এখনই আমাদের Telegram Community গ্রুপে যোগ দিন।। এখানে WBBSE বোর্ডের পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির যেকোনো বিষয়ভিত্তিক সমস্যা শেয়ার করতে পারেন এবং একে অপরের সাহায্য করতে পারবেন। এছাড়া, কোনও সমস্যা হলে আমাদের শিক্ষকরা তা সমাধান করে দেবেন।

Telegram Logo Join Our Telegram Community

দশম শ্রেণি – বাংলা – হারিয়ে যাওয়া কালি কলম – বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

আজকের আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক বাংলার তৃতীয় পাঠের দ্বিতীয় বিভাগ “হারিয়ে যাওয়া কালি কলম” থেকে কিছু বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্নের আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য সহায়ক হবে।

Table of Contents

দশম শ্রেণি – বাংলা – হারিয়ে যাওয়া কালি কলম – বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর
দশম শ্রেণি – বাংলা – হারিয়ে যাওয়া কালি কলম – বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

কথায় বলে-কালি কলম মন, লেখে তিন জন। – উদ্ধৃতিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

  • উৎস – শ্রীপান্থ রচিত ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধে স্বয়ং লেখক অতিপ্রচলিত এই উদ্ধৃত প্রবাদটি উল্লেখ করেছেন।
  • প্রসঙ্গ – হারিয়ে যাওয়া কালি কলম সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়েই লেখকের এই অনুভূতি প্রকাশ পায়। আলোচ্য প্রবন্ধে এই মন্তব্যের একটি বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে।
  • তাৎপর্য – মানুষের মনের ভাব ও চিন্তাধারা কলমের সাহায্যে কালির রেখায় সাদা কাগজের ওপর জীবন্ত রূপ লাভ করে। সভ্যতার শুরু থেকেই মানুষ তার মনের কথাগুলো ভবিষ্যতের মানুষের জন্য রেখে যাওয়ার উদ্দেশ্যে লেখার সামগ্রী ব্যবহার করে আসছে। এই ধারায় কালি আর কলম সভ্যতার বিকাশের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কলম মানুষের আবেগ প্রকাশের মাধ্যম। কলম হলো তুলি, কালি হলো রং, আর মন হলো শিল্পী। এই তিনের সমন্বয়ে মনের গভীরে লুকিয়ে থাকা ভাবনাগুলো প্রকাশ পায়। এর মাধ্যমেই সৃষ্টি হয়েছে অজস্র সাহিত্যকর্ম। অর্থাৎ, সাহিত্যের সর্বজনীনতা কালি, কলম, আর মনের মিলনের মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছে। লেখার গুরুত্ব তুলে ধরতেই লেখক এই মন্তব্যটি করেছেন।

সবাই এখানে লেখক। কিন্তু আমি ছাড়া করও হাতে কলম নেই। – এখানে বলতে কোথাকার কথা বলা হয়েছে? লেখক হওয়া সত্ত্বেও কারও হাতে কলম নেই কেন?

উদ্দিষ্ট স্থান – শ্রীপান্থের লেখা ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ রচনার উল্লেখিত অংশে ‘এখানে’ বলতে সেই সংবাদপত্রের অফিসের কথা বলা হয়েছে, যেখানে লেখক কাজ করতেন।

কলম না থাকার কারণ – সংবাদপত্রের অফিস আসলে ‘লেখালেখির’ স্থান। সবাই সেখানে লেখার কাজ করে থাকেন। কিন্তু প্রাচীন প্রবাদ “কালি কলম মন, লেখে তিন জন” বলা হলেও, লেখক লক্ষ্য করেন তার কর্মক্ষেত্রে কেউ কলম ব্যবহার করছেন না। একমাত্র তিনিই কলম ব্যবহার করতেন। কম্পিউটারই সবার একমাত্র অবলম্বন। সবার সামনে ছিল চৌকো আয়নার মতো একটি কাচের পর্দা, আর তার নিচে একটি কীবোর্ড। কীবোর্ডের প্রতিটি বোতামে একটি হরফ ছাপা রয়েছে, এবং সহকর্মীরা সেটির সাহায্যে লিখে চলেছেন। মাঝে মাঝে লেখা থামিয়ে সেই পর্দার দিকে তাকাচ্ছেন, যা লেখা হয়েছে তা সেই পর্দায় দেখা যাচ্ছে। এটি এক নতুন লেখালেখির পদ্ধতি। কলম সেখানে অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। কম্পিউটার ব্যবহারের পরিমাণ এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে, কোনোদিন কলম না আনলে একটি কলম জোগাড় করাই সমস্যার হয়ে যেত। সময়ের অগ্রগতির সাথে সাথে নতুন যুগের এই পদ্ধতিকে সবাই গ্রহণ করেছিল, ফলে কলম অপ্রয়োজনীয় বস্তু হয়ে পড়েছিল।

আমরা কালিও তৈরি করতাম নিজেরাই। – লেখকরা কীভাবে কালি তৈরি করতেন তা প্রবন্ধ অনুসরণে লেখো।

নিখিল সরকার ওরফে শ্রীপান্থ রচিত হারিয়ে যাওয়া কালি-কলম প্রবন্ধে উদ্ধৃত অংশটি ব্যবহৃত হয়েছে।

  • প্রচলিত ছড়া – আলোচ্য প্রবন্ধে লেখক তাঁর ছেলেবেলায় কালি তৈরি নিয়ে প্রচলিত একটি ছড়ার কথা বলেছেন। ছড়াটি হলো – তিল ত্রিফলা শিমুল ছালা/ছাগ দুগ্ধে করি মেলা/লৌহপাত্রে লোহায় ঘষি/ছিঁড়ে পত্র না ছাড়ে মসি।
  • উপকরণ – ছড়াটিতে তিল, ত্রিফলা, শিমুল গাছের ছাল, ছাগলের দুধ ইত্যাদি উপকরণের কথা আছে। এত উপকরণ সংগ্রহ করে কালি তৈরি করা সহজ কাজ ছিল না। তাই লেখক অন্য সহজ পদ্ধতি অবলম্বন করেন।
  • বিকল্প পদ্ধতি – লেখকের বাড়িতে কাঠের আগুনে রান্না হতো। তাতে কড়াইয়ের তলায় প্রচুর কালি জমত। লাউ পাতা দিয়ে তা ঘষে তুলে, পাথরের বাটিতে জলে গুলে রাখা হতো। যারা কালি তৈরিতে দক্ষ ছিলেন, তারা এই কালো জলে হরীতকী ঘষতেন। কখনো-কখনো আতপ চাল ভেজে পুড়িয়ে বেটে সেই জলে মেশানো হতো। এইসব ভালোভাবে মিশিয়ে একটি খুন্তির গোড়া পুড়িয়ে লাল করে সেই জলে স্পর্শ করালে তা টগবগ করে ফুটত। তারপর ন্যাকড়ায় ছেঁকে মাটির দোয়াতে ভরে নিলেই তৈরি হয়ে যেত কালি।

বলতে গেলে তাই নিয়ে আমাদের প্রথম লেখালেখি। – শৈশবের কোন্ বর্ণনা লেখক দিয়েছেন?

  • কথামুখ – হারিয়ে যাওয়া কালি কলম রচনায় লেখক তাঁর শৈশব জীবনের লেখালেখির সূচনার এক চমৎকার বর্ণনা দিয়েছেন। গ্রামজীবনের সঙ্গে যাঁদের শৈশব যুক্ত, লেখকের সমবয়সী সেইসব মানুষ এই বর্ণনার সঙ্গে একমত এবং একাত্ম হতে পারবেন — এই আশা প্রকাশ করেছেন লেখক।
  • লেখার কলম – শৈশবে লেখক সরু বাঁশের কঞ্চি কেটে কলম তৈরি করতেন। বড়দের পরামর্শ অনুযায়ী তিনি কলমের মাথাটা একটু চিরে দিতেন, ফলে কালি আস্তে আস্তে গড়িয়ে পড়ত।
  • লেখার পাতা – লেখা হত কলাপাতায়। কাগজের আকৃতিতে কলাপাতা কেটে, তাতে হোমটাস্ক করে মাস্টারমশাইকে দেখিয়ে তা পুকুরে ফেলে দেওয়া হত।
  • কালি তৈরির পদ্ধতি – কলম তৈরির পাশাপাশি কালিও লেখক নিজেরাই তৈরি করতেন। এক্ষেত্রেও তাঁরা বড়দের সাহায্য নিতেন। সহজ পদ্ধতিতে তাঁরা কালি তৈরি করতেন। কাঠের উনুনে কড়াই বসিয়ে তার তলায় জমে যাওয়া কালি তাঁরা লাউপাতা দিয়ে ঘষে তুলে জলে গুলে নিতেন। কখনো কখনো তার সঙ্গে হরীতকীও মেশাতেন। আবার কখনও আতপ চাল ভেজে পুড়িয়ে তা বেটে ওই জলের সঙ্গে মেশানো হত। এরপর সেই জলে খুন্তির গোড়ার দিক পুড়িয়ে লাল টকটকে করে ছ্যাঁকা দেওয়া হত। সবশেষে ন্যাকড়ায় ছেঁকে মাটির দোয়াতে কালি ভরা হত। এইভাবে লেখকের শৈশব জীবনে ‘লেখালেখি’-র সূচনা হয়।

ভাবি, আচ্ছা, আমি যদি জিশু খ্রিস্টের আগে জন্মাতাম। – কোন্ প্রসঙ্গে লেখকের এই ভাবনা? জিশু খ্রিস্টের আগে জন্মালে তিনি কী করতেন?

প্রসঙ্গ – লেখক শ্রীপান্থ ছেলেবেলায় বাঁশের কলম, মাটির দোয়াত, ঘরে তৈরি কালি এবং কলাপাতা দিয়ে লেখালেখি শুরু করেছিলেন। ফেলে আসা দিনের কথা স্মরণ করতে গিয়ে তিনি আলোচ্য প্রসঙ্গটির অবতারণা করেছেন। কম্পিউটারের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কলমের ব্যবহার কমতে থাকে। কলমের এই দুরবস্থায় লেখকের মন ব্যথিত হয়েছে। শৈশবের লেখালেখির দিনগুলোর কথা তাঁর মনে পড়েছে। সেই সঙ্গে ইতিহাসের পথ ধরে তিনি পরিক্রমা করেছেন। এই প্রসঙ্গেই তাঁর মনে উল্লিখিত ভাবনাটি এসেছে।

লেখকের ইতিহাস ভাবনা

  • প্রাচীন মিশরের প্রসঙ্গ – লেখক ভেবেছেন, যদি তাঁর জন্ম প্রাচীন মিশরে হত, তাহলে তিনি নীল নদের তীর থেকে নলখাগড়া ভেঙে সেটিকে ভোঁতা করে তুলি বানিয়ে লিখতেন।
  • প্রাচীন সুমেরীয় বা ফিনিসীয়দের প্রসঙ্গ – বাঙালি না হয়ে তিনি যদি প্রাচীন সুমেরীয় বা ফিনিসীয় হতেন, তাহলে তাঁকে অন্যভাবে কলম বানাতে হত। ফিনিসীয় হলে হয়তো বন থেকে একটা হাড় কুড়িয়ে এনে তা দিয়েই কলম বানিয়ে নিতেন।
  • প্রাচীন রোমের প্রসঙ্গ – লেখক ভেবেছেন, রোম সাম্রাজ্যের অধীশ্বর হলে তিনি জুলিয়াস সিজারের মতো ব্রোঞ্জের শলাকা বা স্টাইলাস ব্যবহার করতেন। সিজার যে শলাকাটি দিয়ে কাসকাকে আঘাত করেছিলেন, সেটি ছিল ব্রোঞ্জের ধারালো শলাকা।
  • প্রাচীন চীনের প্রসঙ্গ – চীনাদের কলম অবশ্য তুলি। এইভাবে লেখক কলম আবিষ্কারের প্রাগৈতিহাসিক যুগে ফিরে যেতে চেয়েছেন।

কাল গুণে বুঝি বা আজ আমরাও তা-ই। – এখানে কোন্ বিশেষ অবস্থার কথা বলা হয়েছে? এহেন অবস্থার কারণ কী?

বিশেষ অবস্থা – হারিয়ে যাওয়া কালি কলম প্রবন্ধে লেখক শ্রীপান্থ বলেছেন – কালি নেই, কলম নেই, বলে আমি মুনশি। আধুনিক যুগেও কম্পিউটার নির্ভরতার কারণে কলম তার গুরুত্ব হারিয়েছে। কলমের সঙ্গে সংযোগহীন এই অবস্থার কথাই লেখক এখানে উল্লেখ করেছেন।

উক্ত অবস্থার কারণ – কালি কলম মন, লেখে তিন জন — লেখক এ কথাকে মনের মধ্যে লালন করতেন। কিন্তু বাস্তবে কলমের অভাব তাঁকে কষ্ট দিয়েছে। তাঁর কাজ ছিল সংবাদপত্র অফিসে, যেখানে একমাত্র প্রবন্ধকার ছাড়া আর কারও কাছেই কলম নেই। সকলের সামনে কম্পিউটারের মনিটর এবং হাতের কাছে কিবোর্ড রয়েছে। সেই কিবোর্ডের বোতামে লেখা হরফগুলিতে লেখকের সহকর্মীরা হাত লাগিয়ে টাইপ করে চলেছেন আর পর্দার দিকে তাকিয়ে আছেন। এরকম অবস্থায় প্রবন্ধকার যদি কোনোদিন কোনো কারণে কলম আনতে ভুলে যান, তাহলে বিপদ। কারণ, কারও কাছেই কলম পাওয়া যায় না। যদিও বা পাওয়া যায়, তা ব্যবহার-অযোগ্য হয়ে থাকে — কোনোভাবে কাজ সারতে হয়। অথচ তাঁদের অফিসটি ‘লেখালেখির অফিস’ হিসেবেই পরিচিত। অন্যভাবে এ যেন ‘লেখকের কারখানা’। এই পরিবেশে লেখক নিজেকে ‘কলম ছাড়া মুনশি’র সঙ্গে তুলনা করেছেন। আজকাল যন্ত্রনির্ভরতা মানুষকে তার পুরোনো অভ্যাস ও গৌরব থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। এই কারণেই যথেষ্ট চিন্তিত ও হতাশ হয়ে প্রাবন্ধিক শ্রীপান্থ মন্তব্যটি করেছেন।

আমরা এত কিছু আয়োজন কোথায় পাব। – কোন্ কোন্ আয়োজনের কথা বলা হয়েছে? তাঁরা কীভাবে কালি তৈরি করতেন?

কালি তৈরির আয়োজন – প্রাচীন মানুষদের কালি তৈরির প্রসঙ্গে বলা হয়েছিল – তিল ত্রিফলা সিমুল ছালা/ছাগ দুগ্ধে করি মেলা/লৌহপাত্রে লোহায় ঘসি/ছিঁড়ে পত্র না ছাড়ে মসি। কালি তৈরির এইসব আয়োজনের কথাই আলোচ্য প্রবন্ধে বলা হয়েছে। তিল, ত্রিফলা, শিমুল গাছের ছাল, ছাগলের দুধ, লৌহপাত্র ইত্যাদি উপকরণ সংগ্রহ করা তখন সহজ ছিল না।

কালি তৈরির পদ্ধতি – কলম তৈরির পাশাপাশি লেখকরাও নিজেদের কালি নিজেরাই তৈরি করতেন। এজন্য তাঁরা বয়োজ্যেষ্ঠদের সহায়তা নিতেন। কোনোরকম বিশেষ আয়োজন ছাড়াই এক সহজ পদ্ধতিতে তাঁরা কালি তৈরি করতেন। কাঠের উনুনে কড়াই বসিয়ে তার তলায় জমে যাওয়া কালি তাঁরা লাউ পাতা দিয়ে ঘষে তুলে জলে গুলে নিতেন। কখনো কখনো তার সঙ্গে হরীতকী মেশাতেন। আবার কখনও আতপ চাল ভেজে তা পুড়িয়ে বেটে ওই জলে মেশানো হত। এরপর ওই জলে একটি খুন্তির গোড়ার অংশ পুড়িয়ে লাল করে ছ্যাঁকা দেওয়া হত। সবশেষে ন্যাকড়ায় ছেঁকে মাটির দোয়াতে কালি ভরা হত। এইভাবেই লেখকের শৈশবে ‘লেখালেখি’র সূচনা হয়।

আমরা কালিকে তৈরি করতাম নিজেরাই। – কারা কালি তৈরি করতেন? তাঁরা কীভাবে কালি তৈরি করতেন?

উদ্দিষ্ট ব্যক্তি – শ্রীপান্থ রচিত ‘হারিয়ে যাওয়া কালি-কলম’ রচনায় লেখক ও তাঁর সহপাঠীরা কালি তৈরি করতেন।

কালি তৈরির পদ্ধতি – কলম তৈরির পাশাপাশি কালিও লেখকরা নিজেরাই তৈরি করতেন। এক্ষেত্রে তাঁরা বড়দের সাহায্য নিতেন। কোনোরকম আয়োজন ছাড়াই এক সহজ পদ্ধতিতে তাঁরা কালি তৈরি করতেন। কাঠের উনুনে কড়াই বসিয়ে তার তলায় জমে যাওয়া কালি তাঁরা লাউ পাতা দিয়ে ঘষে তুলে জলে গুলে নিতেন। কখনো কখনো তার সঙ্গে হরীতকীও মেশাতেন। আবার কখনও আতপ চাল ভেজে পুড়িয়ে তা বেটে ওই জলের সঙ্গে মেশানো হত। এরপর ওই জলে একটা খুন্তির গোড়ার দিক পুড়িয়ে লাল টকটকে করে ছ্যাঁকা দেওয়া হত। সবশেষে ন্যাকড়ায় ছেঁকে মাটির দোয়াতে কালি ভরা হত। এইভাবেই লেখকের শৈশবে ‘লেখালেখি’র সূচনা হয়।

পালকের কলম তো দূরস্থান, দোয়াতকলমই বা আজ কোথায়! – পালকের কলম সম্পর্কে লেখক কী জানিয়েছেন? দোয়াতকলম প্রসঙ্গে লেখক কী বলেছেন?

পালকের কলম সম্পর্কে লেখকের বক্তব্য – আজকাল কলম এবং দোয়াতের ব্যবহার কমে যাওয়া প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে লেখক শ্রীপান্থ আলোচ্য মন্তব্যটি করেছেন। পালকের কলমকে ইংরেজিতে বলা হয় ‘কুইল’। বাঁশের কলম, খাগের কলম চলে যাওয়ার পর একসময় পালকের কলমের আধিপত্য ছিল। পাখির পালক দিয়ে তৈরি হত এই কলম। লেখক আক্ষেপ করেছেন, পালকের কলম দেখতে হলে পুরানো দিনের তৈলচিত্র কিংবা ফটোগ্রাফ ছাড়া উপায় নেই। 1801 শতকের প্রথমার্ধেও পালকের কলমের প্রচলন ছিল। উইলিয়াম জোন্স বা স-মুনশি কেরি সাহেবের ছবিতে দেখা যায় পালকের কলম। মিশনারিরা এবং ইংরেজ সাহেবরা পালক কেটে কলম তৈরির জন্য পেনসিল শার্পনারের মতো এক প্রকারের যন্ত্রও বানিয়েছিলেন।

দোয়াত-কলম প্রসঙ্গে লেখকের বক্তব্য – লেখক দোয়াত-কলমের নানা বৈচিত্র্যের উল্লেখ করেছেন। কাচের, কাট-গ্লাসের, পোর্সেলিনের, শ্বেতপাথরের, জেডের, পিতলের, এমনকি গোরুর শিং বা সোনার দোয়াতও আগে পাওয়া যেত। লেখক নিজে সুভো ঠাকুরের দোয়াতের সংগ্রহ দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন। এমনকি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে বয়স্করা আশীর্বাদ দিতেন — ‘তোমার সোনার দোয়াত-কলম হোক’। সেই দোয়াত-কলম আজ উধাও। কোনো কোনো অফিসে গিয়ে লেখক ছদ্মবেশী দোয়াত এবং কলম টেবিলে সাজানো দেখেছেন, আসলে এই পেন হলো বল-পেন।

ফাউন্টেন পেন বাংলায় কী নামে পরিচিত? নামটি কার দেওয়া বলে উল্লেখ করা হয়েছে? ফাউন্টেন পেনের জন্ম- ইতিহাস লেখো।

ফাউন্টেন পেনের বাংলা নাম – ফাউন্টেন পেনের বাংলা নাম ঝরনা কলম।

বাংলা নামকরণ – শ্রীপান্থ রচিত ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ গ্রন্থে নামটি সম্ভবত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দেওয়া বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

জন্ম-ইতিহাস – পণ্ডিতদের মতে, কলমের জগতে সত্যিকারের বিপ্লব ঘটিয়েছে ফাউন্টেন পেন। তবে এর জন্ম-ইতিহাসটি বেশ চমকপ্রদ।

  • আবিষ্কারক – এর আবিষ্কারক লুইস অ্যাডসন ওয়াটারম্যান। তিনি এই নতুন ধরনের কলম তৈরি করে অফুরন্ত কালির ফোয়ারা খুলে দিয়েছিলেন।
  • চুক্তিপত্র সই – সেই সময়ের আরও অনেক ব্যবসায়ীর মতো তিনিও দোয়াতকলম নিয়ে কাজে বের হতেন। একবার তিনি গিয়েছিলেন আরেক ব্যবসায়ীর সঙ্গে চুক্তিপত্র সই করতে। দলিল কিছুটা লেখা হয়েছে, এমন সময় দোয়াত হঠাৎ উপুড় হয়ে কাগজে পড়ে গেল। ফলে বাধ্য হয়ে তিনি ছুটলেন কালির সন্ধানে। ফিরে এসে দেখেন, ইতিমধ্যে অন্য একজন তৎপর ব্যবসায়ী সইসাবুদ শেষ করে চুক্তিপত্র পাকা করে গেছেন।
  • প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া – এই ঘটনায় বিমর্ষ ওয়াটারম্যান মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলেন, এর একটা বিহিত করতেই হবে। অর্থাৎ এমন একটি পদ্ধতির খোঁজ করতে হবে, যেখানে কলমের সঙ্গে কালির দোয়াত নিয়ে ঘুরতে হবে না। তারপরই তিনি আবিষ্কার করলেন ফাউন্টেন পেন।
  • নবযুগের প্রতিষ্ঠা – দোয়াতের যুগের অবসান ঘটিয়ে কালক্রমে এই ফাউন্টেন পেন লেখালেখির নবযুগের প্রতিষ্ঠা ঘটায়।

কলম তাদের কাছে আজ অস্পৃশ্য। – কলম কাদের কাছে অস্পৃশ্য? কলম সম্পর্কে লেখক কেন এরকম বলেছেন?

কলম যাদের কাছে অস্পৃশ্য — হারিয়ে যাওয়া কালি কলম রচনায় সময়ের অগ্রগতিতে কলমের পরিণতি দেখে লেখক নিখিল সরকার এই তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্যটি করেছেন। আধুনিকতার পথে কলমও ক্রমশ হারিয়ে যেতে থাকে মানুষের হাত থেকে। সময়ের ধারায় বাঁশের পেন, পালকের পেন ক্রমশ হারিয়ে গিয়ে সেই জায়গায় এল ফাউন্টেন পেন। তারপর সস্তার বল-পেন বাজার দখল করে নেয়। এর ফলে পকেটমারও কলম চুরি করে না — কলম তাদের কাছে আজ অস্পৃশ্য।

এরকম মন্তব্যের কারণ — একসময়ে মানুষের লেখার একমাত্র অবলম্বন ছিল বাঁশের কলম। শৈশবে লেখকরা এরূপ কলম নিজেরাই বানাতেন। সময়ের অগ্রগতিতে বাঁশের কলম উধাও হয়ে এল পালকের কলম। তারপর ফাউন্টেন পেন এবং বল-পেন বাজার দখল করল। ধীরে ধীরে ফেরিওয়ালারাও কলম বিক্রিকে পেশা করল। লেখক অতি আধুনিক ছেলেদের বুকপকেটের পরিবর্তে কাঁধের ছোটো পকেটে কলম সাজিয়ে রাখতে দেখেছেন। এমনকি ভিড় ট্রামে-বাসে মহিলাদের মাথার খোঁপাতে কলম গোঁজা রয়েছে — এমনও দেখা গিয়েছে। লেখকের ভাষায় — বিস্ফোরণ। কলম বিস্ফোরণ। সস্তার কলম বাজারে আসার পরে কলম সুলভ ও সর্বভোগ্য হয়ে উঠল। এভাবেই কলম একসময় তার কদর হারিয়ে ফেলল। ফলে যে পকেটমার একসময় কলম হাতসাফাই করত, তার কাছেও কলম অস্পৃশ্য হয়ে গেল।

পণ্ডিতরা বলেন কলমের দুনিয়ায় যা সত্যিকারের বিপ্লব ঘটায় তা ফাউন্টেন পেন। – ফাউন্টেন পেন কলমের দুনিয়ায় কীভাবে বিপ্লব ঘটিয়েছিল তা লেখো।

  • কথামুখ – হারিয়ে যাওয়া কালি কলম প্রবন্ধে শ্রীপান্থ লেখার দুনিয়ায় ফাউন্টেন পেনের কার্যকারিতা বোঝাতে গিয়ে মন্তব্যটি করেছেন।
  • চুক্তিপত্র সই – লুইস অ্যাডিসন ওয়াটারম্যান ব্যক্তিগত জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে চেয়েছিলেন দোয়াতে কলম ডুবিয়ে লেখালেখির একটা বিকল্প খুঁজে নিতে। ফাউন্টেন পেন আবিষ্কারের ফলে দোয়াত-কালি সঙ্গে নিয়ে ঘোরার দিনের অবসান ঘটে। এরপর দামি থেকে সস্তা — ফাউন্টেন পেনের অজস্র সংস্করণ বের হয়।
  • বিশেষত্ব – ফাউন্টেন পেনের বিশেষত্বই হল, এটি ব্যবহারকারীকে ক্রমশ নেশাগ্রস্ত করে তোলে। লেখক শৈলজানন্দের ছিল এরকম ফাউন্টেন পেন সংগ্রহের নেশা। তিনি উত্তরাধিকারসূত্রে এটি শরৎচন্দ্রের কাছ থেকে পেয়েছিলেন।
  • লুপ্তপ্রায় – প্রথম দিকে ফাউন্টেন পেন সাধারণের নাগালের বাইরে ছিল। রকমারি চেহারার সস্তা এবং দামি ফাউন্টেন পেন বাজারে আসার পরে দোয়াত কলম ক্রমশ বাজার থেকে হারিয়ে যায়। সেগুলি হয়ে ওঠে ঘর সাজানোর উপকরণ। বাঁশের বা কঞ্চির কিংবা খাগের কলম, কালির আধার, ব্লটিং পেপার — এসব জিনিসই ক্রমে অদৃশ্য হয়ে যায়।
  • সহজসাধ্য – সব পড়ুয়ার পকেটেই দেখা যায় ফাউন্টেন পেন। এভাবে একদিকে লেখা সহজসাধ্য হয়ে ওঠে, অন্যদিকে লেখার উপকরণের ঝামেলা থেকে মুক্তি পাওয়াও সম্ভব হয়। এভাবেই কলমের দুনিয়ায় বিপ্লব ঘটিয়েছিল ফাউন্টেন পেন।

ওয়াটারম্যান কীভাবে কালির ফোয়ারা খুলে দিয়েছিলেন?

কথামুখ – লুইস অ্যাডসন ওয়াটারম্যান ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। অন্যান্য ব্যবসায়ীর মতো তিনিও দোয়াতকলম নিয়ে কাজে বের হতেন।

  • চুক্তিপত্র সই – একবার এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে চুক্তিপত্র সই করতে গিয়ে দোয়াত থেকে কালি ফেলে দিলেন সেই দলিলে। বাধ্য হয়ে তিনি শূন্য দোয়াতে কালি ভরতে ছুটলেন। কিন্তু ফিরে এসে শুনলেন, ইতিমধ্যে আরেকজন ব্যবসায়ী এসে সেই চুক্তিপত্রে সই করে চুক্তি পাকা করে ফেলেছেন।
  • বিকল্প পদ্ধতির খোঁজ – হতাশ ও বিমর্ষ ওয়াটারম্যান তখনই ঠিক করলেন, এমন একটা পদ্ধতির খোঁজ করবেন, যেখানে কলমের সঙ্গে কালির দোয়াত নিয়ে ঘুরতে হবে না। এইভাবেই জন্ম নিল ফাউন্টেন পেন।
  • রিজার্ভার পেন – ফাউন্টেন পেনের আগের নাম ছিল রিজার্ভার পেন। ওয়াটারম্যান সেটাকেই উন্নত করে তৈরি করেছিলেন ফাউন্টেন পেন। কলম হিসেবে ফাউন্টেন পেনের ব্যাপক প্রসার ঘটে।
  • হরেক রকম নিব ও কোম্পানি – একটি বিজ্ঞাপনে লেখক দেখেছিলেন তাঁদের তহবিলে নাকি রয়েছে ৭০০ রকম নিব। দোকানে গিয়ে বিভিন্ন কোম্পানির নাম শুনেছিলেন – পার্কার, শেফার, সোয়ান ইত্যাদি। লেখক উল্লেখ করেছেন, তিনি যখন কলেজে পড়তেন, তখন তাঁর সব বন্ধুর পকেটেই ছিল ফাউন্টেন পেন।
  • শেষকথা – সুতরাং, ওয়াটারম্যান তাঁর আবিষ্কারের পর সত্যিই যেন কালির ফোয়ারা খুলে দিয়েছিলেন।

বিমর্ষ ওয়াটারম্যান মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলেন-আর নয়, এর একটা বিহিত তাঁকে করতেই হবে। – ওয়াটারম্যান কে? তিনি বিমর্ষ কেন? তাঁর প্রতিজ্ঞার ফল কী হয়েছিল?

ওয়াটারম্যানের পরিচয় – লুইস অ্যাডসন ওয়াটারম্যান ছিলেন ফাউন্টেন পেনের আবিষ্কারক।

বিমর্ষতার কারণ – ওয়াটারম্যান সেকালের অন্যান্য ব্যবসায়ীদের মতোই দোয়াত-কলম নিয়ে কাজে বের হতেন। একবার তিনি গিয়েছিলেন এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে একটি চুক্তিপত্র সই করতে। যখন দলিল কিছুটা লেখা হয়েছিল, ঠিক সেই সময়ে হঠাৎ দোয়াত উপুড় হয়ে কাগজে পড়ে যায়। ফলে তাঁকে বাধ্য হয়েই কালির সন্ধানে যেতে হয়। কালি সংগ্রহ করে ফিরে এসে দেখেন যে, অন্য একজন তৎপর ব্যবসায়ী সইসাবুদ করে চুক্তিপত্র পাকা করে চলে গেছেন। এই ঘটনাতেই ওয়াটারম্যান বিমর্ষ হয়ে পড়েন।

প্রতিজ্ঞার ফল – বিমর্ষ ওয়াটারম্যানের প্রতিজ্ঞা জন্ম দিয়েছিল ফাউন্টেন পেনের। কলমের জগতে এই পেন বিপ্লব ঘটিয়েছিল। বাঁশের কঞ্চির কলম, খাগের কলম, পালকের কলম ইত্যাদির যুগের অবসান ঘটল। পাশাপাশি, দোয়াতে কলম ডুবিয়ে লেখার দিনও শেষ হল। ধীরে ধীরে সস্তা ও দামি নানারকম ফাউন্টেন পেন বাজার দখল করে নিল। সকলের কাছে এই কলম গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠল। দোয়াত-কলমের যুগের অবসানে আমাদের লেখালেখি আধুনিক যুগে প্রবেশ করল। এই পরিবর্তনের মূলে ছিল ওয়াটারম্যানের প্রতিজ্ঞা।

আমার মনে পড়ে প্রথম ফাউন্টেন কেনার কথা। – লেখক কোথায় ফাউন্টেন কিনতে গিয়েছিলেন? তাঁর কী অভিজ্ঞতা হয়েছিল?

স্থান – হারিয়ে যাওয়া কালি কলম রচনায় লেখক জানিয়েছেন, কলকাতার কলেজ স্ট্রিটের একটি নামী দোকানে তিনি ফাউন্টেন পেন কিনতে গিয়েছিলেন।

অভিজ্ঞতা – ফাউন্টেন পেনের আবিষ্কার পেনের জগতে বিপ্লব ঘটিয়ে এক অফুরন্ত কালির ফোয়ারা খুলে দিয়েছিল।

  • ফাউন্টেন পেন কিনতে যাওয়া – দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কয়েক বছর পরে কোনো একদিন লেখক কলেজ স্ট্রিটের একটি নামী দোকানে ফাউন্টেন পেন কিনতে গিয়েছিলেন। দোকানদার তাঁকে পার্কার, শেফার্ড, ওয়াটারম্যান, সোয়ান, পাইলট—হরেক রকম পেনের নাম ও তাদের দামের কথাও বলেন।
  • জাপানি পাইলট পেন কেনা – লেখকের মুখের অবস্থা দেখে এবং তাঁর পকেটের অবস্থা বুঝতে পেরে দোকানদার তাঁকে একটি সস্তা জাপানি পাইলট কলম কিনতে বলেন। দোকানদার পেনটির ঢাকনা খুলে একটি কাঠের বোর্ডের ওপর ছুঁড়ে দেন। সার্কাসে যেমন জীবন্ত মানুষের দিকে ছুরি ছুঁড়ে দেওয়ার পরও সে অক্ষত থাকে, তেমনি বোর্ড থেকে তুলে দোকানদার দেখান, পেনটির নিব অক্ষত আছে। তারপর তিনি দু-এক ছত্র লিখেও দেখান। আনুমানিক ১৫-১৬ বছরের কিশোর লেখকের কাছে পেনটি জাদুপেন বলেই মনে হয়।
  • তবুও – লেখক পরবর্তীকালে অনেক ফাউন্টেন পেন কিনলেও বহুদিন ওই জাপানি পাইলটটি তিনি যত্ন করে রেখেছিলেন।

আমি সেদিন সেই জাদু-পাইলট নিয়েই ঘরে ফিরেছিলাম – জাদু-পাইলটের যে কাহিনি লেখক বিবৃত করেছেন তা নিজের ভাষায় লেখো।

অথবা, কিন্তু অনেক দিন পর্যন্ত বাঁচিয়ে রেখেছিলাম সেই জাপানি পাইলটকে – প্রাবন্ধিকের জাপানি পাইলট কেনার কাহিনিটি নিজের ভাষায় লেখো।

অভিজ্ঞতা – ফাউন্টেন পেনের আবিষ্কার পেনের জগতে বিপ্লব ঘটিয়ে এক অফুরন্ত কালির ফোয়ারা খুলে দিয়েছিল।

  • ফাউন্টেন পেন কিনতে যাওয়া – দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কয়েক বছর পরে, কোনো একদিন লেখক কলেজ স্ট্রিটের একটি নামকরা দোকানে ফাউন্টেন পেন কিনতে গিয়েছিলেন। দোকানদার তাঁকে পার্কার, শেফার, ওয়াটারম্যান, সোয়ান, পাইলট—হরেক রকম পেনের নাম ও তাদের দামের কথাও বলেন।
  • জাপানি পাইলট পেন কেনা – লেখকের মুখের অবস্থা দেখে এবং তাঁর পকেটের অবস্থা বুঝতে পেরে, দোকানদার তাঁকে একটি সস্তা জাপানি পাইলট কলম কিনতে বলেন। দোকানদার পেনটির ঢাকনা খুলে একটি কাঠের বোর্ডের ওপর ছুঁড়ে দেন। সার্কাসে যেমন জীবন্ত মানুষের দিকে ছুরি ছুঁড়ে দেওয়ার পরও সে অক্ষত থাকে, বোর্ড থেকে তুলে দোকানদারও দেখান, পেনটির নিব অক্ষত আছে। তারপর তিনি দু-এক ছত্র লিখেও দেখান। আনুমানিক 15-16 বছরের কিশোর লেখকের কাছে পেনটি জাদুপেন বলেই মনে হয়।
  • তবুও – লেখক পরবর্তীকালে অনেক ফাউন্টেন পেন কিনলেও বহুদিন ওই জাপানি পাইলটটি তিনি যত্ন করে রেখেছিলেন।

