রলয় নূতন সৃজন-বেদন – কথাটির অর্থ কী?

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় আলোচ্য অংশটির অর্থ ধ্বংসের মধ্য দিয়ে যে নবীনের আগমন ঘটে তা আসলে নতুন সৃষ্টির জন্য যন্ত্রণা।

প্রলয় বয়েও আসছে হেসে – ‘প্রলয়’ বহন করেও হাসির কারণ কী?

প্রলয়োল্লাস কবিতায় প্রলয় অর্থাৎ ধ্বংসের বার্তা নিয়ে মহাকাল এসেছেন হাসিমুখে, কারণ তিনি যেমন ধ্বংস করবেন, তেমনই নতুন সৃষ্টিও করবেন।

আসছে নবীন। – নবীনের আসার উদ্দেশ্য কী?

কবি কাজী নজরুল ইসলাম ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় জীবনহারা, প্রাণহীন, জড়, অসুন্দরকে ধ্বংস করতেই যে নবীনের শুভাগমন, তা ব্যক্ত করেছেন।

ওই ভাঙা-গড়া খেলা যে তার কিসের তবে ডর? – ‘ভাঙা-গড়া খেলা’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

ভাঙা-গড়া খেলা বলতে মহাকালের রুদ্ররূপে জীর্ণ পুরাতন সৃষ্টিকে ধ্বংস করা ও শুভংকররূপে নতুন জগৎ সৃষ্টি করাকে বোঝনো হয়েছে।

ভেঙে আবার গড়তে জানে সে চিরসুন্দর। — কী ভেঙে আবার নতুন করে গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে?

কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় জীর্ণ, পুরাতন গতানুগতিকতাকে ভেঙে, যাবতীয় প্রাণহীনতা, নিশ্চলতার অবসান ঘটিয়ে নতুন সম্ভাবনাময় জীবন গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে।

বধূরা প্রদীপ তুলে ধর – বধূরা কার উদ্দেশে প্রদীপ তুলে ধরবে কেন?

কাজী নজরুল ইসলাম ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় বধূদের প্রদীপ তুলে ধরার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রজ্জ্বলিত প্রদীপ তুলে ধরে বধুরা কাল- ভয়ংকরের রূপে আসা সুন্দরকে বরণ করে নেবে।

ওই আসে সুন্দর। – সুন্দর কীভাবে আসে?

কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় সুন্দর আসে কাল-ভয়ংকরের বেশ ধারণ করে।

মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের অগ্নিবীণা পটভূমিতে রচিত প্রলয়োল্লাস কবিতাটি আজও প্রাসঙ্গিক। এই কবিতাটি আমাদেরকে প্রলয়ের মাধ্যমে নতুন সৃষ্টির আকাঙ্ক্ষা জাগ্রত করে।

Share via:

মন্তব্য করুন