অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – লোকটা জানলই না –  ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

অষ্টম শ্রেণির বাংলা বিষয়ের লোকটা জানলই না অধ্যায়ের ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর গুলি পরীক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এইভাবে লোকটা জানলই না অধ্যায়ের ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর গুলি যদি তোমরা প্রস্তুত করে না যাও তাহলে পরীক্ষায় লোকটা জানলই না অধ্যায়ের ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর গুলোর উত্তর দিতে পারবে না। তাই লোকটা জানলই না অধ্যায়ের ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর গুলি ভালো করে মুখস্ত করে গেলে তোমরা পরীক্ষায় খুব ভালো ফলাফল পাবে।

সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের “লোকটা জানলই না” কবিতায় এক হৃদয়হীন মানুষের চরিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। কবিতার কেন্দ্রীয় চরিত্রটি সারাজীবন ধনসম্পত্তি ও পার্থিব সম্পদের পেছনে ধাবিত থাকে। সে নিজের বাম বুকের পকেট, যেখানে মানুষ সাধারণত অর্থ রাখে, তা সাবধানে সামলে রাখে। কিন্তু সেই পকেটের নীচে, অস্থি-মজ্জা-চামড়ার ভেতরে সযত্নে রক্ষিত হৃদয়ের অস্তিত্ব সে ভুলে যায়।

সারাজীবন ধরে সে বড় বড় অট্টালিকার চার দেয়ালে বন্দি হয়ে থাকে, প্রকৃতির স্পর্শ থেকে বঞ্চিত থাকে। অর্থের প্রতি তার অন্ধ আকাঙ্ক্ষা তাকে অমানুষ করে তোলে। একদিন, অর্থ আত্মসাৎ করার তীব্র আকাঙ্ক্ষায় তার হৃদয় স্তব্ধ হয়ে যায়। কিন্তু সেই হৃদয়ের অনুপস্থিতি সে টের পায় না।

কবি এই চরিত্রের মাধ্যমে আধুনিক সমাজের মানুষের বস্তুতাপসক মনোভাবের তীব্র সমালোচনা করেছেন। অর্থ ও সম্পদের প্রতি অন্ধ আকাঙ্ক্ষায় মানুষ হৃদয়ের স্পন্দন ভুলে যায়, জীবনের প্রকৃত সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে পারে না। কবিতাটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, ইহকাল-পরকালের সার্বিক সম্পদ হল হৃদয়ের ঐশ্বর্য, পার্থিব সম্পদ নয়।

লোকটা জানলই না – অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

বাঁদিকে বুক-পকেটটা সামলাতে সামলাতে – এখানে ‘বাঁদিকের বুক-পকেট’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

প্রশ্নে প্রদত্ত উদ্ধৃতাংশটিতে কবি ‘বাঁদিকের বুক পকেট’ বলতে অর্থ গচ্ছিত রাখার মানসিকতাকে নির্দেশ করেছেন। সাধারণত লোকে তার বুকপকেটে টাকাপয়সা রাখে। আধুনিক যন্ত্রসভ্যতার যুগের মানুষ ধনসম্পত্তি রক্ষার দিকেই অধিক মনোযোগ দিয়ে থাকে। তাদের কাছে অর্থসর্বস্বতাই সবচেয়ে মূল্যবান। অর্থ সঞ্চিত করতে করতেই তাদের ইহকাল-পরকাল কেটে যায়।

ইহকাল পরকাল – এই শব্দদ্বয় এখানে কী অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে?

ইহকাল শব্দের সাধারণ অর্থ হল জন্ম থেকে মৃত্যুকালীন সময় অর্থাৎ জীবিতকাল এবং ‘পরকাল’ বলতে সাধারণত বোঝানো হয় মৃত্যুর পরে প্রাপ্ত অবস্থা। কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় তাঁর ‘লোকটা জানলই না’ কবিতার মধ্যে ‘ইহকাল পরকাল’ বলতে জীবিতকাল ও মৃত্যুকে বুঝিয়েছেন। কবি ওই শব্দদ্বয়ের মধ্য দিয়ে বোঝাতে চেয়েছেন যে, গচ্ছিত ধনসম্পদ সামলাতে সামলাতেই লোকটির সমগ্র জীবন কেটে যায় এবং মৃত্যু উপস্থিত হয়।

আলাদিনের আশ্চর্য-প্রদীপ আসলে কী? তাকে এরকম বলার কারণ বুঝিয়ে দাও।

আরব্য রূপকথার কাহিনির একটি উল্লেখযোগ্য চরিত্র হল আলাদিন। সে একটি জাদুপ্রদীপ পেয়েছিল। সেই প্রদীপটি ঘষলে তার মধ্য থেকে একটি দৈত্য বের হয়ে আসত। আলাদিনের নির্দেশ অনুযায়ী সে মুহূর্তের মধ্যে যে-কোনো প্রকার অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলত।

কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় তাঁর ‘লোকটা জানলই না’ কবিতার মধ্যে ‘আলাদিনের আশ্চর্য-প্রদীপ’ বলেছেন হৃদয়কে। কারণ হৃদয়ই পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা মূল্যবান বস্তু। হৃদয়বান ব্যক্তি পৃথিবীর যাবতীয় অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলতে পারে তার চিত্ত তথা মননের তাগিদে।

তার কড়িগাছে কড়ি হলো – বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?

প্রশ্নোক্ত অংশটি কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ‘লোকটা জানলই না’ নামক কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোচ্য কবিতায় কবি হৃদয়হীন, অর্থসর্বস্ব একজন মানুষের চিত্র অঙ্কন করেছেন। লোকটি আজীবন অর্থের পিছনে ছুটেছে এবং তার ফলস্বরূপ লক্ষ্মীদেবী অধিষ্ঠাত্রী হয়েছেন তার গৃহে। অর্থাৎ তার ধনসম্পদ বৃদ্ধি পেয়েছে ক্রমে ক্রমে। প্রসঙ্গত বলা যায় যে, ‘কড়ি’-কে পূর্বে বিনিময়ের মুদ্রারূপে ব্যবহার করা হত এদেশে। তাই ‘কড়িগাছ’ বলতে ধন বা সম্পদের কথাই বলেছেন কবি।

লোকটা জানলই না কবিতায় হৃদয়কে কীসের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে? কেন করা হয়েছে?

কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ‘লোকটা জানলই না’ কবিতায় আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপের সঙ্গে হৃদয়ের তুলনা করা হয়েছে।

আরব্য রজনী উপন্যাসের উল্লেখযোগ্য চরিত্র আলাদিনের একটি প্রদীপ ছিল, যাকে ঘর্ষণ করলে তা থেকে অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন এক দৈত্য বেরিয়ে আসত এবং আলাদিনের নির্দেশ মতো সে অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলতে পারত। কবি মনে করেন মানুষের অন্তর বা হৃদয় হল তেমনই অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলার ক্ষমতাসম্পন্ন বস্তু বা শক্তি। হৃদয়ের মতো ঐশ্বর্যশালী বস্তু আর কিছুই নয়। প্রদীপ যেমন আলাদিনকে প্রভূত ঐশ্বর্য দিতে পারত, হৃদয়ও তেমনই দিতে পারে মানুষকে। তাই কবি হৃদয়কে আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপের সঙ্গে তুলনা করেছেন।

লোকটার হইকাল পরকাল গেল। – উদ্ধৃতাংশের তাৎপর্য আলোচনা করো।

প্রশ্নোক্ত অংশটি কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ‘লোকটা জানলই না’ নামক কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোচ্য কবিতায় কবি একজন অর্থসর্বস্ব মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেছেন। লোকটা সারাজীবন অর্থ-উপার্জন আর তা সঞ্চয়ের নেশায় ছুটে বেরিয়েছে। প্রচুর অর্থ সে সঞ্চয় করেছে। লক্ষ্মী দেবী তার গৃহে অধিষ্ঠান করে আছেন কিন্তু এই অর্থের পিছনে ছুটতে গিয়ে কখন যে জীবনটা শেষ হয়ে গেছে তা তার অনুভূতিতেও আসেনি। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সময় অর্থাৎ ইহকালে সে খোঁজ পেল না আসল সম্পদ হৃদয়ের, আর মৃত্যুর পরে যে কী আছে তা তো কারও জানাই নেই। এভাবে সমগ্র জীবনটাই তার অতিবাহিত হয়ে গেছে নিজের অজান্তেই।

খসে পড়ল তার জীবন – উক্তিটির তাৎপর্য লেখো।

সারাজীবন অর্থের পিছনে ছুটেছে লোকটা, সঞ্চয় করেছে প্রচুর সম্পদ। কিন্তু সকল সম্পদের সেরা যে হৃদয় তার খোঁজই জানল না লোকটা। আবার অর্থের পিছনে ছুটতে ছুটতে এবং গচ্ছিত অর্থকে সামলাতে সামলাতে একসময় জীবনটাই তার খসে পড়ল অর্থাৎ মৃত্যুর মাঝে হারিয়ে গেল সে। কখন যে ঝরে গেল জীবন-সেটাও সে বুঝতে পারেনি। প্রশ্নোক্ত উদ্ধৃতাংশের মাধ্যমে কবি এ কথাই বোঝাতে চেয়েছেন।

সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের “লোকটা জানলই না” কবিতাটি আধুনিক যুগের মানুষের বস্তুতাপসক মনোভাবের তীব্র সমালোচনা। কবিতার কেন্দ্রীয় চরিত্রটি ধনসম্পত্তির প্রতি অন্ধ আকাঙ্ক্ষায় নিজের হৃদয়ের স্পন্দন ভুলে যায়। সে সারাজীবন ধরে অর্থের পেছনে ধাবিত থাকে, প্রকৃতির স্পর্শ থেকে বঞ্চিত থাকে। অবশেষে, অর্থ আত্মসাৎ করার তীব্র আকাঙ্ক্ষায় তার হৃদয় স্তব্ধ হয়ে যায়। কিন্তু সেই হৃদয়ের অনুপস্থিতি সে টের পায় না।

এই কবিতাটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, জীবনের প্রকৃত সম্পদ হল হৃদয়ের ঐশ্বর্য, পার্থিব সম্পদ নয়। হৃদয়ই আমাদেরকে সহানুভূতি, ভালোবাসা এবং সৃজনশীলতার অনুভূতি প্রদান করে। ধনসম্পত্তি আমাদেরকে সাময়িক সুখ-সমৃদ্ধি দিতে পারে, কিন্তু হৃদয়ের স্পন্দন ছাড়া জীবন অর্থহীন।

কবিতাটির শেষ লাইন, “লোকটা জানলই না,” আমাদের মনে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়। আমরা কি আধুনিক যুগের লোকটা, যারা ধনসম্পত্তির পেছনে ধাবিত হয়ে নিজেদের হৃদয়কে ভুলে যায়?

Share via:

মন্তব্য করুন