এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “বৃষ্টিপাতের শ্রেণিবিভাগ করে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দাও।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। “বৃষ্টিপাতের শ্রেণিবিভাগ করে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দাও।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের দ্বিতীয় অধ্যায় “বায়ুমণ্ডল – আর্দ্রতা ও অধঃক্ষেপণ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

বৃষ্টিপাতের শ্রেণিবিভাগ করে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দাও।
বৃষ্টিপাতের শ্রেণিবিভাগ –
ভূপৃষ্ঠে জলরাশি যখন তরল রূপে পতিত হয় তখন তাকে বৃষ্টিপাত বলে। পৃথিবীতে সাধারণত তিন প্রকার বৃষ্টিপাত সংঘটিত হয়। যেমন –
- পরিচলন বৃষ্টিপাত।
- শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত।
- ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত।
পরিচলন বৃষ্টিপাত –
পরিচলন বৃষ্টিপাতের সংজ্ঞা – ভূপৃষ্ঠের জলরাশি সূর্যের তাপে উত্তপ্ত হয়ে জলীয় বাষ্পরূপে ঊর্ধ্বাকাশে উঠে সম্পৃক্ত, শীতল ও ভারী হয়ে সেই স্থানেই বৃষ্টিপাত রূপে পতিত হলে তাকে পরিচলন বৃষ্টিপাত বলে।
পরিচলন বৃষ্টিপাতের কারণ – ভূপৃষ্ঠের জলরাশি সূর্যের তাপে ক্রমাগত উত্তপ্ত হয় এবং জলীয়বাষ্প গঠন করে হালকা হয় এবং ধূলিকণাকে আশ্রয় করে ঊর্ধ্বাকাশে উঠে যায়। এই বায়ু উপরে শীতল, ঘনীভূত ও ধীরে ধীরে সম্পৃক্ত হয়ে বৃষ্টিরূপে ঝরে পড়ে।
পরিচলন বৃষ্টিপাতের উদাহরণ – সাধারণত নিরক্ষীয় ও ক্রান্তীয় জলবায়ুর দেশগুলিতে উষ্ণতা বেশি থাকায় সেই সকল দেশে পরিচলন পদ্ধতিতে বৃষ্টিপাত হয়। যেমন – ভারত, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার।

শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত –
শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাতের সংজ্ঞা – ‘শৈল’ শব্দের অর্থ পর্বত এবং ‘উৎক্ষেপ’ -এর অর্থ ওপরে ওঠা। জলীয়বাষ্পপূর্ণ বায়ুর প্রবাহপথে পর্বতের অবস্থান থাকলে সেই বায়ু পর্বতের ঢাল বরাবর উপরে ওঠে এবং শীতলতার সংস্পর্শে এসে বৃষ্টিপাত ঘটায়, একে শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত বলে।
শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাতের পদ্ধতি – জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু তার গতিপথে আড়াআড়িভাবে অবস্থিত কোনো পর্বতে বাধা পেয়ে পর্বতের গা বরাবর উপরে উঠে যায়। এই জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু ওপরে উঠে শীতল হয় এবং জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হয়ে জলকণায় পরিণত হয়। জলকণাগুলি একে অপরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বড়ো হতে থাকে এবং পর্বতের যে ঢাল বরাবর ওপরে ওঠে সেই ঢালেই (প্রতিবাত ঢাল) প্রচুর শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত ঘটায়। এরপর পর্বত অতিক্রম করে যখন বিপরীত ঢালে (অনুবাত ঢাল) পৌঁছোয় তখন বায়ুতে জলীয়বাষ্প থাকে না। পর্বতের অনুবাত ঢালটি বৃষ্টিপাতের অভাবে বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চলে পরিণত হয়।
শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাতের উদাহরণ – ভারতে মেঘালয়ে খাসি পাহাড়ের প্রতিবাত ঢালে অবস্থিত মৌসিনরামে জলীবাষ্পপূর্ণ দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বাধা পেয়ে শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত ঘটায় (অনুবাত ঢালে অবস্থিত শিলং একটি বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল)।

ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত –
ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাতের সংজ্ঞা – শীতল বায়ুর ঢাল বরাবর উষ্ণ বায়ু ঊর্ধ্বে উঠে ঘনীভূত হয়ে যে বৃষ্টিপাত ঘটায় তাকে ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত বলে।
ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাতের পদ্ধতি – শীতল বায়ুর ও উষ্ণ বায়ুর সীমান্ত অঞ্চলে সৃষ্ট ঢাল বরাবর উষ্ণ বায়ু হালকা হয়ে ঊর্ধ্বে উত্থিত হয় ও ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায়।
ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাতের উদাহরণ – প্রথমত, ক্রান্তীয় অঞ্চলে প্রবল নিম্নচাপ সৃষ্টি হলে ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত হয়। দ্বিতীয়ত, নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে শীতল ও উষ্ণ বায়ু পরস্পরের বিপরীত দিকে প্রবাহিত হলে সীমান্ত অঞ্চলে ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত হয়।

প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গে গ্রীষ্মের শুরুতে যে কালবৈশাখী ঝড় হয় সেটি একপ্রকার ঘূর্ণিঝড়। এর ফলে যে বৃষ্টি হয় তাকে ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত বলে। ভারত ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতে গ্রীষ্ম ও শরৎকালে এই বৃষ্টিপাত দেখা যায়।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
বৃষ্টিপাত কাকে বলে?
ভূপৃষ্ঠে জলরাশি যখন তরল রূপে পতিত হয়, তাকে বৃষ্টিপাত বলে। এটি বৃষ্টি, বরফ, শিলাবৃষ্টি ইত্যাদি আকারে হতে পারে।
বৃষ্টিপাত প্রধানত কত প্রকার ও কী কী?
বৃষ্টিপাত প্রধানত তিন প্রকার –
1. পরিচলন বৃষ্টিপাত
2. শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত
3. ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত
পরিচলন বৃষ্টিপাত কী? এটি কোথায় বেশি হয়?
সূর্যের তাপে ভূপৃষ্ঠের জল বাষ্পীভূত হয়ে উপরে উঠে শীতল ও ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টি রূপে পতিত হলে তাকে পরিচলন বৃষ্টিপাত বলে। এটি সাধারণত নিরক্ষীয় ও ক্রান্তীয় অঞ্চলে (যেমন – ভারত, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার) বেশি হয়।
শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত কী? এটি কীভাবে হয়?
জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু পর্বতের ঢাল বরাবর উপরে উঠে শীতল হয়ে বৃষ্টিপাত ঘটালে তাকে শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত বলে। এটি পর্বতের প্রতিবাত ঢালে বেশি হয়, আর অনুবাত ঢালে বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল সৃষ্টি করে।
উদাহরণ – মেঘালয়ের মৌসিনরাম (বিশ্বের সবচেয়ে আর্দ্র স্থান)।
ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত কী? এর উদাহরণ দিন।
শীতল ও উষ্ণ বায়ুর সংঘর্ষে উষ্ণ বায়ু উপরে উঠে ঘনীভূত হয়ে যে বৃষ্টি ঘটায়, তাকে ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত বলে।
উদাহরণ –
1. ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের সময় বৃষ্টি (যেমন – আম্ফান, ইয়াস)।
2. নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে শীতল-উষ্ণ বায়ুর মিলনে বৃষ্টি।
3. পশ্চিমবঙ্গের কালবৈশাখী ঝড়ের সময় বৃষ্টি।
বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল কী?
শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাতের সময় পর্বতের অনুবাত ঢালে বৃষ্টিপাত কম হয়, কারণ বায়ুতে জলীয় বাষ্প কমে যায়। এ ধরনের শুষ্ক অঞ্চলকে বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল বলে।
উদাহরণ – মেঘালয়ের শিলং (মৌসিনরামের বিপরীতে)।
কোন ধরনের বৃষ্টিপাত ভারতে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়?
ভারতে শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত (মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে) ও ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত (কালবৈশাখী বা ঘূর্ণিঝড়ের সময়) বেশি দেখা যায়।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “বৃষ্টিপাতের শ্রেণিবিভাগ করে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দাও।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “বৃষ্টিপাতের শ্রেণিবিভাগ করে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দাও।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের দ্বিতীয় অধ্যায় “বায়ুমণ্ডল – আর্দ্রতা ও অধঃক্ষেপণ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন