এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “শক্তির ক্রমবর্ধমান চাহিদার ফলে পরিবেশের ওপর প্রভাবগুলি কী কী?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “শক্তির ক্রমবর্ধমান চাহিদার ফলে পরিবেশের ওপর প্রভাবগুলি কী কী?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের দ্বিতীয় অধ্যায় “পরিবেশের জন্য ভাবনা“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

শক্তির ক্রমবর্ধমান চাহিদার ফলে পরিবেশের ওপর প্রভাবগুলি কী কী?
কয়লা, কোক, পেট্রোলিয়াম, প্রাকৃতিক গ্যাস প্রভৃতি জ্বালানির প্রধান উপাদান কার্বন। এই সকল জ্বালানির দহনের সময় বায়ুর অক্সিজেনের সঙ্গে কার্বনের বিক্রিয়ায় কার্বন ডাইঅক্সাইড ও কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস উৎপন্ন হয়।
বিভিন্ন জ্বালানির অসম্পূর্ণ দহনে বিষাক্ত কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস উৎপন্ন হয়। এটি একটি শ্বাসরোধী গ্যাস। শ্বাসকার্যের সময় বায়ুর সঙ্গে কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস ফুসফুসে গেলে এই গ্যাস রক্তে মিশে যায়। এই গ্যাস রক্তের হিমোগ্লোবিনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে কার্বোক্সি হিমোগ্লোবিন নামক একটি যৌগ উৎপন্ন করে। যার ফলে হিমোগ্লোবিনের অক্সিজেন বহন করার ক্ষমতা কমে যায়। বায়ুতে এই গ্যাসের উপস্থিতি নানারকম দৈহিক উপসর্গ সৃষ্টি করে। যেমন – মাথাব্যথা, মাথা ঝিমঝিম, অস্বস্তি প্রভৃতি। বায়ুতে এই গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে গেলে মানুষ অজ্ঞান হয়ে যায়। এমনকি মৃত্যুও ঘটতে পারে।
আবার কয়লাতে অশুদ্ধি হিসেবে সালফার থাকে। বায়ুতে কয়লার দহনে কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাসের সঙ্গে সালফার ডাইঅক্সাইড গ্যাস উৎপন্ন হয়। বায়ুতে SO2 উপস্থিত থাকলে শ্বাসনালিতে অস্বস্তি ও গলায় ব্যথা হয়। হাঁপানি রুগিদের শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়।
জ্বালানির দহনে উৎপন্ন কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস বাতাসে মিশে বায়ুদূষণ ঘটাচ্ছে। বায়ুমন্ডলের CO2 -এর পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বায়ুদূষণ কমাতে বর্তমানে প্রচলিত জ্বালানির (কয়লা, খনিজ তেল ইত্যাদি) ব্যবহার কমিয়ে অপ্রচলিত জ্বালানি ব্যবহার করার চেষ্টা হচ্ছে। এ ছাড়াও জ্বালানির দহনে উৎপন্ন হয় নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইডও। এই NO2, CO2, ও SO2 বৃষ্টি জলের সঙ্গে বিক্রিয়া করে উৎপন্ন হয় যথাক্রমে নাইট্রিক অ্যাসিড, কার্বনিক অ্যাসিড ও সালফিউরাস অ্যাসিড, যা অ্যাসিড বৃষ্টির সৃষ্টি করে।
অ্যাসিড বৃষ্টি উদ্ভিদ, নদী ও পুকুরের জলজ প্রাণী নষ্ট করে। অ্যাসিড বৃষ্টির প্রভাবে তাজমহলের মতো ঐতিহাসিক স্মৃতিসৌধ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
শক্তির চাহিদা বৃদ্ধির ফলে পরিবেশের উপর কী কী প্রভাব পড়ে?
শক্তির ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে জীবাশ্ম জ্বালানি (কয়লা, পেট্রোলিয়াম, প্রাকৃতিক গ্যাস) পোড়ানো হয়, যার ফলে বায়ুদূষণ, গ্লোবাল ওয়ার্মিং, অ্যাসিড বৃষ্টি এবং স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দেয়।
জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে কী কী গ্যাস নির্গত হয়?
জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে নিম্নলিখিত গ্যাসগুলি নির্গত হয় –
1. কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2) → গ্লোবাল ওয়ার্মিং বৃদ্ধি করে।
2. কার্বন মনোক্সাইড (CO2) → শ্বাসরোধী গ্যাস, রক্তের অক্সিজেন বহন ক্ষমতা কমায়।
3. সালফার ডাইঅক্সাইড (SO2) → অ্যাসিড বৃষ্টি ও শ্বাসকষ্ট সৃষ্টি করে।
4. নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড (NO2) → অ্যাসিড বৃষ্টি ও বায়ুদূষণের কারণ।
কার্বন মনোক্সাইড (CO) মানবদেহের জন্য কীভাবে ক্ষতিকর?
CO রক্তের হিমোগ্লোবিনের সাথে বিক্রিয়া করে কার্বোক্সিহিমোগ্লোবিন তৈরি করে, যা অক্সিজেন পরিবহনে বাধা দেয়। এর ফলে মাথাব্যথা, বমি, অজ্ঞানতা এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।
অ্যাসিড বৃষ্টি কী এবং এটি কীভাবে সৃষ্টি হয়?
বায়ুদূষণকারী গ্যাস (SO2, NO2, CO2) বৃষ্টির জলের সাথে বিক্রিয়া করে সালফিউরিক অ্যাসিড (H2SO4), নাইট্রিক অ্যাসিড (HNO3) ও কার্বনিক অ্যাসিড (H2CO3) তৈরি করে, যা অ্যাসিড বৃষ্টি হিসেবে পড়ে।
অ্যাসিড বৃষ্টির প্রভাব কী?
অ্যাসিড বৃষ্টির প্রভাবগুলি হলো –
1. মাটি ও জলের অম্লতা বৃদ্ধি করে উদ্ভিদ ও জলজ প্রাণীর ক্ষতি করে।
2. ইমারত, স্মৃতিসৌধ (যেমন – তাজমহল) ক্ষয় করে।
3. মানুষের ত্বক ও শ্বাসনালীতে সমস্যা সৃষ্টি করে।
বায়ুদূষণ কমানোর উপায় কী?
বায়ুদূষণ কমানোর উপায়গুলি হলো –
1. নবায়নযোগ্য শক্তি (সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, জলবিদ্যুৎ) ব্যবহার বৃদ্ধি।
2. জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানো।
3. যানবাহনে ক্যাটালিটিক কনভার্টার ব্যবহার।
4. বৃক্ষরোপণ ও সবুজ শক্তি প্রকল্পে বিনিয়োগ।
বায়ুমণ্ডলে CO2 বৃদ্ধির ফলে কী হয়?
CO2 বৃদ্ধি গ্রিনহাউস প্রভাব সৃষ্টি করে, যা পৃথিবীর উষ্ণতা বাড়ায় (গ্লোবাল ওয়ার্মিং)। এর ফলে জলবায়ু পরিবর্তন, বরফ গলা, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়।
তাজমহলের ক্ষতি কীভাবে হচ্ছে?
অ্যাসিড বৃষ্টিতে থাকা সালফিউরিক ও নাইট্রিক অ্যাসিড তাজমহলের মার্বেল পাথরকে ক্ষয় করে, ফলে এর সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে।
গ্লোবাল ওয়ার্মিং রোধে কী করা উচিত?
গ্লোবাল ওয়ার্মিং রোধে যা করা উচিত তা হলো –
1. জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানো।
2. নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বাড়ানো।
3. বনায়ন ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার।
সালফার ডাইঅক্সাইড (SO2) কীভাবে স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে?
SO2 শ্বাসনালীতে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করে, হাঁপানি ও শ্বাসকষ্ট বাড়ায়। দীর্ঘমেয়াদে ফুসফুসের রোগ সৃষ্টি করতে পারে।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “শক্তির ক্রমবর্ধমান চাহিদার ফলে পরিবেশের ওপর প্রভাবগুলি কী কী?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “শক্তির ক্রমবর্ধমান চাহিদার ফলে পরিবেশের ওপর প্রভাবগুলি কী কী?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের দ্বিতীয় অধ্যায় “পরিবেশের জন্য ভাবনা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন