নমস্কার বন্ধুরা! আজকের আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করবো উত্তরের সমভূমি অঞ্চলের ভূপ্রকৃতি সম্পর্কে। এই অংশটি দশম শ্রেণীর মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” অধ্যায়ের “ভারতের ভূপ্রকৃতি” বিভাগে এই প্রশ্নটি বারবার দেখা যায়। তাই, পরীক্ষায় ভালো করার জন্য এই অংশটি ভালোভাবে জেনে রাখা অপরিহার্য।
উত্তরের সমভূমি অঞ্চলের ভূপ্রকৃতি
উত্তরে হিমালয় পার্বত্যভূমি এবং দক্ষিণে উপদ্বীপীয় মালভূমির মধ্যবর্তী এলাকায় গঙ্গা, সিন্ধু, ব্রহ্মপুত্র এবং এদের বিভিন্ন উপনদী ও শাখানদীগুলি পলি সঞ্চয় করে যে বিস্তৃত সমতলভূমি গঠন করেছে তাকে বলা হয় উত্তরের সমভূমি অঞ্চল। স্থানীয় বৈচিত্র্য অনুসারে এই সুবিস্তৃত অঞ্চলটিকে চারটি উপ-অঞ্চলে ভাগ করা যায়-
- রাজস্থান সমভূমি
- পাঞ্জাব বা শতদ্রু সমভূমি
- গঙ্গা সমভূমি
- অসম বা ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা
রাজস্থান সমভূমি –
- আরাবল্লি পর্বতের পশ্চিমে রাজস্থানের মধ্য ও পশ্চিমাংশের রুক্ষ ও শুষ্ক বালিপূর্ণ মরুময় সমতল এলাকাটি রাজস্থান সমভূমি নামে পরিচিত। এর পশ্চিম ভাগের বিস্তীর্ণ এলাকা মরুস্থলী নামে পরিচিত। এটি থর মরুভূমির অংশরূপে পাকিস্তানের মধ্যে বিস্তৃত হয়েছে।
- মরুস্থলীর প্রস্তরময় অঞ্চলের নাম হামাদা। সমান্তরাল বালিয়াড়িগুলির মধ্যবর্তী অবনমিত অংশে বায়ুপ্রবাহের অপসরণজনিত কারণে সৃষ্ট গহ্বরে ধান্দ নামক হ্রদ দেখা যায়।
- সমভূমির পূর্বভাগের অপেক্ষাকৃত কম বালুময় তৃণভূমি বাগর নামে পরিচিত। এখান দিয়ে লুনি নদী প্রবাহিত হয়েছে।
- বাগর-এর পূর্বাংশে আরাবল্লি থেকে আগত ছোটো ছোটো নদী তাদের দু-পাশে পলি সঞ্চয় করে যে প্লাবনভূমির সৃষ্টি করেছে, সেগুলিকে বলা হয় রোহি।
- জয়সলমীরের কাছের সমভূমিতে কয়েকটি ছোটো-ছোটো পাহাড় দেখা যায়।
- থর মরুভূমির নীচু অংশে এবং জয়সলমীর শহরে কয়েকটি লবণাক্ত জলের হ্রদ দেখা যায়। এদের স্থানীয়ভাবে রান বলে। এখানকার সম্বর হ্রদ হল সমগ্র রাজস্থান সমভূমির বৃহত্তম হ্রদ।
- উর্বর মৃত্তিকাযুক্ত অঞ্চলে কিছু পরিমাণ খেজুর, পামজাতীয় গাছ ও তৃণ জন্মায়। এই অঞ্চলটিকে মরূদ্যান বলে।
পাঞ্জাব সমভূমি –
- রাজস্থান সমভূমির উত্তর-পূর্বে এবং যমুনা নদীর পশ্চিমে যে বিস্তৃত সমতল এলাকা আছে তাকে বলা হয় পাঞ্জাব সমভূমি। এই সমভূমি পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও দিল্লির অন্তর্গত।
- সিন্ধুর উপনদী শতদ্রু, বিপাশা, ইরাবতী ও চন্দ্রভাগা পলি সঞ্চয় করে এই উর্বর সমভূমিটি তৈরি করেছে।
- সমগ্র সমভূমিটির গড় উচ্চতা প্রায় 200-240 মি।
- এর দক্ষিণ, উত্তর ও উত্তর-পূর্বাংশে আরাবল্লি পর্বতের ক্ষয়ীভূত অংশবিশেষ ছড়িয়ে রয়েছে।
গঙ্গা সমভূমি –
- গঙ্গা সমভূমি উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে বিস্তৃত।
- পশ্চিমে যমুনা নদী থেকে শুরু করে পূর্বে গঙ্গা বদ্বীপ পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এই সমতলভূমিটি গঙ্গা এবং তার বিভিন্ন উপনদী ও শাখানদীর পলি সঞ্চয়ের দ্বারা সৃষ্ট হয়েছে।
- এই সমভূমির নদীতীরবর্তী কোনো কোনো এলাকায় প্লাবনভূমি, স্বাভাবিক বাঁধ, অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ প্রভৃতি দেখা যায়।
- সমগ্র এলাকাটি পশ্চিম থেকে পূর্বে বা দক্ষিণ-পূর্বে ঢালু।
- এখানকার নতুন পলিগঠিত এলাকাসমূহকে বলা হয় খাদার এবং পুরোনো পলিগঠিত এলাকাগুলিকে বলা হয় ভাঙ্গর।
- সমভূমির উত্তর প্রান্তে হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত নুড়ি ও বালিপূর্ণ সচ্ছিদ্র সংকীর্ণ অংশকে বলা হয় ভাবর।
- ভাবর-এর দক্ষিণে জলাভূমিপূর্ণ, বন্যাপ্রবণ এবং জঙ্গলে ঢাকা যে সমতল ক্ষেত্রটি আছে তার নাম তরাইভূমি।
- গঙ্গা সমভূমির দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে বঙ্গোপসাগর-সংলগ্ন এলাকায় গঙ্গা বদ্বীপ গড়ে উঠেছে।
- গঙ্গা সমভূমিকে তিনভাগে ভাগ করা যায় – 1. উচ্চ-গঙ্গা সমভূমি (গঙ্গা সমভূমির উত্তরপ্রদেশের অংশ), 2. মধ্য-গঙ্গা সমভূমি (উত্তরপ্রদেশের পূর্বাংশ এবং বিহারের উত্তরাংশের সমভূমি) এবং 3. নিম্ন-গঙ্গা সমভূমি (দার্জিলিং ও পুরুলিয়া বাদে সমগ্র পশ্চিমবঙ্গ)।
অসম বা ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা –
- অসম রাজ্যে ব্রহ্মপুত্র নদের দুপাশে যে সংকীর্ণ সমতলক্ষেত্রটি আছে তার নাম ব্রহ্মপুত্র সমভূমি।
- সমভূমিটি প্রায় 700 কিমি দীর্ঘ এবং গড়ে ৪০ কিমি প্রশস্ত।
- সমভূমিটি পূর্ব থেকে পশ্চিমে ঢালু এবং এর ওপর দিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদ বিনুনির মতো প্রবাহিত হয়েছে।
- এখানে ব্রহ্মপুত্রের গতিপথে অসংখ্য বালুচর বা দ্বীপ গঠিত হয়েছে। এগুলির মধ্যে মাজুলি দ্বীপটি বিশ্বের বৃহত্তম নদীদ্বীপ।
উত্তরের সমভূমি অঞ্চল ভারতের ভূগোল এবং অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই অঞ্চলের উর্বর জমি, বিস্তৃত নদী ব্যবস্থা এবং জলবায়ুর কারণে এটি কৃষিক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণ। পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া দশম শ্রেণীর ছাত্রদের জন্য এই অঞ্চলের ভূপ্রকৃতির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানা অত্যন্ত জরুরি।