এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ব্রহ্মপুত্র নদে প্রচুর চড়া সৃষ্টি হয়েছে কেন? ব্রহ্মপুত্র নদ বন্যাপ্রবণ কেন?” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের নদনদী ও হ্রদসমূহ” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

ব্রহ্মপুত্র নদে প্রচুর চড়া সৃষ্টি হয়েছে কেন?
ব্রহ্মপুত্র নদে প্রচুর চড়া সৃষ্টি হওয়ার কারণ –
পূর্ব ভারতের একটি প্রধান নদ হল ব্রহ্মপুত্র। এই নদ তিব্বত মালভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে দীর্ঘ পার্বত্য প্রবাহ অতিক্রম করে অরুণাচল প্রদেশ হয়ে অসম সমভূমির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। দীর্ঘ পার্বত্যপথ অতিক্রম করার জন্য জলের সঙ্গে বয়ে আসা নুড়ি, বালি, পলি প্রভৃতি মধ্য বা সমভূমি প্রবাহে নদীগর্ভে সঞ্চিত হয়। এ ছাড়া ব্রহ্মপুত্র নদের ঢাল মধ্যপ্রবাহে খুব কমে যাওয়ায় বহন ক্ষমতা একদম হ্রাস পায় ফলে নদীগর্ভে সঞ্চয়ের পরিমাণও বৃদ্ধি পায়। এইভাবে দীর্ঘদিন ধরে ক্রমাগত পলি সঞ্চয়ের ফলে নদীর প্রবাহপথে ছোটো বড়ো বহু চড়ার সৃষ্টি হয়েছে।
উদাহরণ – ব্রহ্মপুত্র নদের মধ্যে সৃষ্ট মাজুলি চড়াটি পৃথিবীর বৃহত্তম নদী চড়া।

ব্রহ্মপুত্র নদ বন্যাপ্রবণ কেন?
অসমের প্রধান নদ ব্রহ্মপুত্রে প্রায়ই বন্যার সৃষ্টি হয়। এর প্রধান কারণগুলি হল –
- গতিপথ – মেঘালয় মালভূমি ও হিমালয়ের মধ্যবর্তী সংকীর্ণ উপত্যকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় ব্রহ্মপুত্র নদীটি বেশ বন্যাপ্রবণ।
- অগভীর নদীখাত – ব্রহ্মপুত্র নদ যে অংশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে সেই নদী খাতের ঢাল অত্যন্ত কম। ফলে নদীবাহিত পলি, নুড়ি নদীখাতে সঞ্চিত হয়। বহু বছর ধরে পলি সঞ্চয়ের ফলে ব্রহ্মপুত্র নদের গভীরতা হ্রাস পেয়েছে। ফলে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে।
- বালুচরের উপস্থিতি – ব্রহ্মপুত্র নদের অগভীর প্রশস্ত উপত্যকায় পলি সঞ্চয়ের ফলে প্রচুর বালুচর ও দ্বীপের সৃষ্টি হয়েছে।
- অধিক বৃষ্টিপাত ও বরফগলা জল – ব্রহ্মপুত্র নদের উপনদীগুলি বরফগলা জলে পুষ্ট। ফলে অগভীর নদীখাতে বরফবাহিত ও নদীবাহিত পলি সঞ্চিত হলে ও জল এসে পতিত হলে তা বহন করার ক্ষমতা থাকে না। ফলে বন্যার সৃষ্টি হয়।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
ব্রহ্মপুত্র নদে এত চড়া (বালুচর/দ্বীপ) কেন সৃষ্টি হয়?
ব্রহ্মপুত্র নদ তিব্বত মালভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে পার্বত্য অঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় প্রচুর পলি, বালি ও নুড়ি বয়ে আনে। সমভূমিতে ঢাল কমে যাওয়ায় নদীর গতিবেগ হ্রাস পায়, ফলে এই পলি নদীতলেই জমা হয়। সময়ের সাথে সাথে এই পলি সঞ্চয়ের ফলে নদীর মধ্যে অসংখ্য চড়া বা বালুচর সৃষ্টি হয়েছে।
ব্রহ্মপুত্র নদের সবচেয়ে বিখ্যাত চড়া কোনটি?
ব্রহ্মপুত্র নদের সবচেয়ে বিখ্যাত চড়া হল মাজুলি দ্বীপ, যা বিশ্বের বৃহত্তম নদী দ্বীপ। এটি অসমে অবস্থিত এবং পলি সঞ্চয়ের ফলে গঠিত হয়েছে।
ব্রহ্মপুত্র নদে চড়া বৃদ্ধির ফলে কী সমস্যা দেখা দেয়?
চড়া বৃদ্ধির ফলে —
1. নদীর গভীরতা কমে যায়, যা বন্যার ঝুঁকি বাড়ায়।
2. নৌপরিবহন বাধাগ্রস্ত হয়।
3. নদীর গতিপথ পরিবর্তন হতে পারে, যা কৃষিজমি ও বসতির ক্ষতি করে।
ব্রহ্মপুত্র নদ বন্যাপ্রবণ কেন?
ব্রহ্মপুত্র নদ বন্যাপ্রবণ হওয়ার প্রধান কারণগুলি হলো —
1. অগভীর নদীখাত – পলি সঞ্চয়ের ফলে নদী খাত ভরাট হয়ে গভীরতা কমে যায়।
2. অধিক বৃষ্টিপাত – মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে অসমে ভারী বৃষ্টি হলে নদীতে জলস্তর বেড়ে যায়।
3. বরফগলা জল – হিমালয়ের বরফ গলে নদীতে অতিরিক্ত জল প্রবেশ করে।
4. সংকীর্ণ উপত্যকা – মেঘালয় ও হিমালয়ের মধ্যে সংকীর্ণ পথে প্রবাহিত হওয়ায় জল দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
ব্রহ্মপুত্র নদের চড়াগুলো কি স্থায়ী?
সব চড়া স্থায়ী নয়। কিছু চড়া মৌসুমি ভাবে জলের স্তর বৃদ্ধি-হ্রাসের সাথে পরিবর্তিত হয়, আবার কিছু চড়া দীর্ঘস্থায়ী হয়ে জনবসতি বা কৃষিজমিতে পরিণত হয় (যেমন – মাজুলি দ্বীপ)।
ব্রহ্মপুত্র নদের পলি সঞ্চয় রোধ করার কোনো উপায় আছে কি?
পলি সঞ্চয় পুরোপুরি রোধ করা কঠিন, তবে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে —
1. বনায়ন – নদীতীরে বৃক্ষরোপণ করে মাটি ক্ষয় রোধ করা যায়।
2. চেক ড্যাম – নদীর উপনদীতে চেক ড্যাম নির্মাণ করে পলি আটকানো যায়।
3. ড্রেজিং – নদী খনন করে গভীরতা বাড়ানো যায়।
ব্রহ্মপুত্র নদের চড়াগুলো কি কৃষি কাজের জন্য ব্যবহার করা হয়?
হ্যাঁ, অসম ও বাংলাদেশে ব্রহ্মপুত্রের অনেক চড়ায় (যেমন – চর অঞ্চলে) ধান, পাট, শাকসবজি চাষ করা হয়। তবে বন্যার ঝুঁকির কারণে এটি সবসময় নির্ভরযোগ্য নয়।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ব্রহ্মপুত্র নদে প্রচুর চড়া সৃষ্টি হয়েছে কেন? ব্রহ্মপুত্র নদ বন্যাপ্রবণ কেন?” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের নদনদী ও হ্রদসমূহ” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন