অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – লোকটা জানলই না – সুভাষ মুখোপাধ্যায়

Gopi

অষ্টম শ্রেণির বাংলা বিষয়ের লোকটা জানলই না অধ্যায়ের প্রশ্ন ও উত্তর গুলি পরীক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এইভাবে লোকটা জানলই না অধ্যায়ের প্রশ্ন ও উত্তর গুলি যদি তোমরা প্রস্তুত করে না যাও তাহলে পরীক্ষায় লোকটা জানলই না অধ্যায়ের প্রশ্ন ও উত্তর গুলোর উত্তর দিতে পারবে না। তাই লোকটা জানলই না অধ্যায়ের প্রশ্ন ও উত্তর গুলি ভালো করে মুখস্ত করে গেলে তোমরা পরীক্ষায় খুব ভালো ফলাফল পাবে।

কবিতাটিতে, কবি একজন হৃদয়হীন মানুষের চিত্র তুলে ধরেছেন যিনি যন্ত্রসভ্যতার পেষণে পিষ্ট। তিনি তার সারা জীবন ধরে অর্থের পিছনে ছুটে বেড়িয়েছেন, যা তার কাছে লক্ষ্মীরূপে এসেছে। অর্থের লোভে, তিনি তার চার দেয়ালের গন্ডি শক্তিশালী করেছেন, যেন তার সম্পদ রক্ষা করতে পারেন।

কিন্তু এই লোকটি কখনোই বুঝতে পারেননি যে তার বুকের মধ্যে লুকিয়ে থাকা একটি হৃদয় ছিল, যা আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপের মতো অসম্ভবকে সম্ভব করার ক্ষমতা রাখে। অর্থের পিছনে ছুটে ছুটতে, তিনি তার হৃদয়ের উপস্থিতি অনুভব করতে ভুলে গেছেন।

চার দেয়ালের গন্ডিতে আবদ্ধ থাকায়, তিনি নিজেকে প্রাকৃতিক বাতাস থেকে বঞ্চিত করেছেন। ধীরে ধীরে, তার হৃদয় তাকে ছেড়ে চলে গেছে, কিন্তু লোকটি তা অনুভব করতে পারেননি।

অর্থের চেয়ে ঐশ্বর্যবান মানুষের অন্তরের সৌন্দর্যকে কখনোই উপলব্ধি করতে পারেননি তিনি। কবিতাটির মাধ্যমে, কবি এই চিরসত্যকেই প্রতিপন্ন করতে চেয়েছেন যে, অর্থই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য নয়, বরং হৃদয়ের স্পন্দন অনুভব করাও জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

এই উদ্ধৃতিটি একজন মানুষের জীবনের বর্ণনা করে যিনি তার সম্পদ এবং নিরাপত্তার জন্য অতিরিক্ত মনোযোগ দিয়েছিলেন, কিন্তু তার হৃদয়ের মতো মূল্যবান জিনিসটি উপেক্ষা করেছিলেন।

অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – লোকটা জানলই না

লোকটা জানলই না অধ্যায়ের লেখক পরিচিতি

রবীন্দ্র-পরবর্তী যুগের আধুনিক কালের বিখ্যাত কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগরে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ১২ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ক্ষিতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় এবং মাতার নাম জানকীবালা দেবী। তিনি কলকাতার মিত্র ইনস্টিটিউশন থেকে ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। এরপর স্কটিশচার্চ কলেজ থেকে দর্শনে অনার্সসহ বিএ পাস করেন। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে তিনি কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করেন। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘পদাতিক’ ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়। ‘পদাতিক কবি’ নামেই তিনি পরিচিতি লাভ করেন। তাঁর অন্যান্য কাব্যগ্রন্থগুলি হল ‘অগ্নিকোণ’, ‘চিরকুট’, ‘কাল মধুমাস’, ‘ছেলে গেছে বনে’, ‘জল সইতে’, ‘ফুল ফুটুক’, ‘যত দূরেই যাই’, ‘একটু পা চালিয়ে ভাই’ ইত্যাদি। তাঁর বিখ্যাত গদ্যগ্রন্থগুলি হল – ‘কাঁচা-পাকা’, ‘টানাপোড়েনের মাঝখানে’, ‘ঢোল-গোবিন্দের আত্মদর্শন’ ইত্যাদি। কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় তাঁর কর্মকৃতিত্বের জন্য বহু পুরস্কার পেয়েছেন। যেমন – ‘যত দূরেই যাই’ কাব্যগ্রন্থের জন্য ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে ‘সাহিত্য আকাদেমি’ পুরস্কার, ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে ‘জ্ঞানপীঠ পুরস্কার’ ইত্যাদি। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে ‘দেশিকোত্তম’ সম্মানে সম্মানিত করেন। ২০০৩ খ্রিস্টাব্দের ৮ জুলাই কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যু ঘটে।

লোকটা জানলই না অধ্যায়ের পাঠপ্রসঙ্গ

বর্তমান যুগ যন্ত্রসভ্যতার যুগ। যন্ত্রের পেষণে মানুষের মধ্য থেকে ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে হৃদয়ের উপস্থিতি। অর্থ উপার্জনের নেশায় বুঁদ হয়ে মানুষ ক্রমশ ইঁদুরদৌড়ে অংশগ্রহণ করছে। হৃদয়হীনতার পাশাপাশি তাদের মন অধিকার করে নিচ্ছে অর্থসর্বস্বতা। মানুষের এই ঘৃণিত চরিত্রবৈশিষ্ট্যটিকে তুলে ধরার জন্যই সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ‘লোকটা জানলই না’ কবিতাটির অবতারণা করা হয়েছে। আজকের যুগজীবনে কবিতাটি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।

লোকটা জানলই না অধ্যায়ের বিষয়সংক্ষেপ

আধুনিক যুগ ও মননের কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ‘লোকটা জানলই না’ কবিতার মধ্যে এক হৃদয়হীন মানুষের কথা তুলে ধরা হয়েছে। কবি যে মানুষটির কথা বলেছেন কবিতায় সে সারাটা জীবন নিজের বাঁ-দিকের বুকপকেটটাই সামলে গেল, যার মধ্যে মানুষ গচ্ছিত রাখে ধন। ধনসম্পত্তি রক্ষা করতে করতেই তার ইহকাল-পরকাল চলে গেল। সেই পকেটের নীচে অস্থি-মজ্জা-চামড়ার ভিতরে সযত্নে রক্ষিত হৃদয়ের হদিশ সে পেলই না। সেই হৃদয় যা তাকে আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপের মতো সমস্ত অসম্ভব কিছুকে সম্ভব করে তুলতে পারত।

সারাটা জীবন সে শুধু ধনই সঞ্চয় করে গেল। বড়ো বড়ো অট্টালিকার চার দেয়ালে বন্দি হয়ে, ‘ছোটোলোক’ প্রাকৃতিক বাতাসের অবাধ গতি রোধ করে জীবনযাত্রা অতিবাহিত করল। এরপর একদিন গোগ্রাসে অর্থ আত্মসাৎ করার মাঝেই অন্তর্হিত হল তার হৃদয়। হৃদয়ের উপস্থিতির কথা যেমন সে জানতে পারেনি, একইভাবে সে জানতে পারেনি হৃদয়ের অন্তর্ধানের কথাও। অর্থাৎ সে জানতেই পারল না ইহকাল-পরকালের উপর সর্বাগ্রে স্থান হৃদয়ের ঐশ্বর্যের, পার্থিব সম্পদের নয়।

লোকটা জানলই না অধ্যায়ের নামকরণ

সাহিত্যের এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল নামকরণ। প্রধানত নামকরণের মাধ্যমেই রচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে আগাম ধারণা করা যায়। নামকরণ নানা প্রকারের হতে পারে – বিষয়মুখী, চরিত্র প্রধান, ব্যঞ্জনাধর্মী ইত্যাদি। এবার আলোচনা করে দেখা যাক যে, কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ‘লোকটা জানলই না’ কবিতার নামকরণ কতটা সার্থক।

আলোচ্য কবিতায় যন্ত্রসভ্যতার পেষণে পিষ্ট এক হৃদয়হীন মানুষের কথা তুলে ধরেছেন কবি। মানুষটি সারাজীবন ধরে তার বুকপকেটটি সামলে চলেছে, যেখানে সে গচ্ছিত রেখেছে অর্থ। সভ্যতার ইঁদুরদৌড়ে টিকে থাকার জন্য ছুটেছে অর্থের পিছনে। অর্থ এসেছে লক্ষ্মী হয়ে, তাকে আগলে রাখার জন্য চার দেয়ালের গন্ডিটাকে শক্তিশালী করতে হয়েছে-এতেই চলে গেছে তার সারাটা জীবন। অথচ ওই পকেটের নীচেই চামড়ার আবরণে আবৃত সে হৃদয় ছিল, যে হৃদয় লোকটাকে দিতে পারত আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপের মতোই অসম্ভবকে সম্ভব করার ক্ষমতা-সেই খবরই কোনোদিন পাওয়ার চেষ্টা করেনি ‘লোকটা’। অর্থ এসেছে পকেটে, বাড়ি হয়েছে মস্ত; কিন্তু হারিয়ে গেছে হৃদয়। চার দেয়ালের গন্ডিতে আবদ্ধ থেকে নিজেই সেখানে প্রাকৃতিক বাতাসের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে। তার বুকের মধ্যে লুকিয়ে ছিল যে হৃদয়, সেই হৃদয়ের উপস্থিতি সে যেমন অনুভব করেনি কখনও; একইভাবে অর্থের পিছনে ছুটতে ছুটতে কখন যে সেই হৃদয় তাকে ছেড়ে চলে গেছে, তাও জানা হয়নি লোকটার। অর্থাৎ অর্থের চেয়েও ঐশ্বর্যবান মানুষের অন্তর বা হৃদয়-সেই চিরসত্যকে কোনোদিনই জানা হল না মানুষটির। কবি সে-কথাই প্রতিপন্ন করতে চেয়েছেন কবিতাটিতে।

তাই আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, কবিতাটির নামকরণ ‘লোকটা জানলই না’ ব্যঞ্জনাময় ও সার্থক হয়েছে।

লোকটা জানলই না অধ্যায়ের শব্দার্থ ও টীকা

সামলাতে সামলাতে – আগলে রাখতে; রক্ষা করতে। ইহকাল – জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সময়; জীবিতকাল। পরকাল – মৃত্যুর পরে প্রাপ্ত অবস্থা। আলাদিন – ‘আরব্য রজনী’ উপন্যাসের উল্লেখযোগ্য চরিত্র হল আলাদিন, তার একটি আশ্চর্য প্রদীপ ছিল। আশ্চর্য-প্রদীপ – ‘আরব্য রজনী’র উল্লেখযোগ্য চরিত্র আলাদিনের একটি আশ্চর্য প্রদীপ ছিল। ওই প্রদীপটি ঘষলে তার মধ্য থেকে অলৌকিক দৈত্য বেরিয়ে আসত। সে আলাদিনের কথা অনুসারে অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলত। কড়ি – শামুক জাতীয় সামুদ্রিক জীববিশেষের খোল, প্রাচীনকালে ভারতবর্ষে এটি মুদ্রারূপে ব্যবহৃত হত। লক্ষ্মী – ধনসম্পদ ও সৌভাগ্যের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। রণ-পা – বাঁশ ও কাঠের দ্বারা কৃত্রিমভাবে তৈরি লম্বা পা। পাহারা – প্রহরা দেওয়া। ছোটোলোক – সমাজে যারা অবনত। গোগ্রাস – বড়ো বড়ো গ্রাস। ফাঁক – ব্যবধান। খসে পড়ল – (এক্ষেত্রে) মৃত্যু হল।

কবিতাটির মাধ্যমে কবি আমাদের সতর্ক করে দিচ্ছেন যে, যন্ত্রসভ্যতার পেষণে আমরা যেন আমাদের মানবিকতাকে হারিয়ে ফেলি না। কবিতার কেন্দ্রীয় চরিত্রটি অর্থের পিছনে এতটাই মগ্ন হয়ে পড়েছিল যে, সে তার নিজের হৃদয়ের কথা ভুলে গিয়েছিল। তার চার দেয়ালের বাড়ি এবং পকেটে ভর্তি অর্থ তাকে সুখী করতে পারেনি, কারণ সে হারিয়ে ফেলেছিল তার অন্তর্জগত সমৃদ্ধি।

কবিতাটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, জীবনে অর্থ উপার্জন গুরুত্বপূর্ণ হলেও, এর চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল আমাদের মানবিক মূল্যবোধকে টিকিয়ে রাখা। আমাদের হৃদয়ের কথা শোনা উচিত এবং ভালোবাসা, সহানুভূতি এবং সহমর্মিতার মতো অনুভূতিগুলিকে লালন করা উচিত। কেবল তখনই আমরা সত্যিকারের অর্থে সমৃদ্ধ জীবনযাপন করতে পারব।

কবিতাটির শেষ ‍লাইনগুলি আমাদের মনে গেঁথে যায়: “মানুষ হারালো হৃদয়, / পেলো ঘরবাড়ি।” এই ‍লাইনগুলি আমাদের বারবার স্মরণ করিয়ে দেয় যে, জীবনের আসল সম্পদ হল আমাদের অন্তর্জগত সমৃদ্ধি, যা অর্থের চেয়ে অনেক বেশি মূল্যবান।

JOIN US ON WHATSAPP

JOIN US ON TELEGRAM

Please Share This Article

About The Author

Related Posts

লোকটা জানলই না – অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – লোকটা জানলই না – অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

লোকটা জানলই না – অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – লোকটা জানলই না –  ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

লোকটা জানলই না – অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – লোকটা জানলই না – রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

Trending Now

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Class 9 – English Reference – Tom Loses a Tooth – Question and Answer

Class 9 – English Reference – The North Ship – Question and Answer

Class 9 – English – His First Flight – Question and Answer

Class 9 – English – A Shipwrecked Sailor – Question and Answer