মাধ্যমিক ইতিহাস – বিশ শতকের ভারতের কৃষক, শ্রমিক, ও বামপন্থী আন্দোলন – বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

বিশ শতকে ভারতে ব্রিটিশবিরোধী জাতীয় আন্দোলনের পাশাপাশি কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলনও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এই আন্দোলনগুলি ভারতের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

Table of Contents

মাধ্যমিক ইতিহাস – বিশ শতকের ভারতের কৃষক, শ্রমিক, ও বামপন্থী আন্দোলন

সর্বভারতীয় রাজনীতিতে প্রবেশের আগে গান্ধিজি পরিচালিত তিনটি সত্যাগ্রহ কী কী?

সর্বভারতীয় রাজনীতিতে প্রবেশের আগে গান্ধিজির নেতৃত্বে যে তিনটি আঞ্চলিক সত্যাগ্রহ পরিচালিত হয়েছিল, সেগুলি হল —

  • বিহারের চম্পারণ জেলায় নীলচাষীদের স্বার্থরক্ষার জন্য চম্পারণ সত্যাগ্রহ (১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ)
  • সরকারী রাজস্ব বৃদ্ধির প্রতিবাদে গুজরাটের খেদা জেলার কৃষকদের নিয়ে খেদা সত্যগ্রহ (১৯১৮ খ্রিস্টাব্দ) এবং
  • আমেদাবাদ সুতাকল শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষার জন্য আমেদাবাদ সত্যাগ্রহ (১৯১৮ খ্রিস্টাব্দ)।

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে কৃষক শ্রেণি পিছিয়ে ছিল – কেন?

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে কোনো কৃষিভিত্তিক কর্মসূচী ছিল না। তাছাড়া নেতৃত্ববর্গের সঙ্গে জমিদার-মহাজন শোষকদের যোগাযোগ এর ঘটনাকে কৃষক শ্রেণি সুনজরে দেখেনি। স্বভাবতঃই জমিদার ও উচ্চবিত্ত শ্রেণির সাহায্যপুষ্ট এই আন্দোলন থেকে কৃষকশ্রেণি পিছিয়ে ছিল।

তিনকাঠিয়া প্রথা কী?

বিহারের চম্পারণে নীলকর সাহেবরা চাষীদের বিঘা প্রতি (২০ কাঠার মধ্যে তিন কাঠা অর্থাৎ ৩/২০ অংশ) জমিতে নীলচাষ ও নির্দিষ্ট দামে উৎপাদিত নীল নীলকর সাহেবদের কাছে বিক্রি করতে বাধ্য থাকত। এই ব্যবস্থাই তিনকাঠিয়া প্রথা নামে পরিচিত।

চম্পারণ সত্যাগ্রহ কী?

বিহারের চম্পারণ জেলায় নীলচাষীদের স্বার্থরক্ষার জন্য ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে গান্ধিজি যে সত্যাগ্রহ শুরু করেছিলেন, তাকে চম্পারণ সত্যাগ্রহ বলে। এই সত্যাগ্রহের চাপেই সরকার ওই বছরই চম্পারণ কৃষি বিল পাশ করে এবং তিনকাঠিয়া প্রথা তুলে দেয়।

খেদা সত্যাগ্রহ কী?

গুজরাটে খেদা জেলার কৃষকদের নিয়ে সরকারি রাজস্ব বৃদ্ধির (৩০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছিল) প্রতিবাদে গান্ধীজির নেতৃত্বে ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে সত্যাগ্রহ পরিচালিত হয়েছিল, তা খেদা সত্যাগ্রহ নামে পরিচিত। গান্ধীজির প্রভাবে শেষ পর্যন্ত সরকার কৃষকদের সঙ্গে আপোষ-মীমাংসায় রাজী হয়।

আমেদাবাদ সত্যাগ্রহ কী?

আমেদাবাদের সুতাকল শ্রমিকরা মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আবেদন করলেও সরকার নীরব থাকে। ফলে শ্রমিকরা আন্দোলনমুখী হলে গান্ধিজি মধ্যস্থতা করেন, কিন্তু মালিকপক্ষ অনড় থাকে। এই শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে গান্ধিজি অনশন করলে অবশেষে মালিকপক্ষ আপোষ-মীমাংসায় রাজী হয় এবং শ্রমিকদের ৩৫ শতাংশ মজুরি বৃদ্ধি পায়।

চম্পারণ সত্যাগ্রহে কার অনুরোধে এবং কাদের নিয়ে গান্ধীজি চম্পারণে যান?

কৃষক নেতা রাজকুমার শুক্লার অনুরোধে রাজেন্দ্রপ্রসাদ, ব্রজকিশোর প্রসাদ, অধ্যাপক কৃপালনি, মজাহরুল হক, মহাদেব দেশাই প্রমুখদের নিয়ে গান্ধিজি চম্পারণে যান (১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ)।

খেদা সত্যাগ্রহে গান্ধীজির সহযোদ্ধা কারা ছিলেন?

মোহনলাল পান্ডা, বল্লভভাই প্যাটেল, ইন্দুলাল যাজ্ঞিক প্রমুখরা খেদা সত্যাগ্রহে গান্ধিজির সহযোদ্ধা ছিলেন।

অসহযোগ আন্দোলনের সময় ভারতের কোথায় কোথায় কৃষক আন্দোলন সংগঠিত হয়েছিল?

বীরেন্দ্রনাথ শাসমলের নেতৃত্বে মেদিনীপুর জেলা, বাবা রামচন্দ্রের নেতৃত্বে প্রতাপগড় ও রায়বেরিলি, মাদারি পাশির নেতৃত্বে উত্তর অযোধ্যায় একা বা একতা আন্দোলন, স্বামী বিদ্যানন্দের নেতৃত্বে বিহারের দ্বারভাঙ্গা, মালাবার অঞ্চলের মোপলা বিদ্রোহ ছিল অসহযোগ আন্দোলনের সময় উল্লেখযোগ্য কৃষক আন্দোলন।

যুক্তপ্রদেশ কিষাণ সভা (১৯১৮ খ্রিস্টাব্দ) কাদের উদ্যোগে স্থাপিত হয়?

মদনমোহন মালব্য, ট্যান্ডন, গোরীশঙ্কর মিশ্র, ইন্দ্রনারায়ণ দ্বিবেদী প্রমুখের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে যুক্তপ্রদেশ কিষাণসভা স্থাপিত হয়।

মোপলা বিদ্রোহ কী?

অসহযোগ আন্দোলন চলাকালীন মালাবার অঞ্চলের মুসলমান কৃষক সম্প্রদায় মোপলারা বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। স্বরাজের স্বপক্ষে নেতাদের প্রচারের ফলে এই অশিক্ষিত মোপলাদের ধারণা হয় যে, দেশে স্বরাজ এসে গেছে। তারা নিজেদের অঞ্চলে জমিদারদের অধিকাংশই ছিলেন হিন্দু উচ্ছেদ করতে থাকায় মোপলা বিদ্রোহ সাম্প্রদায়িক রূপ ধারণ করে। সাময়িকভাবে হলেও মোপলা অঞ্চল থেকে ব্রিটিশ শাসন উচ্ছেদ হয়।

একা বা একতা আন্দোলন কী?

১৯২১-২২ খ্রিস্টাব্দে উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেস ও খিলাফতি নেতাদের উদ্যোগে এবং মাদারি পাশির নেতৃত্বে হরদৌ, সীতাপুর, বারাচ, বাররাকী জেলায় যে কৃষক আন্দোলন শুরু হয়। এই আন্দোলন একা বা একতা আন্দোলন নামে খ্যাত।

দামোদর ক্যানেল কর আন্দোলন কী?

দামোদর ক্যানেল কর বাড়ানোর কারণে কংগ্রেস নেতা আব্দুল সাত্তার ও কমিউনিস্ট নেতা বঙ্কিম মুখার্জির নেতৃত্বে বর্ধমান জেলায় কৃষকশ্রেণি দামোদর ক্যানেল কর আন্দোলন শুরু করে।

পত্তনিদার ও কুনবি কাদের বলা হয়?

গুজরাটের মধ্যবিত্ত চাষীদের বলা হত পত্তনিদার এবং নিম্নবর্গীয় দরিদ্র কৃষকদের কুনবি বলা হত।

প্রাক্ স্বাধীনতা পর্বের কৃষক আন্দোলনকে জাতীয় আন্দোলনের অনুষঙ্গ বলা হয় — কেন?

কৃষক নেতারা জানতেন যে, জাতীয় আন্দোলনের বাইরে থেকে কৃষক আন্দোলনকে সফল করা যাবে না। তাই অধিকাংশ অঞ্চলে দেখা যেত কৃষক কর্মীরা একই সঙ্গে কিষাণসভা ও জাতীয় কংগ্রেসের সদস্যপদ গ্রহণ করত। তাই কৃষক সমাজও জাতীয় আন্দোলনের শরিক হিসেবে কৃষি আন্দোলন চালাত। এই কারণে প্রাক্ স্বাধীনতা পর্বের কৃষক আন্দোলনকে জাতীয় আন্দোলনের অনুষঙ্গ বলা হয়।

আইন অমান্য আন্দোলনের সময় ভারতের কোথায় কোথায় কৃষক আন্দোলন সংগঠিত
হয়েছিল?

গুজরাটের খেদা ও সুরাট জেলার কৃষকদের খাজনা বন্ধ আন্দোলন, পাঞ্জাবের কিষাণসভার আন্দোলন, অন্ধ্রে অরণ্য সত্যাগ্রহ, কৃয়া জেলায় খাজনা বন্ধ আন্দোলন, কেরালায় কিষাণ সত্যাগ্রহ, বাংলার কিশোরগঞ্জে কৃষক আন্দোলন ছিল আইন অমান্য আন্দোলন চলাকালীন উল্লেখযোগ্য কৃষক আন্দোলন।

কিষাণ আন্দোলনে বামপন্থী প্রভাব বাড়ার কারণ কী?

কিষাণ আন্দোলনে বামপন্থী প্রভাব বাড়ার কারণগুলি হল –

  • কিষাণ আন্দোলনের প্রতি জাতীয় কংগ্রেসের উদাসীনতা
  • রুশ বিপ্লবে শ্রমিক-কৃষকদের সাফল্য
  • কংগ্রেসের আপোষমূলক নীতি
  • অধিকাংশ ক্ষেত্রে জমিদার-জোতদার ঘেঁষা নীতি
  • উপযুক্ত কৃষক-কর্মসূচী গ্রহণে অনীহা।

বারদৌলি সত্যাগ্রহ কী?

গুজরাটের সুরাট জেলার বারদৌলি অঞ্চলে সরকার ৩০ শতাংশ রাজস্ব বৃদ্ধি করে। এর প্রতিবাদে এখানকার হিন্দু-মুসলমান কৃষকেরা বল্লভ ভাই প্যাটেলের নেতৃত্বে ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে খাজনা হ্রাসের দাবিতে যে সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু করে, তা বারদৌলি সত্যাগ্রহ নামে পরিচিত। আন্দোলনের চাপে সরকার খাজনা হ্রাস করতে বাধ্য হয়েছিল।

বারদৌলি সত্যাগ্রহে অংশগ্রহণকারী মহিলাদের নাম লেখো।

মিঠুবেন প্যাটেল, মনিবেন প্যাটেল, ভক্তি বাঈ, শারদা মেহতা প্রমুখরা ছিলেন বারদৌলি সত্যাগ্রহে অংশগ্রহণকারী উল্লেখযোগ্য মহিলা নেত্রী।

সর্বভারতীয় কিষাণসভা গঠনে (১৯৩৬ খ্রি:) কাদের নাম জড়িয়ে গেছে?

এন. জি. রঙ্গ, স্বামী সহজানন্দ, ই. এম. এস. নামুদ্রিপাদ, ইন্দুলাল যাজ্ঞিক প্রমুখ কিষাণ নেতার নাম সর্ব ভারতীয় কিষাণ সভা গঠনে জড়িয়ে আছে।

প্রাক্ স্বাধীনতা পর্বে কয়েকজন প্রথম সারির সমাজতান্ত্রিক কিষাণ নেতার নাম লেখো।

রাম মনোহর লোহিয়া, মোহন সিং, জয়প্রকাশ নারায়ণ, ই. এম. এস. নাম্বুদ্রিপাদ, বঙ্কিম মুখার্জি প্রমুখরা ছিলেন প্রাক্ স্বাধীনতা পর্বের কয়েকজন উল্লেখযোগ্য সমাজতান্ত্রিক কিষাণ নেতা।

সর্বভারতীয় কিষাণ সভার ইস্তাহারে কী বলা হয়েছে?

সর্বভারতীয় কিষাণসভার ইস্তাহারে যা বলা হয়েছিল –

  • জমিদারি প্রথার বিলোপ
  • বেগার প্রথা বন্ধ
  • ভূমি রাজস্বের ছাড়
  • খেতমজুরদের মজুরি বৃদ্ধি
  • কৃষকদের ঋণ পরিশোধনের জন্য বিলম্বিত ব্যবস্থা
  • সামন্তকরের বিলোপ এবং
  • জমিতে কৃষকদের স্বত্বপ্রদান ইত্যাদি।

বখস্ত আন্দোলন কী?

বখস্ত জমি বলতে খাজনা অনাদায়ে যে জমি জমিদাররা বাজেয়াপ্ত করে। এই জমি থেকে কৃষকদের উচ্ছেদ করা হয়। বিহারের এই বখস্ত জমি থেকে কৃষকদের উচ্ছেদের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন সংগঠিত হয় (১৯৩০ খ্রি: – ১৯৩৭ খ্রি:) তা বখস্ত আন্দোলন নামে খ্যাত। বামপন্থীরা এই আন্দোলনে নেতৃত্বে দিয়েছিল।

স্বাধীনতালাভের প্রাক্ মুহূর্তে সংগঠিত কয়েকটি কৃষক আন্দোলনের নাম লেখো।

স্বাধীনতালাভের প্রাক মুহূর্তে সংগঠিত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কৃষক আন্দোলন হল –

  • তেভাগা আন্দোলন
  • পুন্নাপ্রা-ভায়লার আন্দোলন
  • তেলেঙ্গানা আন্দোলন
  • মহারাষ্ট্রের দহনু ও উমাবরগাঁ আন্দোলন।

তেভাগা আন্দোলন কী?

ভারতের স্বাধীনতালাভের প্রাক্কালে (১৯৪৬-৪৭ খ্রিস্টাব্দে) বঙ্গীয় কৃষক সভার উদ্যোগে এবং কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে বাংলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে যে ভাগচাষী আন্দোলন শুরু হয় তা তেভাগা আন্দোলন নামে খ্যাত। এই আন্দোলনে দিনাজপুরের আদিবাসী সম্প্রদায় অগ্রণী ভূমিকা নেয়।

তেভাগা আন্দোলনের মূল কথা কী ছিল?

তেভাগা আন্দোলনের মূল কথা ছিল বর্গাদারগণ যে জমিতে চাষ করে সেই জমিতে তাদের স্বত্ব প্রদান করা, যতদিন না তা সম্ভব ততদিন উৎপন্ন ফসলের ২/৩ ভাগ (দুই তৃতীয়াংশ) তাদের দিতে হবে। সমগ্র বাংলার প্রায় ৬০ লক্ষ কৃষক এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিল।

তেভাগা আন্দোলনের কয়েকজন নেতানেত্রীর নাম লেখো।

গুরুদাস তালুকদার, অবনী রায়, সুনীল সেন, গজেন মালি, সমর গাঙ্গুলি, জলপাইগুড়ির রাজবংশী মহিলা বুড়িমা, চারু মজুমদার, মগ্নমদ দানেশ প্রমুখ ছিলেন তেভাগা আন্দোলনের উল্লেখযোগ্য নেতা-নেত্রী।

তেলেঙ্গানা আন্দোলন কেন সংগঠিত হয়েছিল।

ভারতের অন্যতম দেশীয় রাজ্য হায়দরাবাদের তেলেঙ্গানা গ্রামে কমিউনিস্ট পরিচালিত এক দীর্ঘস্থায়ী সশস্ত্র বিদ্রোহ তেলেঙ্গানা বিদ্রোহ নামে খ্যাত। নিজামের স্বৈরাচারী শাসন ও সামন্ততান্ত্রিক শোষণের বিরুদ্ধে প্রায় তিন হাজার গ্রামের কৃষক সম্প্রদায় এই আন্দোলনে শামিল হয়েছিল।

তেলেঙ্গানা আন্দোলনের কয়েকজন নেতার নাম লেখো।

পি. সি. সুন্দরাইয়া, রবিনারায়ণ রেড্ডি, ইয়েলো রেড্ডি প্রমুখ ছিলেন তেলেঙ্গানা আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী উল্লেখযোগ্য নেতা।

বেট্টি প্রথা কী?

হায়দরাবাদের তেলেঙ্গানা অঞ্চলে কৃষকদের বাধ্যতামূলক বেগার শ্রম প্রথাকে বেট্টি প্রথা বলে। তবে হরিজনদের ওপর এই প্রথা বলবৎ ছিল।

হারি প্রথা কী?

জমিদারের জমিতে চাষীকে বিনা পারিশ্রমিকে নিজের গরু-লাঙল দ্বারা আবাদ করে দেওয়াকে হারিপ্রথা বলা হত। এই প্রথা উত্তরপ্রদেশে চালু ছিল।

যজমানি প্রথা কি?

নিম্নবর্গের চাষীদের বড় জমিদার বা উচ্চবর্ণের তালুকদারদের বাজার অপেক্ষা কমদামে ঘি, চামড়া, কাঠ, কাপড় সরবরাহ করার প্রথাকে যজমানি প্রথা বলে। এই প্রথা উত্তরপ্রদেশে বহুল প্রচলিত ছিল।

হাতিওয়ালা ও মোটরওয়ালা কী?

উত্তরপ্রদেশের কৃষক অসন্তোষের একটি কারণ ছিল হাতিওয়ালা ও মোটরওয়ালা প্রথা। তালুকদাররা হাতি বা মোটর গাড়িতে চড়লে তার খরচ প্রজাদের বহন করতে হত, যা হাতিওয়ালা ও মোটরওয়ালা নামে খ্যাত।

পুন্নাপ্রা-ভায়লার গণসংগ্রামের দু’জন কমিউনিস্ট নেতার নাম লেখো।

পুন্নাপ্রা-ভায়লার গণসংগ্রামের (১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দ) দুজন কমিউনিস্ট নেতা হলেন – কে. সি. জর্জ এবং টি. ভি. টমাস ৷

শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসে স্বদেশি আন্দোলনকে দিক চিহ্ন বলা হয় — কেন?

১৯০৪-০৫ খ্রিস্টাব্দের বঙ্গভঙ্গ বিরোধী বা স্বদেশী আন্দোলন ছিল শ্রমিক আন্দোলনের প্রকৃত সূচনাকাল। অর্থনৈতিক দাবিদাওয়ার পাশাপাশি শ্রমিক শ্রেণি বঙ্গভঙ্গ বিরোধী জাতীয় আন্দোলনে শামিল হয়। এই আন্দোলনের মধ্য দিয়েই শ্রমিকদের মধ্যে জাতীয় চেতনার বিকাশ ঘটে। তাই ঐতিহাসিক বিপানচন্দ্র স্বদেশী আন্দোলনকে শ্রমিক আন্দোলনের দিকচিহ্ন বলেছেন।

স্বদেশী আন্দোলনের যুগে কয়েকজন নেতার নাম লেখো — যাঁরা শ্রমিক সংগঠনে এগিয়ে এসেছিলেন?

স্বদেশী আন্দোলনের যুগে কয়েকজন শ্রমিক নেতা হলেন — প্রভাতকুসুম রায়চৌধুরী, অপূর্ব কুমার ঘোষ, অশ্বিনীকুমার ব্যানার্জি ও প্রেমতোষ বসু। এঁরা সকলেই ব্যারিস্টার ছিলেন।

শ্রমিক শ্রেণি স্বদেশী আন্দোলনকে সমর্থন করেছিল কেন?

শ্রমিকদের দীর্ঘদিনের অর্থনৈতিক ও সামাজিক দাবিসমূহের যথার্থতা সম্পর্কে জাতীয়তাবাদী নেতারা মান্যতা দেওয়ায় জাতীয় আন্দোলনের প্রতি শ্রমিক শ্রেণির আস্থা বাড়ে। তাই শ্রমিক শ্রেণি হরতাল, শিল্প ধর্মঘট দ্বারা স্বদেশি আন্দোলনে সমর্থন জানায়।

স্বদেশী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ভারতের কোথায় কোথায় শ্রমিক ধর্মঘট শুরু হয়?

স্বদেশী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বাংলায় কলকারখানায় ধর্মঘট, তামিলনাড়ুতে সরকারী কারখানায় ধর্মঘট, জামালপুর রেল কারখানায় ধর্মঘট, মাদ্রাজ, আমেদাবাদ, বোম্বাই, কানপুর প্রভৃতি স্থানে শ্রমিক ধর্মঘট শুরু হয়।

মাদ্রাজ লেবার ইউনিয়নের (১৯১৮ খ্রিস্টাব্দ) কর্ণধার কারা ছিলেন?

চেলভাপতি চেট্টি এবং বি. পি. ওয়াদিয়া ছিলেন মাদ্রাজ লেবার ইউনিয়নের প্রধান কর্ণধার।

ভারতে কার নেতৃত্বে এবং কবে প্রথম মে দিবস পরিণত হয়?

১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে সিঙ্গা ভেলু চেট্টিয়ার নেতৃত্বে মাদ্রাজের সমুদ্রতীরে ভারতে প্রথম মে দিবস পালন করা হয়।

কবে এবং কার সভাপতিত্বে AITUC (All India Trade Union Congress) গঠিত হয়?

১৯২০ খ্রিস্টাব্দের ৩০ অক্টোবর, লালা লাজপত রায়ের সভাপতিত্বে বোম্বাই – এ AITUC গঠিত হয়।

সর্বভারতীয় ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে (১৯২০ খ্রিস্টাব্দে) কারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল?

বি. পি. ওয়াদিয়া, এন. এম. যোশী, বালগঙ্গাধর তিলক, লালা লাজপত রায়, দেওয়ান চমন লাল প্রমুখ নেতৃত্ববৃন্দ সবভারতীয় ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন।

শ্রমিক শ্রেণি আইন অমান্য আন্দোলনের প্রতি বিমুখ ছিল — কেন?

আইন অমান্য আন্দোলনের প্রতি শ্রমিক শ্রেণির বিমুখতার কারণগুলি —

  • জাতীয় কংগ্রেসের প্রতি শ্রমিক শ্রেণির অবিশ্বাসের মনোভাব
  • সরকারের কমিউনিস্ট পীড়ন নীতি
  • শ্রমিক সংগঠনের ভাঙ্গন
  • জাতীয় কংগ্রেসের শ্রমিক স্বার্থ নীতি রূপায়ণে অদূরদর্শিতা
  • সর্বোপরি, ষষ্ঠ কমিন্টার্নের নির্দেশ।

রাশিয়ার তাসখন্দে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠার (১২৯০ খ্রি:) সঙ্গে কাদের নাম জড়িয়ে আছে?

এম. এন. রায়, অবনী মুখার্জি, নলিনীগুপ্ত, মহেন্দ্রপ্রতাপ, ধীরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত, মহম্মদ আলি, মহম্মদ সাফিক প্রমুখ কমিউনিস্ট নেতার নাম রাশিয়ার তাসখন্দে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠার (১৯২০ খ্রি:) সঙ্গে জড়িয়ে আছে।

কবে, কার সভাপতিত্বে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (ভারতে) প্রতিষ্ঠিত হয়?

১৯২৫ খ্রিস্টাব্দের ২৬ ডিসেম্বর কানপুরে মাদ্রাজের প্রবীণ কমিউনিস্ট নেতা সিঙ্গারাভেলু চেট্টিয়ার সভাপতিত্বে ভারতে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়।

কমিউনিস্টদের দমন করার জন্য তাদের কোন কোন্ মামলায় ফাঁসানো হয়েছিল?

কমিউনিস্টদের দমন করার জন্য তাদের তিনটি ষড়যন্ত্র মামলায় ফাঁসানো হয় যথা —

  • পেশোয়ার ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২২ খ্রিস্টাব্দে)
  • কানপুর ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৪ খ্রিস্টাব্দ) এবং
  • মীরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯ খ্রি:)।

ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠায় (১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে) কারা অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিল?

ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠায় যারা উদ্যোগী হয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন — সিঙ্গারাভেলু চেট্টিয়া, মুজাফফর আহমেদ, এস. বি. ঘাটে, কে. এন. যোগলেকর, এস. এস. মিরাজকার প্রমুখ।

ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিকে দ্বিজ বলা হয় কেন?

১৯২০ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ার তাসখন্দে মানবেন্দ্রনাথ রায়ের নেতৃত্বে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়। আবার ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে সিঙ্গারাভেলু চেট্টিয়ার সভাপতিত্বে কানপুরে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠা হয়। তাই আক্ষরিক অর্থ হিসেবে কমিউনিস্ট পার্টিকে দ্বিজ বলা হয়।

মীরাট ষড়যন্ত্র মামলা কী?

ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে কমিউনিস্ট তৎপরতায় শঙ্কিত হয়ে বামপন্থী শ্রমিক আন্দোলনকে দমন করার জন্য ব্রিটিশ সরকার জন নিরাপত্তা আইনে ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে ২০ মার্চ ৩ জন কমিউনিস্ট শ্রমিক নেতাকে গ্রেপ্তার করে এবং তাদের বিরুদ্ধে যে মামলা রুজু করা হয় — তা মীরাট ষড়যন্ত্র মামলা নামে পরিচিত। এই মামলা চার বছর ধরে চলেছিল।

মীরাট ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত কয়েকজন কমিউনিস্ট নেতার নাম লেখো।

মীরাট ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত কয়েকজন উল্লেখযোগ্য কমিউনিস্ট নেতা হলেন — মুজাফ্ফর আহমেদ, এস. ভি. ঘাটে, কে, এন, যোগলেকর, মিরাজকার, শ্রীপাদ অমতৃডাঙ্গে (এস. এ. ডাঙ্গে), শৌকত উসমানি, পি. সি. যোশী, ধরনী গোস্বামী, সামসুল হুদা, গঙ্গাধর অধিকারী প্রমুখ।

মীরাট ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত দুজন ব্রিটিশ কমিউনিস্ট নেতার নাম লেখো।

মীরাট ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত দু’জন ব্রিটিশ কমিউনিস্ট নেতা হলেন — বেন ব্রাডলি ও ফিলিপ স্প্যাট। এছাড়াও হিউ লেস্টার হ্যাচিনসন নামে একজন ব্রিটিশ সাংবাদিকও এই মামলায় অভিযুক্ত ছিলেন।

কানপুর ষড়যন্ত্র মামলায় (১৯২৪ খ্রিস্টাব্দ) অভিযুক্ত ও সাজাপ্রাপ্ত দু’জন কমিউনিস্ট নেতার নাম লেখো।

কানপুর ষড়যন্ত্র মামলায় সাজা প্রাপ্ত দু’জন কমিউনিস্ট নেতা হলেন — মুজাফ্ফর আহমেদ এবং নলিনী গুপ্ত।

কংগ্রেস সোসালিস্ট পার্টি কবে, কাদের উদ্যোগে গড়ে ওঠে?

১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের ২৩ অক্টোবর বোম্বাই-এ কংগ্রেস সোসালিস্ট পার্টি আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে। এই সংগঠনটি যাদের উদ্যোগে গড়ে উঠেছিল তাঁরা হলেন, আচার্য নরেন্দ্রদেব, রাম মনোহর লোহিয়া, এফ. আনসারি, মিনু মাথানি, জয়প্রকাশ নারায়ণ প্রমুখ।

কয়েকজন কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দলের নেতারা নাম লেখো।

আচার্য নরেন্দ্রদেব, অচ্যুতপটবর্ধন, রামমনোহর লোহিয়া, অরুণা আসফ আলি, জয়প্রকাশ নারায়ণ প্রমুখরা ছিলেন উল্লেখযোগ্য কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দলের নেতা।

কংগ্রেস সোসালিস্ট পার্টি (১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দ) কী উদ্দেশ্যে গঠন করা হয়েছিল?

শ্রমিক ও কৃষক শ্রেণির স্বার্থরক্ষা ও স্বাধীনতা আন্দোলনে তাদের শামিল করার উদ্দেশ্যে কংগ্রেস সোসালিস্ট পার্টি (১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দ) গঠন করা হয়েছিল। আসলে কংগ্রেসের অভ্যন্তরে থেকে সঠিক নীতি নির্ধারণে সাহায্য করাও ছিল এর লক্ষ্য।

কবে, কাদের নেতৃত্বে বাংলায় পেজেন্টস অ্যান্ড ওয়ার্কার্স পার্টি গঠিত হয়?

১৯২৫-২৬ খ্রিস্টাব্দে বাংলায় পেজেন্টস এ্যান্ড ওয়ার্কার্স পার্টি গঠিত হয়।

এই সংগঠনটি গঠন করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন — মুজাফ্ফর আহমেদ, কবি নজরুল ইসলাম, কুতুবউদ্দিন আহমেদ, হেমন্তকুমার সরকার প্রমুখরা। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে এর নাম পরিবর্তন কবে ওয়ার্কার্স এ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি রাখা হয়।

কবে, কাদের উদ্যোগে বোম্বাই – এ পেজেন্টস এ্যান্ড ওয়ার্কার্স পার্টি গঠিত হয়?

১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে বোম্বাই – এ পেজেন্টস এ্যান্ড ওয়ার্কার্স পার্টি গঠিত হয়।

এই সংগঠনটি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন — এস. এস. মিরাজকর, কে. এন. যোগলেকার, এ. বি. ঘাটে প্রমুখরা।

ওয়ার্কার্স এ্যান্ড পেজেন্টস পার্টির (১৯২৮ খ্রিস্টাব্দ) উদ্দেশ্য কী ছিল?

ওয়ার্কার্স এ্যান্ড পেজেন্টস পার্টির উদ্দেশ্যগুলি হল –

  • শ্রমিকদের কাজের সময় সীমা কমানো
  • জমিদারি প্রথার অবসান ঘটানো
  • শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি নির্ধারণ
  • বাক্-স্বাধীনতা অর্জন।

ভারতছাড়ো আন্দোলনে (১৯৪২ খ্রিস্টাব্দ) কংগ্রেস সোসালিস্ট পার্টির ভূমিকা কী ছিল?

ভারতছাড়ো আন্দোলন (১৯৪২ খ্রিস্টাব্দ) শুরু হওয়ার আগেই ব্রিটিশ সরকার কংগ্রেসের প্রথম সারির নেতাদের গ্রেপ্তার করে। নেতৃত্বহীন আন্দোলন পরিচালনার দায়িত্ব পড়ে কংগ্রেস সোসালিস্ট পার্টির ওপর। জয়প্রকাশ নারায়ণ, অচ্যুত পটবর্ধন, রাম মনোহর লোহিয়া, অরুণা আসফ আলি প্রমুখ কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দলের নেতৃত্বের মাধ্যমে আন্দোলন পরিচালিত হয়েছিল। কংগ্রেস সমাজতন্ত্রীরা বোঝাতে চেয়েছিলেন সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রামই তাঁদের প্রধান লক্ষ্য।

ভারতছাড়ো আন্দোলনে কমিউনিস্ট পার্টির ভূমিকা কী ছিল?

১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে সোভিয়েত রাশিয়া নাৎসী জার্মানীর দ্বারা আক্রান্ত হলে ভারতীয় কমিউনিস্ট দল সোভিয়েত রাশিয়ার মিত্র ব্রিটেনের যুদ্ধ প্রচেষ্টাকে সমর্থন জানায়। ভারতছাড়ো আন্দোলন দ্বারা যুদ্ধরত ব্রিটেনকে বিব্রত করা উচিত হবে না বলে তারা মনে করে। ভারতীয় জাতীয়তাবাদীদের প্রতিবাদ অগ্রাহ্য করে তারা ব্রিটেনের যুদ্ধকেই জনযুদ্ধ বলে অভিহিত করে এবং নীতিগত কারণেই ভারতীয় কমিউনিস্ট দল ভারতছাড়ো আন্দোলন থেকে নিজেদের গুটিয়ে রাখে।

ভারতছাড়ো আন্দোলনে শ্রমিক শ্রেণি পিছিয়ে ছিল কেন?

সর্বভারতীয় ট্রেড ইউনিয়ন গঠন ও কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে সংগঠিত শ্রমিক শ্রেণি ধীরে ধীরে বামপন্থী ভাবাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়। শ্রমিক শ্রেণির রাশ পরবর্তীকালে কমিউনিস্ট নেতৃবর্গের হাতে চলে যায়। নীতিগত কারণে কমিউনিস্ট পার্টি ভারতছাড়ো আন্দোলনে জাতীয় কংগ্রেসকে সমর্থন না করে নানাভাবে ব্রিটিশদের সহযোগিতা করতে থাকে। তাই শ্রমিক শ্রেণিও আন্দোলনের প্রতি আগ্রহ হারায়। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যক্তিগতভাবে অনেক কমিউনিস্ট নেতা বা শ্রমিক আন্দোলনে শামিল হয়েছিল।

কবে, কাদের নেতৃত্বে Independence for India League গঠিত হয়?

১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে বাম মনোভাবাপন্ন তরুণ কংগ্রেস নেতা জওহরলাল নেহরু ও সুভাষচন্দ্র বসু Independence for India League গঠন করে।

Independence for India League কেন গঠন করা হয়?

জাতীয় কংগ্রেসের অভ্যন্তরে বামপন্থা আদর্শ বিস্তারে জওহরলাল নেহরু ও সুভাষচন্দ্র বসু ছিলেন প্রাণপুরুষ। তারই অঙ্গ হিসেবে গড়ে ওঠে Independence for India League। এর মূল্য উদ্দেশ্য ছিল অর্থনৈতিক কাঠামোতে সমাজতান্ত্রিক সংস্কারসাধন। অর্থাৎ স্বাধীনতা অর্জন করে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সাম্যের ভিত্তিতে ভারতীয় সমাজকে পুনগঠন করে।

কাদের নেতৃত্বে এবং ভারতের কোথায় কোথায় বিভিন্ন কমিউনিস্ট গোষ্ঠী গড়ে ওঠে?

কলকাতায় মুজাফ্ফর আহমেদ ও আব্দুর রেজাক খাঁ, বোম্বাই-এ শ্রীপাদ অমৃত ডাঙ্গে ও এস. বি. ঘাটে, মাদ্রাজে সিঙ্গারাভেলু চেট্টিয়া, লাহোরে আব্দুল মজিদ প্রমুখের নেতৃত্বে ভারতে কমিউনিস্ট গোষ্ঠীসমূহ গড়ে ওঠে। এই সমস্ত গোষ্ঠীর সম্মিলিত রূপ ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি।

কংগ্রেসের হরিপুরা অধিবেশনের গুরুত্ব কী ছিল?

জাতীয় কংগ্রেসের অভ্যন্তরে বামপন্থা আদর্শ অবদমিত করার জন্য সুভাষচন্দ্র বসুকে জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচন করা হয়। কিন্তু আদর্শগত ফারাক থাকায় অচিরেই গান্ধিজির সঙ্গে তার মত বিরোধ ঘটে।

ত্রিপুরি কংগ্রেসের গুরুত্ব কী ছিল?

১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেসের ত্রিপুরি অধিবেশনে সুভাষচন্দ্র বামপন্থী দলগুলির সমর্থনে ২০৩ ভোটের ব্যবধানে গান্ধিজি মনোনীতি প্রার্থী পট্টভি সীতারামাইয়াকে হারিয়ে দ্বিতীয় বারের জন্য কংগ্রেসে সভাপতি পদে নির্বাচিত হন। ফলে কংগ্রেসের বামপন্থী ও দক্ষিণপন্থীদের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়। সুভাষচন্দ্র সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দেন এবং ফরওয়ার্ড ব্লক নামে এক নতুন দল প্রতিষ্ঠা করেন (৩মে, ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দ)।

তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার কী?

তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার ভারতছাড়ো আন্দোলন চলাকালীন ১৭ ডিসেম্বর, ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে মেদিনীপুর জেলার তমুলক অঞ্চলে স্বতঃস্ফূর্ত কৃষক আন্দোলনের নিদর্শন হিসেবে তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার গঠিত হয়। এর সর্বাধিনায়ক ছিলেন গান্ধিবাদী নেতা সতীশচন্দ্র সামন্ত।

বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন ভারতের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই আন্দোলনগুলির ফলে ভারতে জমিদারি প্রথার অবসান ঘটে, শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠা হয় এবং ভারতে সমাজতান্ত্রিক আদর্শের বিকাশ ঘটে।

Share via:

মন্তব্য করুন