বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় স্যানিটারি ল্যান্ডফিলের ভূমিকা কীরূপ?

Rahul

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় স্যানিটারি ল্যান্ডফিলের ভূমিকা কীরূপ?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। “বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় স্যানিটারি ল্যান্ডফিলের ভূমিকা কীরূপ?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের চতুর্থ অধ্যায় “বর্জ্য ব্যবস্থাপনা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় স্যানিটারি ল্যান্ডফিলের ভূমিকা কীরূপ
বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় স্যানিটারি ল্যান্ডফিলের ভূমিকা কীরূপ

বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় স্যানিটারি ল্যান্ডফিলের ভূমিকা কীরূপ?

অথবা, স্যানিটারি ল্যান্ডফিল কী? এর সুবিধা ও অসুবিধাগুলি কী কী?

বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় স্যানিটারি ল্যান্ডফিলের ভূমিকা –

কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার একটি বিশেষ পদ্ধতি হল Sanitary land-fill। কঠিন বর্জ্য পদার্থগুলি ফেলার জন্য পরিকল্পিত স্থানকে স্যানিটারি ল্যান্ডফিল বলে। এরূপ ল্যান্ডফিলে জৈব, অজৈব, কঠিন, কিছু অর্ধতরল (গ্রিজ) ও অন্যান্য বর্জ্য ফেলা হয়।

পদ্ধতি – এখান থেকে জৈব বর্জ্য পদার্থগুলিকে আলাদা করে একটি স্তরে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপর এক স্তর মাটি দেওয়া হয়। ক্রমান্বয়ে জৈব স্তর ও মাটির স্তর তৈরি করা হয়। এক-একটি জৈব স্তরের উচ্চতা 2 মিটার এবং মৃত্তিকার স্তরের উচ্চতা 20-30 সেমি। নির্দিষ্ট উচ্চতা পর্যন্ত এভাবে বিন্যস্ত করা হয়। একেবারে উপরে যে মাটির স্তরটি থাকে সেটি 1-1.4 মিটার পুরু হয়। যাতে ইঁদুর জাতীয় প্রাণী এর ভিতর ঢুকতে না পারে। এই ব্যবস্থায় বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা জৈব পদার্থের পচন ঘটানো হয়। ফলে জৈব পদার্থের ভৌত, রাসায়নিক ও জৈব ধর্মের পরিবর্তন ঘটে। সৃষ্টি হয় মিথেন, কার্বন ডাইঅক্সাইড ও সামান্য পরিমাণে হাইড্রোজেন সালফাইড ও অ্যামোনিয়া। এদের ল্যান্ডফিল গ্যাস বলে। এরূপ গ্যাসকে সংগ্রহ করে বিভিন্ন কাজে লাগানো হয়।

স্যানিটারি ল্যান্ডফিল
স্যানিটারি ল্যান্ডফিল

সুবিধা – এই পদ্ধতির সুবিধাগুলি হল –

  • পরিবেশ দূষণের পরিমাণ কম হয়।
  • বর্জ্য পদার্থ আবৃত থাকায় মাছি, মশা, ইঁদুর, কীটপতঙ্গ বাসা বাঁধতে পারে না। ফলে বর্জ্যজনিত দূষণে জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি হয় না।
  • বায়ুদূষণের পরিমাণ খুবই কম।
  • ল্যান্ডফিল গ্যাসগুলিকে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়।
  • 4-5 মাসের মধ্যে জৈব পদার্থ সমূহের পচনক্রিয়া সম্পূর্ণ হয় এবং বর্জ্য পদার্থ অনিষ্টকর পদার্থে পরিণত হয়।

অসুবিধা – এই পদ্ধতির অসুবিধাগুলি হল –

  • জৈব বস্তুসমূহ একই স্থানে দীর্ঘদিন জমা থাকার ফলে নোংরা দূষিত জল চুঁইয়ে ভৌমজলস্তরে মিশে যায়। অর্থাৎ মৃত্তিকা ও ভৌমজলকে দূষিত করে।
  • এই ভৌমজল পানীয় হিসেবে গ্রহণ করা খুবই ক্ষতিকারক।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

স্যানিটারি ল্যান্ডফিল কী?

স্যানিটারি ল্যান্ডফিল হলো কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি, যেখানে বর্জ্যগুলো স্তর করে সাজিয়ে মাটির আস্তরণ দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। এটি পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি কমাতে সাহায্য করে।

স্যানিটারি ল্যান্ডফিল কীভাবে কাজ করে?

1. বর্জ্যকে স্তরে স্তরে সাজানো হয় (প্রতি স্তর 2 মিটার)।
2. প্রতিটি বর্জ্য স্তরের উপর 20-30 সেমি মাটির আস্তরণ দেওয়া হয়।
3. উপরের শেষ স্তরটি 1-1.4 মিটার মাটি দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয় যাতে ইঁদুর বা পোকামাকড় প্রবেশ না করতে পারে।
4. ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে জৈব বর্জ্য পচে ল্যান্ডফিল গ্যাস (মিথেন, CO₂) উৎপন্ন হয়, যা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

স্যানিটারি ল্যান্ডফিলের সুবিধাগুলো কী কী?

1. পরিবেশ দূষণ কমায় (বায়ু, মাটি, জল)।
2. মাছি, মশা, ইঁদুরের বংশবিস্তার রোধ করে।
3. ল্যান্ডফিল গ্যাসকে শক্তির উৎস হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
4. 4-5 মাসের মধ্যে বর্জ্য পচে নিরাপদ অবস্থায় আসে।

স্যানিটারি ল্যান্ডফিলের অসুবিধাগুলো কী?

1. বর্জ্য থেকে লিচেট (দূষিত তরল) তৈরি হয়ে ভৌমজল দূষিত করতে পারে।
2. দূষিত জল মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
3. উপযুক্ত জমির প্রয়োজন হয় এবং নির্মাণ ব্যয় বেশি।

ল্যান্ডফিল গ্যাস কী? এটি কীভাবে ব্যবহার করা হয়?

ল্যান্ডফিল গ্যাস হলো মিথেন (CH₄), কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO₂) ও অন্যান্য গ্যাসের মিশ্রণ, যা বর্জ্য পচনের ফলে উৎপন্ন হয়। এটিকে সংগ্রহ করে বিদ্যুৎ উৎপাদন বা রান্নার কাজে ব্যবহার করা যায়।

ল্যান্ডফিল থেকে ভৌমজল দূষণ রোধের উপায় কী?

1. ল্যান্ডফিলের নিচে Opermeable লাইনার (জিওমেমব্রেন) ব্যবহার।
2. লিচেট সংগ্রহ ও শোধন ব্যবস্থা তৈরি।
3. উপযুক্ত স্থান নির্বাচন (জলাধার থেকে দূরে)।

স্যানিটারি ল্যান্ডফিল কতদিন ব্যবহারযোগ্য থাকে?

ডিজাইনের উপর নির্ভর করে সাধারণত 10-30 বছর পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়। বর্জ্য পচে জমি কম্প্যাক্ট হলে নতুন স্তর যোগ করা হয়।

বাংলাদেশে স্যানিটারি ল্যান্ডফিলের ব্যবহার কেমন?

বাংলাদেশে স্যানিটারি ল্যান্ডফিল সীমিত, তবে ঢাকার আমিনবাজার ও মাটুয়াইলে আধুনিক ল্যান্ডফিল প্রকল্প চালু আছে। চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে রয়েছে জমির সংকট ও সঠিক ব্যবস্থাপনা।

স্যানিটারি ল্যান্ডফিলের বিকল্প কী?

1. বর্জ্য পুনর্ব্যবহার (Recycling)।
2. কম্পোস্টিং (জৈব বর্জ্য সার তৈরি)।
3. বর্জ্য থেকে শক্তি (Waste-to-Energy)।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় স্যানিটারি ল্যান্ডফিলের ভূমিকা কীরূপ?” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় স্যানিটারি ল্যান্ডফিলের ভূমিকা কীরূপ?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের চতুর্থ অধ্যায় “বর্জ্য ব্যবস্থাপনা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

সক্রিয় সেনসর ও নিষ্ক্রিয় সেনসর বলতে কী বোঝো

সক্রিয় সেনসর ও নিষ্ক্রিয় সেনসর বলতে কী বোঝো? সক্রিয় সেনসর ও নিষ্ক্রিয় সেনসরের মধ্যে পার্থক্য

জিওস্টেশনারি ও সান-সিনক্রোনাস উপগ্রহ বলতে কী বোঝো

জিওস্টেশনারি ও সান-সিনক্রোনাস উপগ্রহ কী? জিওস্টেশনারি ও সান-সিনক্রোনাস উপগ্রহের মধ্যে পার্থক্য

ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র ও উপগ্রহ চিত্র বলতে কী বোঝো

ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র ও উপগ্রহ চিত্র কী? ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র ও উপগ্রহ চিত্রের পার্থক্য

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

কোনো প্রিজমের মধ্য দিয়ে আলোর প্রতিসরণের ক্ষেত্রে দেখাও যে চ্যুতিকোণ(δ) = i1+i2−A

তোমার জীবনের একটি স্মরণীয় অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

একটি গ্রামের ভ্রমণের অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

অরণ্য ভ্রমণের অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

র‍্যাগিং ও ছাত্রসমাজ – প্রবন্ধ রচনা