দোয়াত যে কত রকমের হতে পারে, না দেখলে বিশ্বাস করা শক্ত। – কত রকমের দোয়াতের কথা বলেছেন বক্তা? এই প্রসঙ্গে তিনি আর কী তথ্য দিয়েছেন পাঠ্যরচনা অবলম্বনে লেখো।

দোয়াতের রকমভেদ – শ্রীপান্থ তাঁর হারিয়ে যাওয়া কালি কলম রচনায় দোয়াতের নানারকম বৈচিত্র্যের কথা উল্লেখ করেছেন। যেমন – কাচের, কাঠ-গ্লাসের, পোর্সেলিনের, শ্বেতপাথরের, জেডের, পিতলের, ব্রোঞ্জের, ভেড়ার শিং – এর, এমনকি সোনারও।

প্রসঙ্গক্রমে লেখকের দেওয়া তথ্য –

  • সুভো ঠাকুরের প্রসঙ্গ – লেখক শ্রীপান্থ উল্লেখ করেছেন যে, সোনার দোয়াতকলম যে সত্যিই হতে পারে তা তিনি জেনেছিলেন সুভো ঠাকুরের বিখ্যাত দোয়াত সংগ্রহ দেখতে গিয়ে। আবার তিনি এ কথাও জেনেছেন যে, গ্রামে কেউ দু-একটা পাস করলে বুড়োবুড়িরা আশীর্বাদ করে বলতেন, “বেঁচে থাকো বাছা, তোমার সোনার দোয়াত কলম হোক।”
  • ইতিহাসের প্রসঙ্গ – এছাড়াও শ্রীপান্থ কোনো কোনো দোয়াতের সঙ্গে সাহিত্য এবং ইতিহাসের নানা চরিত্রের যোগের কথাও মনে করেছেন।
  • অবিস্মরণীয় সাহিত্যসৃষ্টি – অবাক হয়ে লেখক ভেবেছেন যে শেকসপিয়র, দান্তে, মিল্টন, কালিদাস, ভবভূতি, কাশীরাম দাস, কৃত্তিবাস থেকে রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিমচন্দ্র, শরৎচন্দ্র সকলেই এইসব দোয়াতের কালি দিয়ে তাঁদের অবিস্মরণীয় রচনাগুলি লিখে গেছেন।
  • দোয়াতের যুগের অবসান – কিন্তু ফাউন্টেন পেন আসার সঙ্গে সঙ্গে এইসব দোয়াতের যুগ শেষ হয়ে গেছে। এখন সেগুলি নিতান্তই ঘর সাজানোর উপকরণ। প্রথমে বাঁশের বা কঞ্চির কলম, পরে নিবের কলম – লেখকের লেখালেখির ক্ষেত্রে দোয়াতের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। কিন্তু ‘কালি কলমের ভক্ত’ লেখক ফাউন্টেন পেনের জনপ্রিয়তার সঙ্গে সঙ্গেই এই দোয়াতের যুগের অবসানকে প্রত্যক্ষ করেছেন।

আশ্চর্য, সবই আজ অবলুপ্তির পথে। — কোন্ জিনিস আজ অবলুপ্তির পথে? এই অবলুপ্তির কারণ কী? এ বিষয়ে লেখকের মতামত কী?

অবলুপ্তির পথে যা – হারিয়ে যাওয়া কালি কলম রচনায় লেখক শ্রীপান্থের মতে, কলম আজ অবলুপ্তির পথে।

অবলুপ্তির কারণ – কম্পিউটারের আধিপত্য এবং তার প্রতি মানুষের ক্রমবর্ধমান নির্ভরতা কলমের এই অবলুপ্তির কারণ।

লেখকের অভিমত – শৈশব থেকেই লেখকের শিক্ষাজীবনের সঙ্গী ছিল বাঁশের কলম, খাগের কলম, পালকের কলম ইত্যাদি। পরে বাজারে আসে ফাউন্টেন পেন। কলমের বাজারে এই পেন একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে। এরপর ফাউন্টেন পেনকেও ম্লান করে বাজারে আসে বলপেন। কলম হয়ে ওঠে সস্তা এবং সর্বজনীন। সর্বজনীন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কলম তার নিজস্ব কদর হারাতে থাকে। একদিন যে দোয়াতকলম দিয়ে লিখে দেশ-বিদেশের সাহিত্যিকরা অমর সৃষ্টি রেখে গিয়েছেন, সেই দোয়াতকলম ইতিহাসের পাতায় চলে যায়। বিজ্ঞানের বিস্ময়কর সৃষ্টি হিসেবে কলমের জায়গা দখল করে নেয় কম্পিউটার। সাংবাদিক হিসেবে লেখার কাজেই ব্যস্ত লেখকের এক অদ্ভুত কলমপ্রীতি ছিল। বাঁশের কলম, খাগের কলম ছেড়ে বলপেনের কাছে আত্মসমর্পণ করেও লেখক বিপন্ন বোধ করেছেন। যদি হাতের লেখা মুছে যায় চিরকালের জন্য — এই কথা ভেবে তিনি বিচলিত হয়ে উঠেছেন। কম্পিউটারের প্রভাবে সর্বপ্রকার কলমের অবলুপ্তির আশঙ্কায় লেখক একইসঙ্গে আতঙ্কিত ও আশ্চর্য হয়েছেন।

কম্পিউটার তাদের জাদুঘরে পাঠাবে বলে যেন প্রতিজ্ঞা করেছে। – তাদের বলতে কাদের কথা বলা হয়েছে? তাদের ঐতিহ্যের প্রতি লেখক শ্রদ্ধাশীল কেন?

তাদের পরিচয় – আলোচ্য অংশটি শ্রীপান্থের লেখা ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ নামক প্রবন্ধ থেকে গৃহীত। এখানে “তাদের” বলতে পুরোনো দিনের নানা ধরনের কলম, কালি, দোয়াত, ফাউন্টেন পেন এবং বল-পেনের কথা বোঝানো হয়েছে।

ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল – লেখক শ্রীপান্থ ছোটোবেলা থেকেই কালিকলমের প্রতি গভীর ভক্তি পোষণ করতেন। তিনি নানা ধরনের কলম ও কালি ব্যবহার করতেন। একসময় বাজারে আসে নানা ধরনের ফাউন্টেন পেন। অতীতের প্রখ্যাত কবি-সাহিত্যিকরা এই কালিকলম দিয়েই তাঁদের অমর রচনাগুলি লিখেছেন। কিন্তু বর্তমানে সেই কালিকলম এবং দোয়াত প্রায় বিলুপ্তির পথে। তাদের জায়গা দখল করেছে কম্পিউটার। এখন বোতামে চাপ দিয়ে অক্ষর বিন্যাস করা হয়, যা লেখকের মতে খুবই যান্ত্রিক। এতে মনের সংযোগ অনেকটাই কম থাকে। লেখক মনে করেন, হাতের লেখার একটি আলাদা মূল্য আছে, যা কম্পিউটার কখনও ক্ষুণ্ণ করতে পারবে না। তাঁর মতে, কলমের স্থান ইতিহাসে চিরকাল গৌরবময়, এবং এই উদ্ধৃতির মাধ্যমে কালি ও কলমের প্রতি তাঁর অটুট ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রকাশ পেয়েছে।

