মাধ্যমিক ভূগোল – ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ – ভারতের জলবায়ু – সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি

নমস্কার বন্ধুরা! আজকের আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” থেকে ভারতের জলবায়ু বিভাগের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই বিভাগটি মাধ্যমিক স্তরের পরীক্ষা এবং বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই বিভাগ থেকে প্রায়শই প্রশ্ন আসে। আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হবে এবং পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে।

Table of Contents

মাধ্যমিক ভূগোল - ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ - ভারতের জলবায়ু - সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি

ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ – ভারতের জলবায়ু – সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি

শীতকালে ভারতের কোন্ কোন্ অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হয়?

শীতকালে ভারতের মাত্র দুটি অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হয়। এই দুটি অঞ্চল হল- উত্তর-পশ্চিম ভারত এবং ভারতের পূর্ব উপকূলের দক্ষিণাংশ বা করমণ্ডল উপকূল বা তামিলনাডুর উপকূল।

ভারতের কোন্ কোন্ অংশে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 200 সেমি-র বেশি?

ভারতে পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢাল, পূর্ব হিমালয়, মিজোরাম, উত্তরবঙ্গ, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ প্রভৃতি এলাকায় বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 200 সেন্টিমিটারের বেশি।

দুটি ভিন্ন ঋতুতে হয় এমন দুটি ঝড়ের নাম লেখো।

গ্রীষ্মকালে নিম্ন গাঙ্গেয় সমভূমিতে বজ্রবিদ্যুৎসহ যে ঘূর্ণিঝড় হয় পশ্চিমবঙ্গে তাকে কালবৈশাখী বলা হয় এবং আশ্বিন মাস অর্থাৎ শরৎকালে ভারতের পূর্ব উপকূল অঞ্চলে যে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় দেখা যায় পশ্চিমবঙ্গে সেটি আশ্বিনের ঝড় নামে পরিচিত।

‘আশ্বিনের ঝড়’ কাকে বলে?

শরৎকালে ভারতের উপকূল অঞ্চলে মাঝে মাঝে ঘূর্ণিঝড়সহ বৃষ্টিপাত হয়। এতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুব বেশি না হলেও প্রলয়ংকরী ঝড়ের তাণ্ডবে জীবনহানি এবং ধনসম্পত্তির বিপুল ক্ষতি হয়। পশ্চিমবঙ্গে প্রধানত আশ্বিন মাসে এই ধরনের ঘূর্ণিঝড়ের আবির্ভাব ঘটে বলে একে আশ্বিনের ঝড় বলা হয়।

জলবায়ু অঞ্চল কাকে বলে?

জলবায়ুর দুই প্রধান উপাদান-উষ্ণতা ও বৃষ্টিপাত দ্বারা জলবায়ু অঞ্চল নির্ণয় করা হয়। তাই জলবায়ু অঞ্চল বলতে এমন একটি অঞ্চলকে বোঝায়, যেখানে সর্বত্র উষ্ণতা ও বৃষ্টিপাতের প্রকৃতিসহ আবহাওয়ার অন্যান্য উপাদানগুলিও মোটামুটি একই রকম থাকে।

মৌসুমি বায়ু কাকে বলে?

পৃথিবীতে যত ধরনের সাময়িক বায়ু প্রবাহিত হয় তাদের মধ্যে মৌসুমি বায়ু সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিতে। মৌসুমি কথাটির উৎপত্তি আরবি শব্দ মৌসিম থেকে, যার অর্থ ঋতু। সুতরাং, ঋতু অনুসারে যে বায়ু প্রবাহিত হয় তাকেই বলে মৌসুমি বায়ু। ভারতে দুটি বিপরীতধর্মী মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হয়। একটি গ্রীষ্মকালে আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু হিসেবে এবং অপরটি শীতকালে শুষ্ক উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু হিসেবে প্রবাহিত হয়।

ভারতের কোন্ কোন্ অঞ্চলে বৃষ্টিপাত কম হয়?

ভারতের কম বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলগুলি হল –

1. রাজস্থান ও গুজরাতের মরু ও মরুপ্রায় অঞ্চল।
2. কাশ্মীরের লাদাখ মালভূমি।
3. পশ্চিমঘাট পর্বতের পূর্বঢালে অবস্থিত কর্ণাটক মালভূমি এবং মেঘালয় মালভূমির উত্তরে অবস্থিত শিলং।

মেঘালয়ে অতিবৃষ্টির কারণ কী?

