এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “বহুমুখী নদী উপত্যকা পরিকল্পনারূপে দামোদর উপত্যকা পরিকল্পনার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের নদনদী ও হ্রদসমূহ” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

বহুমুখী নদী উপত্যকা পরিকল্পনারূপে দামোদর উপত্যকা পরিকল্পনার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
পূর্ব ভারতের নদী উপত্যকা পরিকল্পনার মধ্যে দামোদর নদ উপত্যকা পরিকল্পনা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। পূর্বে দামোদর নদের প্রবল বন্যায় পশ্চিমবঙ্গের অপরিমেয় ক্ষতি হত। এই কারণে দামোদর নদ ‘বাংলার দুঃখ’ নামে পরিচিত ছিল। 1948 খ্রিস্টাব্দে দামোদর উপত্যকা নিগম (Damodar Valley Corporation) গঠিত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসি নদী পরিকল্পনা অনুযায়ী W. L. Voorduin এই পরিকল্পনাটি উপস্থাপন করেন। পশ্চিমবঙ্গ, বিহার এবং কেন্দ্রীয় সরকারের যৌথ অর্থানুকূল্যে ও প্রচেষ্টায় এই প্রকল্প রূপায়িত হয়। এই প্রকল্পের মুখ্য উদ্দেশ্য হল ভয়ংকর দামোদরকে বহুমুখী পরিকল্পনায় রূপান্তরিত করা। যেমন – জলবিদ্যুৎ উৎপাদন, সেচখাল নির্মাণ প্রভৃতি প্রকল্পে পরিণত করা।
পরিকল্পনা রূপায়ণ –
বাঁধ নির্মাণ – এই লক্ষ্য পূরণের জন্য দামোদর ও তার উপনদীগুলির ওপর আটটি বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়, যথা –
- দামোদরের ওপর –
- পাঞ্চেৎদ্ম।
- বার্মা।
- আয়ার।
- বরাকরের ওপর –
- পাঞ্চেৎ।
- বেলপাহাড়ি।
- তিলাইয়া বাঁধ।
- কোনার নদীর ওপর –
- কোনার বাঁধ।
- বোকারো নদীর ওপর –
- বোকারো বাঁধ।
এই আটটি বাঁধের মধ্যে মাত্র চারটি, যথা – তিলাইয়া বাঁধ, কোনার বাঁধ, মাইথন বাঁধ ও পাঞ্চেৎ বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও ঝাড়খণ্ডের তেনুঘাটে একটি বাঁধ নির্মাণ হয়েছে।
বিদ্যুৎ উৎপাদন – তিলাইয়া, পাঞ্চেৎ ও মাইথনে মোট 104 মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। চন্দ্রপুরা, বোকারো, দুর্গাপুর ও ওয়াবিয়ায় মোট 1,077 মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
সেচবাঁধ ও সেচখাল – দুর্গাপুরে ‘দুর্গাপুর ব্যারেজ’ নির্মাণ করে দামোদরের উভয় তীরে প্রায় 2,535 কিমি খাল কাটা হয়েছে।

পরিকল্পনার প্রভাব বা ফলাফল –
সুবিধা –
- বন্যা নিয়ন্ত্রণ – বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে দামোদরের নিম্ন উপত্যকায় বন্যা রোধ করা সম্ভব হয়েছে।
- জলসেচ – বাঁকুড়া, বর্ধমান, হাওড়া ও হুগলিতে প্রায় 5 লক্ষ হেক্টর জমিকে জলসেচের আওতায় আনা হয়েছে।
- বিদ্যুৎ উৎপাদন – পশ্চিমবঙ্গের একাধিক শিল্পাঞ্চলে বিদ্যুতের চাহিদা পুরণ হয়েছে।
অসুবিধা –
- এই পরিকল্পনা সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়িত না হওয়ায় সর্বাধিক সুবিধা বা সুফল পাওয়া যায়নি। বর্ষার জল ধরে রাখার ক্ষমতা না থাকায় হঠাৎ করে বেশি জল ছাড়লে নিম্ন দামোদর উপত্যকায় প্রায়ই কৃত্রিমভাবে বন্যা হয় এবং এতে জনবসতি ও ফসল নষ্ট হয়।
- দামোদরের স্বাভাবিক প্রবাহ না থাকায় অধিক বালি ও পলির সঞ্চয়ে নদীর গভীরতা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে।
- গ্রীষ্মের সময়ে জল কমে গেলে জলবিদ্যুৎ ও তাপবিদ্যুতের উৎপাদন কমে যায়।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
দামোদর নদীকে ‘বাংলার দুঃখ’ বলা হয় কেন?
অতীতে দামোদর নদীর প্রলয়ংকরী বন্যা পশ্চিমবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ফসল, বাড়িঘর ও জনজীবন ধ্বংস করত বলে একে “বাংলার দুঃখ” বলা হত।
দামোদর উপত্যকা পরিকল্পনা কবে ও কাদের উদ্যোগে গৃহীত হয়?
1948 সালে দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন (DVC) গঠিত হয়। এটি পশ্চিমবঙ্গ, বিহার (বর্তমানে ঝাড়খণ্ড) ও কেন্দ্রীয় সরকারের যৌথ উদ্যোগে রূপায়িত হয়।
দামোদর উপত্যকা পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য কী ছিল?
মূল উদ্দেশ্য ছিল—
1. বন্যা নিয়ন্ত্রণ।
2. জলবিদ্যুৎ উৎপাদন।
3. কৃষিকাজে সেচ সুবিধা প্রদান।
4. শিল্প ও গৃহস্থালির জন্য জল সরবরাহ।
দামোদর উপত্যকা পরিকল্পনা কোন বিদেশী নদী পরিকল্পনার আদর্শে তৈরি?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসি নদী উপত্যকা পরিকল্পনা (Tennessee Valley Authority – TVA) -এর আদর্শে W. L. Voorduin এই পরিকল্পনা প্রস্তাব করেন।
দামোদর নদীর ওপর নির্মিত প্রধান বাঁধগুলির নাম কী?
1. দামোদর নদীতে – পাঞ্চেৎ, মাইথন (বারাকার নদীতে), তিলাইয়া।
2. অন্যান্য নদীতে – কোনার বাঁধ, বোকারো বাঁধ।
দামোদর উপত্যকা পরিকল্পনার সুবিধাগুলি কী?
1. বন্যা নিয়ন্ত্রণ।
2. প্রায় 5 লক্ষ হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা।
3. জলবিদ্যুৎ ও তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন (মোট 1,077 মেগাওয়াট)।
4. শিল্পায়নে সহায়তা (দুর্গাপুর, বোকারো ইত্যাদি)।
দামোদর উপত্যকা পরিকল্পনার অসুবিধাগুলি কী?
1. সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত না হওয়ায় সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়া যায়নি।
2. অতিরিক্ত পলি জমে নদীর গভীরতা কমেছে।
3. বর্ষায় জল ছাড়লে নিম্নাঞ্চলে কৃত্রিম বন্যা হয়।
4. গ্রীষ্মে জল কমে গেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন হ্রাস পায়।
দামোদর উপত্যকায় কয়টি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র আছে?
তিলাইয়া, পাঞ্চেৎ ও মাইথনে মোট 104 মেগাওয়াট ক্ষমতার জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে।
দুর্গাপুর ব্যারেজের কাজ কী?
দুর্গাপুর ব্যারেজ নির্মাণ করে দামোদরের উভয় তীরে 2,535 কিমি সেচখাল কাটা হয়েছে, যা কৃষিকাজে সাহায্য করে।
দামোদর উপত্যকা পরিকল্পনার ভবিষ্যৎ কী?
পরিকল্পনাটি সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত না হলেও এটি পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বাঁধের রক্ষণাবেক্ষণ ও নদী খনন করে এর কার্যকারিতা বাড়ানো প্রয়োজন।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “বহুমুখী নদী উপত্যকা পরিকল্পনারূপে দামোদর উপত্যকা পরিকল্পনার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের নদনদী ও হ্রদসমূহ” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন