ভারতের মৃত্তিকার ওপর মৌসুমি বায়ুর প্রভাব আলোচনা করো।

Rohit

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ভারতের মৃত্তিকার ওপর মৌসুমি বায়ুর প্রভাব আলোচনা করো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের জলবায়ু” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

ভারতের মৃত্তিকার ওপর মৌসুমি বায়ুর প্রভাব আলোচনা করো-মাধ্যমিক ভূগোল
ভারতের মৃত্তিকার ওপর মৌসুমি বায়ুর প্রভাব আলোচনা করো-মাধ্যমিক ভূগোল
Contents Show

ভারতের মৃত্তিকার ওপর মৌসুমি বায়ুর প্রভাব আলোচনা করো।

ভারতে মৌসুমি বায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্য হল অঞ্চলভেদে বৃষ্টিপাতের অসম বণ্টন, অর্থাৎ কোথাও অধিক বৃষ্টি, কোথাও মাঝারি বৃষ্টি, আবার কোথাও স্বল্প বৃষ্টিপাত সংঘটিত হয়। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ এগ্রিকালচারাল রিসার্চ (Indian Council of Agricultural Research) -এর বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ভারতের মৃত্তিকাকে আটটি ভাগে ভাগ করা হয়। যথা –

  1. পলি মৃত্তিকা।
  2. কৃষ্ণ মৃত্তিকা।
  3. লোহিত মৃত্তিকা।
  4. ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা।
  5. বনজ বা পার্বত্য মৃত্তিকা।
  6. মরু মৃত্তিকা।
  7. উপকূলীয় লবণাক্ত মৃত্তিকা।
  8. পিট বা জৈব মৃত্তিকা।

রাসায়নিক ধর্মানুসারে মৃত্তিকার তিনটি ভাগ রয়েছে। যথা – ক্ষারকীয়, প্রশমিত ও আম্লিক -এই তিনটি ধর্মই বৃষ্টিপাতের পরিমাণের ওপর নির্ভরশীল।

  • মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ভারতের যেসব অঞ্চলে বৃষ্টিপাত বেশি সেখানে বৃষ্টির জলে মাটির ওপরের স্তর থেকে চুনজাতীয় পদার্থ দ্রবীভূত হয়ে নীচে চলে যায় এবং মাটির অম্লত্ব বাড়ে।
  • অন্যদিকে বৃষ্টিপাত কম হলে চুনজাতীয় পদার্থ মাটির ওপরেই রয়ে যায় এবং মৃত্তিকা ক্ষারকীয় প্রকৃতির হয়।
  • বৃষ্টিপাত মাঝারি হলে মাটিতে অম্লত্ব ও ক্ষারকত্ব দুইই সমান থাকে অর্থাৎ মৃত্তিকা প্রশমিত হয়।
  • ভারতের বৃষ্টিবহুল অঞ্চলে ধৌত প্রক্রিয়া বেশি হওয়ায় ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রতিটি খনিজই ভূগর্ভে চলে গেলেও ফেরাস বা লোহা এবং অ্যালুমিনিয়াম ভূপৃষ্ঠের ওপরেই থাকায় মৃত্তিকা আম্লিক প্রকৃতির হয়। ভারতের বৃষ্টিবহুল অঞ্চলের আম্লিক মৃত্তিকাগুলি হল – পডসল, ধূসর বাদামি পডসল, ল্যাটেরাইট, লোহিত মৃত্তিকা প্রভৃতি।
  • মাঝারি থেকে কম বৃষ্টিপাত যুক্ত অঞ্চলে ধৌত প্রক্রিয়া কম হওয়ায় চুন ও লবণকণা ভূপৃষ্ঠের ওপরেই রয়ে যায় এবং চারনোজেম, সিরোজেম, চেস্টনাট, কৃষ্ণমৃত্তিকা প্রভৃতি মৃত্তিকার সৃষ্টি হয়।

ভারতের মোট ভূভাগের 46 শতাংশ পলি মৃত্তিকা দ্বারা সমৃদ্ধ। সিন্ধু-গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র বাহিত পলি সঞ্চিত হয়ে এই মৃত্তিকার সৃষ্টি হয়েছে। উত্তরে হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চল ও উত্তরের সমভূমি অংশে অধিক বৃষ্টিপাত সংঘটিত হওয়ায় উপরিলিখিত তিনটি প্রধান নদী এবং এদের উপনদীগুলি অধিক মাত্রায় ক্ষয়কার্য করে নুড়ি, বালি, পলিকণাকে সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষতর করেছে এবং অধিক বৃষ্টিপাতের কারণে এই অঞ্চলগুলিতে বনজ সম্পদের আধিক্য ঘটেছে। অর্থাৎ ওই সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম পলিকণা, উদ্ভিদের দেহাবশেষের সঙ্গে মিশ্রিত হয়ে ভারতের বিস্তীর্ণ অংশে পলিমৃত্তিকার সৃষ্টি করেছে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

মৌসুমি বায়ু কীভাবে ভারতের মৃত্তিকার প্রকৃতি নির্ধারণ করে?

মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ভারতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ও বণ্টন ভিন্ন হয়, যা মৃত্তিকার রাসায়নিক ও ভৌত গঠনকে প্রভাবিত করে। বেশি বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে মাটি থেকে ক্ষারীয় পদার্থ ধুয়ে গিয়ে মাটি অম্লীয় হয়, আবার কম বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে ক্ষারীয় পদার্থ জমে মাটি ক্ষারীয় প্রকৃতির হয়।

ভারতে কোন মৃত্তিকাগুলো মৌসুমি বৃষ্টিপাতের কারণে অম্লীয় প্রকৃতির হয়?

যেসব অঞ্চলে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে অতিবৃষ্টি হয়, সেখানে নিম্নলিখিত মৃত্তিকাগুলো অম্লীয় প্রকৃতির —
1. পডসল মৃত্তিকা (হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চলে)।
2. ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা (পশ্চিমঘাট পর্বত, পূর্বঘাট, ওড়িশা, ছত্তিশগড়)।
3. লোহিত মৃত্তিকা (তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ)।

মৌসুমি বৃষ্টিপাতের অভাবে ভারতের কোন মৃত্তিকাগুলো ক্ষারীয় হয়?

যেসব অঞ্চলে মৌসুমি বৃষ্টিপাত কম (বা অনিয়মিত), সেখানে মৃত্তিকায় চুন ও লবণ জমে ক্ষারীয় প্রকৃতি দেখা যায়, যেমন —
1. কালো মৃত্তিকা (রেগুর) – মহারাষ্ট্র, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ।
2. মরু মৃত্তিকা – রাজস্থান, হরিয়ানা।
3. সিরোজেম মৃত্তিকা – শুষ্ক অঞ্চলে।

মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ভারতে সবচেয়ে উর্বর মৃত্তিকা কোনটি?

পলি মৃত্তিকা (Alluvial Soil) সবচেয়ে উর্বর, কারণ গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ফলে নদীবাহিত পলি জমে এই মাটি গঠিত হয়। এটি উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে (পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ) দেখা যায়।

ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা কীভাবে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সৃষ্টি হয়?

ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা অতি বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে (যেমন – পশ্চিমঘাট, পূর্ব ভারত) সৃষ্টি হয়। এখানে মৌসুমি বৃষ্টির জলে মাটির উপরের স্তর থেকে সিলিকা ধুয়ে গিয়ে লৌহ ও অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড জমে, ফলে মাটি লালচে ও কঠিন হয়ে যায়।

মৌসুমি বায়ুর অনিয়মিততা কীভাবে মৃত্তিকার ক্ষয় ঘটায়?

মৌসুমি বায়ু অনিয়মিত হলে —
1. অতিবৃষ্টিতে মাটির উপরের উর্বর স্তর ক্ষয়ে যায় (Soil Erosion)।
2. অনাবৃষ্টিতে মরু অঞ্চলের মাটি শুষ্ক হয়ে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পায় (Salinization)।

ভারতের উপকূলীয় অঞ্চলের মৃত্তিকায় মৌসুমি বায়ুর কী প্রভাব?

উপকূলীয় অঞ্চলে (কেরালা, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ) মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ফলে —
1. লবণাক্ত মৃত্তিকা তৈরি হয় (বৃষ্টির জল ধুয়ে গেলে লবণ জমে)।
2. জৈব মৃত্তিকা (Peaty Soil) দেখা যায়, যেমন – কেরালার জলাভূমিতে।

মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ভারতের কৃষিতে মৃত্তিকার ভূমিকা কী?

1. পলি মৃত্তিকা – ধান, গম, আখ চাষের জন্য আদর্শ।
2. কালো মৃত্তিকা – কাপাস, সয়াবিন, সূর্যমুখী চাষ হয়।
3. ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা – চা, কফি, রবার চাষের জন্য ব্যবহৃত হয়।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ভারতের মৃত্তিকার ওপর মৌসুমি বায়ুর প্রভাব আলোচনা করো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের জলবায়ু” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

সক্রিয় সেনসর ও নিষ্ক্রিয় সেনসর বলতে কী বোঝো

সক্রিয় সেনসর ও নিষ্ক্রিয় সেনসর বলতে কী বোঝো? সক্রিয় সেনসর ও নিষ্ক্রিয় সেনসরের মধ্যে পার্থক্য

জিওস্টেশনারি ও সান-সিনক্রোনাস উপগ্রহ বলতে কী বোঝো

জিওস্টেশনারি ও সান-সিনক্রোনাস উপগ্রহ কী? জিওস্টেশনারি ও সান-সিনক্রোনাস উপগ্রহের মধ্যে পার্থক্য

ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র ও উপগ্রহ চিত্র বলতে কী বোঝো

ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র ও উপগ্রহ চিত্র কী? ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র ও উপগ্রহ চিত্রের পার্থক্য

About The Author

Rohit

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

প্রিজমের মধ্য দিয়ে সাদা আলোর বিচ্ছুরণ চিত্রসহ আলোচনা করো।

উত্তল লেন্স কীভাবে সদ্‌, অবশীর্ষ ও খর্বাকার প্রতিবিম্ব গঠন করে তা রেখাচিত্রের সাহায্যে দেখাও।

অবতল লেন্সকে কিছু প্রিজমের সমন্বয়রূপে কল্পনা করে অপসারী ক্রিয়ার ব্যাখ্যা করো।

স্বল্পদৃষ্টিজনিত ত্রুটি কাকে বলে? কীভাবে স্বল্পদৃষ্টিজনিত ত্রুটি দূর করা যায়?

দীর্ঘদৃষ্টিজনিত ত্রুটি কী? এই ত্রুটি কীভাবে দূর করা যায়?