কলমের পরিবর্তে বর্তমানে কোনটি লেখার সামগ্রী হয়ে উঠেছে? এই বিষয়ের লেখকের মনোভাব লেখো।

কলমের পরিবর্তে বর্তমানে কম্পিউটার লেখার সামগ্রী হয়ে উঠেছে।

ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল — লেখক শ্রীপান্থ কালিকলমের ভক্ত ছিলেন। ছোটবেলায় নানা ধরনের কলম তিনি ব্যবহার করতেন। আগে কালি তৈরির পদ্ধতিও ছিল বিচিত্র। তারপর বাজারে এলো নানা ধরনের ফাউন্টেন পেন। অতীতের প্রখ্যাত কবি-সাহিত্যিকেরা এই কালিকলম দিয়েই তাঁদের অমর রচনাগুলি লিখে গেছেন। কিন্তু পুরোনো দিনের সেই কালিকলম এবং দোয়াত এখন অবলুপ্তির পথে। তার জায়গা দখল করে নিয়েছে কম্পিউটার। বোতামের ওপর চাপ দিয়ে এখন অক্ষর বিন্যাস করা যায়। লেখকের মতে, এই পদ্ধতি যান্ত্রিক। এতে মনের সংযোগ খুবই কম। হাতের লেখার একটি আলাদা মূল্য আছে, যার মাহাত্ম্য কম্পিউটার কখনও ক্ষুণ্ণ করতে পারে না। লেখক মনে করেছেন, এই জন্যই ইতিহাসে কলমের স্থান চিরকাল গৌরবময়। উদ্ধৃতিটির মধ্য দিয়ে কালি ও কলমের প্রতি তাঁর অটুট ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার কথাই প্রকাশিত হয়েছে।

যাঁরা ওস্তাদ কলমবাজ তাঁদের বলা হলো ক্যালিগ্রাফিস্ট বা লিপি-কুশলী। – লিপিকুশলীদের কাজ কী ছিল? এই প্রবন্ধে লিপিকুশলী সম্বন্ধে যা জানা যায় তা লেখো।

লিপি-কুশলীদের কাজ – প্রাবন্ধিক শ্রীপান্থ তাঁর ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ রচনায় লিপি-কুশলীদের উল্লেখ করেছেন। এই লিপি-কুশলীদের কাজ ছিল মূলত লিপি নকল করা।

লিপি-কুশলীদের সম্পর্কে জানা তথ্য – লিপি-কুশলীরা ছিলেন ওস্তাদ কলমবাজ, যাঁদের দক্ষতা ছিল অনবদ্য।

  • মর্যাদার অধিকারী – মোগল দরবার-সহ সারা পৃথিবীজুড়েই এই লিপি-কুশলীদের যথেষ্ট মর্যাদা ছিল। বাংলা দেশে রাজা-জমিদাররা লিপি-কুশলীদের গুণী হিসেবে সম্মান করতেন এবং তাঁদের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করতেন।
  • অসামান্য অক্ষরসজ্জা – সাধারণ গৃহস্থরাও লিপিকরদের ডেকে পুঁথি নকল করাতেন। সেসব পুঁথির অক্ষরসজ্জা ছিল অসামান্য। প্রতিটি ছত্র ছিল সুশৃঙ্খল ও পরিচ্ছন্ন। তাঁদের হাতের লেখা ছিল মুক্তোর মতো।
  • আর্থিক অসচ্ছলতা – তবে আর্থিকভাবে লিপি-কুশলীরা সচ্ছল ছিলেন না। তাঁদের রোজগার ছিল অতিসামান্য। চার খণ্ড রামায়ণ নকল করে একজন লেখক 18 শতকে মাত্র সাত টাকা, কিছু কাপড় আর মিঠাই পেয়েছিলেন। এমনও জানা যায় যে, 19 শতকে বারো আনায় বত্রিশ হাজার অক্ষর লেখানো যেত।
  • গর্বের বিষয় – পুঁথিকে ঘিরে লিপিকরদের অনেক গর্ব ছিল। পুঁথি যাতে কেউ চুরি না করে, সেদিকে তাঁদের সতর্ক দৃষ্টি থাকত।
  • ইতিহাসের চরিত্র – এই লিপিকররা আজ ইতিহাসের চরিত্র। তাঁদের তৈরি পুঁথিগুলো ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রী। একসময় কেবল একটি কলমকে সঙ্গী করেই তাঁরা নিজেদের দ্বারা ইতিহাস তৈরি করে দিয়ে গেছেন।

মুঘল দরবারে একদিন তাঁদের কত না খাতির, কত না সম্মান? – তাঁদের বলতে কাদের কথা বলা হয়েছে? তাঁদের খাতির ও সম্মানের পরিচয় দাও।

উদ্দিষ্ট ব্যক্তি – শ্রীপান্থ রচিত ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ রচনার উল্লিখিত অংশে ‘তাঁদের’ বলতে লিপি কুশলী বা ক্যালিগ্রাফিস্টদের কথা বলা হয়েছে।

খাতির ও সম্মানের পরিচয় – লিপিকুশলীরা ছিলেন লেখকের কথায় ‘ওস্তাদ কলমবাজ’।

  • আর্থিক অসচ্ছলতা – তাঁদের আর্থিক অবস্থা যে সবসময় ভালো ছিল তা নয়। ১৮শ শতকে চারখণ্ড রামায়ণ কপি করে একজন লিপিকার পেয়েছিলেন নগদ সাত টাকা, কিছু কাপড় ও মিঠাই। এক সাহেবের লেখা থেকে জানা যায় যে ১৯শ শতকে বারো আনায় বত্রিশ হাজার অক্ষর লেখানো যেত।
  • সামাজিক সম্মান – তাঁদের সামাজিক সম্মান ছিল যথেষ্ট। মুঘল দরবারে তো বটেই, সর্বত্র, এমনকি বাংলার রাজা-জমিদাররা তাঁদের গুণীজনদের সম্মান দিতেন এবং ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করতেন।
  • অসামান্য অক্ষরসজ্জা – সাধারণ গৃহস্থরাও এইসব লিপিকারদের ডেকে পুঁথির নকল করাতেন। সেসব পুঁথি দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যেত। প্রতিটি ছত্র সুশৃঙ্খল ও পরিচ্ছন্ন ছিল। মুক্তোর মতো লেখা অক্ষরগুলি।
  • গর্ব ও আত্মমর্যাদাবোধ – সামান্য উপার্জন করলেও সম্মান ও সমাদর তাঁদের যথেষ্ট ছিল। আর সেজন্য একধরনের শিল্পীসুলভ অহংকার তাঁদের মধ্যে দেখা যেত। পুঁথি যাতে কেউ চুরি না করতে পারে, তাই তাঁদের সতর্ক দৃষ্টি ছিল। খাতির, সম্মান ও আত্মমর্যাদাবোধ মিলে লিপিকাররা প্রায় লেখকের শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন।

কলমকে বলা হয় তলোয়ারের চেয়েও শক্তিধর। – বিভিন্ন প্রকার কলমের পরিচয় দিয়ে লেখকের এই মন্তব্য ব্যাখ্যা করো।

আদিপর্বের কলম – একসময় কলম তৈরি হত বাঁশের সরু কঞ্চি দিয়ে। এরপর খাগের কলম, পশুর হাড়ের কলম, পাখির পালকের কলম, ব্রোঞ্জের কলম, তুলির কলম ইত্যাদির প্রচলন হয়।

  • ফাউন্টেন পেন – এরপর এল ফাউন্টেন পেন। ওয়াটারম্যানের এই আবিষ্কার কলমের জগতে বিপ্লব নিয়ে আসে। কালিতে ডুবিয়ে লেখা কলমগুলির যুগ শেষ হলো। সস্তা ও দামি নানা ধরনের ফাউন্টেন পেন বাজার দখল করে নেয়। পাইলট, পার্কার, শেফার, ওয়াটারম্যান, সোয়ান ইত্যাদি নামের বিভিন্ন ফাউন্টেন পেন বাজারে আসে। সেই সব পেনের রকমারি ও আকর্ষণীয় নিব ও হ্যান্ডেল ছিল। প্লাটিনাম, সোনা ইত্যাদি দিয়েও অভিজাতদের জন্য ফাউন্টেন পেন তৈরি হত। এরপর ফাউন্টেন পেনের পরিবর্তে বাজারে আসে বল-পেন। কলম তখন আরও সস্তা ও সহজলভ্য হয়ে ওঠে।
  • লেখকের মন্তব্য – কলম তলোয়ার-এর চেয়েও শক্তিশালী – এই প্রবাদবাক্যটি প্রথমে সাহিত্যে ব্যবহার করেছিলেন ইংরেজ নাট্যকার এডওয়ার্ড বুলওয়ার-লিটন তাঁর Richelieu; or the Conspiracy নাটকে। এই মন্তব্য স্পষ্ট করে দেয়, যুদ্ধবাজ এবং অস্ত্রনির্ভর মানুষদের চেয়ে কবি-সাহিত্যিকদের ক্ষমতা অনেক বেশি। কলমের এই শক্তির দিকটি প্রকাশের জন্যই সম্ভবত ফাউন্টেন পেনের ক্ষেত্রে ‘ব্যারেল’ এবং ‘কার্টিজ’ এর মতো যুদ্ধ-সংশ্লিষ্ট শব্দ ব্যবহৃত হয়। একজন শাসক যুদ্ধ করে ভূখণ্ড জয় করতে পারেন, কিন্তু মানুষের মন জয় করতে পারেন না। অন্যদিকে, একজন লেখক কলমের মাধ্যমে মানুষের মন জয় করতে পারেন। প্রাবন্ধিক উল্লেখ করেছেন, ইতিহাসে বহু লেখককে অস্ত্র হাতে লড়াই করতেও হয়েছে। তবে এই প্রবাদবাক্যের অন্তর্নিহিত অর্থ হলো – তলোয়ার যে কাজ করতে পারে না, কলম তা করতে সক্ষম। কলম মানবজীবনকে সুন্দর ও উন্নততর করে তোলে।

কিন্তু সে ছবি কতখানি যন্ত্রের, আর কতখানি শিল্পীর? – সে ছবি বলতে লেখক কোন্ ছবির কথা বলেছেন? যন্ত্রের ছবি আর শিল্পীর ছবির মধ্যে পার্থক্য কী?

ছবির কথা – সেই ছবি বলতে লেখক কম্পিউটারে আঁকা ছবির কথাই বলেছেন।

যন্ত্রের ছবি বনাম শিল্পীর ছবি – কম্পিউটার একটি যন্ত্র। প্রযুক্তির সহায়তায় সেখানে ছবি আঁকা হয়, কিন্তু সেই ছবির সঙ্গে মনের কোনো সংযোগ থাকে না। ছবি আঁকাও এক ধরনের সৃজনশীল শিল্পকর্ম। শিল্পের সঙ্গে শিল্পীর সম্পর্ক গভীর এবং অবিচ্ছিন্ন। কম্পিউটারের মন বলে কিছু নেই। তার রেখা নিছকই যন্ত্রের আঁকিবুঁকি। অন্যদিকে, শিল্পী ছবি আঁকেন তার নিজের অনুভূতির রঙে। সেখানে মনের মাধুরীর সঙ্গে মিশে থাকে শিল্পীর আবেগ। রবীন্দ্রনাথও অক্ষর কাটাকাটি করতে গিয়ে আনমনে সাদা-কালো ছবি এঁকে ফেলতেন। এই ছবির মধ্যে খেয়ালি মনের প্রকাশ রয়েছে। কিন্তু কম্পিউটারে সেই আবেগ ও অনুভূতির কোনো স্থান নেই। লেখক বলতে চেয়েছেন, মনের সৃষ্টিকে যন্ত্রের সাহায্যে প্রকাশ করতে গেলে তা কৃত্রিম হয়ে পড়ে। আবেগ ছাড়া কোনো শিল্প জীবন্ত হতে পারে না। যখন ভাব ঘনীভূত হয়, তখন শিল্পী রং ও তুলির সাহায্যে তা ফুটিয়ে তোলেন। তাই কম্পিউটারে আঁকা ছবির তুলনায় শিল্পীর আঁকা ছবি অনেক বেশি জীবন্ত মনে হয়।

মনে মনে সেই ফরাসি কবির মতো বলেছি – লেখক ফরাসি কবির মতো কী বলেছেন? তাঁর সে-কথা বলার কারণ কী?

লেখকের বক্তব্য – লেখক ফরাসি কবির মতো মনে মনে বলেছেন, “তুমি সবল, আমি দুর্বল। তুমি সাহসী, আমি ভীরু। যদি তুমি আমাকে হত্যা করতে চাও, আচ্ছা, তবে তা-ই হোক। ধরে নাও আমি মৃত।”

সে-কথা বলার কারণ – সময় পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পুরোনো কালিকলম স্মৃতির আড়ালে হারিয়ে গেছে। লেখক শ্রীপান্থ মনের গভীরে ধারণ করেন সেই হারিয়ে যাওয়া কালিকলমের মাহাত্ম্য। অনেক লেখক যুগের প্রয়োজনে পুরোনো কালিকলম ছেড়ে ফাউন্টেন ও বল-পেন গ্রহণ করেছেন। কেউ কেউ লেখার কাজে কম্পিউটার ব্যবহার শুরু করেছেন। লেখকও বাধ্য হয়ে পুরোনো কলম ছেড়ে বল-পেনের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে পুরোনো কলম ছেড়ে দেননি; যুগের প্রয়োজন তাঁকে নতুন লেখার সামগ্রী ব্যবহার করতে বাধ্য করেছে। লেখকের মনে হয়েছে, শক্তিশালী বল-পেন যদি সত্যিই তাঁর ইচ্ছাকে হত্যা করে, তাতে তাঁর কিছু করার নেই। যুগের প্রভাব থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। যুগের দাবির কাছে তিনি একপ্রকার মৃত সৈনিক। ফরাসি কবির মতোই তাঁর এই অসহায়তা প্রকাশ পেয়েছে।


আজকের এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক বাংলার তৃতীয় পাঠের দ্বিতীয় বিভাগ “হারিয়ে যাওয়া কালি কলম” থেকে কিছু বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন-উত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো মাধ্যমিক বা চাকরির পরীক্ষায় আসার সম্ভাবনা রয়েছে। আশা করছি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য সহায়ক হয়েছে। যদি কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকে, টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমি সাহায্য করার চেষ্টা করব। এছাড়া, আপনার পরিচিতদের সাথে এই পোস্টটি শেয়ার করতে ভুলবেন না, যারা এর থেকে উপকৃত হতে পারেন। ধন্যবাদ!

Share via:

মন্তব্য করুন