দশম শ্রেণি – বাংলা – পথের দাবী (গল্প) শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

Gopi

পথের দাবী গল্পের মূল বিষয়বস্তু হল স্বাধীনতা সংগ্রাম। গল্পটিতে দেখানো হয়েছে যে, একজন সাধারণ গ্রাম্য যুবক কীভাবে অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াই করে স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করে।

গল্পটিতে সব্যসাচী মল্লিকের চরিত্রটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সব্যসাচী একজন সাহসী, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক যুবক। সে বিপ্লবের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করে। তার চরিত্রটি আমাদেরকে স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করার প্রেরণা দেয়।

দশম শ্রেণি – বাংলা – পথের দাবী

লেখক পরিচিতি

ভূমিকা – আমার শৈশব ও যৌবন ঘোর দারিদ্র্যের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়েছে। অর্থের অভাবেই আমার শিক্ষালাভের সৌভাগ্য ঘটেনি। পিতার নিকট হতে অস্থির স্বভাব ও গভীর সাহিত্যানুরাগ ব্যতীত আমি উত্তরাধিকারসূত্রে আর কিছুই পাইনি। পিতৃদত্ত প্রথম গুণটি আমাকে ঘরছাড়া করেছিল- আমি অল্প বয়সেই সারা ভারত ঘুরে এলাম। আমার পিতার দ্বিতীয় গুণের ফলে জীবন ভরে শুধু স্বপ্ন দেখেই গেলাম। কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় নিজের সম্পর্কে এ কথা বলেছেন। শরৎচন্দ্র ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দের ১৫ সেপ্টেম্বর হুগলি জেলার দেবানন্দপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম মতিলাল চট্টোপাধ্যায়, মায়ের নাম ভুবনমোহিনী দেবী।

শৈশব ও ছাত্রজীবন – শরৎচন্দ্রের ডাকনাম ছিল ন্যাড়া। দেবানন্দপুর তাঁর জন্মস্থান হলেও আর্থিক টানাটানির কারণে সেখানে তাঁর বেশিদিন থাকা হয়ে ওঠেনি। ভাগলপুরে বসবাসকারী শরৎচন্দ্রের মামারা ছিলেন ধনী গৃহস্থ। বালক শরৎচন্দ্রকে চলে আসতে হয় মামার বাড়িতে। ভাগলপুর থেকে ছাত্রবৃত্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে শরৎচন্দ্র দেবানন্দপুরে আসেন এবং ভরতি হন হুগলি ব্রাঞ্চ স্কুলে। কিন্তু কয়েক বছর পরে অভাবের কারণে শরৎচন্দ্রের বাবা মতিলাল সপরিবারে ভাগলপুরে চলে এলে হুগলি ব্রাঞ্চ স্কুলে শরৎচন্দ্রের লেখাপড়ায় ছেদ ঘটে। ভাগলপুরে এসে তেজনারায়ণ জুবিলি কলেজিয়েট স্কুলে তাঁর ভরতির ব্যবস্থা করা হয় এবং সেখানে থেকে ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি প্রবেশিকা পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে পাস করেন। তারপর এফএ ক্লাসে ভরতি হলেও আর্থিক কারণে তাঁর পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দেই তাঁর প্রথাগত পড়াশোনার সমাপ্তি ঘটে।

কর্মজীবন ও সাহিত্যজীবন – ভাগলপুরে বসবাস করার সময়েই তাঁর সাহিত্যচর্চার সূচনা হয়। সেখানে থাকতেই তিনি বেশ কিছু গল্প- উপন্যাস রচনা করেছিলেন, কিন্তু সেগুলি ছাপা হয়নি। শুধু সাহিত্যচর্চা নয়, ভাগলপুরে থাকাকালীন তিনি গানবাজনা ও অভিনয়ের চর্চাও শুরু করেন। আদমপুর ক্লাবের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তিনি নিয়মিত অংশগ্রহণ করতেন। ভাগলপুরে তাঁর অস্থিরচিত্ততার প্রকাশও লক্ষ করা যায়। তিনি দু-একটি চাকরিতে যোগ দিলেও তাতে মন বসাতে পারেননি। একবার সন্ন্যাসী হয়ে বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণও করেছিলেন। ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে ভাগ্য অন্বেষণের জন্য তিনি রেঙ্গুনে চলে যান। যাওয়ার আগে ‘কুন্তলীন’ গল্প প্রতিযোগিতায় ‘মন্দির’ নামে একটি গল্প, পাঠিয়ে দেন। কিন্তু লেখক হিসেবে তিনি নিজের নামের বদলে তাঁর এক মামা সুরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম দিয়েছিলেন। শরৎচন্দ্রের এই ‘মন্দির’ গল্পটিই সে বছর ‘কুন্ডলীন’ পুরস্কারে সম্মানিত হয়। এটিই শরৎচন্দ্রের লেখা প্রথম মুদ্রিত রচনা। কর্মসূত্রে তিনি রেঙ্গুনে প্রায় দশ বছর ছিলেন। প্রবাসে থাকলেও সেই সময়েই তিনি বাংলা সাহিত্যের পাঠকমহলে কথাশিল্পী হিসেবে বেশ পরিচিত হয়ে ওঠেন। তাঁর লেখা বড়দিদি যখন ভারতী পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় তখন প্রথম সংখ্যাগুলিতে লেখকের নাম ছিল না। অনেকেই সেটাকে রবীন্দ্রনাথের লেখা বলে ভুল করেছিলেন। একে একে ‘বিন্দুর ছেলে’ ‘রামের সুমতি’, ‘পথনির্দেশ’, ‘বিরাজ বৌ’, ‘পণ্ডিতমশাই’, প্রভৃতি প্রকাশের ফলে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কথাশিল্পী হিসেবে অসম্ভব জনপ্রিয়তা লাভ করেন। ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি রেঙ্গুন থেকে পাকাপাকিভাবে দেশে ফিরে আসেন এবং লেখাই হয়ে ওঠে তাঁর জীবনের একমাত্র জীবিকা। তাঁর লেখা কয়েকটি উল্লেখযোগ্য উপন্যাস হল- শ্রীকান্ত (চার পর্ব), চরিত্রহীন, গৃহদাহ, দত্তা, দেবদাস, পল্লীসমাজ, শেষ প্রশ্ন, বিপ্রদাস, দেনাপাওনা, পথের দাবী প্রভৃতি। স্বদেশসাহিত্য, নারীর মূল্য প্রভৃতি তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধগ্রন্থ। ‘অনিলা দেবী’, ‘নিরুপমা দেবী’ ইত্যাদি ছদ্মনামেও শরৎচন্দ্র লেখালেখি করেছেন। ছোটোগল্প অপেক্ষা উপন্যাসের দিকেই শরৎচন্দ্রের ঝোঁক ছিল বেশি। সেজন্য তাঁর লেখা ছোটোগল্পের সংখ্যা বেশ কম। সংখ্যায় কম হলেও তাঁর ছোটোগল্পগুলিও বিশেষ খ্যাতিলাভ করেছে। এ প্রসঙ্গে ‘মহেশ’, ‘অভাগীর স্বর্গ’ এবং ‘একাদশী বৈরাগী’ এই তিনটি গল্পের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয়। তাঁর রাজনৈতিক উপন্যাস পথের দাবী সেকালের বিপ্লবীদের প্রবল অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল। বইটি ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক বাজেয়াপ্ত হয়। শরৎচন্দ্র বাংলার রাজনৈতিক আন্দোলনের সঙ্গেও যুক্ত হয়েছিলেন। তিনি কিছুদিন হাওড়া জেলা কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন। তৎকালীন রাজনীতির প্রতি বিরক্ত হয়ে তিনি সেই পদ ত্যাগ করেন।

পুরস্কার ও সম্মান – শরৎচন্দ্র ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘জগত্তারিণী’ সুবর্ণপদক পান। ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পান ডিলিট উপাধি। তবু এইসব পুরস্কার তাঁর কাছে কিছুই নয়। তাঁর আসল পুরস্কার হাজার হাজার পাঠক-পাঠিকার ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা। আজও তারা তাঁকে হৃদয়ের সিংহাসনে বসিয়ে রেখেছে।

জীবনাবসান – ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দের ১৬ জানুয়ারি এই অমর কথাশিল্পীর মৃত্যু হয়। তাঁর মৃত্যুতে মনে পড়ে রবীন্দ্রনাথের লেখা পঙ্ক্তি-

যাহার অমর স্থান প্রেমের আসনে
ক্ষতি তার ক্ষতি নয় মৃত্যুর শাসনে।
দেশের মৃত্তিকা থেকে নিল যারে হরি
দেশের হৃদয় তাকে রাখিয়াছে ধরি।

উৎস

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা মূল উপন্যাস পথের দাবী-র একটি নির্বাচিত অংশ এখানে পাঠ্যাংশ হিসেবে নেওয়া হয়েছে।

পূর্বসূত্র

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা পথের দাবী উপন্যাসের নির্বাচিত একটি অংশ এখানে পাঠ্য হিসেবে নেওয়া হয়েছে। তাই এর পূর্বসূত্র জানা প্রয়োজন।

পথের দাবী উপন্যাসের শুরুতেই আমরা অপূর্ব এবং তার পরিবারের এই বর্ণনা পাই। অপূর্ব ছিল এক নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ। এমএসসি পাস করার পর অপূর্বর কলেজের প্রিন্সিপাল বোথা কোম্পানিতে তাকে একটা চাকরি জোগাড় করে দেন। আর এই বোথা কোম্পানির নতুন অফিস ছিল রেঙ্গুনে। মায়ের খুব একটা মত না থাকা সত্ত্বেও অপূর্ব রেঙ্গুন যাত্রা করে নিজের চাকরিজীবনের সূচনা করতে। রেঙ্গুনে এসে অপূর্বর নানারকম অভিজ্ঞতা হয়। কখনও ভালো অভিজ্ঞতা, কখনও-বা খারাপ। চাকরি করতে গিয়ে অপূর্বর সঙ্গে এক মারাঠি ব্রাহ্মণের আলাপ হয় যার নাম রামদাস তলওয়ারকর। অপূর্বর তাকে ভালো লাগে। অপূর্ব রেঙ্গুনে যে বাড়িতে থাকত, সেই বাড়ির ওপরের তলায় এক সাহেব তার ক্রিশ্চান মেয়েকে নিয়ে থাকত। সাহেবটি অপূর্বর সঙ্গে যথেষ্ট খারাপ ব্যবহার করলেও, তার ক্রিশ্চান মেয়েটি ছিল অত্যন্ত নম্র ও ভদ্র। এই নতুন শহরে অপূর্বর সঙ্গে একটি খারাপ ঘটনা ঘটে। অপূর্বর অনুপস্থিতিতে তার ঘরে চুরি হয়ে যায়। এই সময় ক্রিশ্চান মেয়েটি তাকে সাহায্য করে। তার জন্যই টাকাকড়ি ছাড়া অপূর্বর বাকি জিনিসপত্র চুরি হওয়ার হাত থেকে বেঁচে যায়। অপূর্ব এই চুরির ব্যাপারে আইনের সাহায্য নিতে চেয়েছিল, কিন্তু ক্রিশ্চান মেয়েটি রাজি ছিল না। রেঙ্গুনের পুলিশকর্তা নিমাইবাবু ছিলেন অপূর্বর বাবার বন্ধু আর অপূর্বর একরকম আত্মীয়। অপূর্ব পুলিশ স্টেশন যাওয়ার সময় রাস্তাতেই নিমাইবাবুর সঙ্গে তার দেখা হয়। নিমাইবাবু সেই সময় জাহাজঘাটে যাচ্ছিলেন। তাদের কাছে খবর ছিল পলিটিকাল সাসপেক্ট সব্যসাচী মল্লিক, যিনি রাজবিদ্রোহী এবং যাঁকে ধরার জন্য পুলিশকর্তারা ব্যস্ত, তিনি নদীপথে জাহাজে রেঙ্গুন আসছেন। অপূর্বকেও তিনি তাঁর সঙ্গে নিয়ে যান। অপূর্ব সব্যসাচীর কথা শোনামাত্র খুবই উত্তেজিত হয় এবং যেতে রাজি হয়। সিঙ্গাপুরে তিন বছর জেল খেটে সব্যসাচী রেঙ্গুনে আসছেন। সব্যসাচী ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং আইন পাস করেছিলেন। সব্যসাচীকে নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ তাদের মধ্যে কথোপকথন চলে। জাহাজ জেটির গায়ে এসে যখন ভিড়ল, তারা সব্যসাচীকে খুঁজে পেলেন না। সবাই ভাবল সব্যসাচী হয়তো পালিয়েছেন। কিন্তু জগদীশবাবু সন্দেহের বশে কয়েকজনকে থানায় নিয়ে গিয়েছিলেন। নিমাইবাবুও থানায় গেলেন আর অপূর্বকেও সঙ্গে করে নিয়ে যেতে চাইলেন। অপূর্ব, নিমাইবাবুর সঙ্গে পুলিশ স্টেশনে গেল। অপূর্ব আর নিমাইবাবু পুলিশ স্টেশনে যাওয়ার পরের ঘটনাই আমাদের এই নির্বাচিত পাঠ্যাংশে বর্ণিত হয়েছে।

বিষয়সংক্ষেপ

শরৎচন্দ্রের লেখা পথের দাবী উপন্যাসের একটি অংশ এই পাঠ্যাংশে নেওয়া হয়েছে। এখানে মূলত দেখা যায় পুলিশ পলিটিকাল সাসপেক্ট সব্যসাচী মল্লিককে ধরার জন্য ব্যস্ত। এইজন্যই বর্মার তেলের খনির যেসব মিস্ত্রিরা চাকরির উদ্দেশ্যে রেঙ্গুনে এসেছিল তাদের সবাইকে পুলিশ স্টেশনে তদন্ত করা হয়েছিল। একটু বেশি সন্দেহের জন্য একজনকে পুলিশ স্টেশনের একটি ঘরে আটকে রাখা হয়েছিল। সে নিজের পরিচয় দেয় গিরীশ মহাপাত্র বলে। এই গিরীশ মহাপাত্রের আচরণ, সাজপোশাক দেখে এবং তার পকেট ও ট্যাঁক থেকে পাওয়া জিনিসপত্র দেখে তারা বোঝে সে ব্যক্তি কখনোই সব্যসাচী মল্লিক হতে পারে না। তাই তাকে ছেড়েও দেওয়া হয়। কিন্তু এই গিরীশ মহাপাত্রই ছিল সব্যসাচী মল্লিক। এই সব্যসাচী মল্লিক নিজের দেশের জন্য লড়াই করছিলেন। পুলিশের চোখে ধূলো দেওয়ার জন্য গিরীশ মহাপাত্র ছদ্মবেশটা তিনি ধারণ করেছিলেন।

অপূর্ব নামের চরিত্রটি যারা নিজের দেশকে পরাধীনতার হাত থেকে মুক্ত করতে চাইছে তাদের সে সমর্থন করে। তাই পুলিশের কর্তা তার আত্মীয় হলেও সে সব্যসাচীকেই নিজের বলে মনে করে। অপূর্ব গিরীশ মহাপাত্রকে পুলিশ স্টেশনে দেখেছিল আর দ্বিতীয়বার দেখেছিল রেঙ্গুন থেকে ভামো নগরের উদ্দেশে যাত্রা করার সময় স্টেশনে। অপূর্ব চিনতে পেরেছিল ওই ব্যক্তিই সব্যসাচী মল্লিক। কিন্তু সে-কথা অপূর্ব পুলিশকে জানায়নি কারণ সে নিজের চোখের সামনে দেখেছে পরাধীন দেশে প্রতিদিন সাহেবদের হাতে দেশের মানুষের অপমান, লাঞ্ছনা। অপূর্ব নিজেও সাহেবদের হাতে বিনা দোষে মার খেয়েছে, লাঞ্ছিত হয়েছে। তাই সে নিজেও চাইত এই পরাধীনতা থেকে ভারতবর্ষ মুক্ত হোক। আমরা দেখি ট্রেনে প্রথম শ্রেণির যাত্রী হয়েও অপূর্বকে নানাভাবে বিরক্ত করা হয়েছে, শুধু সে ভারতীয় বলে। তাই সব্যসাচীর আন্দোলনকে অপূর্ব মনেপ্রাণে সমর্থন করত, সে-ও চাইত পরাধীন দেশ স্বাধীন হোক।

নামকরণ

নামকরণের মাধ্যমেই যে-কোনো সাহিত্যের অন্তর্নিহিত বিষয় বা ভাব তার পাঠকের কাছে ফুটে ওঠে। সাহিত্যকর্মের নামকরণ সাধারণত বিষয়বস্তু, চরিত্র বা ভাব অনুযায়ী আবার কখনও-বা ব্যঞ্জনাধর্মী হয়ে থাকে।

এখানে শরৎচন্দ্রের লেখা পথের দাবী উপন্যাসের একটি নির্বাচিত অংশ আমাদের পাঠ্য হিসেবে নেওয়া হয়েছে। পাঠ্যাংশে আমরা গিরীশ মহাপাত্র চরিত্রটি পাই, যে আসলে একজন বিপ্লবী এবং স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছে। তার আসল নাম সব্যসাচী মল্লিক, যে বিভিন্ন ছদ্মবেশে পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে বেরায়। দেশকে স্বাধীন করাই সব্যসাচীর জীবনের মূল লক্ষ্য। মূল উপন্যাসে সব্যসাচী মল্লিকের একটি সংগঠন ছিল যার নাম পথের দাবী। এই সংগঠনে সব্যসাচী ছাড়া আরও কয়েকজন ছিলেন যারা একত্র হয়ে দেশকে কীভাবে স্বাধীন করা যায় এবং এই স্বাধীনতালাভের জন্য কোন্ পথে আন্দোলন করা যায়, সেইসব বিষয়ে আলোচনা করতেন। এই সংগঠনের মূল লক্ষ্যই ছিল দেশকে পরাধীনতার হাত থেকে মুক্ত করা এবং স্বাধীনতার জন্য একজোট হয়ে আন্দোলন করা। এই সংগঠনের কার্যকলাপকে কেন্দ্র করেই উপন্যাসটি এগিয়েছে। আর এই সংগঠনের মূল কাণ্ডারি ছিলেন সব্যসাচী মল্লিক। সংগঠনটির নাম অনুযায়ী মূল উপন্যাসের নামকরণ করা হয়েছে, আর আমাদের পাঠ্যাংশটি মূল উপন্যাসেরই একটি নির্বাচিত অংশ। মূল উপন্যাসটিতেও স্বাধীনতার ও বিদেশি শাসকের অত্যাচার থেকে মুক্তির দাবি প্রাধান্য পেয়েছে। তাই মূল উপন্যাসের নাম অনুযায়ী আমাদের পাঠ্যাংশের এই নির্বাচিত অংশটির নামও ‘পথের দাবী‘ রাখা হয়েছে। সেদিক থেকে ‘পথের দাবী‘ নামকরণটি সার্থক ও যথাযথ হয়েছে বলা যায়।

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের “পথের দাবী” গল্পটি ব্রিটিশ শাসনামলে লেখা একটি রাজনৈতিক উপন্যাস। গল্পটিতে, আমরা দেখি কীভাবে এক সাধারণ গ্রাম্য যুবক, সব্যসাচী মল্লিক, অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াই করে তার গন্তব্যে পৌঁছায়।

গল্পের শুরুতে, সব্যসাচী একজন অসহায় ও নিপীড়িত যুবক। সে গ্রামে শিক্ষকতা করে, কিন্তু তার বেতন খুব কম। তার পরিবারের আর্থিক অবস্থাও খুব খারাপ। একদিন, সব্যসাচী নিরপরাধভাবে ব্রিটিশ পুলিশের হাতে লাঞ্ছিত হয়। এই ঘটনায় সব্যসাচীর মনে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ঘৃণা জন্ম নেয়।

এরপর, সব্যসাচী বিপ্লবী আন্দোলনে যোগ দেয়। সে বিপ্লবীদের সাথে বিভিন্ন গুপ্ত কার্যকলাপ চালায়। একদিন, সব্যসাচী ও তার সহযোদ্ধারা একটি ব্রিটিশ ট্রেন লুঠ করে। এই ঘটনায় সব্যসাচীকে ব্রিটিশ পুলিশ গ্রেপ্তার করে। কিন্তু সব্যসাচী আদালতে দাঁড়িয়ে বিপ্লবের কথা বলে। তার বক্তৃতা শুনে বিচারকও মুগ্ধ হয়। সব্যসাচীকে দীর্ঘ কারাদণ্ড দেওয়া হয়, কিন্তু সে তার আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয় না।

গল্পের শেষে, সব্যসাচী কারাগার থেকে মুক্তি পায়। সে তার আন্দোলন চালিয়ে যায়। সব্যসাচীর জীবন ও আদর্শ আমাদেরকে শেখায় যে, অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে সাহস ও দৃঢ় প্রত্যয়ের প্রয়োজন।

পথের দাবী” গল্পটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যকর্ম। এটি ব্রিটিশ শাসনামলে ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতির একটি বাস্তব চিত্র তুলে ধরে। গল্পটি আমাদেরকে দেশপ্রেম ও স্বাধীনতার চেতনা জাগ্রত করে।

JOIN US ON WHATSAPP

JOIN US ON TELEGRAM

Please Share This Article

About The Author

Related Posts

মাধ্যমিক - ভূগোল - বারিমন্ডল - জোয়ার ভাটা - রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

মাধ্যমিক – ভূগোল – বারিমন্ডল – জোয়ার ভাটা – রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – About Author and Story

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – About Author and Story

The Passing Away of Bapu

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – Question and Answer

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

Trending Now

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Class 9 – English Reference – Tom Loses a Tooth – Question and Answer

Class 9 – English Reference – The North Ship – Question and Answer

Class 9 – English – His First Flight – Question and Answer

Class 9 – English – A Shipwrecked Sailor – Question and Answer