মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – পরিবেশ তার সম্পদ এবং তাদের সংরক্ষণ – পরিবেশ এবং মানব জনসমষ্টি – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (বিভাগ ২)

পরিবেশ এবং তার সম্পদ হলো মানবজাতির জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। পরিবেশ হলো আমাদের চারপাশের বাইরের প্রাকৃতিক ও জৈবিক উপাদানের সমষ্টি, যা আমাদের নিজেদের বাসস্থান, পরিবার, সম্প্রদায় এবং সমাজের সাথে সম্পর্কিত। এটি প্রাকৃতিক পরিবেশ, যেমন জল, বায়ু, মাটি, বন এবং জীব সম্পদ থেকে বিভিন্ন রূপে গঠিত হতে পারে। এর সংরক্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ যাতে আমরা একটি স্বস্তিস্থানী ও সুস্থ পরিবেশে জীবন যাপন করতে পারি।

Table of Contents

আদমসুমারি কাকে বলে?

জনগণনা এবং জনগণনা-সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহের কাজকে বলে আদমসুমারি। ভারতে প্রতি 10 বছর অন্তর জনগণনা করা হয়। ভারতে সর্বশেষ জনগণনা করা হয় 2011 সালে।

ভারতে জনসংখ্যা বিস্ফোরণের দুটি কারণ লেখো।

ভারতে জনসংখ্যা বিস্ফোরণের দুটি কারণ হল — 1. ভারতীয় সমাজে দারিদ্র, শিক্ষার অভাব, কুসংস্কার, ধর্মান্ধতা, বাল্যবিবাহের কারণে অতিরিক্ত জন্মহার। 2. চিকিৎসা ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির কারণে ক্রমহ্রাসমান মৃত্যুহার।

বহন ক্ষমতা বা ধারণ ক্ষমতা কাকে বলে?

কোনো একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে একটি নির্দিষ্ট সময়ে সর্বাধিক যত মানুষ বা কোনো জীবকে সুস্থায়ীভাবে বাঁচিয়ে রাখা যায়, তাকে সেই অঞ্চলের বহন ক্ষমতা বা ধারণ ক্ষমতা বলে।

পরিযান বা মাইগ্রেশন কাকে বলে?

নির্দিষ্ট পপুলেশনের কিছু সদস্যদের স্থায়ীভাবে অন্য অঞ্চলে গমন (প্রবাসন) বা অন্য অঞ্চল থেকে স্থায়ীভাবে কিছু সদস্যদের উক্ত পপুলেশনে আগমনের (অভিবাসন) ঘটনাকে পরিযান বা মাইগ্রেশন বলে।

মানব জনসমষ্টি বলতে কী বোঝ?

একটি নির্দিষ্ট সময়ে একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের মোট সংখ্যাকে মানব জনসমষ্টি বলা হয়।

জনসংখ্যার ঘনত্ব বলতে কী বোঝ?

প্রতিবর্গ একক স্থানে জনসংখ্যার পরিমাণকে জনসংখ্যার ঘনত্ব বলে। জনঘনত্ব মানুষ ও জমির পরিমাণগত সম্পর্ক নির্দেশ করে।

জনবিস্ফোরণ বা অতিপ্রজতা কাকে বলে?

অনিয়ন্ত্রিত জন্মহারের কারণে কোনো নির্দিষ্ট পপুলেশনের আকৃতি যদি এমন হয় যে, তার সদস্য সংখ্যা ধারণ ক্ষমতাকে অতিক্রম করে, তাকে জনবিস্ফোরণ বা অতিপ্রজতা বলে।জনবিস্ফোরণ বা অতিপ্রজতা কাকে বলে

জনসংখ্যার স্বাভাবিক বৃদ্ধি বলতে কী বোঝ?

কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলের একটি নির্দিষ্ট সময়ে মোট জনসংখ্যা ও মৃত্যুসংখ্যার পার্থক্যকে জনসংখ্যার স্বাভাবিক বৃদ্ধি বলে।

বিনাইন ও ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের ও পার্থক্য কী?

বিনাইন ও ম্যালিগন্যান্ট টিউমার উভয়ক্ষেত্রেই কোশ বিভাজন অনিয়ন্ত্রিত হয় ও টিউমার সৃষ্টি হয়। বিনাইন টিউমার শল্যচিকিৎসা দ্বারা দূর করা সম্ভব, কিন্তু ম্যালিগন্যান্ট টিউমার শল্যচিকিৎসা দ্বারা দূর করা কঠিন। কারণ ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের কোশ বা ক্যানসার কোশ সহজেই দেহের অন্যত্র গিয়ে (মেটাস্ট্যাসিস) নতুন ম্যালিগন্যান্ট টিউমার তৈরি করে।

ম্যালিগন্যান্ট টিউমার-এর বৈশিষ্ট্য কী?

ম্যালিগন্যান্ট টিউমার হল এক ধরনের ক্যানসার সৃষ্টিকারী টিউমার। এর কোশগুলি রক্তবাহ বা লসিকাবাহের মাধ্যমে শরীরের অন্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে (যাকে মেটাস্ট্যাসিস বলে) এবং দেহে ক্যানসারের বিস্তার ঘটায়।

জনসংখ্যা বৃদ্ধির দুটি ক্ষতিকারক দিক উল্লেখ করো?

1. প্রাকৃতিক সম্পদের অতিরিক্ত ব্যবহার খজিন তেল ও অন্যান্য খনিজ উপদান, জলভূমি, খাদ্য প্রভৃতির অতিরিক্ত ব্যবহারে প্রাকৃতিক সম্পদ নিঃশোষিত অবস্থায় এসে পৌঁছেছে। 2. পরিবেশ দূষণ অতিরিক্ত জনসংখ্যার উন্নয়নের প্রবল চাপে বায়ু, মাটি, জল, শব্দ, প্রভৃতির দূষণ প্রবল হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির দুটি ক্ষতিকারক দিক উল্লেখ করো

জনসংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে পরিবেশগত বাধা কী কী?

জনসংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে পরিবেশগত বাধাগুলি হল — 1. খাদ্যের অভাব, 2. জল ও বাসস্থানের অভাব, 3. রোগের প্রাদুর্ভাব, 4. দুর্ভিক্ষ ও মহামারি।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে পরিবেশগত বাধা কী কী

অ্যাজমা বা হাঁপানি কেন ঘটে?

শ্বাসনালীর বিভিন্ন অংশে প্রদাহ বা বিভিন্ন অ্যালার্জিক বস্তুর প্রতি শ্বাসনালীর আবরণী কলার অত্যধিক সংবেদনশীলতার কারণে অ্যাজমা বা হাঁপানি ঘটে। এক্ষেত্রে রায়ুচলাচলের পথ রুদ্ধ হয়ে যায় এবং শ্বাসকষ্টসহ অন্যান্য সমসার সৃষ্টি হয়।

কারসিনোজেন কী?

কারসিনোজেন হল সেই সকল রাসায়নিক বস্তু বা রেডিয়েশন যা কোশের DNA-র মধ্যে স্থায়ী পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম হয়। এটি হল একপ্রকার মিউটাজেন।

ক্যানসার সৃষ্টির প্রধান দুটি পর্যায় কী কী?

ক্যানসার সৃষ্টির প্রথম পর্যায়ে স্বাভাবিক কোশের মধ্যে জিনগত পরিবর্তনের কারণে কোশে দ্রুত অস্বাভাবিক বিভাজন শুরু হয় এবং সেখান থেকে টিউমার সৃষ্টি হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে ম্যালিগ্যান্ট টিউমারের কোশগুলির আন্তরকোশীয় সংযোগ বিনষ্ট হওয়ায় তা রক্ত বা লসিকায় বাহিত হয়ে অন্য স্থানে পৌঁছায় (মেটাস্ট্যাসিস) ও অনিয়ন্ত্রিত কোশ বিভাজন শুরু করে গৌণ টিউমার তৈরি করে রোগটি দেহে ছড়িয়ে দেয়।

ক্যানসার সৃষ্টিকারী দুটি রাসায়নিক পদার্থের নাম লেখো।

ক্যানসার সৃষ্টিকারী দুটি রাসায়নিক পদার্থ হল — বেঞ্জোপাইরিন (অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বন, যা তামাক সেবনের ফলে দেহে সৃষ্টি হয়) এবং EMS (ইথাইল মিথেন সালফোনেট)।

ফুসফুসীয় ক্যানসারের কারণ কী?

সাধারণত ধূমপান, পরিবেশদূষণ বা বংশগত কারণে ফুসফুসের কলাকোশের অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি ঘটে, যার ফলে ফুসফুসীয় ক্যানসার সৃষ্টি হয়। পরিবশেদূষণের অন্তর্গত প্রধান শিল্পগুলি হল — অ্যাসবেস্টস, ক্রোমিয়াম, প্লাস্টিক উৎপাদন শিল্প।
ফুসফুসীয় ক্যানসারের কারণ কী

মেটাস্ট্যাসিস কী?

ক্যানসার কোশের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল কোশগুলির পরস্পর সংযুক্তির ক্ষমতা হ্রাস। ফলে এরা পারিপার্শ্বিক কলা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে রক্ত এবং লসিকাবাহের মাধ্যমে দেহের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং বিভিন্ন অঙ্গে ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে। এই ঘটনাকে মেটাস্ট্যাসিস বলে।

সিগারেট বা বিড়ির ধোঁয়ায় উপস্থিত তিনটি কারসিনোজেনের নাম লেখো যেগুলি ফুসফুসের ক্যানসার ঘটায়।

সিগারেট বা বিড়ির ধোঁয়ায় উপস্থিত কারসিনোজেন, যেগুলি ফুসফুসের ক্যানসার ঘটায়, সেগুলি হল — অ্যাসিটাল- ডিহাইড, ভিনাইল ক্লোরাইড, ফরম্যালডিহাইড।

র‍্যাডন গ্যাস কীভাবে মানুষের শরীরের ক্ষতি করে?

র‍্যাডন একটি ক্ষতিকর তেজস্ক্রিয় গ্যাস। খনিতে কর্মরত শ্রমিকরা র‍্যাডন গ্যাসের সংস্পর্শে এলে তাঁদের ফুসফুসে ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

ক্যানসার কোশের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।

1. ক্যানসার কোশের নিউক্লিয়াসের আকার তুলনামূলক বড়ো হয়। 2. ক্যানসার কোশের পার্শ্ববর্তী কোশের সঙ্গে আন্তরকোশীয় সংযোগ বিনষ্ট হয়।

অ্যাজমার পরিবেশগত কারণগুলি কী কী?

অ্যাজমার পরিবেশগত কারণগুলি হল বিভিন্ন প্রাকৃতিক অ্যালার্জেন, যেমন — প্রাণীর মল, উদ্ভিদের পরাগরেণু, ধুলো ও ছত্রাক৷

ক্যানসারের জন্য দায়ী মানবসৃষ্টি কারণগুলি লেখো।

ক্যানসারের জন্য দায়ী মানবসৃষ্টি কারণগুলি হল নানা প্রকার রাসায়নিক উপাদান, যেমন — অ্যাসবেস্টস, কয়লা, তুলো, সিলিকা, পাউডার প্রভৃতি শিল্পজাত উপাদান।

আরো পড়ুন, মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – পরিবেশ তার সম্পদ এবং তাদের সংরক্ষণ – জীববৈচিত্র্য এবং সংরক্ষণ – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

এই পরিবেশ ও সম্পদের বিষয়ে আমাদের জীবন বিজ্ঞান অধ্যয়ন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। পরিবেশ আমাদের সাথে সম্পৃক্ত এবং আমাদের সম্পদ হলো এর অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমাদের জন্ম থেকেই আমরা পরিবেশের অংশীদার এবং পরিবেশ আমাদের জীবনের নির্দিষ্ট অংশ সম্পর্কে নির্দিষ্ট করে তুলে ধরে। তাই, এই সংস্পর্শে আমাদের পরিবেশের সংরক্ষণ ও পরিচালনার জন্য আমরা অবশ্যই সচেষ্ট থাকতে হবে। আমাদের পরিবেশের উন্নতি, জৈবিক সম্পদের সংরক্ষণ এবং স্বাস্থ্যকে সংরক্ষণ করতে হবে।

Share via:

মন্তব্য করুন