মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় – উদ্ভিদের সাড়া প্রদান ও রাসায়নিক সমন্বয় হরমোন – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়ের ফলে জীবদেহের সকল কার্যকলাপ স্বাভাবিকভাবে পরিচালিত হয়। নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়ের অভাবে জীবদেহের বিভিন্ন শারীরিক ও জৈবিক কার্যকলাপ ব্যাহত হয়।

Table of Contents

দশম শ্রেণি জীবন বিজ্ঞানের এই অধ্যায়ে জীব জগতে নিয়ন্ত্রণ এবং সমন্বয় সম্পর্কে জানতে পারবে। উদ্ভিদের সাড়া প্রদান এবং রাসায়নিক সমন্বয় সম্পর্কিত আলোচনা করা হবে, যা প্রাণীদের নিয়ন্ত্রণ করে এবং তাদের সমন্বয় বজায় রাখে। এছাড়াও, হরমোন এবং তাদের কাজ সম্পর্কিত আলোচনা করা হবে। এই অধ্যায়টি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর এবং সারাংশের সাথে সমাপ্ত হবে।

হরমোন কাকে বলে?

যে জৈবরাসায়নিক পদার্থ কোনো বিশেষ কোশসমষ্টি বা অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয়ে বিশেষ উপায়ে পরিবাহিত হয়ে জীবের বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়াকলাপের মধ্যে রাসায়নিক সমন্বয়সাধন করে এবং ক্রিয়ার শেষে বিনষ্ট হয়ে যায় তাকে হরমোন বলে। যেমন — অক্সিন নামক উদ্ভিদ হরমোন

উদ্ভিদে উদ্ভিদদেহে হরমোনের প্রয়োজনীয়তা কী?

বৃদ্ধির সাথে সাথে উদ্ভিদদেহে জটিলতা বৃদ্ধি পায়। এর ফলস্বরূপ দেহের বিভিন্ন কলাকোশের মধ্যে সমন্বয়সাধনের প্রয়োজনীয়তাও বৃদ্ধি পায়। এই সমন্বয়সাধনের জন্যই উদ্ভিদদেহে হরমোনের প্রয়োজন হয়। বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়াসমূহকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেই হরমোন এই সমন্বয়সাধনের কাজ করে থাকে।

হরমোনকে রাসায়নিক দূত বলে কেন? 

হরমোন একপ্রকার রাসায়নিক পদার্থ যা তার ক্ষরণস্থল থেকে দূরবর্তী কোশগুলির রাসায়নিক বিক্রিয়াগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে। এই কারণে হরমোনকে রাসায়নিক দূত বলে। তবে কিছু হরমোন ক্ষরণকারী কোশের নিকটবর্তী স্থানেও কাজ করে থাকে।

হরমোনকে উদ্ভিদের বৃদ্ধি-নিয়ন্ত্রক বলার কারণ কী?

মোন উদ্ভিদদেহের বিভিন্ন প্রকার বৃদ্ধি ও বৃদ্ধি-সম্পর্কিত চলনকে নিয়ন্ত্রণ করে, যেমন — অগ্র ও পার্শ্বীয় মুকুলের বৃদ্ধি, ফলের বুদ্ধি, টপিক চলন প্রভৃতি। এই কারণে হরমোনকে উদ্ভিদের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রক বলা হয়।

উদ্ভিদের গুষ্টি বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রক হরমোনের নাম লেখো।

উদ্ভিদের বৃদ্ধি যে সমস্ত বিশেষ জৈবরাসায়নিক পদার্থ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, তাদের উদ্ভিদের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রক পদার্থ বঙ্গে। উদ্ভিদের গুটি বুদ্ধি নিয়ন্ত্রক হরমোন হল — 1. অক্সিন, 2. জিব্বেরেলিন, 3. সাইটোকাইনিন।

অক্সিনের রাসায়নিক নাম এবং প্রকৃতি লেখো?

রাসায়নিক নাম – ইনডোল অ্যাসেটিক অ্যাসিড (IAA)।
রাসায়নিক প্রকৃতি – অক্সিন হল কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন ও নাইট্রোজেনযুক্ত জৈব অ্যাসিড।
(IPA)। ইনডোল বিউটারিক অ্যাসিড (IBA)।

অক্সিনের প্রধান দুটি কাজ লেখো।

1. অক্সিন উদ্ভিদের বিভিন্ন ধরনের ট্রপিক চলন বিশেষত কাটোট্রপিক ও জিওট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণ করে।
2. এই হরমোনটির প্রভাবে উদ্ভিদে অগ্রস্থ প্রকটতা দেখা যায় অর্থাৎ অঙ্গনুকূলের বৃদ্ধি ঘটে এবং পার্শ্বীয় মুকুলের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।

অক্সিনের ক্ষরণস্থল ও ক্রিয়াস্থল উল্লেখ করো।

ক্ষরণস্থল – অক্সিন উদ্ভিদের বিভিন্ন অগ্রস্থ ভাজক কলা, বিশেষত উদ্ভিদের মূল ও কাণ্ডের অগ্রভাগ, ভ্রূণমুকুলাবরণী, কচি পাতা, বর্ধনশীল পাতার কোশ ইত্যাদি স্থান থেকে ক্ষরিত হয়।
ক্রিয়াবল – অক্সিন উৎসস্থল থেকে ব্যাপন প্রক্রিয়ায় দেহের বিভিন্ন বর্ধনশীল অঞ্চলে পৌঁছোয় এবং ওই অঞ্চলের কোশ বিভাজন ঘটায়। কোশ বিভাজনের মাধ্যমে অক্সিন উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও ট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণ করে।অক্সিনের ক্ষরণস্থল ও ক্রিয়াস্থল উল্লেখ করো।

মূল আলোর উৎসের বিপরীতে বেঁকে যায় কেন?

উদ্ভিদের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রিত হয় প্রধানত অক্সিন হরমোনের অসম বণ্টনের দ্বারা। অক্সিন আলোক উৎসের বিপরীত দিকে বেশি পরিমাণে সঞ্চিত হয়। কিন্তু মূল স্বল্প পরিমাণ বা লঘু ঘনত্বের অক্সিনে বেশি সংবেদনশীল। মূলের ক্ষেত্রে আলোর উৎসের দিকের কোশগুলিতে অক্সিনের পরিমাণ কম থাকে। এই কারণে, ওইদিকের কোশগুলি বেশি বিভাজিত হয় ও মূল আলোর উৎসের বিপরীতে বেঁকে যায়।

পার্থেনোকার্পি কাকে বলে? এই প্রক্রিয়ায় সাহায্যকারী একটি হরমোনের নাম লেখো।

পার্থেনোকার্পি – নিষেক ছাড়াই ডিম্বাশয় থেকে বীজবিহীন ফল উৎপাদনের পদ্ধতিকে পার্থেনোকার্পি বলে।
পার্থেনোকার্পিতে সাহায্যকারী হরমোন – এই প্রক্রিয়ায় সাহায্যকারী একটি হরমোন হল অক্সিন। পার্থেনোকার্পির দ্বারা, দ্বারা লেবু, তরমুজ প্রভৃতি বীজবিহীন ফল উৎপাদন করা হয়। 

কৃত্রিম হরমোন কাকে বলে?

গবেষণাগারে কৃত্রিম উপায়ে সংশ্লেষিত, প্রাকৃতিক হরমোনের সমধর্মী রাসায়নিক পদার্থকে কৃত্রিম হরমোন বা সংশ্লেষিত হরমোন বলে। যেমন — কৃত্রিম অক্সিন, কৃত্রিম জিব্বেরেলিন।

কৃষিকার্যে কৃত্রিম হরমোনের দুটি ভূমিকা লেখো।

1. জবা, গোলাপ, আম প্রভৃতি গাছের শাখাকলম তৈরি করার সময় অস্থানিক মূল উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত হয়।
2. কৃষিক্ষেত্রে আগাছানাশক হিসেবে কৃত্রিম হরমোনের ব্যবহার আছে। যেমন — বিভিন্ন প্রকার কৃত্রিম অক্সিন।

জিবেরেলিনের রাসায়নিক নাম এবং রাসায়নিক  প্রকৃতি কী ?

রাসায়নিক নাম – জিব্বেরেলিনের রাসায়নিক নাম জিব্বেরেলিক অ্যাসিড (GA)।
রাসায়নিক প্রকৃতি – কার্বন, হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেনযুক্ত টারপিনয়েডজাতীয় জৈবযৌগ।

জিব্বেরেলিনের দুটি উৎস ও দুটি কাজ উল্লেখ করো।

উৎস – জিব্বেরেলিনের দুটি উৎস হল 1. পরিণত বীজ ও 2.বীজপত্র।
কাজ – 1. বীজ ও মুকুলের সুপ্তাবস্থাকে ভঙ্গ করা। 
2. কাণ্ডের পর্বমধ্যের বৃদ্ধিতে সাহায্য করা।

বীজের সুপ্তাবস্থা কী? এই দশা ভাঙতে কোন্ হরমোন সাহায্য করে?

বীজের সুপ্তাবস্থা – উপযুক্ত পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও বীজের বিলম্বিত অঙ্কুরোদ্‌গম, অর্থাৎ বীজের বৃদ্ধি ও বিপাক না হয়ে অস্থায়ীভাবে বিশ্রাম দশায় থাকাকে বীজের সুপ্তাবস্থা বলে।
বীজের সুপ্তাবস্থা ভাঙনে সাহায্যকারী হরমোন – বীজের সুপ্তাবস্থা ভাঙনে সাহায্যকারী হরমোনটি হল জিব্বেরেলিন।

তোমাদের বিদ্যালয়ের বাগানে অনেক আগাছা হয়েছে। সেগুলি নির্মূল করার জন্য তুমি কোন্ হরমোন প্রয়োগ করবে এবং কেন?

অক্সিন আগাছা নাশ করতে সাহায্য করে। যেমন — নির্দিষ্ট মাত্রার অক্সিন দ্বিবীজপত্রী আগাছাকে মেরে ফেলে। সুতরাং আগাছা যদি দ্বিবীজপত্রী হয় তাহলে নির্দিষ্ট মাত্রার অক্সিন হরমোন প্রয়োগ করে ওই আগাছা নির্মূল করা যাবে। সুতরাং, আগাছা নির্মূল করার জন্য আমরা অক্সিন হরমোন ব্যবহার করবো। একাজে বিশেষভাবে কার্যকরী হয় 2, 4-D নামক কৃত্রিম অক্সিনটি।

প্রকল্পিত হরমোন কী?

যে সকল হরমোনের রাসায়নিক প্রকৃতি জানা নেই কিন্তু তাদের কাজ সম্বন্ধে ধারণা করা হয়, তাদের প্রকল্পিত হরমোন বলে। যেমন — ফ্লোরিজেন। মনে করা হয়, এই হরমোনটি উদ্ভিদের পুষ্প প্রস্ফুটনে সাহায্য করে।

সাইটোকাইনিনের রাসায়নিক নাম ও রাসায়নিক প্রকৃতি উল্লেখ করো।

রাসায়নিক নাম – সাইটোকাইনিনের রাসায়নিক নাম  হল 6-ফুরফুরাইল অ্যামিনোপিউরিন।
রাসায়নিক প্রকৃতি – এটি কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন ও নাইট্রোজেনযুক্ত ক্ষারীয় জৈব যৌগ।

সাইটোকাইনিনের উৎস ও কাজ উল্লেখ করো।

উৎস – সাইটোকাইনিনের দুটি উৎস হল 1. ভুট্টার সস্য ও 2. ডাবের জল।
কাজ – 1. কোশ বিভাজনে সহায়তা করা, 2. উদ্ভিদের পত্রমোচন বিলম্বিত করা।
 সাইটোকাইনিনের উৎস ও কাজ উল্লেখ করো।

রিচমন্ড – লাং প্রভাব কাকে বলে?