গ্রীষ্মকালের শেষে ভারত মহাসাগর থেকে আগত আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর বঙ্গোপসাগরীয় শাখাটি বাংলাদেশের সমভূমি অতিক্রম করে পূর্ব হিমালয় ও উত্তর-পূর্ব ভারতের পার্বত্য অঞ্চলে প্রতিহত হওয়ার আগেই মেঘালয় মালভূমির গারো, খাসি পাহাড়ের দক্ষিণ ঢালে প্রথম বাধা প্রাপ্ত হয়ে মেঘালয়ে প্রবল বৃষ্টিপাত ঘটায়।

পৃথিবীর সর্বাধিক বৃষ্টিবহুল অঞ্চলের নাম কী?

মেঘালয় রাজ্যের দক্ষিপভাগে চেরাপুঞ্জির নিকটে অবস্থিত মৌসিনরাম হল পৃথিবীর সর্বাধিক বৃষ্টিবহুল অঞ্চল। এখানে বার্ষিক প্রায় 1187 সেন্টিমিটারেরও বেশি বৃষ্টিপাত হয়।

খরা কাকে বলে?

স্বল্প বৃষ্টিপাতজনিত কারণে পরিবেশে যে জলবায়ুগত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তাকে খরা বলে। বৃষ্টিপাত যদি স্বাভাবিক হারের চেয়ে 25% কম হয় তাকে স্বল্প খরা, 50% কম হলে মাঝারি খরা এবং 75% কম হলে তাকে তীব্র খরা বলে। খরার ফলে তীব্র জলাভাব দেখা দেয়। এর ফলে কৃষি, সেচ ও পানীয় জলের প্রাপ্যতার ওপর ভীষণভাবে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

ভারতের সর্বাধিক ও সর্বনিম্ন বর্ষণসিক্ত অঞ্চল দুটি কোথায় কোথায় অবস্থিত?

1. ভারতের সর্বাধিক বর্ষণসিক্ত অঞ্চল – মেঘালয়ের খাসি পাহাড়ের দক্ষিণ ঢালে অবস্থিত মৌসিনরাম (চেরাপুঞ্জির কাছে) ভারতের সর্বাধিক বর্ষণসিত্ত স্থান [এ ছাড়া, পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিমঢালে আরব সাগরীয় উপকূল অঞ্চল ও পূর্ব হিমালয়ের পাদদেশ অঞ্চল সর্বাধিক বর্ষণসিক্ত অঞ্চলের অন্তর্গত]।

2. ভারতের সর্বনিম্ন বর্ষণসিক্ত অঞ্চল – রাজস্থানের মরু অঞ্চল বা মরুস্থলী [এ ছাড়া, জম্মু ও কাশ্মীরের লাদাখ মালভূমিও সর্বনিম্ন বর্ষণসিক্ত অঞ্চলের অন্তর্গত]।

শীতকালে তুষারপাত হয় ভারতের এমন দুটি রাজ্যের নাম লেখো।

শীতকালে তুষারপাত হয় ভারতের এমন দুটি রাজ্যের নাম হল – জম্মু ও কাশ্মীর এবং হিমাচল প্রদেশ।

কালবৈশাখী ঝড় কী?

গ্রীষ্মকালের শুরুতে বিকালবেলায় পশ্চিমবঙ্গ ও তার নিকটবর্তী অঞ্চলে মাঝে মাঝেই বজ্র-বিদুৎ ও বৃষ্টিপাতসহ এক ভীষণ ঝড়ের আবির্ভাব হয়। এই ঝড় কালবৈশাখী নামে পরিচিত। উত্তর – পশ্চিমদিক থেকে এই ঝড়ের বায়ু প্রবাহিত হয় বলে একে নরওয়েস্টার (Nor Wester) – ও বলে।

আম্রবৃষ্টি কাকে বলে?

দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক ও কেরল রাজ্যে গ্রীষ্মকালে এপ্রিল মাসে যে বজ্রবিদ্যুৎসহ বৃষ্টিপাত ঘটে, তাকে আম্রবৃষ্টি বলে। আরব সাগর থেকে আগত এই বৃষ্টিপাত আমের ফলনে সাহায্য করে বলে একে আম্রবৃষ্টি বলে। দক্ষিণ ভারতের আমচাষিদের কাছে আম্রবৃষ্টি আশীর্বাদস্বরূপ।

মৌসুমি বিস্ফোরণের সংজ্ঞা দাও।

গ্রীষ্মকালের শেষের দিকে, বিশেষত মে মাসে উত্তর-পশ্চিম ভারতে এক গভীর নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। এই নিম্নচাপের আকর্ষণে সুদূর ভারত মহাসাগরের উচ্চচাপ এলাকা থেকে আর্দ্র বায়ু আরব সাগরীয় ও বঙ্গোপসাগরীয় শাখায় বিভক্ত হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে ভারতে প্রবেশ করে। এই বায়ু দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু নামে পরিচিত। গ্রীষ্মের অসহ্য গরমের মধ্যে আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু আকস্মিকভাবেই ভারতে প্রবেশ করে বজ্রবিদ্যুৎসহ প্রবল বৃষ্টিপাতের মাধ্যমে তাপমাত্রার হ্রাস ঘটায় এবং ভারতে বর্ষাকালের সূচনা ঘটায়। এই ঘটনাকে মৌসুমি বিস্ফোরণ (burst of monsoon) বলে।

মৌসুমি বায়ুর অনিশ্চয়তা বলতে কী বোঝ?

ভারতের বার্ষিক বৃষ্টিপাতের শতকরা 72 ভাগই দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমনকালীন সময়ে ঘটে। কিন্তু, এই বায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্য হল এর অনিশ্চয়তা। কখনও এটি স্বাভাবিক প্রত্যাবর্তন সময়ের আগেই বিদায় নেয়। আবার কখনও থাকে ভীষণভাবে সক্রিয়, ফলে একটানা প্রবল বৃষ্টিপাত হয়। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে কখনও অতিবৃষ্টির ফলে হয় বন্যা, আবার কখনও অনাবৃষ্টিতে খরা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

পশ্চিমি ঝঞ্ঝা কী?

ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিম অংশে শীতকালে যে নাতিশীতোয় ঘূর্ণবাতের আগমন ঘটে, তাকে পশ্চিমি ঝঞ্ঝা বলে। শীতকালে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে সৃষ্ট এই ঘূর্ণবাত পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে ইরাক, ইরান, পাকিস্তান প্রভৃতি দেশ অতিক্রম করে উত্তর-পশ্চিম ভারতে পৌঁছায় এবং জম্মু ও কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ, পাঞ্জাব, উত্তরাখণ্ড ও উত্তরপ্রদেশে প্রবেশ করে বৃষ্টিপাত ও তুষারপাত ঘটায়। পশ্চিম দিক থেকে আসা এই ঘূর্ণবাতগুলি শীতের শান্ত আবহাওয়াকে নষ্ট করে দেয় বলে এদের ‘পশ্চিমি ঝামেলা’ নামেও অভিহিত করা হয়।

মরুস্থলী নামকরণের কারণ কী?

ভারতের পশ্চিমপ্রান্তে পশ্চিম রাজস্থানে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুব কম। সেইজন্য এখানে জীবনের অস্তিত্ব প্রায় নেই বললেই চলে। তাই এই শুফ, নিষ্প্রাণ মরু অঞ্চলকে বলা হয় মরুস্থলী বা মৃতের দেশ।

শীতকালে ভারতের কোথায় কোথায় বৃষ্টিপাত হয়?

প্রত্যাবর্তনকারী মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে তামিলনাডুর উপকূলে এবং ভূমধ্যসাগর থেকে আসা পশ্চিমি ঝঞ্ঝার কারণে উত্তর-পশ্চিম ভারতে শীতকালে বৃষ্টিপাত হয়।

জেট বায়ু কী?

ট্রপোস্ফিয়ারের ওপরের অংশে অতিদ্রুত প্রবহমান পশ্চিমাবায়ু প্রবাহকে জেট বায়ু বলে। এই বায়ুর গতিবেগ ঘণ্টায় 200-400 কিমি পর্যন্ত হতে পারে। এই বায়ু প্রবাহ ভারতের জলবায়ুকে অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করে।

লু বলতে কী বোঝ?

মার্চ-এপ্রিল মাসে উত্তর ভারতের সমভূমি অঞ্চলের তাপমাত্রা অত্যন্ত বেড়ে যায়। এর ফলে মাঝে মাঝে শুষ্ক এবং উন্ন বায়ু প্রবাহ এই অঞ্চলের ওপর প্রবহমান হয়। এই ধরনের উন্ন বায়ু প্রবাহকে লু বলে। যার গতিবেগ ঘণ্টায় 30-35 কিমি।

ভারতের কোথায় কোথায় লু বায়ু প্রবাহিত হয়?

পাঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি এবং উত্তর গুজরাতে লু বায়ু প্রবাহিত হয়। এ ছাড়া পূর্ব ভারতের বিহার, ঝাড়খণ্ড এবং পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া জেলায়ও লু বায়ু প্রবাহিত হয়।

আঁধি কাকে বলে?

গ্রীষ্মকালে রাজস্থানের মরুভূমি অঞ্চলে যে প্রবল ধূলিঝড় হয়, তাকে আঁধি বলে। এই ঝড়ের প্রভাবে প্রবল ধুলো বাতাসে ওড়ে। এই ঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় 50-60 কিমি।

মালাবার উপকূলে প্রবল বৃষ্টি হওয়ার কারণ কী?

জলীয়বাষ্পপূর্ণ মৌসুমি বায়ুর আরব সাগরীয় শাখা মালাবার উপকূলে এসে পৌঁছোয়। এই বায়ু পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিমঢালে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে ওপরে উঠে যায় ও প্রবল বৃষ্টির আকারে নেমে আসে। এই উপকূলে বছরে 300-500 সেমি বৃষ্টিপাত হয়।

তামিলনাড়ু উপকূলে বছরে দুবার বর্ষাকালের কারণ কী?

1. গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বঙ্গোপসাগরীয় শাখা ক্রবার বৃষ্টিপাত ঘটায়।
2. আবার শরৎকালে উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু প্রত্যাবর্তনের সময় বঙ্গোপসাগর থেকে প্রচুর জলীয়বাষ্প সংগ্রহ করে এবং তামিলনাডুর করমণ্ডল উপকূলে বৃষ্টিপাত ঘটায়।

ভারতে বন্যার কারণ কী?

স্বাভাবিক সময়ের আগে বর্ষা শুরু হলে, স্বাভাবিক সময়ের পরে বৃষ্টি হলে, অনিয়মিত এবং বেশি মাত্রায় দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমন ঘটলে। কোনো জায়গায় একটানা বৃষ্টিপাত হলে ভারতে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।

ভারতে খরার কারণ কী?

দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর বিলম্ব প্রবেশ, স্বাভাবিক সময়ের আগে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রত্যাবর্তন ঘটলে, কোনো কারণে জলীয়বাষ্প ঘনীভূত না হতে পারলে ভারতে খরা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।

মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ছেদ বা break of monsoon কাকে বলে?

বর্ষাকালে বিশেষ করে জুলাই-আগস্ট মাসে বায়ুচাপ বলয়ের পরিবর্তন ঘটে। এই পরিবর্তনের জন্য দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রবেশের পথে মাঝে মাঝে বাধা সৃষ্টি হয় তাই বৃষ্টিপাতের সাময়িক বিরতি ঘটে। একে মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ছেদ বলে।

ভারতের জলবায়ুতে লা নিনার প্রভাব লেখো।

অর্থের দিক থেকে লা নিনা (ছোট্ট মেয়ে) হল এল নিনো (শিশু খ্রিস্ট বা ছোট্ট ছেলে)-র ঠিক বিপরীত। লক্ষ করে দেখা গেছে, কোনো কোনো বছর প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্বপ্রান্ত থেকে খরা সৃষ্টিকারী এল নিনো অন্তর্হিত হলে পশ্চিমপ্রান্ত গভীর নিম্নচাপসহ ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়। এল নিনোর ঠিক বিপরীত এই পর্যায়টিকে লা নিনা নামে অভিহিত করা হয়। লা নিনার ওইসব বছরগুলিতে ভারতে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি বৃষ্টিপাত হয় ও বেশি ঘূর্ণবাতের আবির্ভাব ঘটে। ফলে বন্যা ও ভূমিধস বাড়ে এবং বেশি আর্দ্রতার জন্য শীতকালে কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া সৃষ্টি হয়।

আরাবল্লি পর্বতের পশ্চিমে মরুভূমি রয়েছে কেন?

আরাবল্লি পর্বত দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর গতিপথের সঙ্গে সমান্তরালভাবে দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে উত্তর-পূর্বে বিস্তৃত। এরূপ অবস্থানের জন্য আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ওই পর্বতের সমান্তরালে প্রবাহিত হয়ে আরও উত্তরে চলে যায়। ফলে আরাবল্লি পর্বতের পশ্চিমদিকে অবস্থিত অঞ্চলটি প্রায় বৃষ্টিহীন অবস্থাতেই থাকে যা কালক্রমে মরুভূমির সৃষ্টি করেছে।

পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিমডালে শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত ঘটে কেন?

আরব সাগরের ওপর দিয়ে আসা জলীয়বাষ্পপূর্ণ দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু সরাসরি এসে পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢালে বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং ওপরে উঠে শীতল ও ঘনীভূত হয়ে প্রবল বৃষ্টিপাত ঘটায়। এর ফলে পশ্চিমঘাটের পশ্চিম ঢালে প্রচুর শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত হয়।

হিমালয় পর্বত ভারতের জলবায়ুকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে?

হিমালয় পর্বত পূর্ব-পশ্চিমে প্রসারিত বলে- দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু হিমালয়ের দক্ষিণে বাধা পেয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায়। এবং মধ্য এশিয়ার শীতল বায়ু হিমালয় পর্বতে প্রতিহত হয় এবং ভারতে প্রবেশ করতে পারে না। ফলে ভারতীয় ভূখণ্ড তীব্র শীতের হাত থেকে রক্ষা পায়।

মৌসুমি বায়ুকে ঋতুভিত্তিক বায়ু বলে কেন?

মৌসুমি কথাটি এসেছে আরবি শব্দ ‘মৌসম’ থেকে যার অর্থ ঋতু। ঋতুভেদে এই বায়ু ভিন্ন ভিন্ন দিক দিয়ে প্রবাহিত হয়। গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু যে দিক থেকে প্রবাহিত হয় শীতকালে তার বিপরীত দিক থেকে প্রবাহিত হয়। তাই ঋতুভেদে প্রবাহিত হওয়ায় এই বায়ুকে ঋতুভিত্তিক বায়ু বলে।

দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু আর্দ্র কেন?

দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু দক্ষিণের বঙ্গোপসাগর বা ভারত মহাসাগরের দিক থেকে এগিয়ে আসে। এই বায়ু সমুদ্রভাগের ওপর দিয়ে আসে বলে বাতাসে প্রচুর জলীয়বাষ্প থাকে। তাই এই বায়ু আর্দ্র।

কালবৈশাখীর আর-এক নাম ‘নরওয়েস্টার’ কেন?

গ্রীষ্মকালে অধিক উন্নতার কারণে উত্তর এবং পশ্চিম ভারতের তাপমাত্রা খুব বেড়ে যায়। এজন্য সেখানে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। এই নিম্নচাপ স্থায়ীভাবে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি করে যার ফলে দক্ষিণবঙ্গের নানা জায়গায় বজ্রবিদ্যুৎসহ বৃষ্টিপাত ঘটায়। এটি উত্তর-পশ্চিমদিক থেকে আসে বলে এই বৃষ্টিকে নরওয়েস্টার বলে।

আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ”-এর “ভারতের জলবায়ু” বিভাগের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো শুধুমাত্র মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্যই নয়, বরং বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই ধরণের প্রশ্নগুলো প্রায়ই মাধ্যমিক পরীক্ষা ও চাকরির পরীক্ষায় দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। যদি আপনাদের কোন প্রশ্ন বা অসুবিধা হয়, তাহলে আমাকে নির্দ্বিধায় টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন। আমি যথাসাধ্য উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। অবশেষে, অনুরোধ করবো এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করুন যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে।

ধন্যবাদ!

Share via:

মন্তব্য করুন