দাম গল্পে নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় একজন অঙ্কের শিক্ষকের মধ্য দিয়ে শিক্ষার প্রকৃত মূল্য উপস্থাপন করেছেন। গল্পের কথক তাঁর স্কুলজীবনের সেই ভয়ঙ্কর অঙ্কের মাস্টারমশাইয়ের কথা স্মরণ করে গল্পটি লিখেছেন। সেই মাস্টারমশাই ছিলেন অঙ্কে অত্যন্ত দক্ষ। কিন্তু তাঁর শিক্ষাদান পদ্ধতি ছিল অত্যন্ত কঠোর। তিনি ছাত্রদের মারধর করে, ভয় দেখিয়ে অঙ্ক শেখাতেন। কথকও সেই মাস্টারমশাইয়ের কঠোরতায় অঙ্কে দক্ষ হয়ে ওঠেন। কিন্তু তিনি বুঝতে পারেন যে, পীড়ন-তাড়ন করে শিক্ষাদান করা ঠিক নয়। শিক্ষার প্রকৃত মূল্য হলো ছাত্রদের স্বতঃস্ফূর্ত আগ্রহ জাগানো।
স্কুলে বিভীষিকা কে ছিলেন?
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের দাম ছোটোগল্পে কথক সুকুমারের স্কুলের অঙ্কের মাস্টারমশাই ছিলেন তাঁদের কাছে বিভীষিকাস্বরূপ।
অঙ্ক করার সময় খড়ি ভেঙে গেলে মাস্টারমশাই কী করতেন?
অঙ্ক করার সময় খড়ি ভেঙে গেলে বিরক্ত মাস্টারমশাই ভাঙা টুকরো দুটো ছাত্রদের দিকে ছুঁড়ে দিয়ে আর-একটা খড়ি নিতেন।
মাস্টারমশাই অঙ্ককে কেমন করে সাজিয়ে দিতেন?
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের দাম ছোটোগল্পে মাস্টারমশাই অঙ্ক কষে ছবির মতো করে ব্ল্যাকবোর্ডে সাজিয়ে দিতেন।
কিন্তু কাঁদবার জো ছিল না – কেন কাঁদবার জো ছিল না?
অঙ্কের মাস্টারমশাইয়ের হাতে চড় খেয়েও কান্নার উপায় ছিল না। কারণ, তাহলে তিনি আরও বকতেন এবং পা ধরে স্কুলের পুকুরে ছুঁড়ে ফেলার হুমকি দিতেন।
এখনি পা ধরে স্কুলের পুকুরে ছুঁড়ে ফেলে দেবো – কে, কাদের বলতেন?
স্কুলে অঙ্ক না পারায় মাস্টারমশাইয়ের চড় খেয়ে যেসব ছাত্ররা কাঁদত, গল্পকথকের অঙ্কের মাস্টারমশাই সেইসব ছাত্রদের এ কথা বলতেন ৷
মাস্টারমশাইয়ের চড়ের জোর থেকে ছাত্ররা কী আন্দাজ করে নিয়েছিল?
মাস্টারমশাইয়ের চড়ের জোর থেকে ছাত্ররা আন্দাজ করেছিল যে, তাদের পা ধরে পুকুরে ছুঁড়ে ফেলার শক্তি মাস্টারমশাইয়ের ছিল।
প্লেটোর দোরগোড়ায় কী লেখা ছিল বলে মাস্টারমশাই বলেছেন?
প্লেটোর দোরগোড়ায় লেখা ছিল, যে ব্যক্তি অঙ্ক জানে না সেই ব্যক্তির তাঁর বাড়িতে প্রবেশ নিষেধ।
মাস্টারমশাইয়ের মতে স্বর্গের দরজায় কী লেখা আছে?
স্বর্গের দরজাতেও নাকি প্লেটোর দোরগোড়ার মতো লেখা আছে, যে অঙ্ক জানে না তার প্রবেশ নিষেধ।
যে স্বর্গে পা দিয়েই জ্যামিতির এক্সট্রা কষতে হয় তার সম্পর্কে বক্তার মত কী?
বক্তার মতে যে স্বর্গে পা দিয়েই জ্যামিতির এক্সট্রা করতে হয় তার থেকে লক্ষ যোজন দূরে থাকাই নিরাপদ।
ম্যাট্রিকুলেশনের গণ্ডি পার হয়ে সুকুমার কীসের হাত থেকে রেহাই পেয়েছিলেন?
ম্যাট্রিকুলেশনের গণ্ডি পার হয়ে সুকুমার অঙ্ক ও বিভীষিকাস্বরূপ অঙ্কের মাস্টারমশাইয়ের হাত থেকে রেহাই পেয়েছিলেন।
সুকুমার কলেজে কী পড়ান?
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা দাম ছোটোগল্পে সুকুমার কলেজে বাংলা পড়ান।
সুকুমারের কাছে ছেলেবেলার গল্প লেখার ফরমাশ কোথা থেকে এসেছিল?
একটি অনামি পত্রিকার পক্ষ থেকে সুকুমারের কাছে তাঁর ছেলেবেলার গল্প লেখার ফরমাশ এসেছিল।
সাহিত্যের ইন্দ্র চন্দ্র মিত্র বরুণ কাদের বলা হয়েছে?
সাহিত্যজগতের রথী-মহারথী অর্থাৎ স্বনামধন্য সাহিত্যিকদের সাহিত্যে ইন্দ্ৰ চন্দ্ৰ মিত্র বরুণ’ বলা হয়েছে।
ওটা প্রীতির ব্যাপার – কোন্ ব্যাপারকে প্রীতির ব্যাপার বলা হয়েছে?
কয়েকজন ঘরোয়া মানুষের কাছে ঘরোয়া গল্প বলাকেই প্রীতির ব্যাপার বলা হয়েছে।
সুকুমার কাকে নিয়ে তাঁর ছেলেবেলার গল্প লিখেছিলেন?
সুকুমার তাঁর স্কুলের অঙ্কের মাস্টারমশাইকে নিয়ে ছেলেবেলার গল্প লিখেছিলেন।
পত্রিকা কর্তৃপক্ষ সুকুমারকে কত দক্ষিণা দিয়েছিলেন?
পত্রিকা কর্তৃপক্ষ সুকুমারের লেখায় খুশি হয়ে তাঁকে দশ টাকা দক্ষিণা দিয়েছিলেন।
সুকুমার মাস্টারমশাইয়ের কাছ থেকে কোন্টাকে নগদ লাভ বলে মনে করেছিলেন?
পত্রিকায় মাস্টারমশাইকে নিয়ে লেখা বাল্যস্মৃতির দক্ষিণা হিসেবে পাওয়া দশ টাকাকেই সুকুমার নগদ লাভ বলে মনে করেছিলেন।
তারপরে আরো অনেকদিন পার হয়ে গেল। –এর ফলে কী হয়েছিল?
অনেকদিন পার হয়ে যাওয়ায় কথক তার পত্রিকার লেখা এবং মাস্টারমশাইয়ের কথা সবই ভুলে গিয়েছিলেন।
সুকুমারের কাছে বাংলাদেশের এক প্রান্তের কলেজ থেকে কীজন্য ডাক এসেছিল?
দাম গল্পের কথক সুকুমারের কাছে বাংলাদেশের এক প্রান্তের একটি কলেজের বার্ষিক অনুষ্ঠানে আতিথ্যগ্রহণ ও বক্তৃতাদানের জন্য ডাক এসেছিল।
কলকাতার চড়ুই পাখি বাইরে গেলে কীসের সম্মান পায়?
গল্পকথক সুকুমারের মতে, কলকাতার চড়ুই পাখিও বাইরে গেলে রাজহাঁসের সম্মান পায়।
আমি সুযোগটা ছাড়তে পারলুম না। — কোন্ সুযোগের কথা বলা হয়েছে?
বাংলাদেশের প্রান্তবর্তী কলেজে বক্তৃতা দিতে গিয়ে বিনা পয়সায় আতিথেয়তা নেওয়ার সুযোগের কথা বলা হয়েছে।
সভায় জাঁকিয়ে বক্তৃতা করা গেল – কোন্ সভায় কে বক্তৃতা করল?
বাংলাদেশের প্রান্তবর্তী এক কলেজের বার্ষিক উৎসবের সভামঞ্চে কথক অর্থাৎ সুকুমার বক্তৃতা করেছিল।
সুকুমার তাঁর বক্তৃতায় রবীন্দ্রনাথের ক-টি উদ্ধৃতি ব্যবহার করেছিলেন?
সুকুমার তাঁর বক্তৃতায় রবীন্দ্রনাথের বারোটি উদ্ধৃতি ব্যবহার করেছিলেন।
সুকুমার তাঁর বক্তৃতার ইংরেজি কোটেশনটি কার নামে চালিয়েছিলেন?
সুকুমার তাঁর বক্তৃতার ইংরেজি কোটেশনটি আইরিশ নাট্যকার জর্জ বার্নার্ড শ-র নামে চালিয়েছিলেন।
তখন অল্পের জন্য ফুলদানিটা রক্ষা পেলো। — কোন্ সময়ের কথা বলা হয়েছে?
বক্তৃতার শেষের দিকে দেশের তরুণদের জাগ্রত হওয়ার কথা বলে কথক যখন প্রচণ্ড জোরে টেবিলে কিল মেরেছিলেন সেই সময়ের কথা বলা হয়েছে।
একটি সর্বার্থসাধক বক্তৃতাই আমায় সম্বল। — সর্বার্থসাধক শব্দের অর্থ বুঝিয়ে দাও।
সর্বার্থসাধক কথাটির অর্থ যা যে – কোনো প্রয়োজন মেটায় বা সর্বক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায়।
সুকুমারের বক্তৃতার বিশেষত্ব কী ছিল?
দাম-এর কথক সুকুমার তাঁর তৈরি একটি বক্তৃতাকেই সামান্য পরিবর্তন করে রবীন্দ্র জন্মোৎসব থেকে বনমহোৎসব সর্বত্রই চালাতেন।
সুকুমার আলো থেকে বেরিয়ে যে মানুষটিকে দেখতে পেলেন তাঁর চেহারা কেমন?
অথবা, অন্ধকারে কথকের দেখা তাঁর স্কুলের অঙ্কের মাস্টারমশাইয়ের চেহারার বর্ণনা দাও।
আবছা অন্ধকারে সুকুমার যাঁকে দেখেছিলেন তাঁর চেহারা ছিল কুঁজো লম্বা এবং মাথার সাদা চুলগুলি চিকমিক করছিল।
আমাকে চিনতে পারছ না সুকুমার? – বক্তা কে?
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের দাম ছোটোগল্প থেকে নেওয়া আলোচ্য উক্তিটির বক্তা হলেন কথক সুকুমারের ছোটোবেলার স্কুলের অঙ্কের মাস্টারমশাই।
আমি চমকে উঠলুম – বক্তার চমকে ওঠার কারণ কী?
বাংলাদেশের এক প্রান্তিক অঞ্চলে এক বৃদ্ধের মুখে চেনা কণ্ঠস্বরে তাঁর সুকুমার নামের ডাক শুনে কথক চমকে গিয়েছিলেন।
সেই ভয়টার কঙ্কাল লুকিয়ে ছিল মনের চোরাকুঠুরিতে – কোন্ ভয়ের কথা বলা হয়েছে?
অঙ্ক না পারলেই অঙ্কের মাস্টারমশাইয়ের ভয়ানক চড় নেমে আসবে পিঠে — এই ছিল সুকুমারের ভয়।
মাস্টারমশাই কলেজের বার্ষিক অনুষ্ঠানে কেন ছুটে এসেছিলেন?
প্রাক্তন ছাত্র সুকুমার কলেজের বার্ষিক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করবেন জেনে মাস্টারমশাই ছুটে এসেছিলেন।
মাস্টারমশাই পুরোনো পত্রিকার লেখাটির কথা উল্লেখ করায় সুকুমারের কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল?
মাস্টারমশাই পুরোনো পত্রিকার লেখাটির কথা উল্লেখ করায় অপ্রস্তুত সুকুমারের জিভ শুকিয়ে যায়, আত্মগ্লানিতে মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করে।
মাস্টারমশাই জামার পকেট থেকে কী বের করেছিলেন?
মাস্টারমশাইয়ের জামার পকেট থেকে শতচ্ছিন্ন এক জীর্ণ পত্রিকা বেরিয়েছিল।
মাস্টারমশাইয়ের সুকুমারকে কী পাঠাতে সাহস হয়নি?
সুকুমারের লেখা বাল্যস্মৃতি পড়ে আনন্দে মাস্টারমশাই সুকুমারকে চিঠি লিখলেও সেটি পাঠাতে তাঁর সাহস হয়নি।
আবছা আলোয় অভ্যস্ত হলে সুকুমার কী দেখেছিলেন?
আবছা আলোয় অভ্যস্ত হলে সুকুমার ছোটোবেলার সেই রাগি অঙ্কের মাস্টারমশাইয়ের দু-চোখে আবেগের অশ্রুধারা দেখতে পেয়েছিলেন।
বৃদ্ধ মাস্টারমশাইয়ের সামনে দাঁড়িয়ে সবশেষে সুকুমারের কী অনুভূতি হয়েছিল?
বৃদ্ধ মাস্টারমশাইয়ের সামনে দাঁড়িয়ে সবশেষে সুকুমারের মনে হয়েছিল তিনি স্নেহ-মমতা-ক্ষমার এক মহাসমুদ্রের ধারে এসে দাঁড়িয়েছেন।
দাম গল্পে কোটি মণিমাণিক্য দিয়ে কার পরিমাপ হয় না?
দাম ছোটোগল্পে সুকুমারের মনে হয়েছে যে কোটি মণিমাণিক্য দিয়েও মাস্টারমশাইয়ের স্নেহের পরিমাপ হয় না।
সুকুমার মাস্টারমশাইয়ের স্নেহকে কীসের সঙ্গে তুলনা করেছেন?
সুকুমার মাস্টারমশাইয়ের স্নেহকে কোটি মণিমাণিক্যের সঙ্গে তুলনা করে সেসবের থেকেও তাকে মূল্যবান বলেছেন।
সুকুমারের মতে সংসারের সব ঐশ্বর্যের চেয়ে দামি কী?
সুকুমারের মতে সংসারের সব ঐশ্বর্যের চেয়ে দামি হল আপাত রাগি মাস্টারমশাইয়ের অসীম মমতা।
দাম গল্পে কুবেরের ভাণ্ডারকে ধরে দিয়েও কী লাভ করা যায় না?
সুকুমারের মতে, কুবেরের ভাণ্ডারের বিনিময়েও মাস্টারমশাইয়ের উদারমনের অনায়াস ক্ষমা লাভ করা যায় না, তা অমূল্য।
সুকুমার দশ টাকায় কী বিক্রি করেছিলেন?
মাস্টারমশাইকে নিয়ে বাল্যস্মৃতি লিখে সুকুমার দশ টাকা পেয়েছিলেন। পরে তাঁর মনে হয়েছিল ওই টাকায় তিনি যেন মাস্টারমশাইকেই বিক্রি করেছেন।
এ লজ্জা আমি কোথায় রাখব। — কোন্ লজ্জা?
মাস্টারমশাইয়ের সমালোচনা করে লিখে দশ টাকা দক্ষিণা উপার্জনের লজ্জার কথা বলা হয়েছে।
এ অপরাধ আমি বইব কী করে — এখানে কোন্ অপরাধের কথা বলা হয়েছে?
মাস্টারমশাইয়ের সমালোচনা করে লিখে দশ টাকা দক্ষিণা উপার্জনের লজ্জার ও অপমানের কথা বলা হয়েছে।
গল্পের উপসংহারে লেখক পীড়ন-তাড়ন করে শেখানো শিক্ষার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। তিনি বলেছেন, পীড়ন-তাড়ন করে শেখানো শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য পূরণ করে না। বরং শিক্ষার প্রতি ঘৃণা জন্মায়। তাই শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য পূরণের জন্য ছাত্রদেরকে উৎসাহ ও অনুপ্রেরণার মাধ্যমে শিক্ষা দিতে হবে।