মাধ্যমিক বাংলা – বাক্য ও তার শ্রেণিবিভাগ

আজকে আমরা এই আর্টিকেলে বাক্য ও তার শ্রেণিবিভাগ নিয়ে আলোচনা করব। বাংলা ব্যাকরণে বাক্য হলো এমন শব্দসমষ্টি যা কোনো সম্পূর্ণ ধারণা বা ভাব প্রকাশ করে। বাক্যগুলোকে সাধারণত তাদের গঠন বা অর্থের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। বাক্য ও তার শ্রেণিবিভাগ মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এই বাক্য ও তার শ্রেণিবিভাগ মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করে গেলে, তোমরা অবশই মাধ্যমিক পরীক্ষায় বাক্য ও তার শ্রেণিবিভাগ লিখে আস্তে পারবে।

Table of Contents

শব্দসমষ্টি তখনই বাক্য হয়ে ওঠে, যখন তারা মিলিতভাবে একটি সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করতে পারে এবং শব্দগুলি পদ হিসেবে তাদের নির্দিষ্ট স্থানে বসে। এই অর্থবহতা এবং বিন্যাসগত পারম্পর্যর ওপরে ভিত্তি করে বাক্যনির্মাণের তিনটি শর্ত পাওয়া যায়।

বাক্যনির্মাণের শর্ত

বাক্যনির্মাণের তিনটি প্রধান শর্ত হল – 1. আসত্তি, 2. যোগ্যতা এবং 3. আকাঙ্ক্ষা। একটি অর্থপূর্ণ বাক্য নির্মাণ করতে হলে বাক্যে ব্যবহৃত পদগুলির মধ্যে এই তিনটি বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে।

আসত্তি – বাক্যের বিভিন্ন পদগুলিকে উপযুক্ত স্থানে বসানোই হল আসত্তি। উপযুক্ত স্থানে না বসে থাকলে তাদের অর্থ বোঝা যাবে না। যেমন

দিয়ে নড়ছে দেখা গাছ জানলা যাচ্ছে

এটি কখনও বাক্য হতে পারে না। কারণ এক্ষেত্রে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত পদগুলি পাশাপাশি বা কাছাকাছি নেই। পারস্পরিক সম্পর্ক অনুযায়ী পদগুলিকে সাজালে অর্থবহ বাক্যটি স্পষ্ট হয়ে উঠবে –

যোগ্যতা – পদসমষ্টি উচ্চারণের ফলে সংগত ভাব প্রকাশিত হলে তা ওই পদসমষ্টির বাক্যগঠনের যোগ্যতা বলে বিবেচিত হয়। বাক্যে শব্দগুলি অর্থবহভাবে বিন্যস্ত থাকা সত্ত্বেও বাস্তব জগতের জ্ঞান বা অভিজ্ঞতার সঙ্গে তুলনা করলে যদি সেই অর্থ ভুল প্রমাণিত হয়, তবে তা বাক্য হবে না।

যেমন যদি বলা হয়, ঈিশানকোণে সূর্য অস্ত গেল। – তবে তা বিন্যাসের দিক থেকে বাক্য হিসেবে ঠিক হলেও বাস্তবে তার যে অর্থ বোঝায়, তা ভুল। ফলে, এটি বাক্যের মর্যাদা পায় না। পশ্চিমদিকে সূর্য অস্ত গেল। বললে বাক্যের ভাব সম্পূর্ণ হয়।

আকাঙ্ক্ষা – শব্দসমষ্টি তখনই বাক্য হয়ে উঠতে পারে, যখন তার মধ্যে অর্থের সম্পূর্ণতা থাকে। বাক্যের কিছুটা অংশ ব্যক্ত হওয়ার পরে যদি পরের অংশটুকু শোনা বা জানার জন্য কোনো আগ্রহ তৈরি হয়, তবে তাকে বলা হয় আকাঙ্ক্ষা। অর্থাৎ, বাক্যটি যেন বক্তা এবং শ্রোতা উভয়েরই বলার এবং শোনার আকাঙ্ক্ষা মেটাতে পারে।

যেমন – আমি সুনীলের বাড়ি। এটি কোনো বাক্য নয়। কারণ, আমার আর সুনীলের বাড়ির মধ্যে কী সম্পর্ক রয়েছে তা স্পষ্ট নয়। অর্থাৎ বাক্যটিতে এমন কোনো পদের আকাঙ্ক্ষা রয়ে গেছে যা বাক্যের অর্থটি স্পষ্ট করে তুলতে পারে। কিন্তু যদি বলি, আমি সুনীলের বাড়ি যাব। – তবে একটি সম্পূর্ণ অর্থ পাওয়া যায়। বস্তা বা শ্রোতার মনে কোনো পদের শোনার বা জানার আর কোনো আকাঙ্ক্ষা থাকে না।

বাক্যে উদ্দেশ্য ও বিধেয়র ভূমিকা

বাক্যের গঠনগত বৈশিষ্ট্য লক্ষ করলে দেখা যাবে, প্রতিটি বাক্যের মূলত দুটি অংশ থাকে –

  • উদ্দেশ্য ও
  • বিধেয়।

উদ্দেশ্য

বাক্যে যার সম্বন্ধে বা যাকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলা হয়, তাকে বাক্যের উদ্দেশ্য বলা হয়। কোনো কোনো বাক্যে উদ্দেশ্য উহ্য থাকে ঠিকই, কিন্তু অনুপস্থিত থাকে না।

যেমন ধরো এই বাক্যটি –

এখন ভাত খাব।

উদ্দেশ্যবিধেয়
উহ্য (আমি)এখন ভাত খাব।

বিধেয়

বাক্যের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে যা কিছু বলা হয়, তাকে বিধেয় বলে। যেমন, পূর্বোক্ত বাক্যে ‘এখন ভাত খাব’ গোটাটাই বিধেয়

উদ্দেশ্য ও বিধেয়র সম্প্রসারক

বাবা লিখছেন – এই বাক্যটিতে উদ্দেশ্য ও বিধেয় হল –

উদ্দেশ্যবিধেয়
বাবালিখছেন।

এইবার যদি বাক্যটাকে বাড়ানো যায় তাহলে দ্যাখো কী ঘটে –

উদ্দেশ্য ও বিধেয়

উদ্দেশ্যর প্রসারক – উদ্দেশ্যর সঙ্গে যা কিছু যুক্ত হয়ে উদ্দেশ্য অংশটিকে দীর্ঘায়িত করে, তা হল উদ্দেশ্যর প্রসারক। যেমন আলোচ্য উদাহরণে উদ্দেশ্য হল ‘বাবা’ আর প্রসারক হল ‘আমার বন্ধু কৌশিকের’ অংশটি।

বিধেয়র প্রসারক – বিধেয়র সঙ্গে যা কিছু যুক্ত হয়ে বিধেয় অংশটিকে দীর্ঘায়িত করে, তা হল বিধেয়র প্রসারক। যেমন, ওই উদাহরণে বিধেয় হল ‘লিখছেন’ আর বিধেয়র প্রসারক হল ‘ভূতের গল্প’ অংশটি।

বাক্যের মধ্যে মূল উপাদান হিসেবে যেমন উদ্দেশ্য ও বিধেয়কে ধরা হয়, তেমনই আবার কর্তা, কর্ম ও ক্রিয়াকেও (সমাপিকা) ধরা হয়। সেক্ষেত্রে আমরা একটি ছকের মাধ্যমে দু-ধরনের উপাদানকেই দেখাই –

বিধেয়র প্রসারক

উদ্দেশ্য ও বিধেয়র সঙ্গে বিশেষ্যগুচ্ছ ও ক্রিয়াগুচ্ছের সম্পর্ক

উদ্দেশ্য (এবং উদ্দেশ্যর প্রসারক) ও বিধেয় (এবং বিধেয়র প্রসারক) বলতে বাক্যের যে যে অংশ বোঝায়, অনেকটা সেইভাবেই বাক্যকে দুটি ভাগে ভাগ করেছিলেন বিখ্যাত ভাষাবিজ্ঞানী নোয়াম চমস্কি। তিনি এই দুটি অংশের নাম দেন বিশেষ্যগুচ্ছ বা বিশেষ্যভাগ বা Noun Phrase এবং ক্রিয়াগুচ্ছ বা ক্রিয়াভাগ বা Verb Phrase। বিষয়টিকে ছকের মাধ্যমে দেখানো হল –

উদ্দেশ্য ও বিধেয়র সঙ্গে বিশেষ্যগুচ্ছ ও ক্রিয়াগুচ্ছের সম্পর্ক

বিশেষ্যখণ্ড, ক্রিয়াবিশেষণখণ্ড, ক্রিয়াখণ্ড বা ক্রিয়াদল

সাধারণভাবে যতই বলা হোক যে বাক্য আসলে কয়েকটি পদের সমষ্টি, কিন্তু পরপর সাজিয়ে দেওয়া পদ জুড়লেই বাক্য তৈরি হয় না। বাক্যের সবকটি পদের মধ্যেই যে সম্পর্ক স্থাপিত হয়, এমন নয় মোটেই।

বিশেষ কিছু পদ অন্য কোনো বিশেষ পদের সঙ্গে জোট বাঁধে। যেমন –

খাতাটা টেবিলের উপরে আছে।

এই বাক্যের মধ্যে যদি ‘অঙ্ক’ শব্দটা আসে, তবে সেটি একটি বিশেষ স্থানে বিশেষ শব্দের সঙ্গেই জোট বাঁধবে। ‘অঙ্ক’ শব্দটা ‘টেবিল’ বা ‘উপরে’ বা ‘আছে’র সামনে বসলে কোনো অর্থ পাওয়া যাবে না। ‘অঙ্ক’ শব্দটা ‘খাতা’-র সামনেই বসাতে হবে –

অঙ্ক খাতাটা টেবিলের উপরে আছে।

এখানে ‘অঙ্ক’ শব্দটা বিশেষণ হিসেবে ‘খাতা’-বিশেষ্যের সঙ্গে জোট বাঁধল। এভাবেই বিশেষণ বিশেষ্যের সঙ্গে বা ক্রিয়াবিশেষণ ক্রিয়ার সঙ্গে জোট বাঁধে। এভাবেই তৈরি হয় বিশেষ্যখণ্ড, ক্রিয়াবিশেষণখণ্ড ও ক্রিয়াখণ্ড।

বিশেষ্যখন্ডের নির্মাণ

প্রথমে এমন একটি বাক্য নিলাম যার দুটি পদ-একটি বিশেষ্যপদ ও একটি ক্রিয়াপদ।

বিশেষ্যখন্ডের নির্মাণ

এই বাক্যে একটি বিশেষ্যপদ ‘সুভাষ’। তাই একে একক বিশেষ্য বলতে পারি। এবার যদি বাক্যটিকে বাড়িয়ে বলি –

বিশেষ্যখন্ডের নির্মাণ

তাহলে দেখব, ‘সুভাষ’-এর আগে ‘আমার বন্ধু’ বসালে বিশেষ্য অংশ প্রসারিত হল এবং বিশেষ্যখণ্ড তৈরি হল।

বিশেষ্যখন্ডের বিভিন্ন ধরন –

একক বিশেষ্য – এক্ষেত্রে বাক্যে একটিই বিশেষ্যপদ থাকে, অন্য কোনো পদের সঙ্গে তার জোট তৈরি হয় না।

একক বিশেষ্য

বিশেষণ (এক বা একাধিক) + বিশেষ্য – এক্ষেত্রে বাক্যের একটি বিশেষ্যকে বিশেষিত করার জন্য এক বা একাধিক বিশেষণের প্রয়োগ হয়।

বিশেষণ (এক বা একাধিক) + বিশেষ্য

বিশেষ্য + যোজক + বিশেষ্য – বাক্যে দুটি বিশেষ্য থাকলে, যোজক মাঝে বসে। একাধিক বিশেষ্য থাকলে, যোজক বসে শেষের বিশেষ্যের আগে।

বিশেষ্য + যোজক + বিশেষ্য

বিশেষ্যখণ্ড হিসেবে বিশেষ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত বাক্যর্থণ্ড (Clause) – এক্ষেত্রে বাক্যে এক বা একাধিক বাক্যখণ্ড বিশেষ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত হয়ে বিশেষ্যখণ্ডের ভূমিকা পালন করে।

বিশেষ্যখণ্ড হিসেবে বিশেষ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত বাক্যর্থণ্ড

ক্রিয়াবিশেষণখন্ডের নির্মাণ

যে শব্দ বা শব্দগুলি ক্রিয়াকে বিশেষিত করে, তাকে বলে ক্রিয়াবিশেষণ। যেমন –

ক্রিয়াবিশেষণখন্ডের নির্মাণ

এই বাক্যে ‘এসো’ একটি ক্রিয়াখণ্ড। এই ক্রিয়াখণ্ডের আগে ‘তাড়াতাড়ি’ শব্দটি যোগ হয়ে ক্রিয়াপদটিকে বিশেষিত করেছে। সুতরাং এখানে ‘তাড়াতাড়ি’ একটি ক্রিয়াবিশেষণখণ্ড।

ক্রিয়াবিশেষণখণ্ডের বিভিন্ন ধরন – ক্রিয়াবিশেষণখণ্ড আবার বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। এখানে নানা ধরনের ক্রিয়াবিশেষণখণ্ড কীভাবে তৈরি হয় তা দেখানো হল –

এক শব্দের ক্রিয়াবিশেষণ – বাক্যে ক্রিয়াবিশেষণের ক্ষেত্রে বিশেষ্যখণ্ডের মতোই এক শব্দের ক্রিয়াবিশেষণ পাওয়া যায়।

এক শব্দের ক্রিয়াবিশেষণ

ক্রিয়াবিশেষণ + যোজক + ক্রিয়াবিশেষণ – বাক্যে দুটি ক্রিয়াবিশেষণ থাকলে, যোজক মাঝে বসে। একাধিক ক্রিয়াবিশেষণ থাকলে, যোজক বসে শেষের ক্রিয়াবিশেষণের আগে।

ক্রিয়াবিশেষণ + যোজক + ক্রিয়াবিশেষণ

ক্রিয়াবিশেষণ হিসেবে বাক্যখণ্ড – এক্ষেত্রে বাক্যে এক বা একাধিক বাক্যখণ্ড ক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত হয়ে ক্রিয়াবিশেষণখণ্ডের ভূমিকা পালন করে।

ক্রিয়াবিশেষণ হিসেবে বাক্যখণ্ড

ক্লিয়াবিশেষণ হিসেবে অসমাপিকা ক্রিয়া – বাক্যে ব্যবহৃত অসমাপিকা ক্রিয়া অনেক ক্ষেত্রে ক্রিয়াবিশেষণখণ্ডের কাজ করে থাকে।

ক্লিয়াবিশেষণ হিসেবে অসমাপিকা ক্রিয়া

ক্রিয়াখণ্ডের নির্মাণ

তোমরা দেখেছ যে ক্রিয়াভাগ বা ক্রিয়াগুচ্ছ বা Verb Phrase অংশে রয়েছে আরও একটি বিশেষ্যভাগ (যা আসলে গৌণকর্ম ও মুখ্যকর্ম), ক্রিয়াবিশেষণখণ্ড এবং ক্রিয়াখণ্ড বা ক্রিয়াদল বা Verb group। ক্রিয়াখণ্ড সম্বন্ধে ‘প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ’ বইয়ে বলা হয়েছে – ‘ক্রিয়াভাগ যেখানে বাক্যের বিধেয় অংশ, সেখানে ক্রিয়াদল (verb group) শুধু সমাপিকা ক্রিয়ার অংশটিকে বোঝাবে।

উক্ত বইতে উদাহরণ হিসেবে বাক্য হল –

আজ আমরা রেল-কলোনি পাড়ায় মিটিং করতে যাব।

এই বাক্যের বিশেষ্যপদ ‘আমরা’, ক্রিয়াবিশেষণ দুটি – ‘আজ’ আর ‘রেল-কলোনি পাড়ায়’, একটি মুখ্যকর্ম ‘মিটিং করতে’ এবং একটি ক্রিয়াদল ‘যাব’ রয়েছে। এই বাক্যের ক্রিয়াভাগ তৈরি হয়েছে ‘আজ’ (ক্রিয়াবিশেষণখণ্ড), ‘রেল-কলোনি পাড়ায়’ (বিশেষ্যভাগ-মুখ্য কর্ম) এবং ‘যাব’ (ক্রিয়াখণ্ড) নিয়ে।

আমরা কিন্তু ক্রিয়াদল হিসেবে ‘করতে যাব’ অংশটিকেই চিহ্নিত করতে চাই। কেন-না অসমাপিকা ক্রিয়া অংশ অর্থাৎ ‘করতে’, সমাপিকার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত। এই অসমাপিকা ক্রিয়া অংশটি বাদ দিলে সমাপিকা ক্রিয়া অংশটি দাঁড়ায় না। সুতরাং ক্রিয়াখণ্ড। হিসেবে ‘করতে যাব’-কেই আমরা গ্রহণ করব।

আর-একটি বাক্য নেওয়া যাক –

ক্রিয়াখণ্ডের নির্মাণ

ক্রিয়াখণ্ডে সমাপিকা ক্রিয়া অংশটিতে থাকে,

ধাতু + কালনির্দেশক চিহ্ন + পুরুষ বা পক্ষের চিহ্ন

ক্রিয়াখণ্ড তাই তৈরি হতে পারে ধাতু+ একটি বিভক্তি দিয়ে। যেমন –

তুই বল।

এখানে সমাপিকা ক্রিয়া ‘বল’ = ধাতু বল্ + শূন্য বিভক্তি।

এ ছাড়াও হতে পারে –

তুমি বলো। (ধাতু বল্ + ও বিভক্তি)
তুমি বলছিলে। (ধাতু বল্ + ছ্-ইল্-এ বিভক্তি)

একনজরে বাক্যের বিভিন্ন উপাদান –

বাক্য

বাক্যের গঠনগত শ্রেণিবিভাগ

প্রধানত সমাপিকা ক্রিয়াকে কেন্দ্র করে বাক্যের গঠনগত শ্রেণিবিভাগ করা হয়। ধরা যাক, একটি সমাপিকা ক্রিয়া হল ‘যাচ্ছে’। এই ‘যাচ্ছে’ সমাপিকা ক্রিয়া দিয়ে তিন ধরনের বাক্য তৈরি করা যায় –

  • কৌশিক দিল্লি যাচ্ছে।
  • কৌশিক যে দিল্লি যাচ্ছে, সে-কথা কেউ জানে না।
  • কৌশিক দিল্লি যাচ্ছে এবং সেখানে সে কিছুদিন থাকবে।

প্রথম বাক্যে একটিই সমাপিকা ক্রিয়া। দ্বিতীয় বাক্যে দুটি সমাপিকা ক্রিয়া – ‘যাচ্ছে’ এবং ‘জানে’। কিন্তু সেখানে স্বাধীন ভাব তারা প্রকাশ করতে পারছে না। একটি খণ্ডবাক্য অন্যের উপরে নির্ভরশীল। তৃতীয় বাক্যেও দুটি সমাপিকা ক্রিয়া (‘যাচ্ছে’ ও ‘থাকবে’)। কিন্তু এই দুই সমাপিকা ক্রিয়াকে আশ্রয় করে আছে যে দুটি বাক্য, তার একটি অন্যটির উপর নির্ভরশীল নয়। এই পার্থক্যের দিকে লক্ষ রেখে বাক্যকে গঠনের দিক থেকে তিনভাগে ভাগ করা যায় –

বাক্যের গঠনগত শ্রেণিবিভাগ

সরল বাক্য

যে বাক্যে একটি উদ্দেশ্য, একটিই বিধেয় ও মাত্র একটিই সমাপিকা ক্রিয়া থাকে, তাকেই সরল বাক্য বলে। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, যে বাক্যে একটিমাত্র উদ্দেশ্য ও একটিমাত্র বিধেয় (সমাপিকা ক্রিয়া) থাকে, তাকে সরল বাক্য বলে। যেমন –

আগামীকাল বাড়ি যাব।

এই বাক্যে একটি সমাপিকা ক্রিয়া আছে ‘যাব’ এবং একটিমাত্র উদ্দেশ্য ‘আমি’ বা ‘আমরা’ উহ্য অবস্থায় আছে। এরকম আরও উদাহরণ দেওয়া যায় –

  • আমার চিনা খাবার ভালো লাগে।
  • বিশ্বজিৎ ভালো গান গায়।
  • শুভাশিস বন্ধুদের সঙ্গে বেড়াতে যাচ্ছে।
  • বিদেশ যাওয়া বেশ খরচসাপেক্ষ।

সরল বাক্যের ক্ষেত্রে একটি সমাপিকা ক্রিয়া থাকলেও এক বা একাধিক অসমাপিকা ক্রিয়া থাকতে পারে। যেমন —

সরল বাক্য

সরল বাক্যের প্রদত্ত সংজ্ঞা অনুসারে, যেহেতু একটি সমাপিকা ক্রিয়া আছে এবং উদ্দেশ্যও একটি, তাই একে সরল বাক্য বলতে হবে। কিন্তু একটু গভীরভাবে চিন্তা করলে দেখা যায় যে উপরের বাক্যটি আসলে তিনটি সরল বাক্যের সমাহার ー

  • লোকটা বাসে করে আসে।
  • লোকটা পাঁচ মিনিট হাঁটে।
  • লোকটা অফিসে পৌঁছায়।

এই তিনটি সমাপিকা ক্রিয়ার মধ্যে শেষেরটিকে সমাপিকা ক্রিয়া হিসেবে রেখে অন্য দুটিকে অসমাপিকা ক্রিয়ায় পরিণত করে, সেই অসমাপিকা ক্রিয়া শেষে স্থাপিত এমন বাক্যখণ্ড (clause) ব্যবহারের মাধ্যমে বিষয়টিকে সরল বাক্যের চেহারা দেওয়া হয়েছে।

যদি বলি – অরূপ দিল্লি যাবে। শ্যামল দিল্লি যাবে — তাহলে দুটি আলাদা বাক্যের কারণেই দুটি উদ্দেশ্য আছে। প্রথম বাক্যে ‘অরূপ’ আর দ্বিতীয় বাক্যে ‘শ্যামল’। যদি বাক্যটি হয় –

অরূপ আর শ্যামল দিল্লি যাবে।

তাহলে কি এই বাক্যে উদ্দেশ্য দুটি হবে? না। তখন ‘অরূপ শ্যামল’ মিলে একটিই উদ্দেশ্য হবে। তাই এই বাক্যটিও সরল বাক্য।

জটিল বাক্য

তুমি যে আজ স্কুল যাওনি সেটা আমি জানি।
যেহেতু সকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছে তাই আজ অফিস গেলাম না।

প্রথম বাক্যের মধ্যে দুটি খণ্ডবাক্য আছে – 1. তুমি যে আজ স্কুল যাওনি। 2. সেটা আমি জানি। এই দুটি খণ্ডবাক্য যখন একটি বাক্যে পরিণত হল, তখন ‘সেটা আমি জানি’ – এই বাক্যটিকে আশ্রয় করল ‘তুমি যে আজ স্কুল যাওনি’ – এই অংশটি। অপ্রধান খণ্ডবাক্যগুলি প্রধান খণ্ডবাক্যের সঙ্গে সাপেক্ষ শব্দজোড়, সাপেক্ষ অব্যয় ইত্যাদি দ্বারা যুক্ত হবে।

দ্বিতীয় বাক্যের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যেও দুটি অংশ আছে – 1. যেহেতু সকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছে 2. তাই আজ অফিস গেলাম না। এক্ষেত্রে ‘আজ অফিস গেলাম না’ বাক্যটিকে আশ্রয় করল ‘যেহেতু সকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছে’ অংশটি।

এই বাক্য দুটির ক্ষেত্রে দেখা গেল যে, একটি প্রধান বাক্য ও তার আশ্রিত আর-একটি বাক্য আছে। এখানে দুটি বাক্য থাকার কারণে সমাপিকা ক্রিয়াও দুটি। এধরনের গঠনরীতি যে বাক্যে থাকে, তাকে জটিল বাক্য বলা যায়।

ব্যাকরণের ভাষায়, যে বাক্যে একটি প্রধান খণ্ডবাক্য এবং তার আশ্রিত এক বা একাধিক অপ্রধান খণ্ডবাক্য থাকে, তাকে জটিল বাক্য বলে।

জটিল বাক্য

জটিল বাক্যের গঠনরীতি

একটি প্রধান বাক্য ও একটি আশ্রিত বাক্য নিয়ে তৈরি জটিল বাক্য – আমি জানি যে তুমি যাওনি।

জটিল বাক্য

একটি প্রধান বাক্য ও একাধিক আশ্রিত বাক্য নিয়ে তৈরি জটিল বাক্য – আমি জানি যে তুমি আসবে যেহেতু তোমার বন্ধুও আসবে।

জটিল বাক্য

অনুরূপ উদাহরণ –

যেহেতু তুমি বলছ তুমি আসবে না, তাই আমি আর অপেক্ষা করব না।

যৌগিক বাক্য

তুমি আসবে আর তোমার বন্ধু আসবে। এক্ষেত্রে দুটি বাক্য আছে – 1. তুমি আসবে। 2. তোমার বন্ধু আসবে। দুটি বাক্যই স্বয়ংসম্পূর্ণ, পরস্পর নির্ভরশীল নয়। দুটি বাক্যকে জুড়েছে ‘আর’ (সংযোজক) অব্যয়টি। দুটি সরল বাক্য এভাবে জুড়ে গেলে তাকে আমরা যৌগিক বাক্য বলি। যৌগিক বাক্যের মধ্যে যতগুলি বাক্য থাকে, ততগুলি সমাপিকা ক্রিয়া থাকে। ব্যাকরণের ভাষায় দুই বা দুইয়ের বেশি স্বাধীন বাক্য যদি সংযোজক অব্যয় দ্বারা যুক্ত হয়ে একটি বাক্য গঠন করে তাকে যৌগিক বাক্য বলে।

যৌগিক বাক্যের গঠনরীতি –

সরল বাক্য + যোজক + সরল বাক্য – আমি রাত্রে রুটি খাই আর ভাই ভাত খায়।

যৌগিক বাক্য

সরল বাক্য + যোজক + জটিল বাক্য – কাজল স্কুলে যায় না কিন্তু যে ছেলেটি কাজলের বন্ধু সে যায়।

যৌগিক বাক্য

অনুরূপ উদাহরণ –

আমি একথা বলিনি, আর তোমরাও যে বলবে না তা আমি জানি।

মিশ্র বাক্য

যে ধরনের বাক্যের মধ্যে সরল, জটিল ও যৌগিক বাক্যের বৈশিষ্ট্য মিশে থাকে, তাকে মিশ্র বাক্য বলে। যেমন –

সেদিন যখন সে এসেছিল তখন তুমি এ কথা বলনি, কিন্তু এখন বলছ।

এই বাক্যটিকে নিম্নলিখিতভাবে ভাঙা যায় –

মিশ্র বাক্য

অর্থাৎ এই বাক্যটির চেহারা যৌগিক বাক্যের মতো হলেও এটিকে আমরা মিশ্র বাক্য বলব, কারণ এটি একটি জটিল বাক্য ও সরলা মিশ্র রূপ।

বাক্যের প্রকারভেদ – এখানে নানা ধরনের মিশ্র বাক্যের উদাহরণ দেওয়া হল –

সরল ও যৌগিক বাক্যের মিশ্রণ – নাইন স্টার ক্লাবের টিম মাঠে নেমেছে, কিন্তু না জ্বলছে ফ্লাড লাইট, না এসেছেন রেফারি।

মিশ্র বাক্য

দুটি যৌগিক বাক্যের মিশ্রণ – আমি যাব আর কৌশিক যাবে, অথচ ওপাড়া থেকে পলাশ আসবে, কিন্তু শ্যামল আসবে না।

মিশ্র বাক্য

সরল ও জটিল বাক্যের মিশ্রণ – কাল রাত্রে আমার মনে হল যখন হিমাচলপ্রদেশ যাব, তখন অমৃতসরটাও ঘুরে আসব।

মিশ্র বাক্য

যৌগিক ও জটিল বাক্যের মিশ্রণ – বাবা মাংস খেল না আর মা মিষ্টি খেল না, আর দিদির যদিও মনে হয়েছে যে বাইরে খাওয়া অস্বাস্থ্যকর, তবু খেল।

মিশ্র বাক্য

বাক্যের অর্থগত শ্রেণিবিভাগ

বাক্যের প্রকাশভঙ্গি বা অর্থের ওপর ভিত্তি করে বাক্যকে সাতটি ভাগে ভাগ করা যায় –

নির্দেশাত্মক বাক্য

এখানে বর্ষাকালে প্রায়ই বন্যা হয়।

এই বাক্যটিকে ভালো করে লক্ষ করো। বাক্যটির মধ্যে কোনো একটি বিষয়ে কিছু বলা হচ্ছে। এর মধ্যে একটি ঘটনার বিবৃতি রয়েছে, একটি বিষয় রয়েছে।

ব্যাকরণের ভাষায়, যেসব বাক্যে সাধারণভাবে কোনো কিছুর বিষয়ে বলা হয় অথবা বাক্যে কোনো ভাব বা ঘটনা সম্পর্কে সাধারণ বিবৃতি থাকে, তাকে নির্দেশক বাক্য বলা হয়।

উদাহরণ হিসেবে আরও কতকগুলি বাক্য দেওয়া হল। যেমন –

কোনো মানুষই অমর নয়।তাদের চুপ করে থাকার কারণ ছিল।
আমি এই কাজ করব।ভারত একটি গণতান্ত্রিক দেশ।

এই নির্দেশক বাক্য আবার দু-প্রকারের হতে পারে। একটি হ্যাঁ-বাচক বা অস্ত্যর্থক, অন্যটি না-বাচক বা নঞর্থক।

যে বাক্যে সমর্থন বা স্বীকৃতির মাধ্যমে কোনো কিছু বর্ণনা করা হয়, তাকে বলে হ্যাঁ-বাচক বা অস্ত্যর্থক বাক্য। যেমন –

মেয়েটি গান করবে।কবিতাটি বড়োই সুখপাঠ্য।
তুমি যাবে।মিথ্যাবাদীকে সকলেই অবিশ্বাস করে।

যে বাক্যে অসমর্থন বা অস্বীকৃতির মাধ্যমে কিছু বর্ণনা করা হয়, তাকে বলা হয় না-বাচক বা নঞর্থক বাক্য। যেমন –

  • কোনো মানুষই অমর নয়।
  • এ বিষয়ে আমার আর কোনো দায় রইল না।
  •  তোমার এখানে আসার কোনো প্রয়োজন ছিল না।
  • প্রকৃত দেশপ্রেমিকের সংখ্যা বেশি নয়।

প্রশ্নসূচক বাক্য

তুমি কি বাড়ি যাবে?

বাক্যটি ভালো করে লক্ষ করো। বাক্যটির মধ্যে কোনো একটি প্রশ্ন উঠে আসছে। বক্তা কোনো একটি প্রশ্ন জানতে চাইছে যার উত্তর হ্যাঁ অথবা না কোনো একটি হবে।

ব্যাকরণের ভাষায়, যখন কোনো বাক্যের দ্বারা কোনোরকম প্রশ্ন করা হয়, তখন সেই বাক্যকে প্রশ্নসূচক বাক্য বলা হয়। উদাহরণ হিসেবে আরও কতকগুলি বাক্য দেওয়া হল। যেমন –

  • কারা হনহনিয়ে যাচ্ছে?
  • আজ কি বৃষ্টি হবে?
  • তুমি কবে কলকাতায় যাবে?
  • চিরকাল কি কারও একভাবে যায়?

এই প্রশ্নসূচক বাক্যও হ্যাঁ-বাচক বা অস্ত্যর্থক এবং না-বাচক বা নর্থক এই দু-প্রকারের হতে পারে। হ্যাঁ-বাচক বা অস্ত্যর্থক প্রশ্নসূচক বাক্যের উদাহরণ –

তুমি কি কাজটা পরে করবে?

না-বাচক বা নঞর্থক প্রশ্নসূচক বাক্যের উদাহরণ –

তুমি কি কাজটা এখন করবে না?

অনুজ্ঞাবাচক বাক্য

তুমি তাড়াতাড়ি বাড়ি যাও।

এই বাক্যটি ভালো করে লক্ষ করো। বাক্যটির মধ্যে একটি আদেশের ভাব ব্যক্ত হচ্ছে। তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে যেতে বলার মধ্য দিয়ে বক্তা শ্রোতাকে আদেশ করছেন।

ব্যাকরণের ভাষায়, যেসমস্ত বাক্যের দ্বারা আদেশ, উপদেশ বা অনুরোধ বোঝায়, সেই সমস্ত বাক্যকে অনুজ্ঞাসূচক বাক্য বলা হয়। উদাহরণ হিসেবে আরও কতকগুলি বাক্য দেওয়া হল। যেমন –

  • এখনই পড়তে বসো।
  • রাস্তা দেখে পার হবে।
  • ভাই, আমাকে একটু সাহায্য করো।
  • এমন কাজ কখনও কোরো না।

প্রার্থনাসূচক বাক্য

প্রার্থনা বলতে শুধুই শ্রদ্ধার সঙ্গে প্রার্থনা করা বোঝাচ্ছে না। কারও কাছে কোনো কিছু চাওয়াটাও কিন্তু প্রার্থনাই।

যেমন, আমারে করো তোমার বীণা। – এটাও প্রার্থনা, আবার, দয়া করে আমায় ভাত খেতে দাও। – তাও প্রার্থনা। এমনকি, কারও জন্য কোনো কিছু কামনা করাটাও প্রার্থনার মধ্যেই পড়ে। সুতরাং, আশা করি, তোমার সুমতি হোক। – এই বাক্যটিতেও প্রার্থনার ভাবই প্রকাশ পেল।

সুতরাং, যে ধরনের বাক্যের মাধ্যমে বক্তা কোনো কিছু প্রার্থনা করে, সেই ধরনের বাক্যগুলোকেই প্রার্থনাসূচক বাক্য বলে। যেমন –

অন্তর মম বিকশিত কর অন্তরতর হে।
তুমি নির্মল করো।

সন্দেহবাচক বাক্য

আগামীকাল তোমার নাকি মেয়ের বিয়ে।
আগামীকাল তোমার মেয়ের বিয়ে।

দ্যাখো, দুটি বাক্যই আগামীকাল মেয়ের বিয়ের প্রসঙ্গ নিয়ে। কিন্তু একটু খেয়াল করলেই দেখব দুটি বাক্যের বক্তব্য দু-রকম। দ্বিতীয় বাক্যে মেয়ের বিয়ের নিশ্চিত ঘোষণা। কিন্তু প্রথম বাক্যে ‘নাকি’ শব্দটির প্রয়োগ থাকায় বক্তার সংশয়ের ভাবটি প্রকাশ পেয়েছে। এইরকম আর-একটি বাক্য – আমার মনে হয় কথাটা তোমায় বলেছি। সুতরাং, আমরা বলতে পারি যে, ‘বুঝি’, ‘বোধহয়’, ‘হয়তো’, ‘নাকি’ প্রভৃতি শব্দের প্রয়োগ করে যদি বাক্যের মধ্যে বক্তার অনিশ্চিত ভাব বা সন্দেহ প্রকাশ পায়, তবে তাকে সন্দেহবাচক বাক্য বলে। যেমন –

  • তুমি বুঝি কাল যাবে?
  • কাল নাকি স্কুল ছুটি থাকবে?
  • ওখানে হয়তো এতক্ষণে সবাই পৌঁছে গেছে।
  • আমার বোধহয় আজ আর কাজটা হল না।

আবেগসূচক বাক্য

আহা! কী সুন্দর এই সকাল!

খেয়াল করে দ্যাখো, এই বাক্যে বিস্ময়সূচক চিহ্ন (!)-এর ব্যবহার হচ্ছে। তার কারণ, সকালের এই সৌন্দর্য বক্তাকে অবাক করেছে, মুগ্ধ করেছে। এই সকালের সৌন্দর্য তার কাছে প্রতিদিনের সকালের মতো চেনা নয়, অনন্য। এই অচেনা অভিজ্ঞতা তাকে এত বিস্মিত করেছে বলেই এখানে বিস্ময়সূচক চিহ্ন ব্যবহৃত হয়েছে। ব্যাকরণের ভাষায়, যে বাক্যে বক্তার মনের উচ্ছ্বাস বা আবেগ প্রকাশ পায়, তাকে আবেগসূচক বাক্য বলে। তবে, তার মানে এই নয় যে, শুধুমাত্র মুগ্ধতাজনিত বিস্ময় প্রকাশ পেলে তবেই তাকে আবেগসূচক বাক্য বলে। ঘৃণা, ভয়, উদ্বেগ-এগুলিও আবেগ। কখনো-কখনো পরিবেশ, পরিস্থিতি বা বিষয়ের চাপে পড়ে মানুষ এই ধরনের আবেগ প্রকাশ করে। তাই,

  • হায়! এ কী সর্বনাশ হল!
  • উঃ! কী চিন্তাই না হচ্ছে!
  • ছিঃ! তুমি আমার ছেলে হয়ে একাজ করলে!
  • উফ্! এসব কথা সহ্য করা যায় না।

এইসব বাক্যই আবেগসূচক বাক্য। এই ধরনের বাক্যে বিস্ময়সূচক চিহ্নটি (!) সবসময় ব্যবহৃত হয়।

শর্তসাপেক্ষ বাক্য

মন দিয়ে না পড়লে পরীক্ষায় ভালো ফল করা যায় না।

এখানে ‘ভালো ফল’ করাটা নির্ভর করছে ‘মন দিয়ে’ পড়ার ওপরে। অর্থাৎ বাক্যে কার্য এবং তার কারণ বা শর্তের উল্লেখ আছে।

যে বাক্যে কোনো শর্তের ওপর নির্ভরতা বা কোনো কার্য-কারণের উল্লেখ থাকে, তাকেই বলে শর্তসাপেক্ষ বাক্য। যেমন –

যদি তুমি যাও, তবেই আমি যাব।

এখানে, ‘আমার যাওয়া’-টা নির্ভর করছে যে শর্তের ওপরে, তা হল ‘তোমার যাওয়া’। সুতরাং, এটিও একটি শর্তসাপেক্ষ বাক্য। আরও কয়েকটি উদাহরণ দেখে নাও –

  • স্যারের ক্লাস থাকলে তবেই আসব।
  • ইটটি ছুঁড়লে পাটকেলটি খেতে হয়।
  • আমি প্রতিবাদ করব, কেন-না তুমি যা করছ, তা অন্যায়।
  • যখনই তুমি বলবে, তখনই আমি বইটা পাঠাব।
বাংলা বাক্য

গঠন ও অর্থ অনুসারে বাক্যের রুপান্তর

কোনো বাক্যের মূল ভাবটি অক্ষুণ্ণ রেখে একপ্রকার বাক্যকে অন্যপ্রকার বাক্যে পরিবর্তন করাকেই বলা হয় বাক্যের রূপান্তর।

গঠন অনুসারে বাক্যের রূপান্তর

গঠন অনুসারে কীভাবে একপ্রকার বাক্যকে অন্যপ্রকার বাক্যে রূপান্তর করা যায় তা উদাহরণ-সহ আলোচনা করা হল।

সরল বাক্যে রূপান্তরের নির্দেশিকা – যৌগিক বাক্য বা জটিল বাক্যের ক্ষেত্রে প্রথম বাক্যখণ্ডটির একেবারে শেষের সমাপিকা ক্রিয়াপদটিকে অসমাপিকা ক্রিয়াপদে রূপান্তরিত করলে বাক্যটি সাধারণত সরল বাক্য হয়ে যায়।

জটিল বাক্য → সরল বাক্য

জটিল বাক্যসরল বাক্য
যদি উহারে ছাড়িয়া না দাও, সিংহী তোমায় জব্দ করিবেক।উহারে ছাড়িয়া না দিলে সিংহী তোমায় জব্দ করিবেক।
ভিতরের শক্তি যাহা সঞ্চিত ছিল তাহা এখন ফুরাইয়া গিয়াছে।ভিতরের সঞ্চিত শক্তি এখন ফুরাইয়া গিয়াছে।

যৌগিক বাক্য → সরল বাক্য

যৌগিক বাক্যসরল বাক্য
নিতান্ত অতিরিক্ত সুদে একজন বাকি টাকাটা ধার দিতে স্বীকার করিয়াছিল, কিন্তু সময়কালে সে উপস্থিত হইল না।নিতান্ত অতিরিক্ত সুদে একজন বাকি টাকাটা ধার দিতে স্বীকার করিলেও সময়কালে সে উপস্থিত হইল না।
লোকটি দরিদ্র, কিন্তু সৎ।লোকটি দরিদ্র হলেও সৎ।

জটিল বাক্যে রূপান্তরের নির্দেশিকা – যখন-তখন, যে-সে, যাকে-তাকে, যাদের-তাদের, যদি-তবে – এগুলিকে বলা হয় সাপেক্ষ শব্দজোড়। যে-কোনো বাক্য, যার মধ্যে দুটি বাক্যখণ্ড রয়েছে, সেই বাক্যখণ্ড দুটিকে সাপেক্ষ শব্দজোড় ব্যবহার করে ভেঙে দিলে জটিল বাক্য পাওয়া যায়।

সরল বাক্য → জটিল বাক্য

সরল বাক্যজটিল বাক্য
অসুস্থতার জন্য গতকাল অনুপস্থিত ছিলাম।যেহেতু অসুস্থ ছিলাম, সেহেতু গতকাল অনুপস্থিত ছিলাম।
তুমি না গেলে আমিও যাব না।যদি তুমি না যাও, তবে আমিও যাব না।

যৌগিক বাক্য → জটিল বাক্য

যৌগিক বাক্যজটিল বাক্য
স্টেশনে পৌঁছোলাম, আর ট্রেনটিও ছেড়ে দিল।যেই স্টেশনে পৌঁছোলাম, অমনি ট্রেনটি ছেড়ে দিল।
আমরা বনবাসী বটে, কিন্তু লৌকিক ব্যাপারে নিতান্ত অনভিজ্ঞ নহি।যদিও আমরা বনবাসী, তথাপি লৌকিক ব্যাপারে নিতান্ত অনভিজ্ঞ নহি।

যৌগিক বাক্যে রূপান্তরের নির্দেশিকা – এবং, আর, কিন্তু, বরং, নইলে – এগুলি হল সংযোগমূলক অব্যয় বা যোজক। এই যোজক ব্যবহার করে একটি বাক্যের ভিতরে থাকা বাক্যখণ্ড দুটিকে আলাদা করলে যৌগিক বাক্য পাওয়া যাবে।

সরল বাক্য → যৌগিক বাক্য

সরল বাক্যযৌগিক বাক্য
ইন্দ্র আশ্বাস দিলেও আমি রাজি হইলাম না।ইন্দ্র আশ্বাস দিল, কিন্তু আমি রাজি হইলাম না।
পরম পন্ডিত হলেও ব্যবহারে তিনি বড়োই অমায়িক।তিনি পরম পণ্ডিত কিন্তু ব্যবহারে বড়োই অমায়িক।

জটিল বাক্য → যৌগিক বাক্য

জটিল বাক্যযৌগিক বাক্য
যখন স্কুলে পৌঁছেছি, তখনই বৃষ্টি আরম্ভ হয়েছে।স্কুলে পৌঁছেছি, আর বৃষ্টিও আরম্ভ হয়েছে।
রাত্রি যখন এগারোটা, তখন কলিকাতার বাবু কাবু।রাত্রি এগারোটা, এবং কলিকাতার বাবু কাবু।

অর্থ অনুসারে বাক্যের রূপান্তর

অর্থ অনুসারেও আবার একপ্রকার বাক্যকে আর-একপ্রকার বাক্যে রূপান্তর করা যায়। নীচে এই ধরনের বাক্যপরিবর্তনের বেশ কিছু উদাহরণ দেখানো হল।

ইতিবাচক বাক্য → নেতিবাচক বাক্য

ইতিবাচক বাক্যনেতিবাচক বাক্য
এ কর্মটি তোমার দ্বারা সম্ভব।এ কর্মটি তোমার দ্বারা অসম্ভব নয়।
কাচ খুব সহজেই ভেঙে যায়।কাচ ভেঙে যাওয়া একেবারেই কঠিন নয়।

সমাপিকা ক্রিয়ার পরে না-বোধক অব্যয় ব্যবহার করে প্রয়োজনে অন্য শব্দকে কিছুটা পরিবর্তন করতে হবে।

নেতিবাচক বাক্য → ইতিবাচক বাক্য

নেতিবাচক বাক্যইতিবাচক বাক্য
গরিবের ঘরের অন্ন ওঁর মুখে রোচে না।গরিবের ঘরের অন্নে ওঁর অরুচি।
আর সময় নষ্ট করা চলিবে না।আর সময় নষ্ট করা অনুচিত হইবে।

না-বোধক অব্যয় লুপ্ত হয়ে ইতিবাচক করার জন্য পদের সঙ্গে ‘অ’, ‘অন’, ‘নি’, ‘নির্’ ইত্যাদি উপসর্গ যুক্ত হবে।

নির্দেশক বাক্য → প্রশ্নবোধক বাক্য

নির্দেশক বাক্যপ্রশ্নবোধক বাক্য
ইহাতে সে খুশিই হইল।ইহাতে কি সে অখুশি হইল?
অসৎ লোককে কেউ ভালোবাসে না।অসৎ লোককে কি কেউ ভালোবাসে?

কী, ‘কোথায়’, ‘কে’, ইত্যাদি অব্যয় ব্যবহার করতে হবে। বাক্যটি ইতিবাচক হলে পরিবর্তনের পরে না-বোধক অব্যয় যোগ করতে হবে। বাক্যটি নেতিবাচক হলে পরিবর্তনের সময়ে না-বোধক অব্যয়কে বাদ দিতে হবে। রূপান্তরের পরে প্রশ্নবোধক চিহ্ন অবশ্যই প্রতিটি ক্ষেত্রে যেন ব্যবহার করা হয়।

প্রশ্নবোধক বাক্য → নির্দেশক বাক্য

প্রশ্নবোধক বাক্যনির্দেশক বাক্য
জাতিগঠনের কার্য কি সমাপ্ত হইয়াছে?জাতিগঠনের কার্য সমাপ্ত হয় নাই।
বিদ্যাসাগর কি মহাপুরুষ নন?বিদ্যাসাগর নিশ্চয়ই মহাপুরুষ।

এই রূপান্তরে বাক্যের প্রশ্নবোধক অব্যয় (কী, কি, কেন) তুলে দিতে হবে। প্রশ্নসূচক চিহ্নটি বাদ যাবে। প্রশ্নবাক্যের অর্থ অনুযায়ী, হ্যাঁ-বাচক থাকলে না-বাচক এবং না-বাচক থাকলে হ্যাঁ-বাচকে রূপ দিতে হবে।

নির্দেশক বাক্য → আবেগসূচক বাক্য

নির্দেশক বাক্যআবেগসূচক বাক্য
মেয়েটির গানের গলা ভারি মিষ্টি।মেয়েটির গানের গলা কী মিষ্টি!
ও কথায় ভুলাইবার ছেলে নহে্।ও কি কথায় ভুলাইবার ছেলে!

নির্দেশক বাক্যের সঙ্গে সাদৃশ্য রেখে ‘ইস’, ‘কী’, ‘ভারি’, ‘বটে’ ইত্যাদি আবেগমূলক অব্যয় যোগ করে আবেগসূচক বাক্য গঠন করা হয়। এই রূপান্তরের শেষে বিস্ময়বোধক চিহ্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক।

আবেগসূচক বাক্য → নির্দেশক বাক্য

আবেগসূচক বাক্যনির্দেশক বাক্য
কী বিচিত্র এই দেশ!এই দেশ অতি বিচিত্র।
ওখানে যেতে আমার বয়েই গেছে!আমি ওখানে একেবারেই যাব না।

আবেগসূচক বাক্যের বিস্ময়সূচক অব্যয় ও চিহ্ন তুলে দিয়ে বাক্যটিকে বিবৃতিধর্মী করতে হবে।

অনুজ্ঞাবাচক বাক্য → নির্দেশক বাক্য

অনুজ্ঞাবাচক বাক্যনির্দেশক বাক্য
দুর্জনকে দূরে রাখো।দুর্জনকে দূরে রাখাই উচিত।
মন দিয়ে লেখাপড়া করো।মন দিয়ে লেখাপড়া করতে বলা হচ্ছে।

অনুজ্ঞাসূচক ক্রিয়ার বদলে ক্রিয়ার মূল ধাতুর সঙ্গে অসমাপিকা ক্রিয়াবিভক্তি বা ‘আ’ প্রত্যয় যোগ করে তাকে অসমাপিকা ক্রিয়ায় পরিণত করতে হবে। এর সঙ্গে কাম্য, উচিত, সংগত ইত্যাদি নির্দেশমূলক শব্দ ব্যবহার করা যেতে পারে। বলছি, মিনতি করছি, অনুরোধ করছি-এইরকম বিবৃতিমূলক পদগুচ্ছ ব্যবহার করা যেতে পারে।

নির্দেশক বাক্য → অনুজ্ঞাবাচক বাক্য

নির্দেশক বাক্যঅনুজ্ঞাবাচক বাক্য
তোমাকে এই খাতায় লিখতে হবে।তুমি এই খাতায় লিখবে।
দুর্যোধন যেন বীরত্বের স্পর্ধা না করে।দুর্যোধন! বীরত্বের স্পর্ধা কোরো না।

নির্দেশক বাক্যের কাম্য, উচিত, সংগত ইত্যাদি শব্দ বা অনুরোধ করছি, বলছি, মিনতি করছি – এইরকম বিবৃতিমূলক পদগুচ্ছ অনুজ্ঞাবাচক বাক্যে বাদ দিতে হবে। যদি নির্দেশক বাক্যে কোনো যৌগিক ক্রিয়া থাকে, তবে তার পরপদ লোপ পাবে এবং অসমাপিকা ক্রিয়াটিকে অনুজ্ঞাসূচক সমাপিকা ক্রিয়ায় রূপ দিতে হবে।

এক নজরে

  • তিনটি শর্ত পূরণ না করলে বাক্য অর্থগতভাবে ঠিক হয় না – আসত্তি, যোগ্যতা এবং আকাঙ্ক্ষা।
  • বাক্যে যার সম্পর্কে কিছু বলা হয়, সে হল বাক্যের উদ্দেশ্য। উদ্দেশ্য সম্পর্কে যা বলা হয়, তা হল বাক্যের বিধেয়।
  • উদ্দেশ্যর সঙ্গে যা কিছু যুক্ত হয়ে উদ্দেশ্যকে প্রসারিত করে, তাকে উদ্দেশ্যের প্রসারক বলে।
  • বিধেয়র সঙ্গে যা কিছু যুক্ত হয়ে বিধেয়কে প্রসারিত করে, তাকে বিধেয়র প্রসারক বলে।
  • বিশেষ্যের সঙ্গে জোটবাঁধা পদগুলিকে নিয়ে বিশেষ্যখণ্ড তৈরি হয়।
  • যেসব পদগুলি জোট বেঁধে বিশেষ্যের সঙ্গে বসে, তাদেরকে একসঙ্গে বিশেষ্যখণ্ড বলা হয়।
  • যেসব পদগুলি জোট বেঁধে ক্রিয়ার সঙ্গে বসে, তাদের একসঙ্গে ক্রিয়াখণ্ড বলা হয়।
  • যেসব পদগুলি একসঙ্গে জোট বেঁধে ক্রিয়াবিশেষণের কাজ করে, তাদের ক্রিয়াবিশেষণখণ্ড বলা হয়।
  • যে বাক্যে একটিই সমাপিকা ক্রিয়া থাকে, সেই বাক্যকে সরল বাক্য বলে।
  • যে বাক্যে একটি প্রধান খণ্ডবাক্য এবং তার আশ্রিত এক বা একাধিক অপ্রধান খণ্ডবাক্য থাকে, তাকে জটিল বাক্য বলে।
  • দুই বা দুইয়ের বেশি স্বাধীন বাক্য যদি সংযোজক অব্যয় দ্বারা যুক্ত হয়ে একটি বাক্য গঠন করে, তবে তাকে যৌগিক বাক্য বলে।
  • যে বাক্যে কোনো ভাব বা ঘটনা সম্পর্কে সাধারণ বিবৃতি থাকে, তাকে নির্দেশক বাক্য বলে।
  • যে বাক্যে হ্যাঁ-বাচক অর্থ প্রকাশ পায়, তাকে অস্ত্যর্থক বাক্য বলে।
  • যে বাক্যে না-বাচক অর্থ প্রকাশ পায়, তাকে নঞর্থক বাক্য বলে।
  • যে বাক্যের মাধ্যমে কোনো প্রশ্ন বোঝানো হয়, তাকে প্রশ্নসূচক বাক্য বলে।
  • যে বাক্যের মাধ্যমে আদেশ, উপদেশ বা অনুরোধ, বোঝায়, তাকে অনুজ্ঞাসূচক বাক্য বলে।
  • যে বাক্যের মাধ্যমে কোনো প্রার্থনা প্রকাশ পায়, তাকে প্রার্থনাসূচক বাক্য বলে।
  • যে বাক্যের মাধ্যমে বক্তার সন্দেহ প্রকাশ পায়, তাকে সন্দেহবাচক বাক্য বলে।
  • যে বাক্যে কোনো আবেগ প্রকাশ পায়, তাকে আবেগসূচক বাক্য বলে।
  • যে বাক্যে কোনো শর্তের উপরে নির্ভরতা বোঝায়, তাকে শর্তসাপেক্ষ বাক্য বলে।

অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর

সরল বাক্যে কয়টি বাক্যাংশ থাকে?

সরল বাক্যে মূলত একটিই বাক্যাংশ থাকে, যার একটি মূল উদ্দেশ্য এবং একটি মূল বিধেয় থাকে।

যৌগিক বাক্য ও জটিল বাক্যের মধ্যে পার্থক্য কী?

যৌগিক বাক্য ও জটিল বাক্যের মধ্যে পার্থক্য –যৌগিক বাক্য ও জটিল বাক্য

জটিল বাক্যের একটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।

জটিল বাক্যের প্রধান খণ্ডবাক্যে এবং এক বা একাধিক খণ্ডবাক্যেও একটি করে সমাপিকা ক্রিয়া থাকে। তাই কমপক্ষে দুটি সমাপিকা ক্রিয়া থাকেই।

যৌগিক বাক্য গঠনের ক্ষেত্রে অব্যয়ের ভূমিকা কী?

যৌগিক বাক্যের ক্ষেত্রে, দুই বা ততোধিক স্বাধীন বাক্যখণ্ডগুলিকে কিন্তু, এবং, ও, আর, বরং প্রভৃতি সংযোজক অব্যয় পরস্পর যুক্ত করে।

একটি জটিল বাক্যের উদাহরণ দাও।

একটি জটিল বাক্যের উদাহরণ – তোমার বিষয়-আশয় যদি এখনই না সামলাও, তবে কপালে অনেক দুঃখ আছে।

একটি সরল বাক্যের উদাহরণ দাও।

একটি সরল বাক্যের উদাহরণ – মন দিয়ে পড়লে পরীক্ষায় খারাপ ফল করার কোনো কারণ তো দেখি না।

একটি যৌগিক বাক্যের উদাহরণ দাও।

একটি যৌগিক বাক্যের উদাহরণ – স্কুলে পৌঁছেছি আর বৃষ্টিও আরম্ভ হয়েছে।

যৌগিক বাক্যের একটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।

যৌগিক বাক্য সাধারণত দুই বা ততোধিক স্বাধীন বাক্য, একটি সংযোজক অব্যয় দ্বারা সেগুলি যুক্ত থাকে।

সরল বাক্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।

সরল বাক্যে একটি উদ্দেশ্য এবং একটিই বিধেয় (সমাপিকা ক্রিয়া) থাকে।

জটিল বাক্য গঠনের ক্ষেত্রে অব্যয়ের ভূমিকা কী?

সরল বাক্যের অন্তর্ভুক্ত কোনো পদ বা পদসমষ্টিকে সম্প্রসারিত করে সাপেক্ষ অব্যয় যোগে জটিল বাক্যে পরিণত করা যায়।

কার্যকারণাত্মক বাক্য কাকে বলে? একটি কার্যকারণাত্মক বাক্যের উদাহরণ দাও।

যখন একই বাক্যের মধ্যে কার্য এবং তার কারণের উল্লেখ থাকে তাকে কার্যকারণাত্মক বাক্য বলে। একটি কার্যকারণাত্মক বাক্যের উদাহরণ – যদি তুমি এখন বাড়ি না যাও, তাহলে অনেক রাত হয়ে যাবে।

কেন প্রার্থনাসূচক বাক্যকে আলাদা করে দেখানোর প্রয়োজন নেই?

কারও কাছে কোনো কিছু প্রার্থনা করাটা একপ্রকার অনুরোধ করাকেই বোঝায়। তাই অনুরোধ বোঝাতে যেমন ‘অনুজ্ঞাসূচক বাক্য’ ব্যবহৃত হয়, ‘প্রার্থনাসূচক বাক্য’কেও তেমনই অনুজ্ঞাসূচক বাক্যের শ্রেণিতেই ফেলে দেওয়া যায়।

আবেগসূচক বাক্য চেনার উপায় কী?

আবেগসূচক বাক্য একনজরে চেনার উপায় হল, এই বাক্যে বিস্ময়সূচক চিহ্নের ব্যবহার হয়।

অস্ত্যর্থক বাক্য এবং নঞর্থক বাক্যের মধ্যে একটি পার্থক্য লেখো।

অস্ত্যর্থক বাক্য এবং নঞর্থক বাক্যের মধ্যে পার্থক্য –অস্ত্যর্থক বাক্য এবং নঞর্থক বাক্য

প্রশ্নবোধক বাক্য কাকে বলে?

যে বাক্যের মাধ্যমে কোনো একটি প্রশ্ন বা জিজ্ঞাসার ভাব তুলে ধরা হয়, তাকে প্রশ্নবোধক বাক্য বলে। যেমন – তুমি কি আসবে?

নির্দেশক বাক্য কাকে বলে?

যে বাক্যে সাধারণভাবে কোনো বিষয়ে কিছু বলা হয়, তাকে নির্দেশসূচক বা বিবৃতিমূলক বাক্য বলে। উদাহরণ – সৌরভ গাঙ্গুলি সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে অন্যতম।

অনুজ্ঞাসূচক বাক্যের মাধ্যমে কী বোঝানো হয়?

অনুজ্ঞাসূচক বাক্যের মাধ্যমে আদেশ, উপরোধ, অনুরোধের ভাব ব্যস্ত হয়।

বাক্য গঠনের শর্তগুলি কী কী?

একটি বাক্য গঠনের শর্তগুলি হল – আসত্তি, যোগ্যতা এবং আকাঙ্ক্ষা।

আসত্তি বলতে কী বোঝ?

বাক্যের বিভিন্ন অংশকে উপযুক্ত স্থানে সন্নিবিষ্ট করাই হল আসত্তি।

একটি ক্রিয়াবিশেষণ স্থানীয় অপ্রধান বাক্যের উদাহরণ দাও।

তুমি মহিম যেভাবে বিষয়টা বোঝালো (তা) মনে রাখো।

বাক্যের ‘যোগ্যতা’ বলতে কী বোঝ?

পদসমষ্টি উচ্চারণের ফলে সংগত ভাব প্রকাশিত হলে তা ওই পদসমষ্টির বাক্যগঠনের যোগ্যতা বলে বিবেচিত হয়।

একটি বাক্য নির্মাণ করে তার উদ্দেশ্য প্রসারক অংশটি চিহ্নিত করো।

উদ্দেশ্য প্রসারক

গিয়েছে মাসিমার গয়না সোনার হারিয়ে – উল্লিখিত বাক্যগঠনে কোন শর্তের অভাব হয়েছে লেখো।

উল্লিখিত বাক্যগঠনে আসত্তির অভাব হয়েছে।

নির্দেশক বাক্যকে কয়ভাগে ভাগ করা যায় ও কী কী?

নির্দেশক বাক্যকে দু-ভাগে ভাগ করা যায়। – 1. হ্যাঁ-বাচক বা অস্ত্যর্থক বাক্য 2. না-বাচক বা নঞর্থক বাক্য।

আসত্তিহীন বাক্যের একটি উদাহরণ দাও।

একটি আসত্তিহীন বাক্যের উদাহরণ হল – মেঘ জুড়ে করেছে আকাশ (আকাশ জুড়ে মেঘ করেছে)।

বিধেয় সম্প্রসারক বলতে কী বোঝায়?

বাক্যের বিধেয়র সঙ্গে যা কিছু যুক্ত হয়ে বিধেয় অংশকে দীর্ঘায়িত করে তাকে বিধেয় সম্প্রসারক বলে। যেমন –বিধেয় সম্প্রসারক

কর্তাহীন ভাববাচ্যের একটি উদাহরণ দাও।

কর্তাহীন ভাববাচ্যের একটি উদাহরণ হল – আসা হোক।

বাক্যের উপাদান বলতে কী বোঝায়?

বাক্যের উপাদান তার অন্তর্গত বিশেষ্যখণ্ড, ক্রিয়াবিশেষণখণ্ড এবং ক্রিয়াখণ্ডকে বলতে বোঝায়।

একটি আকাঙ্ক্ষাহীন বাক্যের উদাহরণ দাও।

একটি আকাঙ্ক্ষাহীন বাক্য হল – আমি যে আজ আসব

শর্তসাপেক্ষ বাক্য কাকে বলে উদাহরণ-সহ লেখো।

যে বাক্যে কোনো শর্তের ওপরে নির্ভরতা বা কোনো কার্য-কারণের উল্লেখ থাকে, তাকে শর্তসাপেক্ষ বাক্য বলে। যেমন – যদি তুমি বল, তাহলে আমি পাব।

একদিন ছুটি পাইয়াছে, শীঘ্র ফিরিবে না। (ইতিবাচক)

একদিন ছুটি পাইয়াছে, শীঘ্র ফেরা হইতে বিরত থাকিবে।

নির্দেশক বাক্যের উদাহরণ দাও।

একটি নির্দেশক বাক্য হল – ছেলেটি খুব ভালো কথা বলে।

সন্দেহবাচক বাক্যের একটি উদাহরণ দাও।

সন্দেহবাচক বাক্যের একটি উদাহরণ হল – সে হয়তো কথাটা এভাবে বলেনি।

বিশেষণ ও বিশেষ্য যোগে একটি বিশেষ্যখণ্ড তৈরি করে বাক্যে ব্যবহার করো।

বিশেষণ ও বিশেষ্য

যোগ্যতাহীন বাক্যের একটি উদাহরণ দাও।

ছাগলে কী না বলে, পাগলে কী না খায়।

বাবুটির স্বাস্থ্য গেছে, কিন্তু শখ ষোলো-আনাই বজায় আছে। – সরল বাক্যে পরিণত করো।

বাবুটির স্বাস্থ্য গেলেও শখ ষোলো-আনাই বজায় আছে।

আর কোনো ভয় নেই। – প্রশ্নবোধক বাক্যে পরিবর্তন করো।

আর কি কোনো ভয় আছে?

বিধেয় প্রসারকের একটি উদাহরণ দাও।

সে ভূতের গল্প ভালোবাসে।

ঠিক ইসাবের মতো জামাটি না পেলে ও স্কুলে যাবে না। – যৌগিক বাক্যে পরিবর্তন করো।

ঠিক ইসাবের মতো জামাটি পেতে হবে নচেৎ ও স্কুলে যাবে না।

সে তখন যেতে পারবে না – হ্যাঁ-বাচক বাক্যে পরিবর্তন করো।

সে তখন যেতে অপারগ হবে।

নির্দেশ অনুসারে বাক্য পরিবর্তন করো।

প্রশ্নউত্তর
গান থামিয়ে নোটোর হাতে খুদে একটা সবুজ শিশি দিয়ে সেলাম ঠুকে ওঝা অদৃশ্য হয়ে গেল। (যৌগিক বাক্যে)গান থামিয়ে নোটোর হাতে খুদে একটা সবুজ শিশি দিয়ে ওঝা সেলাম ঠুকল এবং অদৃশ্য হয়ে গেল।
যতই দেরি করা যাবে, ধরা পড়বার ভয়ও ততই বাড়বে। (সরল বাক্যে)দেরি করার সঙ্গে সঙ্গে ধরা পড়বার ভয়ও বাড়বে।
ওপারে গিয়ে নিমাই বলল, ‘দাদুর বন্দুকটা থাকলে বেশ হত।’ (জটিল বাক্যে) নিমাই যখন ওপারে গেল, তখন বলল, ‘দাদুর বন্দুকটা থাকলে বেশ হত।’
ততক্ষণে হুক্কা ফিরে এসে লেজ নাড়ছিল। (যৌগিক বাক্যে) ততক্ষণে হুক্কা ফিরে এসেছিল আর লেজ নাড়ছিল।
বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি। (জটিল বাক্যে)যাহা বাংলার মুখ, তাহা আমি দেখিয়াছি।
কাপ্তানরা বলত, যে-ফল পাখিতে ঠোকরায় না, সে-ফল খেতে নেই। (সরল বাক্যে)কাপ্তানরা পাখিতে না ঠোকরানো ফল খেতে বারণ করত।
সবাই উঠে পড়ে ভিড় করে এল নোনাপাথর কেমন হয় দেখতে। (যৌগিক বাক্যে)নোনাপাথর কেমন হয় দেখতে সবাই উঠে পড়ল এবং ভিড় করে এল।
বলা বাহুল্য হুক্কা, হেঁটো, বেজি, কানু, বড়ো কুঁকড়ো, ছোটো কুঁকড়ো, সবাই ভাগ পেল। (যৌগিক বাক্যে)হুক্কা, হেঁটো, বেজি, কানু, বড়ো কুঁকড়ো, ছোটো কুঁকড়ো, সবাই ভাগ পেল এবং তা বলাই বাহুল্য।
খিদেতেষ্টা ভুলে গেল ওরা। (যৌগিক বাক্যে)ওরা খিদে ভুলে গেল এবং তেষ্টাও ভুলে গেল।
চোখটোখের কোনো অসুখ আছে মনে হল না। (জটিল বাক্যে)চোখটোখের যে কোনো অসুখ আছে, তা মনে হল না।
মেলায় যদি দুষ্টু ছেলেরা বাঁদরছানার ল্যাজে টিন না বাঁধত, তাহলে ওঝার সঙ্গে দেখা হত না। (সরল বাক্যে)মেলায় দুষ্টু ছেলেরা বাঁদরছানার ল্যাজে টিন না বাঁধলে ওঝার সঙ্গে দেখা হত না।
শিবুদা সেদিকে কান দিলেন না, অন্য কথা বলতে লাগলেন। (যৌগিক বাক্যে)শিবুদা সেদিকে কান দিলেন না, বরং অন্য কথা বলতে লাগলেন।
যদি ইনসিওর করা থাকে, খুঁজে দেবার জন্য শিবুদা মেলা টাকা পেয়ে যাবে। (সরল বাক্যে)ইনসিওর করা থাকলে খুঁজে দেবার জন্য শিবুদা মেলা টাকা পেয়ে যাবে।
হারার কথা শুনে গৌরবি অবাক হয়ে গেল। (যৌগিক বাক্যে)গৌরবি হারার কথা শুনল এবং অবাক হয়ে গেল।
একটা গোরু আছে ওদের, টোলের পিছনের মাঠে চরে সে। (সরল বাক্যে)ওদের গোরুটা টোলের পিছনের মাঠে চরে।
সঙ্গে সঙ্গে করে দেখিয়েও দিল, কী খাসা কাজের হাত তার। (নির্দেশক বাক্যে)তার কাজের হাত যে খুব খাসা, তা সঙ্গে সঙ্গে করে দেখিয়েও দিল।
সে তো সারাক্ষণ তোমার হাতে হাতে কাজ করে দেয়। (প্রশ্নসূচক বাক্যে)সে সারাক্ষণই তোমার হাতে হাতে কাজ করে দেয় না কি?
জায়গাটা খুবই সুন্দর। (আবেগসূচক বাক্যে)জায়গাটা কী সুন্দর!
ব্যস্, আর কোনো ভয় নেই। (প্রশ্নসূচক বাক্যে)ব্যস্, আর কীসের ভয়?
তার কি আর এখানে ভালো লাগে? (নির্দেশক বাক্যে)তার এখানে আর ভালো লাগে না।
সে বুঝি লোক ভালো নয়? (অস্ত্যর্থক বাক্যে)সে বুঝি খারাপ লোক?
নৌকা পার হতে পারলে তবেই বিপদ থেকে মুক্তি। (নঞর্থক বাক্যে)নৌকা পার না হতে পারলে বিপদ থেকে মুক্তি নেই।
এক বর্ষার পর থেকে পরের বর্ষা অবধি জল কোথাও পাওয়া যাবে না? (নির্দেশক বাক্যে)এক বর্ষার পর থেকে পরের বর্ষা অবধি জল কোথাও পাওয়া যাবে না।
দুষ্টুমি না থামালে জিনিস ফেরত পাবে না। (অন্ত্যর্থক বাক্যে)দুষ্টুমি থামালে তবেই জিনিস ফেরত পাবে।
একবার শুনলেই খেন্তি সব মনে রাখে। (নঞর্থক বাক্যে)একবার শুনলে খেত্তি আর কিছু ভোলে না।
মহামারি না কি, জানতাম না তো! (নির্দেশক বাক্যে)মহামারি যে হয়েছে, তা জানতাম না।
পাঠাইব রামানুজে শমন-ভবনে। (জটিল বাক্যে)রামের যে অনুজ, তাহাকে শমন-ভবনে পাঠাইব।
লেখাপড়া শেখাই সেই রাস্তা। (প্রশ্নসূচক বাক্যে)লেখাপড়া শেখাই কি সেই রাস্তা নয়?
কিন্তু সেখানে কান্ডটা কী হইতেছে সেটা জানা চাই। (সরল বাক্যে)কিন্তু সেখানে হয়ে চলা কান্ডটা জানা চাই।
তাহাদের পরস্পরের মধ্যে একটা রাস্তা থাকা চাই। (জটিল বাক্যে)তাহাদের পরস্পরের মধ্যে যা থাকা চাই, তা হল একটি রাস্তা।
ছড়িয়ে থেকো না। (নির্দেশক বাক্যে)ছড়িয়ে না থাকতে বলা হচ্ছে।
ভাবনার জন্যই ভাবনা হয়। (অনুজ্ঞাসূচক বাক্যে)ভাবনার জন্য ভাবো।
সাঁতার জানলে আর ভয় নেই। (আবেগসুচক বাক্যে)সাঁতার জানলে তো আর ভয়ই নেই!
তোমাদের চলার পথ বাধামুক্ত হবে এটাই কাম্য। (প্রার্থনাসূচক বাক্যে)কামনা করি, তোমাদের চলার পথ বাধামুক্ত হোক।
কী সর্বনাশ ঘটিল! (নির্দেশক বাক্যে)বড়ো সর্বনাশ ঘটিল।
যদি আমি তুমি কবিতা লিখিতে অভ্যাস করি, তাহা হইলে কি কালিদাস হইতে পারিব? (যৌগিক বাক্যে)আমি তুমি কবিতা লিখিতে অভ্যাস করিতে পারি, কিন্তু কালিদাস হইতে পারিব কি?
ধর্মজীবনের ব্যাপ্তি সামাজিক জীবনে ছড়িয়ে না পড়লে তার মূল্যই বা কতটুকু? (জটিল বাক্যে)ধর্মজীবনের ব্যাপ্তি যদি সামাজিক জীবনে ছড়িয়ে না পড়ে, তবে তার মূল্যই বা কতটুকু?
তুমি যা বলছ, তা আমার কাছে সোনার পাথরবাটি। (সরল বাক্যে)তোমার কথা আমার কাছে সোনার পাথরবাটি।
যদিও সবাই চলে গেছে, তবুও আমি যাইনি। (যৌগিক বাক্যে)সবাই চলে গেছে, কিন্তু আমি যাইনি।
এদিক-ওদিক না তাকিয়ে নিজের কাজটা করো। (যৌগিক বাক্যে)এদিক-ওদিক তাকিয়ো না, বরং নিজের কাজটা করো।
যদি একথা না শোনো, বিপদে পড়বে। (সরল বাক্যে)একথা না শুনলে বিপদে পড়বে।
তোমার মনে যে এই ছিল, তা ঘুণাক্ষরেও টের পাওয়া যায়নি। (সরল বাক্যে)তোমার মনের এই কথা ঘুণাক্ষরেও টের পাওয়া যায়নি।
আমি সবই জানি, কিন্তু জেনেই বা কী ফল? (জটিল বাক্যে)যদিও আমি সবই জানি, তবু জেনেই বা কী ফল?
আমরাও চমকে উঠেছি বইকি। (না-বাচক)আমরাও অবশ্য না চমকে থাকতে পারিনি।।
রবীন্দ্রনাথের নাম সকলেই জনে। (প্রশ্নবাচক)রবীন্দ্রনাথের নাম কে না জানে?
হাত নাড়িয়ে বুলেট তাড়াই। (যৌগিক বাক্য)হাত নাড়াই এবং বুলেট তাড়াই।

আজকের আর্টিকেলে আমরা বাক্য ও তার শ্রেণিবিভাগ সম্পর্কে আলোচনা করেছি। আমরা দেখেছি যে বাক্য হলো এমন শব্দসমষ্টি যা কোনো সম্পূর্ণ ধারণা বা ভাব প্রকাশ করে। বাক্যগুলোকে তাদের গঠন বা অর্থের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়।

গঠন অনুসারে বাক্যকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়: সরল, জটিল/মিশ্র, এবং যৌগিক। অর্থ অনুসারে বাক্যকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়, যেমন: নির্দেশবাচক, প্রশ্নবোধক, আদেশবাচক, আমন্ত্রণবাচক, ইচ্ছাপ্রকাশক, সম্বোধনবাচক, এবং সন্দেহবাচক।

মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বাক্য ও তার শ্রেণিবিভাগ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই বিষয় সম্পর্কে ভালোভাবে জানা থাকলে পরীক্ষায় ভালো করার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।

এই আর্টিকেলে আমরা বাক্য ও তার শ্রেণিবিভাগ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা দিয়েছি। আরও বিস্তারিত জানার জন্য আপনারা বাংলা ব্যাকরণের বই পড়তে পারেন।

Share via:

মন্তব্য করুন