সাইটোকাইনিন হরমোনটি ক্লোরোফিল, প্রোটিন নিউক্লিক অ্যাসিডের ধ্বংস প্রতিরোধ করে উদ্ভিদের পর্ণমোচন রোধ করে। এভাবে উদ্ভিদের অন্যান্য অঙ্গের জরাপ্রাপ্তিও বিলম্বিত হয়। একে রিচমন্ড-লাং প্রভাব বলে।

উদ্ভিদের কাণ্ডের অগ্রভাগ কেটে দিলে প্রচুর শাখাপ্রশাখা বের হয় কেন?

উদ্ভিদের কাণ্ডের অগ্রভাগ কেটে দিলে অক্সিনের প্রভাব হ্রাস পায় ও সাইটোকাইনিন প্রভাবে প্রচুর শাখাপ্রশাখা বের হয়।

একজন আপেল বাগানের মালিক তার বাগানের ফলকে বড়ো ও ভালো করতে চাইলে এবং দাম বাড়ার জন্য অপেক্ষা করে আপেল বিক্রি করতে চাইলে তিনি কোন্ PGR ব্যবহার করবেন?

ওই অপের বাগানের মালিক তার বাগানে ফলকে বড়ো ও ভালো করতে চাইলে জিব্বেরেলিন ও সাইটোকাইনিন ব্যবহার করবেন। কারণ জিব্বেরেলিন যেমন ফলের আকৃতি বাড়াতে সাহায্য করে। তেমনি সাইটোকাইনিন বার্ধক্য বিলম্বিত করে। এর ফলে বাজারদর মতো ফল বিক্রি করতে তিনি অপেক্ষা করতে পারবেন।

অক্সিন ও সাইটোকাইনিনের একটি বিপরীত ক্রিয়া লেখো ।

অক্সিন উদ্ভিদের অগ্রস্থ প্রকটতা, অর্থাৎ অগ্রমুকুলের বিকাশ ঘটায়, সাইটোকাইনিন তা প্রতিরোধ করে।পক্ষান্তরে সাইটোকাইনিন কাক্ষিক মুকুলের বৃদ্ধি ঘটায়, অক্সিন তা প্রতিরোধ করে।

তুমি যদি কোনো অনুশীলন – মাধ্যমে (culture medium) সাইটোকাইনিন প্রয়োগ করতে ভুলে যাও, তাহলে কী ঘটবে?

সাইটোকাইনিন হরমোন কোশ বিভাজনে গুরুত্বপূর্ণভাবে সাহায্য করে। অনুশীলন – মাধ্যমে সাইটোকাইনিন প্রয়োগ করতে ভুল হলে, অনুশীলন – মাধ্যমে কোশ বিভাজন ঠিক মতো হবে না। ফলে বৃদ্ধি ব্যাহত হবে।

সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনার মাধ্যমে বলা যায় যে জীবজগতে হরমোন এবং রাসায়নিক সমন্বয় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই বিষয়গুলি উদ্ভিদের সাড়া প্রদান এবং সমন্বয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় পরীক্ষার সময় প্রশ্নোত্তরে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি সমস্ত শিক্ষার্থীদের পড়ার জন্য ভালভাবে মনোযোগ দেওয়া উচিত।

জীবজগতের নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় একটি জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জীবদেহের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক পরিবেশের পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে এবং স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় ব্যবস্থার প্রয়োজন।

Share via:

মন্তব্য করুন