এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ভারতের জলবায়ুতে প্রধান প্রধান ঋতুসমূহের পরিচয় দাও।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারত” -এর “ভারতের জলবায়ু” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

ভারতের জলবায়ুতে প্রধান প্রধান ঋতুসমূহের পরিচয় দাও।
অথবা, ভারতের জলবায়ুর সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
অথবা, ভারতের জলবায়ুর ঋতুবৈচিত্র্য আলোচনা করো।
ভারতের জলবায়ু –
ভারতের জলবায়ু ক্রান্তীয় মৌসুমি প্রকৃতির হওয়ায় এদেশের জলবায়ুতে নিম্নলিখিত চারটি ঋতুর আলোচনা প্রাসঙ্গিক। ঋতু অনুসারে বৃষ্টিপাত, বায়ুর আর্দ্রতা, বায়ুচাপ, বায়ুপ্রবাহ প্রভৃতির পার্থক্য বা বিভিন্নতা লক্ষণীয়।
গ্রীষ্মকাল (মার্চ-মে) –
- উষ্ণতা – সূর্যের উত্তরায়ণের সঙ্গে সঙ্গে ভারতের উষ্ণতা ক্রমশই বাড়তে থাকে। এই সময় গড় উত্তাপ হয় 30° সেলসিয়াস থেকে 35° সেলসিয়াস। রাজস্থানের থর মরুভূমিতে উষ্ণতা বেড়ে দাঁড়ায় 48° সেলসিয়াস।
- বায়ুচাপ – ভারতের বিভিন্ন স্থানে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্থানীয় নিম্নচাপ বলয়ের সৃষ্টি হলেও, উত্তর-পশ্চিম ভারতে মরুভূমি সন্নিহিত অঞ্চলে প্রবল নিম্নচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হয়।
- বায়ুপ্রবাহ – নিম্নচাপকেন্দ্র দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে বিভিন্ন স্থানীয় বায়ু প্রবাহিত হয়। যেমন – বিহার ও উত্তরপ্রদেশে আঁধি, পশ্চিমবঙ্গে কালবৈশাখী, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, বিহারে ‘লু’, দক্ষিণ ভারতে আম্রবৃষ্টি।
- বৃষ্টিপাত – কালবৈশাখীর প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গে সামান্য বৃষ্টি হয়।
দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমন কাল বা বর্ষাকাল (জুন-সেপ্টেম্বর) –
- আগমনের কারণ – উত্তর-পশ্চিম ভারতে অবস্থিত নিম্নচাপ বলয়ের আকর্ষণে দক্ষিণ দিক থেকে মৌসুমি বায়ুর আগমন ঘটে।
- আগমনকালীন মুহূর্ত – মৌসুমি বায়ুর আগমনকালে মালাবার উপকূলের অদূরে অগভীর সমুদ্রে কুণ্ডলীর আকারে অবস্থান করে এবং হঠাৎ নিম্নচাপের আকর্ষণে ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রবেশ করে বৃষ্টিপাত ঘটায়। একে মৌসুমি বিস্ফোরণ বলে।
- আগমনকালীন শাখা –
- বঙ্গোপসাগরীয় শাখা – জুনের তৃতীয় সপ্তাহে অসম, মণিপুর, মেঘালয়, পশ্চিমবঙ্গ প্রভৃতি রাজ্যে প্রবেশ করে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত ঘটায়। মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জি থেকে যতই পশ্চিমে এই বায়ু অগ্রসর হয় ততই বৃষ্টিপাত কমতে থাকে এবং হিমালয়ের পাদদেশ থেকে দক্ষিণে ক্রমশ বৃষ্টিপাত কমতে থাকে।
- আরবসাগরীয় শাখা – অপর একটি শাখা পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিমঢালে বাধা পেয়ে পশ্চিম উপকূলে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত ঘটায় এবং অন্যটি দক্ষিণ থেকে উত্তরে অগ্রসর হলেও গুজরাট ও রাজস্থানে অধিক উষ্ণতা ও বায়ুর গতিপথে কোনো আড়াআড়ি পর্বতের বাধা না থাকায় বৃষ্টিপাত খুব কম (40 সেমি) হয়।
দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রত্যাবর্তনকাল বা শরৎকাল (অক্টোবর-নভেম্বর) –
- প্রত্যাবর্তনের কারণ – সূর্যের দক্ষিণায়নের কারণে উত্তর ভারতে উচ্চচাপ ও দক্ষিণে ভারত মহাসাগরের ওপর নিম্নচাপকেন্দ্র গড়ে ওঠে। এই নিম্নচাপের আকর্ষণে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু প্রত্যাবর্তন করে।
- প্রত্যাবর্তনকালীন মুহূর্ত – মৌসুমি বায়ু ফিরে যাওয়ার ফলে যে স্বল্প জলীয়বাষ্প থাকে তা করমণ্ডল উপকূলে বৃষ্টিপাত ঘটিয়ে বিদায় নেয়।
- প্রত্যাবর্তনকালীন শাখা –
- বঙ্গোপসাগরীয় শাখা গাঙ্গেয় সমভূমির ওপর দিয়ে প্রথমে পূর্বে এবং পরে বঙ্গোপসাগরের ওপর দিয়ে পশ্চাদপসরণ করে।
- আরবসাগরীয় শাখাটি গুজরাট, রাজস্থান ও দাক্ষিণাত্যের ওপর দিয়ে বিদায় নেয়।
- দুর্বিপাক – পাঞ্জাবের উচ্চচাপযুক্ত অঞ্চল থেকে নির্গত বায়ুর সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর সংঘর্ষে ঘূর্ণাবর্তের সৃষ্টি হয় যা আশ্বিনের ঝড় নামে পরিচিত।
শীতকাল (ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি) –
- উষ্ণতা – শীতকালে দক্ষিণ ভারতের গড় উষ্ণতা 22° সেলসিয়াস থেকে 25° সেলসিয়াস এবং উত্তর ভারতের গড় উষ্ণতা থাকে 12° সেলসিয়াস থেকে 18° সেলসিয়াস। উত্তরে হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চলের উষ্ণতা হিমাঙ্কের নীচে থাকায় তুষারপাত হয়। উত্তরে সাইবেরিয়া থেকে আসা শীতল বায়ুর প্রভাবে উষ্ণতা হ্রাস পায়।
- বায়ুপ্রবাহ – শীতকালে উত্তরদিক থেকে শুষ্ক উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হয়।
- বৃষ্টিপাত – স্থলভাগের ওপর দিয়ে প্রবাহিত এই বায়ুতে জলীয়বাষ্প না থাকায় বৃষ্টিপাত হয় না।
- দুর্বিপাক – ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল থেকে আগত ঘূর্ণবাত ইরানের মধ্য দিয়ে ভারতের উত্তর-পশ্চিমে প্রবেশ করে সামান্য বৃষ্টিপাত ঘটায়। এর প্রভাব পাঞ্জাব, কাশ্মীর, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড পেরিয়ে পশ্চিমবঙ্গেও পড়ে যা পশ্চিমিবার্তা বা পশ্চিমি ঝঞ্ঝা নামে পরিচিত।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
ভারতের জলবায়ু কী ধরনের?
ভারতের জলবায়ু ক্রান্তীয় মৌসুমি প্রকৃতির। এখানে ঋতুভেদে বৃষ্টিপাত, উষ্ণতা, বায়ুচাপ ও বায়ুপ্রবাহে ভিন্নতা দেখা যায়।
ভারতে প্রধান কয়টি ঋতু আছে?
ভারতে প্রধানত চারটি ঋতু রয়েছে –
1. গ্রীষ্মকাল (মার্চ–মে)।
2. বর্ষাকাল (জুন–সেপ্টেম্বর)।
3. শরৎকাল (অক্টোবর–নভেম্বর)।
4. শীতকাল (ডিসেম্বর–ফেব্রুয়ারি)।
গ্রীষ্মকালে ভারতে উষ্ণতা কেমন হয়?
1. গড় উষ্ণতা 30°C–35°C।
2. রাজস্থানের থর মরুভূমিতে উষ্ণতা 48°C পর্যন্ত পৌঁছায়।
3. স্থানীয় বায়ুপ্রবাহ যেমন – লু, কালবৈশাখী, আঁধি দেখা যায়।
বর্ষাকালে মৌসুমি বায়ু কীভাবে ভারতে প্রবেশ করে?
1. আরবসাগরীয় শাখা – পশ্চিমঘাট পর্বতে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে পশ্চিম উপকূলে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়।
2. বঙ্গোপসাগরীয় শাখা – অসম, মেঘালয়, পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করে চেরাপুঞ্জিতে বিশ্বের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত ঘটায়।
শরৎকালে মৌসুমি বায়ুর প্রত্যাবর্তন কখন হয়?
1. অক্টোবর–নভেম্বর মাসে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ফিরে যায়।
2. পশ্চিমি ঝঞ্ঝা (পশ্চিমিবার্তা) উত্তর-পশ্চিম ভারতে বৃষ্টিপাত ঘটায়।
3. করমণ্ডল উপকূলে কিছু বৃষ্টিপাত হয়।
শীতকালে ভারতে বৃষ্টিপাত হয় কেন?
1. উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু শুষ্ক হওয়ায় সাধারণত বৃষ্টিপাত হয় না।
2. পশ্চিমি ঝঞ্ঝা (ভূমধ্যসাগরীয় ঘূর্ণবাত) উত্তর-পশ্চিম ভারতে সামান্য বৃষ্টিপাত ঘটায়।
ভারতে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত কোথায় হয়?
মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জি ও মৌসিনরামে (বিশ্বের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের স্থান)।
মৌসুমি বিস্ফোরণ কী?
জুন মাসে মৌসুমি বায়ু হঠাৎ করে ভারতে প্রবেশ করে প্রবল বৃষ্টিপাত শুরু করাকে মৌসুমি বিস্ফোরণ বলে।
কালবৈশাখী ও লু কী?
1. কালবৈশাখী – পশ্চিমবঙ্গে গ্রীষ্মকালে হওয়া ধুলিঝড় ও বজ্রবৃষ্টি।
2. লু – উত্তর ভারতের (রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ) গ্রীষ্মকালের উত্তপ্ত শুষ্ক বায়ু।
ভারতের জলবায়ুতে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব কেমন?
1. কৃষির জন্য অপরিহার্য (ধান, গম, পাট ইত্যাদি চাষে সাহায্য করে)।
2. অতিবৃষ্টি বা অনাবৃষ্টি হলে খরা বা বন্যা দেখা দেয়।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ভারতের জলবায়ুতে প্রধান প্রধান ঋতুসমূহের পরিচয় দাও।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারত” -এর “ভারতের জলবায়ু” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন