এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “আয়ন বায়ু, পশ্চিমা বায়ু ও মেরু বায়ু – টীকা লেখো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। “আয়ন বায়ু, পশ্চিমা বায়ু ও মেরু বায়ু – টীকা লেখো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের দ্বিতীয় অধ্যায় “বায়ুমণ্ডল – বায়ুর চাপ বলয় ও বায়ুপ্রবাহ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

আয়ন বায়ু, পশ্চিমা বায়ু ও মেরু বায়ু – টীকা লেখো।
আয়ন বায়ু –
কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে সারাবছর ধরে প্রায় নিয়মিতভাবে নির্দিষ্ট পথে অর্থাৎ নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত বায়ু হল আয়ন বায়ু।
আয়ন বায়ুর বৈশিষ্ট্য –
- উত্তর গোলার্ধে এই বায়ু কর্কটীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে ফেরেলের সূত্র অনুসারে প্রবাহিত হয়।
- উত্তর গোলার্ধে স্থলভাগ বেশি থাকায় আয়ন বায়ুর গতিবেগ কম (ঘণ্টায় প্রায় 16 কিমি) হয় কিন্তু দক্ষিণ গোলার্ধে জলভাগ বেশি থাকায় এর গতিবেগ অধিক (ঘণ্টায় প্রায় 22 কিমি) হয়।
- এই বায়ুর প্রভাবে মহাদেশের পূর্ব দিকে প্রবল বৃষ্টিপাত হয় কিন্তু পশ্চিম অংশে বৃষ্টিপাতের অভাবে পৃথিবীর বৃহত্তম মরুভূমিগুলি (1টি) সৃষ্টি হয়েছে।
পশ্চিমা বায়ু –
কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে সুমেরু ও কুমেরু বৃত্তীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে যে বায়ু প্রবাহিত হয় তাকে পশ্চিমা বায়ু বলে।
পশ্চিমা বায়ুর বৈশিষ্ট্য –
- এটি একপ্রকার নিয়ত বায়ু। উভয় গোলার্ধের 35°-36° অক্ষরেখার মধ্যে প্রবাহিত হয়।
- দক্ষিণ গোলার্ধে জলভাগের বিস্তার বেশি থাকায় 40°-60° দক্ষিণ অক্ষাংশে এই বায়ু প্রবল বেগে প্রবাহিত হয়।
- উত্তর গোলার্ধে এটি দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে ও দক্ষিণ গোলার্ধে উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহিত হয়।
- পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে শীতকালে এবং মহাদেশগুলির পশ্চিমাংশে বৃষ্টিপাত ঘটে। এই বায়ুকে 40° দঃ অক্ষাংশে গর্জনশীল চল্লিশা, 50° দঃ অক্ষাংশে ভয়ংকর পঞ্চাশিয়া ও 60° দঃ অক্ষাংশে তীক্ষ্ণ চিৎকারকারী ষাট বলা হয়।
মেরু বায়ু –
দুই মেরুদেশীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে যে শুষ্ক ও শীতল বায়ু সারাবছর ধরে নিয়মিত ভাবে মেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত হয় তাকে মেরু বায়ু বলে।
মেরু বায়ুর বৈশিষ্ট্য –
- মেরুবৃত্তপ্রদেশীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে প্রবাহিত হওয়ায় এই বায়ু শুষ্ক ও শীতল প্রকৃতির হয়।
- মেরু বায়ুর প্রভাবে মহাদেশের পূর্বাংশে তুষারপাত ও সামান্য বৃষ্টিপাত হয় এবং দক্ষিণ গোলার্ধে প্রবল ঝড়বৃষ্টি হয়।
- এই বায়ু উভয় গোলার্ধে 65°-80° অক্ষাংশের মধ্যে প্রবাহিত হয়।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
আয়ন বায়ু কী?
আয়ন বায়ু হল কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত নিয়ত বায়ু।
আয়ন বায়ুর বৈশিষ্ট্য কী?
1. উত্তর গোলার্ধে ডান দিকে (ফেরেলের সূত্র অনুযায়ী) ও দক্ষিণ গোলার্ধে বাম দিকে বেঁকে প্রবাহিত হয়।
2. উত্তর গোলার্ধে স্থলভাগ বেশি থাকায় গতিবেগ কম (প্রায় 16 কিমি/ঘণ্টা), দক্ষিণ গোলার্ধে জলভাগ বেশি থাকায় গতিবেগ বেশি (প্রায় 22 কিমি/ঘণ্টা)।
3. মহাদেশের পূর্বাংশে বৃষ্টিপাত ঘটায়, পশ্চিমাংশে মরুভূমি সৃষ্টি করে (যেমন সাহারা মরুভূমি)।
পশ্চিমা বায়ু কী?
পশ্চিমা বায়ু হল কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে সুমেরু ও কুমেরু বৃত্তীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত বায়ু।
পশ্চিমা বায়ুর বৈশিষ্ট্য কী?
1. উভয় গোলার্ধে 35°-60° অক্ষাংশে প্রবাহিত হয়।
2. দক্ষিণ গোলার্ধে প্রবল বেগে প্রবাহিত হয় (জলভাগ বেশি থাকায়)।
3. উত্তর গোলার্ধে দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে, দক্ষিণ গোলার্ধে উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহিত হয়।
4. 40° দক্ষিণে গর্জনশীল চল্লিশা, 50° দক্ষিণে ভয়ংকর পঞ্চাশা, 60° দক্ষিণে তীক্ষ্ণ চিৎকারকারী ষাট নামে পরিচিত।
মেরু বায়ু কী?
মেরু বায়ু হল মেরুপ্রদেশীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে মেরুবৃত্তীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত শীতল ও শুষ্ক বায়ু।
মেরু বায়ুর বৈশিষ্ট্য কী?
1. শীতল ও শুষ্ক প্রকৃতির হয়।
2. উভয় গোলার্ধে 65°-80° অক্ষাংশে প্রবাহিত হয়।
3. মহাদেশের পূর্বাংশে তুষারপাত ও সামান্য বৃষ্টিপাত ঘটায়।
4. দক্ষিণ গোলার্ধে প্রবল ঝড়-বৃষ্টি সৃষ্টি করে।
পশ্চিমা বায়ুকে দক্ষিণ গোলার্ধে বিভিন্ন নামে ডাকা হয় কেন?
দক্ষিণ গোলার্ধে জলভাগ বেশি থাকায় পশ্চিমা বায়ু অত্যন্ত শক্তিশালী হয়, তাই 40°, 50° ও 60° দক্ষিণ অক্ষাংশে যথাক্রমে গর্জনশীল চল্লিশা, ভয়ংকর পঞ্চাশা ও তীক্ষ্ণ চিৎকারকারী ষাট নামে পরিচিত।
মেরু বায়ুর প্রভাব কোথায় বেশি দেখা যায়?
মেরু বায়ুর প্রভাবে উত্তর গোলার্ধে তুষারপাত ও দক্ষিণ গোলার্ধে প্রবল ঝড়-বৃষ্টি হয়।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “আয়ন বায়ু, পশ্চিমা বায়ু ও মেরু বায়ু – টীকা লেখো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “আয়ন বায়ু, পশ্চিমা বায়ু ও মেরু বায়ু – টীকা লেখো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের দ্বিতীয় অধ্যায় “বায়ুমণ্ডল – বায়ুর চাপ বলয় ও বায়ুপ্রবাহ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন