নবম শ্রেণি বাংলা – আকাশে সাতটি তারা – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

Souvick

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা নবম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের চতুর্থ পাঠের দ্বিতীয় অধ্যায়, ‘আকাশে সাতটি তারা’ -এর কিছু রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নোত্তরগুলো নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নবম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষায় এই ধরনের প্রশ্ন নিয়মিত আসে।

নবম শ্রেণি - বাংলা - আকাশে সাতটি তারা - রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর
Contents Show

আকাশে সাতটি তারা’ কবিতার নামকরণের সার্থকতা আলোচনা করো।

নামকরণের ইতিহাস – সাহিত্যের ক্ষেত্রে নামকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সাহিত্যের বিষয়কে আগাম ইঙ্গিতপূর্ণ করে তোলে তার নামকরণ। কবিতায় যেহেতু ব্যক্তি অনুভূতি প্রকাশ পায়, তাই নামকরণে অধিকাংশ সময়েই ব্যঞ্জনার আশ্রয় নেন কবি। কিন্তু মনে রাখতে হবে আলোচ্য কবিতাটির ‘আকাশে সাতটি তারা’ নামকরণ কবি জীবনানন্দ দাশ করেননি। কেবল এই কবিতা নয়, ‘রূপসী বাংলা’ কাব্যের কোনো কবিতারই নামকরণ করেননি কবি; এমনকি মৃত্যুর পর প্রকাশিত এই কাব্যের নামও কবির দেওয়া নয়। সুতরাং সংকলকের দেওয়া ‘আকাশে সাতটি তারা’ নামটি কবিতাটির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়েছে কিনা তা আলোচনার প্রয়োজন।

নামকরণের সার্থকতা – আলোচ্য কবিতাতে অপরূপ সৌন্দর্য এবং বিচিত্র গন্ধের মাঝে কবি বাংলাদেশের প্রাণের স্পন্দন অনুভব করেছেন সান্ধ্যকালীন পরিবেশে। সন্ধ্যার সূচনালগ্নে আকাশে যখন দু-একটি তারা ফুটে ওঠে, তখন বাংলার নীল সন্ধ্যার মায়াবী আবেশে আপ্লুত হয়ে যান কবি। বঙ্গপ্রকৃতির তুচ্ছাতিতুচ্ছ অনুষঙ্গে কবি খুঁজে পান বাংলার প্রাণের সন্ধান। সময়ের আবহমান হৃদয় থেকে বাংলাদেশের একটি বিশেষ সন্ধ্যাকে কবিতার বিষয়রূপে নির্বাচন করে, তাকেই আবার আবহমান কালের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন কবি। বঙ্গপ্রকৃতির যে সান্ধ্য অধিবেশন পরিবেশিত হয়েছে আলোচ্য কবিতায়, সেখানে লেশমাত্র বৈভব-আড়ম্বরের আয়োজন নেই। শুধুই সমাহিত শান্তির আশ্বাস তার রূপকে অতুলনীয় ঐশ্বর্যে সমৃদ্ধ করেছে। শিরোনামে ‘আকাশে সাতটি তারা’ শব্দবন্ধে আগত সন্ধ্যার ইঙ্গিত রচিত হয়েছে। ‘রূপসী বাংলা’ কাব্যের কবিতাগুলির নামকরণে সম্পাদক বরাবরই বেছে নিয়েছেন কবিতার প্রথম চরণ কিংবা প্রথম চরণের একগুচ্ছ শব্দকে। আলোচ্য কবিতার নামকরণে ব্যবহৃত ‘আকাশে সাতটি তারা’শব্দবন্ধ সে নিয়মের ব্যতিক্রম না হয়েও কবিতাটির বিষয়ের সঙ্গে মানানসই হয়েছে। এক কথায় বলা যায় কবিতাটির নামকরণ সার্থক।

‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতায় কবি বাংলার সন্ধ্যার যে চিত্র এঁকেছেন তা উল্লেখ করো।

বঙ্গপ্রকৃতির সান্ধ্যসৌন্দর্য – চিত্ররূপময় কবি জীবনানন্দ দাশ রচিত ‘রূপসী বাংলা’ কাব্যের অন্তর্গত ‘আকাশে সাতটি তারা’ চতুর্দশপদী কবিতায় কবি জীবনানন্দ দাশ সময়ের আবহমান হৃদয় থেকে বাংলাদেশের একটি সন্ধ্যাকে কেন্দ্র করে কবিতাটি রচনা করেছেন। সন্ধ্যার সূচনায় আকাশে সাতটি তারা ফুটে উঠলে কবি ঘাসের উপর বসে থাকেন। অস্তমিত সূর্যের আলোয় দিগন্ত রেখার মেঘ যখন গঙ্গাসাগরে ক্রমশ ডুবতে থাকে, যখন কামরাঙা-লাল বর্ণ ধারণ করে, কবি তার সঙ্গে মিল খুঁজে পেয়েছেন মৃত মুনিয়া পাখির। কবি প্রত্যক্ষ করেছেন নিত্যদিনের নিয়মানুসারে শান্ত, অনুগত নীল সন্ধ্যা বাংলাদেশে নেমে আসছে আর তার মায়াবী আলোয় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে বাংলার নিসর্গপ্রকৃতি। কবির মনে হয়েছে এই মায়াময় সন্ধ্যা যেন কেশবতী কন্যা; যার চুল কবির চোখে-মুখে খেলা করছে। বঙ্গপ্রকৃতির সান্ধ্যসৌন্দর্যে আবিষ্ট হয়ে যান কবি এবং সমগ্র চরাচর।

সন্ধ্যার চিত্র – প্রকৃতিপ্রেমী কবি জীবনানন্দ লক্ষ করেছেন বাংলার পল্লিপ্রকৃতির এই বিরল সৌন্দর্য থেকে বঞ্চিত বাকি পৃথিবী। কবি আর কোথাও দেখেননি সন্ধ্যার এমন মোহময় রূপ কোনো কেশবতী কন্যার অজস্র চুলের মতো আবেশে আচ্ছন্ন করেছে হিজল-কাঁঠাল কিংবা জামগাছকে। কবি নানা অনুষঙ্গে অনুভব করেছেন সন্ধ্যার স্নিগ্ধ গন্ধ। কখনও নরম ধানে, কলমির ঘ্রাণে, আবার কখনও হাঁসের পালক, শর, পুকুরের জল, চাঁদা-সরপুঁটিদের মৃদু ঘ্রাণে বাংলার সন্ধ্যা আমোদিত করে দেয় কবিকে। এসবের মাঝে কিশোরীর স্নেহের পরশ, কিংবা কিশোরের পায়ে দলা মুথাঘাস, লাল লাল বটের ফলের ব্যথিত গন্ধের ক্লান্ত নীরবতায় কবি স্পর্শ পান বাংলার সান্ধ্যকালীন সমাহিত রূপের। বঙ্গপ্রকৃতির এই সন্ধ্যার রূপ পরিবেশিত হয়েছে ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতায়, সেখানে অনাড়ম্বর, বৈভবহীন আয়োজনে রয়েছে শুধুই সমাহিত শান্তির আশ্বাস যা তার রূপকে অতুলনীয় ঐশ্বর্যে সমৃদ্ধ করেছে।

‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতায় কবির প্রকৃতিচেতনার যে পরিচয় ফুটে উঠেছে তা নিজের ভাষায় লেখো।

ভূমিকা – জীবনানন্দ দাশের ‘রূপসী বাংলা’ কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলি প্রকৃতিপ্রেমের কবিতা হিসেবে পাঠকমহলে সমাদৃত। আলোচ্য ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতাটিতেও ধরা পড়েছে কবির গভীর প্রকৃতিপ্রীতি। বাংলাদেশের নিসর্গপ্রকৃতির ক্ষুদ্র, তুচ্ছ অনুষঙ্গও কবির চোখে পরম মুগ্ধতায় ধরা পড়েছে। বাংলার সান্ধ্যসৌন্দর্যে আবিষ্ট কবি প্রকৃতির তুচ্ছ উপাদানেই খুঁজে পেয়েছেন বাংলাদেশের প্রাণের হদিস।

প্রকৃতিচেতনা – আকাশে সাতটি তারা ফুটে উঠলে কবি ঘাসের উপর বসে থাকেন। সন্ধ্যার সূচনায় অস্তমিত সূর্যের আলোয় ভাসমান লাল বর্ণের মেঘের বর্ণকে কবির মনে হয় মৃত মুনিয়ার মতো। বাংলায় নেমে আসা নীল সন্ধ্যা তার মায়াবী মেদুরতায় আবিষ্ট করে চরাচরকে। কেশবতী কন্যার মোহময় রূপের সঙ্গে কবি বাংলাদেশের সন্ধ্যার মিল খুঁজে পান। মায়াময় সন্ধ্যার আবেশে আপ্লুত হয়ে যান কবি। হিজলে-কাঁঠালে-জামে অবিরত ঝরে পড়া বঙ্গপ্রকৃতির সন্ধ্যার শোভা কবিকে মুগ্ধ করে দেয়। নরম ধান কিংবা কলমির গন্ধে; আবার কখনও হাঁসের পালক, শর, পুকুরের জল, চাঁদা-সরপুঁটিদের মৃদু ঘ্রাণে কবি বাংলার প্রাণের সন্ধান পান। তিনি অনুভব করেছেন কিশোরীর চালধোয়া ভিজে হাত কিংবা কিশোরের পায়ে দলা মুথাঘাস বা পাকা বটের ফলের ব্যথিত গন্ধে বাংলাদেশের প্রাণ নিহিত রয়েছে।

উপসংহার – আলোচ্য কবিতায় জীবনানন্দের প্রকৃতিলগ্নতার প্রকাশ ঘটেছে। বৈভবের আড়ম্বর নয়, বঙ্গপ্রকৃতির রূপে সমাহিত শান্তির আশ্বাস কবি জীবনানন্দ দাশকে মুগ্ধ করেছে। তাই মোহিত কবি পৃথিবীর অন্য কোনো পথে পৃথিবীর রূপের সন্ধান করেন না।

‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতায় প্রকৃতি ও মানুষ কীভাবে মিলেমিশে একাকার হয়ে কবির অনুভূতিতে ধরা পড়েছে, তা নিজের ভাষায় লেখো।

সান্ধ্যপ্রকৃতির রূপ – জীবনানন্দ দাশ রচিত ‘রূপসী বাংলা’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতায় কবি সান্ধ্যকালীন পরিবেশে অপরূপ সৌন্দর্য এবং বিচিত্র গন্ধের মাঝে অনুভব করেছেন বাংলাদেশের প্রাণের স্পন্দন। আকাশে সাতটি তারা ফুটে উঠলে কবি ঘাসের উপর বসেন বাংলার নিসর্গ প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগের অমোঘ টানে। গঙ্গাসাগরের ঢেউয়ে অস্তমিত সূর্যের আলোয় ভাসমান মেঘ যখন কামরাঙা-লাল বর্ণ পায়, কবি তার সঙ্গে মিল খুঁজে পান মৃত মুনিয়া পাখির। কবি প্রত্যক্ষ করেন শান্ত-অনুগতভাবে বাংলাদেশে নেমে আসছে নীল সন্ধ্যা আর তার মায়াবী আলোয় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে বাংলার নিসর্গপ্রকৃতি। কবির কাছে এই প্রকৃতি মানবীরূপ পায়, এই মায়াময় সন্ধ্যা যেন কেশবতী কন্যা; যার চুল কবির চোখে, মুখে খেলা করে। আসলে বঙ্গপ্রকৃতির মোহময়ী সান্ধ্যসৌন্দর্যে আবিষ্ট হয়ে যান কবি।

প্রকৃতি ও মানুষের সহাবস্থান – কবি জীবনানন্দ জানেন এই বিরল সৌন্দর্য থেকে বঞ্চিত বাকি পৃথিবী। এখানে সন্ধ্যা যেন কেশবতী কন্যার বেশে চুম্বন করেছে হিজল-কাঁঠাল কিংবা জামগাছকে। বাংলার নীল সন্ধ্যার মায়াময় আবেশ ঝরে পড়েছে বঙ্গপ্রকৃতির সর্বত্র, কবির মনে। কবি নানা অনুষঙ্গে অনুভব করেছেন সন্ধ্যার স্নিগ্ধ গন্ধ। কখনও নরম ধানে, কলমির ঘ্রাণে; আবার কখনও হাঁসের পালক, শর, পুকুরের জল, চাঁদা-সরপুঁটিদের মৃদু ঘ্রাণে বাংলার সন্ধ্যা আমোদিত করে দিয়েছে কবিকে। কিশোরীর চাল ধোয়া ভিজে হাত, কিশোরের পায়ে দলা মুথাঘাস কিংবা লাল বটের ফলের ব্যথিত গন্ধের ক্লান্ত নীরবতায় কবি স্পর্শ পেয়েছেন বাংলার প্রাণের। বঙ্গপ্রকৃতির নানা তুচ্ছ অনুষঙ্গে বাংলার প্রাণের সঙ্গে কবি-মন বাঁধা পড়েছে একসূত্রে। কবি জীবনানন্দ দাশ এ কবিতায় মানুষ ও প্রকৃতির গভীর অন্তরঙ্গতাকে এভাবেই চিত্রিত করেছেন।

‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতায় কবির উপমা প্রয়োগের দক্ষতা আলোচনা করো।

উপমা প্রয়োগের দক্ষতা – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনানন্দ দাশের কবিতায় চিত্রকল্প এবং উপমা প্রয়োগের স্বাতন্ত্র লক্ষ করে জীবনানন্দকে বলেছিলেন ‘চিত্ররূপময় কবি’। ‘রূপসী বাংলা’ কাব্যের অন্তর্গত ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতায় কবি জীবনানন্দ দাশ বঙ্গপ্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের বর্ণনা করতে গিয়ে বেশ কিছু উপমা প্রয়োগ করেছেন। সান্ধ্যকালীন পরিবেশে অস্তগামী সূর্যের রক্তিম আলোর আভায় মেঘের বর্ণকে কবি তুলনা করেছেন কামরাঙার লাল বর্ণের সঙ্গে। প্রকৃতপক্ষে দিগন্তরেখার সীমানায় মেঘ যেন গঙ্গাসাগরের সঙ্গে মিলনের কামনায় ব্যাকুল। সেই আকুলতাই কবি ‘কামরাঙা-লাল মেঘ’ উপমায় ব্যঞ্জিত করেছেন। আবার অন্যদিকে সন্ধ্যার অন্ধকারে ধীরে ধীরে ডুবে যাওয়া মেঘের উপমান হিসেবে কবি ব্যবহার করেছেন মৃত মুনিয়া পাখিকে। তিনি বলেছেন –

‘……কামরাঙা-লাল মেঘ যেন মৃত মনিয়ার মতো
গঙ্গাসাগরের ঢেউয়ে ডুবে গেছে-‘

জীবনানন্দ দাশ বাংলাদেশের মায়া-মেদুর নীল সন্ধ্যাকে তুলনা করেছেন মোহময়ী কেশবতী কন্যার সঙ্গে –

‘আসিয়াছে শান্ত অনুগত
বাংলার নীল সন্ধ্যা
কেশবতী কন্যা যেন এসেছে আকাশে;’

তাঁর মনে হয়েছে মায়াময় সন্ধ্যা কেশবতী কন্যার বেশে ঘন চুলের অন্ধকারে চারপাশকে আবিষ্ট করেছে। তার অজস্র কেশরাশি হিজল-কাঁঠালে অবিরত চুম্বন ছড়িয়ে দিয়েছে। কবির চোখে মুখে ভেসে বেড়াচ্ছে কেশরাশির মত অন্ধকার। তার স্নিগ্ধ গন্ধে ভরে উঠেছে বাংলার পথ যা কবির মতে পৃথিবীর আর কোথাও দেখা যায় না।

আলোচ্য কবিতায় আঙ্গিক সচেতন জীবনানন্দের কবি প্রতিভার উপমা প্রয়োগ তাঁর অন্যতম পরিচায়ক হয়ে উঠেছে।

জীবনানন্দের কবিতায় রয়েছে ‘প্রকৃতির অপরূপ চিত্রময়তা’ – ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতা অবলম্বনে আলোচনা করো।

প্রকৃতির অপরূপ চিত্রময়তা – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনানন্দ দাশের কবিতাকে ‘চিত্ররূপময়’ বলেছিলেন। ‘রূপসী বাংলা’ কাব্যের অন্তর্গত ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতাতেও প্রকাশিত হয়েছে প্রকৃতির অপরূপ চিত্রময়তা। আলোচ্য কবিতায় কবি সান্ধ্যকালীন পরিবেশে বঙ্গপ্রকৃতির অপার সৌন্দর্য ও বিচিত্র গন্ধের বর্ণনা প্রসঙ্গে নানা চিত্রকল্প প্রয়োগ করেছেন। বাংলাদেশে ছড়িয়ে থাকা নানান তুচ্ছাতিতুচ্ছ অনুষঙ্গে জীবনানন্দ কবিতায় সৃষ্টি করেছেন।

আলোচ্য কবিতায় প্রকৃতির চিত্রময়তা – জীবনানন্দ দাশ বাংলাদেশের যে নিসর্গসৌন্দর্য দেখেছেন, তাকে কবিতায় চিত্রকল্পের সাহায্যে ব্যঞ্জিত করেছেন। তাঁর চোখে সন্ধ্যার মেঘের বর্ণ অস্তগামী সূর্যের রক্তিম আলোয় হয়েছে কামরাঙা লাল। কবির কল্পনায় অন্ধকারে ডুবে যাওয়া মেঘ যেন মৃত মুনিয়া পাখির মতো দৃশ্যময় হয়ে ওঠে। আবার বাংলাদেশের সান্ধ্যসৌন্দর্যের মায়াবী মেদুরতাকে প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি নীল বর্ণের ব্যবহার করেছেন। বাংলাদেশের সাধারণ তুচ্ছ বস্তুকেও তিনি কবিতায় ব্যবহার করেছেন। বঙ্গপ্রকৃতির স্নিগ্ধ গন্ধ তিনি অনুভব করেছেন নরম ধানের গন্ধে, কলমির ঘ্রাণে, কখনও বা হাঁসের পালক, শর, পুকুরের জল, চাঁদা-সরপুঁটিদের মৃদু ঘ্রাণে। নিতান্তই সাধারণ শব্দগুচ্ছের ব্যবহারে কবি এ কবিতায় নির্মাণ করেছেন অসাধারণ কিছু চিত্রকল্প। কিশোরীর চালধোয়া ভিজে হাত কিংবা কিশোরের পায়ে দলা মুথাঘাস বা পাকা বটের ফলের ব্যথিত গন্ধ, রূপসী বাংলার যে অনন্যতা সৃষ্টি করে কবি সেই রূপ পৃথিবীর অন্য কোনোখানে খুঁজে পান নি।

উপসংহার – ‘কালের পুতুল’ গ্রন্থে বুদ্ধদেব বসু জীবনানন্দের শিল্পসৃষ্টি সম্পর্কে বলেছিলেন “ছবি আঁকতে তাঁর নিপুণতা অসাধারণ। তার উপর ছবিগুলো শুধু দৃশ্যের নয়, গন্ধের ও স্পর্শেরও বটে, বিশেষভাবে গন্ধের ও স্পর্শের।” ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতাটিও জীবনানন্দের সেই শিল্পনৈপুণ্যের পরিচয় বহন করেছে।

‘আকাশে সাতটি তারা যখন উঠেছে ফুটে’ – এরপর কবি কোন কোন দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেন এবং তা কবির মনে কীরূপ। অনুভূতির জন্ম দেয়?

যে দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেন – ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতায় কবি জীবনানন্দ দাশ সন্ধ্যার অতুলনীয় রূপের চিত্র এঁকেছেন। সন্ধ্যার আকাশে সাতটি তারা ফুটে উঠলে ঘাসের উপর বসে কবি প্রত্যক্ষ করেন বঙ্গপ্রকৃতির নানান দৃশ্য, যা কবির মনে জন্ম দিয়েছে এক পূর্ণতার বোধ। সন্ধ্যার সূচনায় কবি দেখেছেন অস্তমিত সূর্যের আলোয় কামরাঙা-লাল মেঘ গঙ্গাসাগরে রক্তিম ছায়া ফেলেছে। এই দৃশ্য মৃত মুনিয়ার ব্যঞ্জনা নিয়ে আসে। এমন পরিবেশে কবি প্রত্যক্ষ করেন প্রতিদিনের মতো শান্ত অনুগতভাবে বাংলাদেশে নেমে এসেছে নীল সন্ধ্যা। এই সন্ধ্যা মায়াবী মেদুরতায় আবিষ্ট করেছেন কবিকে। তাঁর মনে হয় এই অপরূপ সুন্দর সন্ধ্যা যেন কেশবতী কন্যা, যার চুলের স্পর্শ কবি অনুভব করেছেন সর্বত্র। কবি উপলব্ধি করেছেন পৃথিবীর অন্য কোনো পথ এ সান্ধ্যসৌন্দর্যের স্পর্শ পায় না। বাংলাদেশের সবখানে এই সৌন্দর্য চুম্বন করে যায় – ‘হিজলে কাঁঠালে জামে’।

কবির অনুভূতি – আকাশে সাতটি তারা ফুটে উঠলে ঘাসের উপর বসে বঙ্গপ্রকৃতির স্নিগ্ধ গন্ধে মাতোয়ারা হয়ে যান কবি। কবি জানেন না, পৃথিবীর আর কোথাও রূপসী কেশবতী কন্যার চুলের বিন্যাসে এত স্নিগ্ধ গন্ধ ঝরে পড়ে কি না। সে গন্ধ কবি পান বাংলাদেশের নরম ধান ও কলমির ঘ্রাণে; সে মৃদু ঘ্রাণ কবি অনুভব করেন হাঁসের পালক, শর, পুকুরের জল, চাঁদা-সরপুঁটিদের সংস্পর্শে, আবার ব্যথিত গন্ধের ক্লান্ত নীরবতা কবি উপলব্ধি করেন কিশোরের পায়ে দলা মুথাঘাস কিংবা লাল লাল বটের ফলে। সান্ধ্যকালীন বঙ্গপ্রকৃতির এই অপরূপ সৌন্দর্য ও বিচিত্র গন্ধের মাঝে কবি অনুভব করেন বাংলাদেশের প্রাণের স্পন্দন।

‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতায় ‘কামরাঙা-লাল মেঘ’ ও ‘বাংলার নীল সন্ধ্যা’ এরূপ রঙের বর্ণনা আছে। কবির এই বর্ণপ্রিয়তা সম্পর্কে আলোচনা করো।

ভূমিকা – ‘রূপসী বাংলা’ কাব্যের অন্তর্গত ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতায় আঙ্গিক সচেতন শিল্পী জীবনানন্দ দাশের অনুভূতির গভীরতা ধরা পড়েছে। আলোচ্য কবিতায় বঙ্গপ্রকৃতির সান্ধ্যকালীন সৌন্দর্য ও বিচিত্র গন্ধের বর্ণনা করেছেন কবি। অন্যান্য কবিতার মতো এ কবিতাতেও রঙের ব্যবহার করেছেন তিনি।

বর্ণময়তা – জীবনানন্দ দাশ বাংলাদেশের নিসর্গসৌন্দর্য দেখেছেন তাকেই কবিতায় এঁকে দিয়েছেন শব্দে, রেখায় ও আলোর রঙে। তাঁর চোখে রাত্রির অন্ধকারে ডুবতে যাওয়া মেঘের বর্ণ হয়েছে কামরাঙা লাল। অস্তগামী সূর্যের রক্তিম আলোর আভায়। আবার বাংলাদেশের সান্ধ্যসৌন্দর্যের মায়াবী মেদুরতাকে প্রকাশ করতে তিনি নীল বর্ণের ব্যবহার করেছেন।

জীবনানন্দের বর্ণপ্রিয়তা – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনানন্দের কবিতা সম্পর্কে বলেছিলেন ‘চিত্ররূপময়’। কবি তাঁর অত্যন্ত প্রিয় দুটি রঙকে বিশেষভাবে ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতায় ব্যবহার করে কবিতাটিকে চিত্ররূপময় করে তুলেছেন। লাল বর্ণটি একটি বিশেষ প্রকারে এ কবিতায় ব্যবহৃত হয়েছে। বর্ণটিকে বিশেষায়িত করতে কামরাঙার উপমা ব্যবহার করেছেন কবি। এবং নীল বর্ণটি ব্যবহারে বাংলাদেশের সন্ধ্যার মোহময় আবেশ তৈরি করেছেন কবি। বর্ণপ্রিয় জীবনানন্দের আলোচ্য কবিতাটি রঙের ব্যবহারে বর্ণময় হয়ে উঠেছে।

‘আমি এই ঘাসে বসে থাকি’ – বক্তা কে? ঘাসে বসে বক্তার প্রকৃতি মুগ্ধতার যে প্রকাশ ঘটেছে, তা তোমার নিজের ভাষায় লেখো।

জীবনানন্দ দাশ রচিত ‘রূপসী বাংলা’ কাব্যগ্রন্থ থেকে গৃহীত ‘আকাশের সাতটি তারা’ কবিতার অন্তর্গত উদ্ধৃতাংশের বক্তা কবি স্বয়ং।

প্রকৃতিচেতনা – আকাশে সাতটি তারা ফুটে উঠলে কবি ঘাসের উপর বসে থাকেন। সন্ধ্যার সূচনায় অস্তমিত সূর্যের আলোয় ভাসমান লাল বর্ণের মেঘের বর্ণকে কবির মনে হয় মৃত মুনিয়ার মতো। বাংলায় নেমে আসা নীল সন্ধ্যা তার মায়াবী মেদুরতায় আবিষ্ট করে চরাচরকে। কেশবতী কন্যার মোহময় রূপের সঙ্গে কবি বাংলাদেশের সন্ধ্যার মিল খুঁজে পান। মায়াময় সন্ধ্যার আবেশে আপ্লুত হয়ে যান কবি। হিজলে-কাঁঠালে-জামে অবিরত ঝরে পড়া বঙ্গপ্রকৃতির সন্ধ্যার শোভা কবিকে মুগ্ধ করে দেয়। নরম ধান কিংবা কলমির গন্ধে; আবার কখনও হাঁসের পালক, শর, পুকুরের জল, চাঁদা-সরপুঁটিদের মৃদু ঘ্রাণে কবি বাংলার প্রাণের সন্ধান পান। তিনি অনুভব করেছেন কিশোরীর চালধোয়া ভিজে হাত কিংবা কিশোরের পায়ে দলা মুথাঘাস বা পাকা বটের ফলের ব্যথিত গন্ধে বাংলাদেশের প্রাণ নিহিত রয়েছে।

উপসংহার – আলোচ্য কবিতায় জীবনানন্দের প্রকৃতিলগ্নতার প্রকাশ ঘটেছে। বৈভবের আড়ম্বর নয়, বঙ্গপ্রকৃতির রূপে সমাহিত শান্তির আশ্বাস কবি জীবনানন্দ দাশকে মুগ্ধ করেছে। তাই মোহিত কবি পৃথিবীর অন্য কোনো পথে পৃথিবীর রূপের সন্ধান করেন না।

‘গঙ্গাসাগরের ঢেউয়ে ডুবে গেছে’ – কে, কার মতো ডুবে গেছে? এরপরের দৃশ্য বর্ণনা করো।

যে ডুবে যাচ্ছে – প্রশ্নে প্রদত্ত উদ্ধৃতিটি জীবনানন্দ দাশের ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। কবি লিখেছেন – সূর্যাস্তের শেষ রক্তিম আলোয় উদ্ভাসিত লাল মেঘ সন্ধ্যার সমাগত অন্ধকারে যেন গঙ্গাসাগরের ঢেউয়ে ডুবে গেছে।

যার মতো ডুবে গেছে – আলোচ্য কবিতায় অস্তমিত সূর্যের আলোয় ভাসমান মেঘ যখন কামরাঙা-লাল বর্ণ পেয়েছে, কবি তার সঙ্গে মিল খুঁজে পেয়েছেন প্রাণচঞ্চল মুনিয়া পাখির মৃতাবস্থার। কবি প্রত্যক্ষ করেছেন শান্ত অনুগতভাবে বাংলাদেশে নেমে এসেছে নীল সন্ধ্যা আর তার মায়াবী আলোয় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে বাংলার নিসর্গপ্রকৃতি। আসন্ন রাতের অন্ধকারে ভাসমান লাল মেঘ মৃত মুনিয়া পাখির মত গঙ্গাসাগরের ঢেউয়ে ডুবে গেছে।

পরবর্তী দৃশ্য – কবি লক্ষ করেছেন এই বিরল সৌন্দর্য থেকে বঞ্চিত বাকি পৃথিবী। কবি আর কোথাও দেখেননি সান্ধ্যপ্রকৃতি যেন কেশবতী কন্যার মতো অজস্র চুল অবিরত চুম্বন করেছে হিজল-কাঁঠাল কিংবা জামগাছকে। বাংলার নীল সন্ধ্যার মায়াময় আবেশ সমগ্র বঙ্গপ্রকৃতি আবিষ্ট করেছে। কবি নানা অনুষঙ্গে অনুভব করেছেন সন্ধ্যার স্নিগ্ধ গন্ধ। কখনও নরম ধান ও কলমির ঘ্রাণে; আবার কখনও হাঁসের পালক, শর, পুকুরের জল, চাঁদা-সরপুঁটিদের মৃদু ঘ্রাণে বাংলার সন্ধ্যা আমোদিত করে দেয় কবিকে। কিশোরীর চাল ধোয়া ভিজে হাতে তিনি পেয়েছেন বাংলার চিরায়িত স্নেহাস্পর্শ। আবার কিশোরের পায়ে দলা মুথাঘাস কিংবা লাল বটের ফলে কবি পেয়েছেন ক্লান্ত নীরব ব্যথিত গন্ধ। কবির মনে হয়েছে এসমস্ত অতি সাধারণ, পরিচিত, তুচ্ছ উপাদানই বাংলার প্রাণকে ধরে রেখেছে আবহমান কাল থেকে।

‘বাংলার নীল সন্ধ্যা – কেশবতী কন্যা যেন এসেছে আকাশে;’ – বাংলার নীলসন্ধ্যার বর্ণনায় কেশবতী কন্যার উপস্থিতি কতটা তাৎপর্যপূর্ণ?

অথবা, ‘পৃথিবীর কোনো পথ এ কন্যারে দেখে নি কো’ – ‘এ কন্যা’ কাকে বলা হয়েছে? কন্যার সৌন্দর্য বর্ণনা করো।

সান্ধ্যপ্রকৃতি – ‘রূপসী বাংলা’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতায় কবি জীবনানন্দ দাশ সময়ের আবহমান হৃদয় থেকে বাংলাদেশের একটি সন্ধ্যাকে কেন্দ্র করে কবিতাটি রচনা করেছেন। আলোচ্য কবিতায় কবি প্রতিদিন প্রকৃতির নিয়মে বাংলার বুকে নেমে আসা সন্ধ্যার অপরূপ রূপ বর্ণনা করেছেন। বঙ্গপ্রকৃতির এই সান্ধ্য-অধিবেশনে অনাড়ম্বর, বৈভবহীন আয়োজন এনেছে সমাহিত শান্তির আশ্বাস। যা তার রূপকে অতুলনীয় ঐশ্বর্যে সমৃদ্ধ করেছে। এই সন্ধ্যাকেই কবি কল্পনায় কেশবতী কন্যা বলে উল্লেখ করেছেন।

কেশবতী কন্যার তাৎপর্যপূর্ণ তুলনা – ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতায় কবি বাংলাদেশের সন্ধ্যার মায়াবী মেদুরতাকে প্রকাশ করতে নীল রঙের ব্যবহার করেছেন। বাংলাদেশের সর্বত্র কবির মনে সন্ধ্যার সৌন্দর্য যেভাবে মোহময় আবেশ তৈরি করে তাতে মুগ্ধ হয়েছেন কবি। মোহাবিষ্ট কবির মন পাড়ি দেয় রূপকথার রাজ্যে। কবির মনে হয় নীল সন্ধ্যার সুদূরবিস্তারি সৌন্দর্য যেন কেশবতী কন্যার চুলের মতো বিস্তৃত। সন্ধ্যার মোহময় আবেশ যেন কবির মুখে, চোখে খেলা করে। যার অজস্র চুলের চুম্বন অবিরত ঝরে পড়েছে হিজলে-কাঁঠালে-জামে। রূপসী কেশবতী কন্যার চুলের বিন্যাসের মতোই সন্ধ্যায় থাকে স্নিগ্ধ গন্ধ। বাংলাদেশের নিসর্গপ্রকৃতির অপার সৌন্দর্য এবং বিচিত্র গন্ধে আপ্লুত কবি-মন অনিবার্যভাবে আশ্রয় খুঁজে পায় রূপকথার কল্পজগতে। পৃথিবীর আর কোথাও কবি এহেন সৌন্দর্যের স্বাদ পাননি। সুতরাং আকাশে সাতটি তারা ফুটে উঠলে বঙ্গপ্রকৃতির উপর নেমে আসা মায়াবী মেদুরতা সৃষ্টিকারী নীলাভ সন্ধ্যার সঙ্গে মোহময়ী কেশবতী কন্যার তুলনা কবির বর্ণনায় তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

‘ব্যথিত গন্ধের ক্লান্ত নীরবতা’ – উদ্ধৃতিটির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।

প্রসঙ্গ – ‘রূপসী বাংলা’ কাব্যের অন্তর্গত ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতায় প্রকৃতিপ্রেমী কবি জীবনানন্দ দাশ রূপসী বঙ্গপ্রকৃতির বিচিত্র গন্ধের মধ্যে বাংলাদেশের প্রাণস্পন্দন অনুভব করেছেন। এই প্রসঙ্গে কিশোরের পায়ে দলা মুথাঘাস ও লাল লাল পাকা বটফলের ‘ব্যথিত গন্ধের ক্লান্ত নীরবতা’ অনুষঙ্গটি তিনি ব্যবহার করেছেন।

তাৎপর্য – আলোচ্য কবিতায় কবি বাংলাদেশের একটি সন্ধ্যাকে কবিতার বিষয় নির্বাচন করে তাকে নিয়ে অসামান্য কবিতাটি রচনা করেছেন। বঙ্গপ্রকৃতির যে সান্ধ্য-অধিবেশন পরিবেশিত হয়েছে ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতায় সেখানে নেই কোনো বৈভব, আড়ম্বর -এর আয়োজন। আয়োজন নেই, সমাহিত শান্তির আশ্বাস তার রূপকে অতুলনীয় ঐশ্বর্যে সমৃদ্ধ করেছে। পৃথিবীর আর কোথাও বাংলার মনোমুগ্ধকর রূপ কবি প্রত্যক্ষ করেননি। কবি কিশোরের পায়ে দলিত মুথাঘাস এবং লাল লাল পাকা বটফলের গন্ধকে ‘ব্যথিত গন্ধের ক্লান্ত নীরবতা’ বলেছেন। আসন্ন সন্ধ্যার পরিবেশে পদদলিত ঘাসের যে যন্ত্রণা তা ব্যক্ত করার ক্ষমতা তার নেই যে জানে মানুষের পায়ের চাপে পিষ্ট হওয়া তার ভবিতব্য। আবার বটের পাকা ফল ঝরে যাওয়ার ভয়ে ভীত। তার সেই কাতরতা প্রকাশ করতে সে অক্ষম। এই কারণে কবি তাদের ক্লান্ত ও নীরব বলেছেন। এই ব্যঞ্জনার মাধ্যমে কবি দিনশেষের অব্যক্ত বেদনার ক্লান্তিকে প্রকাশ করেছেন। যা সহনীয় না হলেও প্রতিহত যোগ্য নয়। সন্ধ্যার সূচনালগ্নে আকাশে সাতটি তারা ফুটে উঠলে কবি বাংলাদেশের নিসর্গপ্রকৃতির নানা তুচ্ছাতিতুচ্ছ অনুষঙ্গে খুঁজে পান বাংলার প্রাণের স্পন্দন। কিশোরের পায়ে দলিত ব্যথিত মুথাঘাস কিংবা পাকা বটফলের গন্ধও কবিকে পৌঁছে দিয়েছে বাংলাদেশের প্রাণের কাছাকাছি।

‘এরই মাঝে বাংলার প্রাণ;’ – ‘এরই মাঝে’ বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন? এরই মাঝে বাংলার প্রাণের স্থিতি প্রকাশ কীভাবে ঘটেছে তা উল্লেখ করো।

অথবা, ‘এরই মাঝে বাংলার প্রাণ’ – কোন্ কোন্ জিনিসের মাঝে বাংলার প্রাণের অস্তিত্ব লক্ষ করেছেন কবি? বাংলার সন্ধ্যাকে কবি যেভাবে প্রত্যক্ষ করেছেন তা নিজের ভাষায় লেখো।

‘এরই মাঝে’ বলতে যা বোঝানো হয়েছে – ‘রূপসী বাংলা’ কাব্যের অন্তর্গত ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতায় কবি জীবনানন্দ দাশ ‘এরই মাঝে’ অর্থাৎ সান্ধ্যকালীন বঙ্গপ্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য এবং বিচিত্রগন্ধের মধ্যে খুঁজে পেয়েছেন বাংলাদেশের প্রাণের হদিস। অস্তগামী সূর্যের রক্তিম আলোয় রাতের অন্ধকারে ডুবতে যাওয়া মেঘের কামরাঙা লাল বর্ণের মধ্যে; বাংলার নীল সন্ধ্যার মোহময় আবেশে, নরম ধান, কলমির ঘ্রাণে কিংবা হাঁসের পালক, শর, পুকুরের জল, চাঁদা-সরপুঁটিদের মৃদু ঘ্রাণে, কিশোরীর, চালধোয়া ভিজে হাতের স্পর্শে, কিশোরের পায়ে দলা, মুথাঘাস কিংবা পাকা বটফলের ব্যথিত গন্ধের ক্লান্ত নীরবতায় কবি উপলব্ধি করেন বাংলার প্রাণের স্পন্দন।

বাংলার প্রাণের অনুভূতির প্রকাশ – সন্ধ্যার সূচনালগ্নে ‘আকাশে সাতটি তারা’ ফুটে উঠলে কবি বসে থাকেন ঘাসের উপর। সান্ধ্যসৌন্দর্যে মোহিত কবি প্রত্যক্ষ করেন নানা তুচ্ছাতিতুচ্ছ অনুষঙ্গে বাংলাদেশের প্রাণের উপস্থিতি। গঙ্গাসাগরের ঢেউয়ে অস্তমিত সূর্যের আলোয় ভাসমান কামরাঙা-লাল মেঘ। কবি তার সঙ্গে মিল খুঁজে পান মৃত মুনিয়া পাখির। কবি প্রত্যক্ষ করেন শান্ত অনুগতভাবে বাংলাদেশে নেমে আসছে নীল সন্ধ্যা আর তার মায়াবী আলোয় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে বাংলার নিসর্গপ্রকৃতি। কবির তাই মনে হয় ‘এই সন্ধ্যা যেন রূপকথার কেশবতী কন্যার মতোই মোহময়ী। কবি অনুভব করেন বঙ্গপ্রকৃতির এই বিরল সৌন্দর্য থেকে বঞ্চিত সমগ্র বিশ্ব। সন্ধ্যার স্নিগ্ধ গন্ধ কবি উপলব্ধি করেছেন প্রকৃতির নানা অনুষঙ্গে। কখনও নরম ধানও, কলমির ঘ্রাণে; আবার কখনও হাঁসের পালক, শর, পুকুরের জল, চাঁদা-সরপুঁটিদের মৃদু ঘ্রাণে কবি প্রকাশিত হতে দেখেছেন বাংলার প্রাণ। কখনও বা কিশোরীর চালধোয়া ভিজে হাতের স্পর্শে, কিশোরের পায়ে দলা মুথাঘাস এবং পাকা বটফলের নীরব ক্লান্তির মধ্যে কবি প্রকাশিত হতে দেখেছেন বাংলার হৃদয়কে।

‘আমি পাই টের’ – ‘আমি’ কে? উদ্ধৃতিটির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে কবির মনোভাব ব্যক্ত করো।

‘আমি’-র স্বরূপ – জীবনানন্দ দাশ রচিত ‘রূপসী বাংলা’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতা থেকে নেওয়া আলোচ্য উদ্ধৃতিটিতে ‘আমি’ বলতে প্রকৃতিপ্রেমী কবি জীবনানন্দ দাশ নিজেকেই বুঝিয়েছেন।

প্রসঙ্গ – ‘রূপসী বাংলা’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতায় কবি বঙ্গপ্রকৃতির অপরূপ সান্ধ্যসৌন্দর্য এবং বিচিত্র গন্ধের মাঝে বাংলাদেশের প্রাণস্পন্দন অনুভব করেছেন। এই প্রসঙ্গে তিনি আলোচ্য উক্তিটি করেছেন। এমন অনুভবে কবির গভীর প্রকৃতিপ্রীতির পরিচয় সুস্পষ্ট। নিসর্গ প্রকৃতির ক্ষুদ্র ও সাধারণ অনুষঙ্গও কবির চোখে ধরা পড়েছে পরম মুগ্ধতায়। বাংলার সান্ধ্যসৌন্দর্যে আবিষ্ট কবি প্রকৃতির তুচ্ছাতিতুচ্ছ উপাদানেই খুঁজে পেয়েছেন বাংলাদেশের প্রাণের হদিস।

কবির মনোভাব – প্রকৃতিপ্রেমী জীবনানন্দ দাশ লক্ষ করেছে অস্তগামী সূর্যের রক্তিম আলোয় ভাসমান মেঘ কামরাঙা-লাল বর্ণ পায়। বাংলার নিসর্গপ্রকৃতিতে নেমে আসে নীলাভ সন্ধ্যার মায়াবী আবেশ। রূপকথার মোহময়ী কেশবতী কন্যার মতো বাংলার সন্ধ্যা সমগ্র পরিবেশকে মায়ায় আচ্ছন্ন করে তোলে। কবি স্বয়ং আপ্লুত হয়ে যান এই সন্ধ্যার মায়াবী মেদুরতায়। হিজলে-কাঁঠালে-জামে অবিরত ঝরে পড়া বঙ্গপ্রকৃতির সান্ধ্যশোভা কবিকে মুগ্ধ করে দেয়। নরম ধানের ঘ্রাণে, কলমির গন্ধে, হাঁসের পালক, শর, পুকুরের জল, চাঁদা-সরপুঁটিদের নরম ঘ্রাণে কবি পৌঁছে যান বাংলাদেশের প্রাণের কাছাকাছি। কিশোরীর চালধোয়া ভিজে হাত কিংবা কিশোরের পায়ে দলা মুথাঘাস আর পাকা বটফলের ব্যথিত গন্ধে কবি টের পান বাংলার প্রাণের স্পর্শ। কবির অনুভবে এবং উচ্চারণে প্রকৃতিলগ্নতার প্রকাশ ঘটেছে। বৈভবের আড়ম্বর নয়, বঙ্গপ্রকৃতির রূপের সমাহিত শান্তির আশ্বাস কবি জীবনানন্দ দাশকে মুগ্ধ করেছে। তাই কবি পৃথিবীর জন্য কোনো পথে আর রূপের সন্ধান করতে যান না। ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতার প্রতিটি ছত্রে কবির সেই মুগ্ধতারই প্রকাশ ঘটেছে।

আকাশে সাতটি তারা কবিতায় জীবনানন্দের প্রকৃতিচেতনার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

অথবা, আকাশে সাতটি তারা কবিতায় কবির দেখা বাংলার রূপ নিজের ভাষায় বর্ণনা করো।
অথবা, আকাশে সাতটি তারা কবিতায় জীবনানন্দের প্রকৃতিপ্রীতির পরিচয় দাও।

কবির প্রকৃতিচেতনা – প্রকৃতিপ্রেমী কবি জীবনানন্দ সান্ধ্যকালীন রূপসী বাংলার যে সৌন্দর্য দেখেছেন, তাই ব্যক্ত করেছেন আকাশে সাতটি তারা কবিতায়।

দিগন্তরেখায় বিলীন – সূর্য যখন অস্ত যায়, তখন তার লাল আভায় আকাশের মেঘ পাকা কামরাঙা ফলের মতো লাল হয়ে ওঠে। কিছুক্ষণ পর সেই মেঘও দিগন্তরেখায় বিলীন হয়। আকাশে তারা ফুটে ওঠে। দিনরাত্রির সন্ধিক্ষণ এই স্নিগ্ধ সন্ধ্যায় বাংলার প্রকৃতির অপরূপ রূপ পৃথিবীর সব জায়গা থেকে আলাদা। এলোকেশী কন্যা – সূর্য অস্ত গেলে যেন এক এলোকেশী মেয়ে দেখা দেয় বাংলার আকাশে। তার ছড়িয়ে পড়া কালো চুল ধীরে ধীরে অন্ধকারের আমেজ নিয়ে আসে বাংলার প্রকৃতির বুকে। হিজল-কাঁঠাল-জাম ইত্যাদি গাছের পাতা ছুঁয়ে নেমে আসা অন্ধকার যেন সেই রূপসীরই চুলের সোহাগভরা চুম্বন। সন্ধ্যার রূপ – কবি বাংলার সন্ধ্যার রূপ শুধু চোখেই দেখেননি, গন্ধেও তাকে অনুভব করেছেন। গাছপালা, লতা-গুল্ম, ঘাস, ফল, পুকুর, মাছ, হাঁস, মানুষ—সব কিছুর গন্ধ মিলে তৈরি হয় বাংলার সন্ধ্যার গন্ধ। কবির মনে হয়, এ যেন সেই এলোকেশী কন্যার চুলের স্নিগ্ধ সুবাস।

শেষের কথা – এইভাবে গাছপালা, মানুষ, অন্যান্য জীবকে নিয়ে বাংলার যে পরিপূর্ণ প্রকৃতি, তার মধ্যেই জীবনানন্দ খুঁজে পেয়েছিলেন তাঁর রূপসী বাংলাকে।

আকাশে সাতটি তারা কবিতায় বাংলার প্রকৃতির প্রতি মুগ্ধতার পরিচয় দিতে গিয়ে কবি কী কী চিত্রকল্প ব্যবহার করেছেন লেখো।

কবিতায় ব্যবহৃত চিত্রকল্প – আকাশে সাতটি তারা কবিতায় কবি জীবনানন্দ দাশ এক অপরূপ সন্ধ্যার পটভূমিতে বাংলার অনাবিল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তুলেছেন। আর তা করতে গিয়ে কবি কিছু অসাধারণ চিত্রকল্প সৃষ্টি করেছেন। সূর্যাস্তের ছবি আঁকতে গিয়ে কবি লিখেছেন—কামরাঙা লাল মেঘ যেন মৃত মনির মতো/গঙ্গাসাগরের ঢেউয়ে ডুবে গেছে। বাংলার নীল সন্ধ্যার সূত্র ধরে অন্ধকারের যে আগমন, সেখানে বাংলার প্রকৃতি যেন হয়ে গেছে কেশবতী কন্যা আর কবির চোখের পরে মুখের পরে চুল আর ভাসে। শুধু তাই নয়, অজস্র চুলের চুম্বন হিজলে কাঁঠালে জামে ঝরে অবিরত। এভাবে চিত্রকল্পের অসামান্য প্রয়োগে একদিকে কবি প্রকৃতিকে মানবীয় রূপ দিয়েছেন, অন্যদিকে প্রকৃতিকে মায়াময়ভাবে উপস্থাপন করেছেন। কবিতার শেষ অংশে অবশ্য বাংলার প্রাণকে কবি খুঁজে পেয়েছেন প্রকৃতির বিভিন্ন অনুষঙ্গে। সেখানে চিত্রকল্পের বিস্তার সেভাবে নেই। তবে তার মধ্যেই কিশোরীর চালধোয়া ভিজে হাত কিংবা কিশোরের পায়ে দলা মুথাঘাস চিত্রকল্পের দ্যুতি নিয়ে আসে।

আকাশে সাতটি তারা কবিতাটির নামকরণ কতদূর সার্থক আলোচনা করো।

যেকোনো সাহিত্যকর্মের মতোই কবিতার নামকরণও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কবিতার ক্ষেত্রে সাধারণত বিষয়বস্তু অনুসারে অথবা ভাব বা ব্যঞ্জনা অনুযায়ী নামকরণ হয়ে থাকে।

এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, রূপসী বাংলা কাব্যগ্রন্থটি কবির মৃত্যুর পরে প্রকাশিত হয়েছিল। কবি এই কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলির নামকরণ করেননি। কবিতার প্রথম পঙ্ক্তি অনুসারে আকাশে সাতটি তারা নামটি সংকলকদের দেওয়া।

আকাশে সাতটি তারা কবিতাটিতে কবি দিনের একটি বিশেষ সময় সন্ধ্যাকে বেছে নিয়েছেন। কবির চোখে তাঁর অতি প্রিয় রূপসী বাংলা সন্ধ্যার সময় যে রূপে ধরা দিয়েছে, তাকেই তিনি কাব্যিক ভঙ্গিতে প্রকাশ করেছেন। সবে যখন সূর্য অস্ত গিয়ে আকাশে দেখা দিয়েছে সপ্তর্ষিমণ্ডল, তখন অস্তরাগের শেষ আভায় কামরাঙার মতো লাল মেঘ বিলীন হয় সাগরজলে। কবির মনে হয় এক এলোকেশী কন্যা যেন দেখা দিয়েছে বাংলার সান্ধ্য নীল আকাশে। মাটির বুকে ধীরে ধীরে নেমে আসা অন্ধকার যেন সেই মেয়ের ছড়িয়ে পড়া কালো চুলের রাশি। কবি তাঁর চোখ, মুখ, নাক—অর্থাৎ তাঁর প্রতিটি ইন্দ্রিয় দিয়ে অনুভব করেন সেই ঘনিয়ে আসা অন্ধকারকে।

তাঁর মনে হয়, পৃথিবীর কোনো পথ বা অঞ্চল প্রকৃতির এমন মোহময়ী সৌন্দর্য দেখেনি। হিজল, কাঁঠাল, জামের পাতা চুঁইয়ে নামা রাত্রি যেন সেই রূপসীর চুলের আদরমাখা স্পর্শ। শুধু চোখ বা ত্বক দিয়ে নয়, কবি ঘ্রাণেন্দ্রিয় দিয়েও অনুভব করেন সন্ধ্যাকে। পরিবেশের অনেক রকমের গন্ধ মিলেমিশে তৈরি হয় সন্ধ্যার এক বিশেষ গন্ধ। ধানগাছ, কলমিশাক, জলে ভেজা হাঁসের পালক, শর ইত্যাদির মৃদু গন্ধ, পুকুরের সোঁদা গন্ধ, মাছের আঁশটে গন্ধ, কিশোরী মেয়ের চালধোয়া ভিজে ঠান্ডা হাতের গন্ধ, কিশোরের পায়ে দলা মুথাঘাসের গন্ধ আর বটফলের হালকা গন্ধ মিশে তৈরি হয় বাংলার একান্ত নিজস্ব সন্ধ্যার মধুর শীতল গন্ধ। এইভাবে কবি বর্ণ, গন্ধ, স্পর্শ দিয়ে অনুভব করেন বাংলাকে।

আকাশে সাতটি তারা যখন ফুটে ওঠে, সেই সময় অর্থাৎ সন্ধ্যাই এই কবিতার মূল বিষয়বস্তু। আকাশে সাতটি তারা নামটি সেই বিষয়বস্তুরই ইঙ্গিত দেয়। সেদিক থেকে বলা যায় কবিতাটির নামকরণ যথাযথ।


আজকের এই আর্টিকেলে আমরা নবম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের চতুর্থ পাঠের দ্বিতীয় অধ্যায়, ‘আকাশে সাতটি তারা’ -এর কিছু রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নোত্তরগুলো নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নবম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষায় এই ধরনের প্রশ্ন নিয়মিত আসে। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে এসেছে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকে, তবে টেলিগ্রামে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আমরা সর্বদা প্রস্তুত। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

নবম শ্রেণি - বাংলা - ভাঙার গান - অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

নবম শ্রেণি বাংলা – ভাঙার গান – অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

নবম শ্রেণি - বাংলা - ভাঙার গান - বিষয়সংক্ষেপ

নবম শ্রেণি বাংলা – ভাঙার গান – বিষয়সংক্ষেপ

নবম শ্রেণি - বাংলা - আবহমান - রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

নবম শ্রেণি বাংলা – আবহমান – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

নবম শ্রেণি বাংলা – ভাঙার গান – অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

নবম শ্রেণি বাংলা – ভাঙার গান – বিষয়সংক্ষেপ

নবম শ্রেণি বাংলা – আবহমান – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

নবম শ্রেণি বাংলা – আবহমান – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

নবম শ্রেণি বাংলা – আবহমান – অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর