এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ভারতের জলবায়ুর নিয়ন্ত্রকগুলির পরিচয় দাও।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের জলবায়ু” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

ভারতের জলবায়ুর নিয়ন্ত্রকগুলির পরিচয় দাও।
ভারতের জলবায়ুর নিয়ন্ত্রকসমূহ –
ভারত একটি বিশাল আয়তন বিশিষ্ট দেশ। একাধিক কারণে এই বিশাল দেশটির বিভিন্ন অংশে জলবায়ুর পার্থক্য দেখা যায়। যে সমস্ত বিষয়গুলি ভারতের জলবায়ুকে নিয়ন্ত্রণ বা প্রভাবিত করে, সেই সমস্ত বিষয়গুলিকে জলবায়ুর নিয়ন্ত্রক বলে। নিম্নে ভারতের জলবায়ুর নিয়ন্ত্রকগুলি আলোচনা করা হল —
অক্ষাংশগত অবস্থান –
ভারতের অক্ষাংশগত বিস্তার দক্ষিণে 8°4′ থেকে 37°6′ উত্তর অক্ষাংশ। অক্ষাংশগত এই বিশাল পার্থক্যের জন্য ভারতের জলবায়ুতে বৈচিত্র্য এসেছে। দক্ষিণাংশ নিরক্ষরেখার কাছাকাছি হওয়ায় উষ্ণতা কিছুটা বেশি অন্যদিকে দক্ষিণ থেকে উত্তরে ক্রমশ উষ্ণতা হ্রাস পেয়েছে।
হিমালয়ের প্রভাব –
ভারতের উত্তরে হিমালয় পর্বতের অবস্থান বিভিন্ন ভাবে ভারতের জলবায়ুকে প্রভাবিত করে। যেমন –
- দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর বঙ্গোপসাগরীয় শাখা হিমালয়ে বাধা পেয়ে ভারতে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত ঘটায়।
- শীতকালে সাইবেরিয়া থেকে আগত শীতল বায়ু হিমালয়ে বাধা পেয়ে ভারতে প্রবেশ করতে পারে না।
- অধিক উচ্চতার কারণে হিমালয়ের সুউচ্চ অংশে শীতকালে তুষারপাত হয়।
কর্কটক্রান্তি রেখা –
ভারতের মাঝ বরাবর কর্কটক্রান্তি রেখা পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত থাকায় এই রেখা বরাবর সূর্যরশ্মি লম্বভাবে কিরণ দেয় এবং সারাবছর মধ্য ভারতে উষ্ণতা বেশি হয়।
ভূপ্রকৃতি –
ভারতের জলবায়ুর একটি অন্যতম উল্লেখযোগ্য নিয়ন্ত্রক হল ভূপ্রকৃতি। যেমন – দক্ষিণ ভারতে অবস্থিত হওয়া সত্ত্বেও অধিক উচ্চতার কারণে উটি বা অন্যান্য উঁচু অঞ্চলের তাপমাত্রা কম। পশ্চিম উপকূলে পশ্চিমঘাট পর্বতের অবস্থানের জন্য পশ্চিম দিক বৃষ্টিবহুল ও পূর্ব দিক বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চলে পরিণত হয়েছে।
উচ্চতা –
বায়ুমণ্ডলের ট্রপোস্ফিয়ার স্তরে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রতি 1000 মিটার উচ্চতা বৃদ্ধিতে 6.4° সেলসিয়াস হারে উষ্ণতা হ্রাস পায় যা স্বাভাবিক তাপহ্রাস হার (Normal Lapse Rate) নামে পরিচিত। এই কারণেই ভারতের হিমালয় পর্বতের সুউচ্চ অংশে শীতকালে তুষারপাত হয় এবং সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলের উচ্চতা কম থাকায় উষ্ণতা বেশি থাকে।
বায়ুপ্রবাহ –
ভারতের জলবায়ু প্রধানত মৌসুমি বায়ুপ্রবাহ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে উষ্ণ ও আর্দ্র মৌসুমি বায়ু ভারতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় বৃষ্টিপাত হয়, অন্যদিকে শীতকালে উত্তর-পূর্বদিক থেকে জলীয়বাষ্পহীন শীতল ও শুষ্ক বায়ু ভারতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় বৃষ্টিপাত হয় না। এই কারণে ভারতে গ্রীষ্মকাল উষ্ণ-আর্দ্র ও শীতকাল শীতল-শুষ্ক থাকে।
সমুদ্র থেকে দূরত্ব –
সমুদ্রের নিকটবর্তী স্থানগুলিতে দিন ও রাত্রির মধ্যে উষ্ণতার পার্থক্য কম হওয়ায় জলবায়ু তুলনামূলক সমভাবাপন্ন। অন্যদিকে সমুদ্র থেকে স্থলভাগের ভিতরের স্থানগুলিতে দিন ও রাত্রির মধ্যে উষ্ণতার পার্থক্য বেশি হওয়ায় জলবায়ু চরমভাবাপন্ন থাকে। এই কারণেই মুম্বই ও চেন্নাই অপেক্ষা ভোপাল, কানপুর ও রায়পুরের জলবায়ু চরম প্রকৃতির।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
ভারতের জলবায়ুর প্রধান নিয়ন্ত্রকগুলি কী কী?
ভারতের জলবায়ুর প্রধান নিয়ন্ত্রকগুলি হলো —
1. অক্ষাংশগত অবস্থান।
2. হিমালয় পর্বতের প্রভাব।
3. কর্কটক্রান্তি রেখার অবস্থান।
4. ভূপ্রকৃতি (পর্বত, মালভূমি, সমভূমি)।
5. উচ্চতা।
6. বায়ুপ্রবাহ (মৌসুমি বায়ু)।
7. সমুদ্র থেকে দূরত্ব।
অক্ষাংশগত অবস্থান কীভাবে ভারতের জলবায়ুকে প্রভাবিত করে?
ভারত 8°4′ উত্তর থেকে 37°6′ উত্তর অক্ষাংশে অবস্থিত। দক্ষিণে নিরক্ষরেখার কাছাকাছি হওয়ায় উষ্ণতা বেশি, অন্যদিকে উত্তর দিকে ক্রমশ উষ্ণতা কমে যায়।
হিমালয় পর্বত ভারতের জলবায়ুকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করে?
হিমালয়ের প্রভাবে —
1. দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বৃষ্টিপাত ঘটায়।
2. শীতকালে সাইবেরিয়ার শীতল বায়ু ভারতে প্রবেশ করতে পারে না।
3. উচ্চতার কারণে হিমালয়ে তুষারপাত হয়।
কর্কটক্রান্তি রেখা ভারতের জলবায়ুকে কীভাবে প্রভাবিত করে?
কর্কটক্রান্তি রেখা (23.5° উত্তর) ভারতের মধ্যভাগ দিয়ে অতিক্রম করায় এই অঞ্চলে সূর্যরশ্মি লম্বভাবে পড়ে, ফলে মধ্য ভারতে উষ্ণতা বেশি থাকে।
ভূপ্রকৃতি কীভাবে জলবায়ুকে প্রভাবিত করে?
1. পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢালে বেশি বৃষ্টি হয়, পূর্ব ঢাল বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল।
2. উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে (উটি, শিলং) তাপমাত্রা কম।
উচ্চতা জলবায়ুকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করে?
উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে প্রতি 1000 মিটারে 6.4°C তাপমাত্রা কমে (Normal Lapse Rate)। তাই হিমালয়ের উচ্চ অঞ্চলে শীত বেশি, সমুদ্রতটে উষ্ণতা বেশি।
বায়ুপ্রবাহ কীভাবে ভারতের জলবায়ুকে প্রভাবিত করে?
1. গ্রীষ্মকাল – দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বৃষ্টিপাত ঘটায়।
2. শীতকাল – উত্তর-পূর্ব শুষ্ক বায়ু প্রবাহিত হয়, ফলে বৃষ্টিপাত হয় না।
সমুদ্র থেকে দূরত্ব জলবায়ুকে কীভাবে প্রভাবিত করে?
1. উপকূলীয় অঞ্চলে সমুদ্রের প্রভাবে জলবায়ু সমভাবাপন্ন (উষ্ণতা ও আর্দ্রতা বেশি)।
2. অভ্যন্তরীণ অঞ্চলে (রাজস্থান) সমুদ্র থেকে দূরে থাকায় জলবায়ু চরমভাবাপন্ন (গ্রীষ্মে প্রচণ্ড গরম, শীতে ঠান্ডা)।
ভারতের কোন অঞ্চলে বৃষ্টিচ্ছায় প্রভাব দেখা যায়?
পশ্চিমঘাটের পূর্ব ঢাল (তামিলনাড়ু, কর্ণাটক), আরাবল্লীর পশ্চিমে থর মরুভূমি।
মৌসুমি বায়ুর প্রভাব কী?
মৌসুমি বায়ু ভারতে ঋতু পরিবর্তন ও বৃষ্টিপাত নিয়ন্ত্রণ করে। গ্রীষ্মে আর্দ্র বায়ু বৃষ্টি আনে, শীতে শুষ্ক বায়ু প্রবাহিত হয়।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ভারতের জলবায়ুর নিয়ন্ত্রকগুলির পরিচয় দাও।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের জলবায়ু” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন