নবম শ্রেণি বাংলা – চন্দ্রনাথ – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

Souvick

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা নবম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের ষষ্ঠ পাঠের তৃতীয় অধ্যায়, ‘চন্দ্রনাথ’ -এর কিছু ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নোত্তরগুলো নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নবম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষায় এই ধরনের প্রশ্ন নিয়মিত আসে।

নবম শ্রেণি - বাংলা - চন্দ্রনাথ - ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
Contents Show

“সঙ্গে সঙ্গে আরও একজনকে মনে পড়িতেছে” – সেই ‘একজন’ কে? তার পরিচয় দাও।

তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘চন্দ্রনাথ’ গদ্যাংশ থেকে উদ্ধৃত উক্তিটিতে আরও একজন হল হীরু।

পরিচয় – উদ্ধৃতাংশের বক্তা নরেশের সহপাঠী ছিল হীরু। তার দেহ লাবণ্যময়; চোখ আয়ত, কোমল; দৃষ্টি মোহময়। সে ছিল স্কুলের সেক্রেটারির ভাইপো। তাকে তার প্রাইভেট টিউটর অর্থাৎ স্কুলেরই অ্যাসিস্ট্যান্ট টিচার আগে থেকেই পরীক্ষার প্রশ্ন বলে দিয়েছিলেন। এ ছাড়া পরীক্ষার সময় চন্দ্রনাথও তাকে সাহায্য করেছিল।

“আলোটা নিভাইয়া দিলাম।” – বক্তা কে? কেন সে আলো নিভিয়ে দিয়েছিল?

তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘চন্দ্রনাথ’ গদ্যাংশ থেকে উদ্ধৃত উক্তিটির বক্তা কথক নরেশ ওরফে নরু।

কারণ – ঘরের দেয়ালে টাঙানো বড়ো একটা আয়নার সামনে বসে নরু তার স্কুল জীবনের স্মৃতিচারণ করছিল। সহপাঠী হীরু, চন্দ্রনাথ এবং চন্দ্রনাথের দাদা নিশানাথের কথা সে ভাবছিল। ঘরের মধ্যে সে ছিল একা। টেবিলের উপর একটা টেবিল-ল্যাম্প জ্বলছিল। আয়নায় নিজের চিন্তাকুল চোখের প্রতিবিম্ব দেখে সেদিকেই তার মন চলে যাচ্ছিল। ফলে স্মৃতিরোমন্থনে বাধা সৃষ্টি হওয়ার কারণে সে আলো নিভিয়ে দিয়েছিল।

“মুহূর্তে ঘরখানা প্রগাঢ় অন্ধকারে ভরিয়া উঠিল।” – এর পূর্ব মুহূর্তে ঘরের কী অবস্থা ছিল সংক্ষেপে লেখো।

ঘরের অবস্থা – তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ‘চন্দ্রনাথ’ গদ্যাংশে দেখা যায় কথক তথা নরেশের ঘরটি প্রগাঢ় অন্ধকারে ভরে ওঠার আগে সেখানে আলো ছিল। টেবিলের উপর জ্বলছিল টেবিল-ল্যাম্প। নির্জন ঘরে বক্তা একা বসে স্মৃতিচারণ করছিল। স্কুলজীবনের সহপাঠী চন্দ্রনাথ ও হীরুর কথা ভাবছিল নরেশ। চন্দ্রনাথের দাদা নিশানাথের কথাও তার মনে পড়ছিল। দেয়ালে টাঙানো বড়ো আয়নার সামনে বসে বক্তা নিজের চিন্তাকুল চোখের প্রতিবিম্ব দেখতে পাচ্ছিল। ফলে স্মৃতিরোমন্থনে বাধা সৃষ্টি হচ্ছিল। তাই সে আলোটা নিভিয়ে দিল আর মুহূর্তে ঘরটা ভরে উঠল নিবিড় অন্ধকারে।

“সে দেখা দিল।” – তার দৈহিক বর্ণনা দাও।

দৈহিক বর্ণনা – ‘সে’ বলতে এখানে কিশোর চন্দ্রনাথকে বোঝানো হয়েছে। ‘সে’ হল তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘চন্দ্রনাথ’ গদ্যাংশের নামচরিত্র। মোটা নাক, বড়ো বড়ো চোখ, চওড়া কপাল আর কপালের শিরা ত্রিশূলচিহ্নের মতো প্রকট – এইসব নিয়ে গঠিত চন্দ্রনাথের অসাধারণ মুখমণ্ডল। সুস্থ সবল দীর্ঘ দেহ। দৃষ্টি নির্ভীক। মনে সামান্য চঞ্চলতা জাগলেই তার অদ্ভুত মোটা নাকের প্রান্ত স্ফীত হয়ে ওঠে। সামান্য উত্তেজনাতেই কপালের মধ্যস্থলে শিরা ফুলে উঠে ত্রিশূলচিহ্নের আকার নেয়।

“দুর্দান্ত চন্দ্রনাথের আঘাতে সমস্ত স্কুলটা চঞ্চল, বিক্ষুব্ধ হইয়া উঠিয়াছে।” – এই চাঞ্চল্য ও বিক্ষোভের কারণ কী?

কারণ – যে চন্দ্রনাথ স্কুলের কোনো পরীক্ষায় সেকেন্ড হয়নি, তাকে অন্যায়ভাবে এবার সেকেন্ড প্রাইজ দেওয়া হচ্ছে। স্কুলের সেক্রেটারির ভাইপো হওয়ায় সুবাদে এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট টিচারের অসততায় হীরু ফার্স্ট প্রাইজ পাচ্ছে। সে চন্দ্রনাথের খাতা থেকে তিনটে অঙ্ক টুকেছে। হীরুর খাতা পক্ষপাতের সঙ্গে মূল্যায়িত হয়েছে। এই কারণে প্রবল আত্মমর্যাদাবোধের কারণে চন্দ্রনাথ সেকেন্ড প্রাইজ প্রত্যাখ্যান করেছে। আত্মসম্মানবোধে আঘাত লাগায় চন্দ্রনাথ প্রত্যাখ্যান পত্রের মাধ্যমে পক্ষপাতী মূল্যায়ন ব্যবস্থাকে আঘাত করেছে। এই কারণে স্কুলে চাঞ্চল্য ও বিক্ষোভ জেগেছে।

ইউনিভার্সিটির রেজাল্ট সম্পর্কে চন্দ্রনাথের অনুমান কী ছিল?

রেজাল্ট সম্পর্কে চন্দ্রনাথের ধারণা – তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘চন্দ্রনাথ’ গদ্যাংশে ইউনিভার্সিটির রেজাল্ট সম্পর্কে চন্দ্রনাথ আঙ্কিক নিয়মে একটা অনুপাত স্থির করেছিল। সে নিজে সাড়ে-পাঁচশো বা তার বেশি নম্বর পেলে স্কুলে অমিয় আর শ্যামা ছাড়া সবাই পাস করবে। কিন্তু সে পাঁচশো-পঁচিশের কম পেলে গল্প কথক নরু থার্ড ডিভিশনে পাস করবে আর ফেলের সংখ্যা হবে দশ। একের মূল্য কমলে, সকলের মূল্য কমবে। ইউনিভার্সিটির রেজাল্ট সম্পর্কে চন্দ্রনাথের এমনই অনুমান ছিল।

“তাহার কথা শুনিয়া রাগ হইয়াছিল।” – কার, কোন্ কথা শুনে বক্তার রাগ হয়েছিল?

তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘চন্দ্রনাথ’ গদ্যাংশের প্রধান চরিত্র চন্দ্রনাথের কথা শুনে কাহিনিকথক নরেশ ওরফে নরুর রাগ হয়েছিল।

যে কথায় রাগ হয়েছিল – ইউনিভার্সিটি এগজামিনের সামগ্রিক ফলাফলের পরিপ্রেক্ষিতে স্কুলের রেজাল্ট কেমন হবে তা অনুমান করছিল চন্দ্রনাথ। তার হিসাব অনুযায়ী সে সাড়ে-পাঁচশো বা তার বেশি পেলে অমিয় ও শ্যামা ফেল করবে। কিন্তু চন্দ্রনাথ পাঁচশো পচিশের কম নম্বর পেলে দশজন ফেল করবে আর নরু থার্ড ডিভিশনে পাস করবে। এই কথা শুনে বক্তা নরুর রাগ হয়েছিল।

“তুই বোধ হয় রাগ করছিস?” – বক্তা কখন এ কথা বলেছিল? সে নিজের অনুমানের সপক্ষে কী যুক্তি দেখিয়েছিল?

ইউনিভার্সিটি এগজামিনের বক্তা চন্দ্রনাথ পাঁচশো-পঁচিশ নম্বরের কম পেলে সহপাঠী নরেশ থার্ড ডিভিশনে পাস করবে। এমন মন্তব্যে নরেশ যখন রাগ করেছিল তখন তা বুঝতে পেরে চন্দ্রনাথ উদ্ধৃত কথাটি বলেছিল।

অনুমানের সপক্ষে যুক্তি – চন্দ্রনাথ নিজের অনুমানের সপক্ষে অনুপাতের আঙ্কিক নিয়মের যুক্তি দিয়েছিল। একের মূল্য কমলে সকলের কমবে। স্কুলের সেরা ছাত্র চন্দ্রনাথের সামগ্রিক নম্বর কমলে আনুপাতিক হারে অন্য সহপাঠীদেরও নম্বর কমবে। এটাই গণিত – “দিস ইজ ম্যাথ্ম্যাটিকস।”

“আমি এইবার কথাটা পাড়িব ভাবিতেছিলাম, কিন্তু সে হইল না।” – কেন হল না?

কারণ – তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘চন্দ্রনাথ’ গদ্যাংশে চন্দ্রনাথ সেকেন্ড প্রাইজ প্রত্যাখ্যান করেছিল। তাই স্কুলে চাঞ্চল্য ও বিক্ষোভ জেগেছিল। চিন্তিত হেডমাস্টারমশাই নরুকে বলেছিলেন চন্দ্রনাথের মনোভাবটা একবার জেনে আসতে, কিন্তু নরু সেই কথাটা বলার সুযোগ পায় না। কারণ চন্দ্রনাথের দাদা নিশানাথ ভাইকে একটি চিঠি দেখিয়ে এমন আচরণের কারণ জানতে চান। চন্দ্রনাথ পরিষ্কার জানায় সেকেন্ড প্রাইজ নিতে তার আত্মসম্মানে বাধবে। অন্যায়ভাবে তাকে প্রথম স্থানের বদলে দ্বিতীয় স্থান দেওয়া হয়েছে। এই তর্কবিতর্কের মধ্যে চন্দ্রনাথের ক্ষোভ ও দৃঢ়তা দেখে নরুর আর কথাটা পাড়া হয়ে ওঠে না।

“তুমি জান না দাদা।” – বক্তা কে? সে কী না জানার কথা বলেছে?

তারাশঙ্করের রচিত ‘চন্দ্রনাথ’ গদ্যাংশে উদ্ধৃত উক্তিটির বক্তা চন্দ্রনাথ।

সে যা বলেছে – চন্দ্রনাথ কেন সেকেন্ড প্রাইজ নিতে অস্বীকার করেছে তা তার দাদা নিশানাথ জানেন না। সেকেন্ড প্রাইজ গ্রহণ করা চন্দ্রনাথের আত্মসম্মানের পক্ষে হানিকর। কারণ সে কখনও দ্বিতীয় হয়নি। তাকে অন্যায়ভাবে বঞ্চিত করে স্কুলের সেক্রেটারির ভাইপো হীরুকে ফার্স্ট করা হয়েছে। পরীক্ষার আগে হীরুকে প্রশ্ন জানিয়ে দিয়েছেন অ্যাসিস্ট্যান্ট টিচার, খাতাও নির্ভুলভাবে দেখা হয়নি। অঙ্ক পরীক্ষায় হীরু চন্দ্রনাথের খাতা থেকে তিনটে অঙ্ক টুকেছে। এসব ঘটনা নিশানাথের জানা নেই।

“অবিচলিত কণ্ঠস্বরে চন্দ্রনাথ বলিল, বেশ।” – যাঁর উদ্দেশে এই উক্তি তাঁর প্রতিক্রিয়া লেখো।

প্রতিক্রিয়া – তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ‘চন্দ্রনাথ’ গদ্যাংশে স্কুলের পরীক্ষায় সেকেন্ড হওয়ার প্রাইজ চন্দ্রনাথ প্রত্যাখ্যান করলে দাদা নিশানাথের সঙ্গে মতানৈক্য হয়। দাদা কোনো সম্পর্ক না রাখার কথা বলাতেও চন্দ্রনাথ আপত্তি করে না। ভাইয়ের এই দৃঢ়তায় নিশানাথ মাথা নীচু করে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। এমন অবিচলিত উত্তর তিনি আশা করেননি। দাঁতে ঠোঁট কামড়ে আত্মসংবরণ করে তিনি দাঁড়িয়ে থাকেন। তাঁর দৃষ্টিতে বেদনা ও ক্রোধের প্রকাশ ঘটে।

“চন্দ্রনাথের দাদা নতশিরে নীরবে দাঁড়াইয়া রহিলেন।” – তাঁর নতশির ও নীরব থাকার প্রসঙ্গ আলোচনা করো।

প্রসঙ্গ – স্কুলের পরীক্ষায় সেকেন্ড হওয়ার প্রাইজ প্রত্যাখ্যান করে চন্দ্রনাথ চিঠি দিয়েছিল। তার দাদা নিশানাথ এ কথা জানতে পেরে সে চিঠি প্রত্যাহার করতে বলেন এবং এ নিয়ে চন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁর তর্কবিতর্ক হয়। চন্দ্রনাথ সেকেন্ড প্রাইজ প্রত্যাখ্যানের কারণ যুক্তি-সহ ব্যাখ্যা করলেও দাদা তাকে বলেন সেই চিঠি প্রত্যাহার করে হেডমাস্টারমশাইকে চিঠি লিখতে। চন্দ্রনাথ রাজি না হলে তিনি ভাইয়ের সঙ্গে সমস্ত সংস্রব ছিন্ন করার কথা বলেন। তবু চন্দ্রনাথ নিজের সিদ্ধান্তে অবিচল থাকে। ভাইয়ের এমন অপ্রত্যাশিত আচরণে ক্ষোভে ও বেদনায় নিশানাথ নতশির ও নীরব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন।

“আমাকে দেখিবামাত্র বলিলেন,” – কে, কী বললেন? এর পরে বক্তার সঙ্গে আর কী কথা হয়?

যে, যা বললেন – তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘চন্দ্রনাথ’ গদ্যাংশে স্কুলের পরীক্ষায় সেকেন্ড প্রাইজ প্রত্যাখ্যান করেছে চন্দ্রনাথ। তার সিদ্ধান্তে কোনো পরিবর্তন হয়েছে কি না তা নরেশের মাধ্যমে জানতে চেয়েছিলেন মাস্টারমশাই।

যা কথা হয়েছিল – নরেশ ওরফে নরু চন্দ্রনাথের সিদ্ধান্তে অবিচল থাকার কথা জানায়। দাদার সঙ্গে মতান্তর হওয়ায় দু-ভাইয়ের পৃথক হওয়ার খবর শুনে মাস্টারমশাই নিজেই চন্দ্রনাথের কাছে যাবার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন নরু জানায় যে তাতে লাভ নেই, কারণ চন্দ্রনাথ হয়তো মাস্টারমশাইয়ের কথাও মানবে না।

“তাঁহাকে অকপটেই সমস্ত বলিলাম।” – বক্তা কে? সে অকপটে কী বলল?

উদ্ধৃত উক্তির বক্তা তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘চন্দ্রনাথ’ গদ্যাংশের কথক নরেশ।

সে যা বলল – সে হেডমাস্টারমশাইকে অকপটে জানাল যে দ্বিতীয় পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করায় চন্দ্রনাথের সঙ্গে তার দাদার তর্কবিতর্ক হয়। প্রত্যাখ্যানের কারণ ব্যাখ্যা করাতেও তার দাদার ক্ষোভ কমেনি। চন্দ্রনাথ নিজের সিদ্ধান্তে অবিচল থাকায় দাদার সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিন্ন হয়। তার দাদা নিশানাথ ভাইয়ের দৃঢ় মনোভাবে বেদনাহত হন। তবু চন্দ্রনাথ নিজের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেনি।

“না, ছি ছি ছি!” – বক্তা কে? তাঁর এরূপ প্রতিক্রিয়ার কারণ কী?

চন্দ্রনাথ, হীরু, নরেশ যে স্কুলে পড়ত সেই স্কুলের হেডমাস্টারমশাই উদ্ধৃত উক্তিটির বক্তা।

এরূপ প্রতিক্রিয়ার কারণ – স্কুলের সব পরীক্ষায় প্রথম হত যে চন্দ্রনাথ সে যখন শুনল এবার তাকে সেকেন্ড প্রাইজ দেওয়া হবে তখন সে তা নিতে অস্বীকার করল। চন্দ্রনাথের দাদা নিশানাথকে মাস্টারমশাই ভাইয়ের এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন। নিশানাথ অনেক চেষ্টা করেও ভাইয়ের সিদ্ধান্ত বদলাতে পারেননি। উলটে মতান্তরের কারণে দু-ভাইয়ের সম্পর্ক ছিন্ন হয়। নরেশের মাধ্যমে এ কথা জেনে মাস্টারমশাইয়ের অনুশোচনা হয়। তাঁর মনে হয়, চন্দ্রনাথের পুরস্কার প্রত্যাখ্যানের কথা নিশানাথকে না জানালেই ভালো হত।

“সেই মুহূর্তে উঠিয়া আসিলাম” – বক্তার উঠে আসার প্রসঙ্গ নির্দেশ করো।

প্রসঙ্গ – উদ্ধৃত উক্তির বক্তা ‘চন্দ্রনাথ’ গদ্যাংশের কথক নরেশ। বরাবর প্রথম হওয়া চন্দ্রনাথ এবার পরীক্ষায় সেকেন্ড হয়েছে। স্কুলের সেক্রেটারির ভাইপো হীরুকে অন্যায়ভাবে ফার্স্ট করা হয়েছে। চন্দ্রনাথ সেকেন্ড প্রাইজ প্রত্যাখ্যান করেছে। হীরুর কাকা চন্দ্রনাথকে একটা স্পেশাল প্রাইজ দিতে চেয়েছেন। চন্দ্রনাথ ধন্যবাদ জানিয়ে, দুঃখ প্রকাশ করে সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে। হেডমাস্টারমশাইও ডেকে পাঠিয়েছিলেন। তাঁকেও চন্দ্রনাথ পত্র মারফত জানিয়েছে যেতে পারবে না। এইসব কথা স্বয়ং চন্দ্রনাথের মুখ থেকে শুনে বক্তা সেখান থেকে উঠে এলেন।

“সন্ধ্যায় হীরুর বাড়ি গেলাম।” – বক্তা কে? সে কেন হীরুর বাড়ি গিয়েছিল?

উদ্ধৃত উক্তিটির বক্তা তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘চন্দ্রনাথ’ গদ্যাংশের কথক নরেশ।

হীরুর বাড়ি যাওয়ার কারণ – ইউনিভার্সিটি এগজামিনের রেজাল্ট সম্পর্কে চন্দ্রনাথের অনুমান অক্ষরে অক্ষরে মিলে গেছে। সেই পরীক্ষায় ধনীর সন্তান হীরু ভালো ফল করায় স্কলারশিপ পাবে। তাই তাদের বাড়িতে উৎসব। সেই উৎসবে প্রীতিভোজের নিমন্ত্রণ পেয়ে সহপাঠী নরেশ হীরুর বাড়ি গিয়েছিল।

“উৎসবের বিপুল সমারোহ সেখানে।” – কোথায় উৎসবের সমারোহ? সমারোহের পরিচয় দাও।

তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘চন্দ্রনাথ’ গদ্যাংশে চন্দ্রনাথ ও নরেশের সহপাঠী হীরুর বাড়িতে উৎসবের সমারোহ।

সমারোহের পরিচয় – ধনীর সন্তান হীরু ইউনিভার্সিটি এগজামিনে ভালো ফলের জন্য স্কলারশিপ পাবে। তাই তাদের বাড়িতে উৎসব। বাড়ির পাশের আমবাগানটা চিনা লণ্ঠন ও রঙিন কাগজের মালায় সাজানো হয়েছে। হীরুর শৌখিন কাকা নিজের তত্ত্বাবধানে সব সাজিয়েছেন। দুজন ডেপুটি, ডি. এস. পি., সাব-রেজিস্ট্রার, দারোগাসহ গ্রামের ব্রাহ্মণ, কায়স্থ ভদ্রলোকেরা সেই উৎসবে উপস্থিত ছিলেন।

হীরুর বাড়িতে উপস্থিত প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে নরু ও হীরুর কী কথাবার্তা হয়েছিল?

হীরুর বাড়িতে উপস্থিত প্রধানশিক্ষক নরুকে লেখাপড়ার সময় সাহিত্যচর্চা একটু কম করার পরামর্শ দেন। আবার তিনি এও চান নরু যেন সাহিত্যচর্চা না ছাড়ে, কারণ ওটা মহান ব্যাপার। ও জিনিস জনসমক্ষে কুণ্ঠার হলেও নির্জনতায় নিজের কাছে গর্বের বিষয়।

নরু ও হীরুর কথাবার্তা – নরুর লেখা কাগজে বেরিয়েছে-এ কথা হীরুর মুখে শুনে প্রধানশিক্ষক প্রশংসা করে বলেন সেই লেখাটা তাঁকে যেন পড়তে দেওয়া হয়। এরপর তিনি নরুর কাছে চন্দ্রনাথের খবর জানতে চান। নরু বলে যে চন্দ্রনাথ কাউকে কিছু না জানিয়ে চলে গেছে।

“জেনো, Shame in crowd but solitary pride হওয়াই উচিত ও বস্তু।” – বক্তা কার উদ্দেশে এ কথা বলেন? ‘ও বস্তু’টি কী? উক্তির আলোকে বক্তার চরিত্রের কোন্ দিকটি ফুটে ওঠে?

তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘চন্দ্রনাথ’ গদ্যাংশে বক্তা প্রধানশিক্ষক তাঁর ছাত্র নরেশের উদ্দেশে এ কথা বলেন।

‘ও বস্তু’ বলতে সাহিত্যকে নির্দেশ করা হয়েছে।

আলোচ্য উক্তির আলোকে বক্তার সাহিত্যপ্রীতি এবং তাঁর সৃষ্টিশীল ছাত্র নরেশের প্রতি বিশেষ স্নেহপ্রবণতার পরিচয় পাওয়া যায়।

“Shame in crowd but Solitary pride” – উদ্ধৃতিটির প্রকৃত উৎস কী? উদ্ধৃতিটির অর্থ বিশ্লেষণ করো।

উদ্ধৃতির উৎস ও অর্থ – প্রশ্নের প্রদত্ত উদ্ধৃতিটির প্রকৃত উৎস হল অলিভার গোল্ডস্মিথের লেখা ‘দ্য ডেসার্টেড ভিলেজ’ নামের একটি কবিতা। সেই কবিতার পঙক্তিটি একটু আলাদা ‘my shame in crowds, my solitary pride’.

উদ্ধৃতিটির অর্থ হল শখের সাহিত্য – চর্চা জনসমক্ষে কুণ্ঠার বিষয়, কিন্তু তা নিভৃতে নিজের কাছে বেশ গর্বের বস্তু।

‘চন্দ্রনাথ’ গল্পের শেষ চিঠিটি কে, কাকে লিখেছিল? চিঠির বক্তব্য কী ছিল?

তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘চন্দ্রনাথ’ গদ্যাংশের শেষ চিঠিটি চন্দ্রনাথ তার সহপাঠী হীরুকে লিখেছিল।

চিঠির বক্তব্য – চিঠিতে চন্দ্রনাথ জানিয়েছিল, সেদিনই সে গ্রাম ছেড়ে যাচ্ছে বলে হীরুর স্কলারশিপপ্রাপ্তি উপলক্ষ্যে আয়োজিত উৎসবে থাকতে পারছে না। তাকে যেন মার্জনা করা হয়। সে হীরুর সাফল্যে আনন্দিত। কিন্তু স্কলারশিপটা এমন বড়ো ব্যাপার নয়। তাই এই উৎসব করার দরকার ছিল না।

“কিন্তু কল্পনা করিয়াছিলাম,” – বক্তা কে? সে কী কল্পনা করেছিল?

উদ্ধৃত উক্তির বক্তা হলেন তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘চন্দ্রনাথ’ গদ্যাংশের কথক নরেশ।

কথকের কল্পনা – হীরুর স্কলারশিপ পাওয়ার উপলক্ষ্যে আয়োজিত উৎসবের রাতেই চন্দ্রনাথ গ্রাম ছেড়েছিল। নরেশ কল্পনা করেছিল, কিশোর চন্দ্রনাথ কাঁধে লাঠির প্রান্তে পোঁটলা বেঁধে নির্জন পথে একা চলেছে। দু-পাশের মাঠ ধীরে ধীরে পিছনে সরে যাচ্ছে। মাথার উপর নীল আকাশে ছায়াপথ আর পাশে কালপুরুষ নক্ষত্র তারই সঙ্গে সঙ্গে চলেছে।]

“এ ও হয়তো সেই বিচিত্র সমাবেশ।” — মন্তব্যটি ব্যাখ্যা করো।

মন্তব্যের ব্যাখ্যা – চন্দ্রনাথ, হীরু এবং গল্পকথক নরেশ ছিল স্কুলের সহপাঠী এবং একই গ্রামের বাসিন্দা। কিন্তু স্কুলজীবনে তাদের সম্পর্কের রসায়ন ছিল বেশ জটিল। দরিদ্র ঘরের মেধাবী সন্তান চন্দ্রনাথের সঙ্গে ধনীর সন্তান হীরুর সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং কথকের মধ্যস্থতার কাহিনি স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে কথকের মনে হয় যে, একই গ্রামে তাদের তিনজনের উপস্থিতি যেন আগ্নেয়গিরির গর্ভের ভিতরে প্রলয়ংকর দাহ্যবস্তুর বিচিত্র সমাবেশের মতোই।

“দুর্দান্ত চন্দ্রনাথের আঘাতে সমস্ত স্কুলটা চঞ্চল, বিক্ষুব্ধ হইয়া উঠিয়াছে।” — মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।

মন্তব্যের বিশ্লেষণ – চন্দ্রনাথ স্কুলের পরীক্ষায় জীবনে প্রথমবার দ্বিতীয় হওয়ার ঘটনাকে মেনে নিতে পারেনি। পরীক্ষায় প্রথম স্থানাধিকারী হীরুর সাফল্যের পেছনে সে অসাধু চক্রান্তের গন্ধ পায়। প্রশ্ন জেনে নেওয়া এবং মূল্যায়নের ক্ষেত্রে মাস্টারমশায়ের—যিনি আবার তার গৃহশিক্ষকও—সেই সহযোগিতার কথাই এখানে বলে। পাশাপাশি অঙ্ক পরীক্ষায় তারই সাহায্য নেওয়া হীরু কীভাবে প্রথম হলো, সেই প্রশ্নও তোলে চন্দ্রনাথ। এই কারণে সে দ্বিতীয় পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করে স্কুলে চিঠি দেয়, যা নিয়ে গোটা স্কুলে শোরগোল পড়ে যায়।

“এই দান্তিকটা যেন ফেল হয়” — এ কামনাও বোধ হয় করিয়াছিলাম। – বক্তার এই মন্তব্যের কারণ গল্প অবলম্বনে আলোচনা করো।

মন্তব্যের কারণ – চন্দ্রনাথ বাড়িতে বসে নিজের মতো করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার যে সম্ভাব্য ফলাফল তৈরি করে, তা অনুযায়ী সে যদি পরীক্ষায় সাড়ে পাঁচশো বা তার বেশি পায় তবে স্কুলে দুজন ফেল করবে। আর সে নিজে যদি পাঁচশো পঁচিশের নীচে পায়, তাহলে দশ জন ফেল করবে এবং সেক্ষেত্রে কথক অর্থাৎ নরেশ থার্ড ডিভিশনে পাস করবে। এ কথা শুনে কথক অত্যন্ত রেগে যান এবং দাম্ভিক চন্দ্রনাথ যেন ফেল করে, এই কামনা করেন।

“দিস ইজ ম্যাথম্যাটিক্স।” — গল্পাংশটি অবলম্বনে মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।

মন্তব্যের বিশ্লেষণ – তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের চন্দ্রনাথ গল্পাংশে চন্দ্রনাথ তার নিজের পাওয়া সম্ভাব্য নম্বরের অনুপাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় অন্য সকলের নম্বর হিসাব করেছিল। তার তৈরি করা পরীক্ষার ফলাফল নরেশের পছন্দ হয়নি, কারণ সেখানে চন্দ্রনাথ তার থার্ড ডিভিশনে পাস করার ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল। এ কথায় কথক রেগে গেলে চন্দ্রনাথ বলে যে অনুপাতের আঙ্কিক নিয়মে যার মূল্য যতবারই কষে দেখা যাবে, তা একই হবে। এটি ম্যাথম্যাটিক্স বা অঙ্ক বলে চন্দ্রনাথ মন্তব্য করে।

“তাহার কথা শুনিয়া আশ্চর্য হইয়া গেলাম।” —বক্তা কে? কেন তিনি আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলেন?

বক্তা – গল্পকথক নরেশ উল্লিখিত মন্তব্যটির বক্তা।

বক্তার অবাক হওয়ার কারণ – স্কুলের পরীক্ষায় দ্বিতীয় হয়ে চন্দ্রনাথ পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করে। এ বিষয়ে চন্দ্রনাথের বক্তব্য জানার জন্য কথক হেডমাস্টার মশায়ের নির্দেশে চন্দ্রনাথের বাড়িতে যায়। সেখানে সে দেখে যে, আপন মনে চন্দ্রনাথ কাগজে কিছু লিখে চলেছে। জিজ্ঞাসা করায় বলে যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার ফলাফল তৈরি করছে। কে কত নম্বর পাবে সেটাই সে দেখছে। এ কথা শুনেই কথক আশ্চর্য হয়ে যান।

“আমি সেকেন্ড প্রাইজ রিফিউজ করেছি।” — বক্তার এই সিদ্ধান্তের কারণ সংক্ষেপে পরিস্ফুট করো।

বক্তার সিদ্ধান্তের কারণ – স্কুলজীবনে প্রথমবার দ্বিতীয় হওয়া চন্দ্রনাথ কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনি। স্কুলের মাস্টারমশাই ছিলেন প্রথম স্থানাধিকারী হীরুর ব্যক্তিগত শিক্ষক। তিনি প্রশ্ন বলে দিয়েছেন, উত্তর মূল্যায়নেও পক্ষপাত করেছেন। তা ছাড়া, চন্দ্রনাথ নিজে হীরুকে তিনটে অঙ্ক টুকতে দিয়েছে। অর্থাৎ হীরুর সাফল্য তার নিজের নয়। তাই চন্দ্রনাথ নিজেকে দ্বিতীয় ভাবতে পারেনি এবং পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছে।

“তোমার অক্ষমতার অপরাধ!” — বক্তা কে? অক্ষমতার অপরাধ বলতে বক্তা কী বোঝাতে চেয়েছেন?

বক্তা – চন্দ্রনাথ গল্পের উল্লিখিত অংশটির বক্তা চন্দ্রনাথের দাদা নিশানাথ।
অক্ষমতার অপরাধ – চন্দ্রনাথ স্কুলের পরীক্ষায় জীবনে প্রথমবার দ্বিতীয় হয়ে পুরস্কার নিতে অস্বীকার করে। সে এই পুরস্কার গ্রহণকে তার মর্যাদার পথে অবমাননাকর বলে মন্তব্য করে। কিন্তু তার দাদা নিশানাথ ভাইয়ের এই আচরণকে মানতে পারেননি। যে প্রথম হয়েছে তার সাফল্যকে মর্যাদা না দিয়ে চন্দ্রনাথের নিজের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার এই চেষ্টাকে চন্দ্রনাথের দাদার ঔদ্ধত্য বলে মনে হয়েছে। একেই তিনি অক্ষমতার অপরাধ বলেছেন।

“আজ থেকে আমরা পৃথক।” — আমরা কারা? তাঁরা পৃথক হলেন কেন?

আমাদের পরিচয় – উল্লিখিত অংশে “আমরা” বলতে চন্দ্রনাথ এবং তার দাদা নিশানাথকে বোঝানো হয়েছে।
পৃথক হওয়ার কারণ – চন্দ্রনাথ বিদ্যালয়ের পরীক্ষায় তার দ্বিতীয় হওয়া মেনে নিতে পারেনি বলে পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করে প্রধানশিক্ষককে চিঠি দিয়েছিল। নিশানাথ চন্দ্রনাথকে বলেছিল যে, সেই চিঠি প্রত্যাহার করে ক্ষমা চেয়ে প্রধানশিক্ষকমহাশয়কে চিঠি দিতে। কিন্তু একাধিকবার বলা সত্ত্বেও চন্দ্রনাথ নিশানাথের কথা মানতে রাজি হয়নি। এতেই ক্ষুদ্ধ নিশানাথ চন্দ্রনাথের সঙ্গে সমস্ত সংস্রব বিচ্ছিন্ন করার কথা বলেন।

“এমন বুকে দাগ কাটা দৃষ্টি আমার জীবনে আমি খুব কমই দেখিয়াছি।” — কী দেখে বক্তা এই মন্তব্য করেছেন আলোচনা করো।

মন্তব্যের কারণ – স্কুলের পরীক্ষায় বরাবর প্রথম হওয়া চন্দ্রনাথ দ্বিতীয় পুরস্কার গ্রহণে অসম্মতি জানিয়ে স্কুলে চিঠি দেয়। তার দাদা নিশানাথবাবু ভাইকে ক্ষমা প্রার্থনা করে আগের চিঠির বক্তব্য প্রত্যাহার করে নেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু নিজের সিদ্ধান্তে অটল চন্দ্রনাথ সেই নির্দেশ মানে না। এর জন্য দাদার সঙ্গে তার সম্পর্কও ছিন্ন হয়ে যায়। এই ব্যবহারে নির্বিরোধী শান্ত প্রকৃতির মানুষ নিশানাথবাবু নীরবে মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে থাকেন। দুঃখ এবং রাগ মেশানো তাঁর সেই দৃষ্টির কথাই বলেছেন গল্পকথক।

“আমারই অন্যায় হলো।” — বক্তা কে? যে পরিস্থিতিতে তিনি এই মন্তব্য করেছেন তা আলোচনা করো।

বক্তা – উল্লিখিত মন্তব্যটির বক্তা চন্দ্রনাথের স্কুলের হেডমাস্টারমশাই।
যে পরিস্থিতিতে এরূপ মন্তব্য – চন্দ্রনাথ স্কুলের পরীক্ষায় দ্বিতীয় হয় এবং দ্বিতীয় পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করায় হেডমাস্টারমশাই গল্পকথক নরুকে তার বাড়িতে পাঠান। ক্ষমা চেয়ে চিঠি প্রত্যাহারের জন্য দাদা নিশানাথের দেওয়া নির্দেশ অমান্য করে চন্দ্রনাথ। দুই ভাইয়ের মধ্যে সম্পর্কে ছেদ পড়ে। মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন দাদা নিশানাথ। এই খবর কথকের মুখে শুনে প্রধানশিক্ষক বলেন যে, চন্দ্রনাথের দাদাকে এই বিষয়টি জানানোই তাঁর ভুল হয়েছে।

“এই প্রস্তাবই আমার পক্ষে অপমানজনক।” — কার কাছে, কোন্ প্রস্তাব অপমানজনক মনে হয়েছিল? মন্তব্যটি ব্যাখ্যা করো।

উদ্দিষ্ট ব্যক্তি এবং প্রস্তাব – চন্দ্রনাথ এখানে তার প্রতি হওয়া অপমানের উল্লেখ করেছে।
মন্তব্যের ব্যাখ্যা – চন্দ্রনাথ স্কুলের পরীক্ষায় জীবনে প্রথমবার প্রথম না হয়ে দ্বিতীয় হওয়ার পরে বিদ্যালয়ের সম্পাদক এবং প্রথম স্থানাধিকারী হীরুর কাকা হীরুর মাধ্যমে চন্দ্রনাথকে বিশেষ পুরস্কার দেওয়ার কথা বলে পাঠান। কিন্তু চন্দ্রনাথ তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলে পাঠায় যে, তার পক্ষে তা গ্রহণ করা সম্ভব নয়। প্রকৃতপক্ষে, যে হীরুকে যথার্থ প্রথম স্থানাধিকারী বলে চন্দ্রনাথ মনে করে না, তারই কাকা তাকে সান্ত্বনা পুরস্কার দিচ্ছেন—এটা চন্দ্রনাথের পক্ষে অপমানজনক ছিল।

“চন্দ্রনাথের অনুমান অক্ষরে অক্ষরে মিলিয়া গিয়াছে” – কোন্ বিষয়ে চন্দ্রনাথ অনুমান করেছিল? তার অনুমান কী ছিল?

উদ্দিষ্ট বিষয় – বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার ফলাফল বিষয়ে চন্দ্রনাথ আগাম অনুমান করেছিল।
চন্দ্রনাথ কৃত অনুমান – চন্দ্রনাথের অনুমান ছিল যে, পরীক্ষায় সে যদি সাড়ে পাঁচশো বা তার বেশি পায়, তাহলে স্কুলে অমিয় আর শ্যামা ছাড়া সকলে পাস করবে। আর সে যদি পাঁচশো পঁচিশের নীচে পায়, তাহলে দশজন ফেল করবে এবং কথক সেক্ষেত্রে থার্ড ডিভিশনে পাস করবে।

“ছাত্র তাঁহার অধিকারের গণ্ডি পার হইলেই সে আর তুই নয়, তখন সে তুমি হইয়া যায় তাঁহার কাছে।” — কার সম্পর্কে মন্তব্যটি করা হয়েছে? উদ্ধৃতিটির তাৎপর্য আলোচনা করো।

উদ্দিষ্ট ব্যক্তি – তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের চন্দ্রনাথ গল্পাংশে স্কুলের প্রধানশিক্ষক মহাশয় সম্পর্কে কথক আলোচ্য মন্তব্যটি করেছেন।
তাৎপর্য – পরীক্ষার ফল প্রকাশের পরে হীরুর বাড়ির প্রীতিভোজে কথকের সঙ্গে প্রধানশিক্ষকমহাশয়ের দেখা হলে কথককে তিনি “তুমি” সম্বোধন করেন। স্কুলজীবন শেষ করার পরে ছাত্রের ওপরে শিক্ষকের অধিকার আগের মতো থাকে না বলেই প্রধানশিক্ষক এই স্কুল-উত্তীর্ণ ছাত্রের সঙ্গে সম্ভ্রমসূচক দূরত্ব তৈরি করে নিয়েছেন বলে কথক মনে করেন।

“একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া মাস্টারমহাশয় নীরবেই চলিয়া গেলেন” — মাস্টারমহাশয়ের এই দীর্ঘনিশ্বাসের কারণ আলোচনা করো।

দীর্ঘনিশ্বাসের কারণ – তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের চন্দ্রনাথ গল্পাংশে হীরু স্কলারশিপ পাওয়ায় তার বাড়িতে আয়োজিত প্রীতিভোজে আমন্ত্রণ সত্ত্বেও চন্দ্রনাথ সেখানে না গিয়ে সেদিনই দুপুরে গ্রাম ছেড়ে চলে যায়। এ কথা জানতে পেরে হেডমাস্টারমশাই নীরব হয়ে যান, তাঁকে সেসময় চিন্তিত মনে হয়। এরপরই তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে সেখান থেকে চলে যান। মেধাবী এবং সম্ভাবনাময় ছাত্রের এই অজানার পথে চলে যাওয়াই মাস্টারমশায়ের দীর্ঘশ্বাসের কারণ।

“পার্শ্বে কালপুরুষ নক্ষত্র সঙ্গে সঙ্গে চলিয়াছে।” – মন্তব্যটি ব্যাখ্যা করো।

মন্তব্যের ব্যাখ্যা – তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের চন্দ্রনাথ গল্পাংশে হীরুর তুলনায় কম নম্বর পাওয়ায় কাউকে না জানিয়ে চন্দ্রনাথ গ্রাম ছেড়ে চলে যায়। কিন্তু কথক কল্পনা করেন যে, কিশোর চন্দ্রনাথ কাঁধে লাঠির প্রান্তে পোঁটলা বেঁধে সেই রাতে জনহীন পথ ধরে চলেছে—আত্মপ্রতিষ্ঠা ও আত্মমর্যাদার সেই পথে তাকে একাই যেতে হবে। দু-পাশের মাঠ-ঘাট-প্রান্তর পিছনে ফেলে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে সে—তার সঙ্গী হয়েছে আকাশের কালপুরুষ।

“উৎসবের বিপুল সমারোহ সেখানে” — কোথায় কেন উৎসবের আয়োজন হয়েছিল?

উৎসবের স্থান – চন্দ্রনাথ গল্পে উৎসবের আয়োজন হয়েছিল হীরুর বাড়িতে।
উৎসব আয়োজনের কারণ – স্কুলের পরীক্ষায় চন্দ্রনাথকে টপকে প্রথম হওয়ার পরে ইউনিভার্সিটির পরীক্ষাতেও সে চন্দ্রনাথকে পিছনে ফেলে দেয়। শুধু তাই নয়, হীরু স্কলারশিপও পায়। ধনীর সন্তান হওয়ায় হীরুর স্কলারশিপ পাওয়া উপলক্ষ্যে তার বাড়িতে উৎসবের আয়োজন হয়েছিল।

“হীরুকে স্পষ্ট মনে পড়িতেছে” – হীরুর কোন্ রূপের কথা মনে পড়েছে?

হীরুর রূপ – চন্দ্রনাথ গল্পে পরিণত বয়সে কথক স্কলারশিপ পাওয়ার কারণে হীরুর বাড়িতে যে উৎসব হয়েছিল, তার স্মৃতিচারণা করেছেন। এই প্রসঙ্গেই তিনি হীরুর কথা মনে করেছেন। হীরুর ছিল লাবণ্যময় দেহ। তার আয়ত কোমল চোখে ছিল মায়াভরা দৃষ্টি। চন্দ্রনাথকে দেখলে যেমন তাঁর কালপুরুষ নক্ষত্রের কথা মনে পড়ত, ঠিক সেরকমই হীরুকে দেখে মনে হত শুকতারার কথা—সেরকমই প্রদীপ্ত, কিন্তু কোমল ও স্নিগ্ধ।

চন্দ্রনাথ গল্পে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় একজন মেধাবী ও নীতিবান যুবকের সংগ্রামী জীবনচিত্র তুলে ধরেছেন। চন্দ্রনাথ ছিলেন একজন আদর্শবাদী মানুষ। তিনি সবসময় ন্যায় ও সত্যের পথে চলতে চেয়েছেন। কিন্তু বাস্তবতা তাকে কঠোর পরিস্থিতির মুখোমুখি করেছে। দাদার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ায় তিনি সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তার প্রিয় শিক্ষকের মৃত্যুর পর তিনি হতাশ হয়ে পড়েছেন। কিন্তু তিনি থেমে থাকেননি। তিনি নিজের চেষ্টায় জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছেন।


আজকের এই আর্টিকেলে আমরা নবম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের ষষ্ঠ পাঠের তৃতীয় অধ্যায়, ‘চন্দ্রনাথ’ -এর কিছু ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নোত্তরগুলো নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নবম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষায় এই ধরনের প্রশ্ন নিয়মিত আসে। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে এসেছে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকে, তবে টেলিগ্রামে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আমরা সর্বদা প্রস্তুত। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

নবম শ্রেণি - বাংলা - নব নব সৃষ্টি - রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

নবম শ্রেণি বাংলা – নব নব সৃষ্টি – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

নবম শ্রেণি - বাংলা - নব নব সৃষ্টি - ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

নবম শ্রেণি বাংলা – নব নব সৃষ্টি – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

নবম শ্রেণি - বাংলা - নব নব সৃষ্টি - অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

নবম শ্রেণি বাংলা – নব নব সৃষ্টি – অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

নবম শ্রেণি বাংলা – নব নব সৃষ্টি – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

নবম শ্রেণি বাংলা – নব নব সৃষ্টি – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

নবম শ্রেণি বাংলা – নব নব সৃষ্টি – অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

নবম শ্রেণি বাংলা – নব নব সৃষ্টি – বিষয়সংক্ষেপ

ভারতের মৃত্তিকা ক্ষয়ের কারণ ও ফলাফল লেখো।