এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ভারতে প্রায়ই খরা হয় কেন? ভারতে খরা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়?” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের জলবায়ু” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

ভারতে প্রায়ই খরা হয় কেন?
ভারতে প্রায়ই খরা হয়, কারণ –
- বিলম্বিত আগমন – কোনো কোনো বছরে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রবেশ করলে মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে এবং খরার সৃষ্টি হয়।
- অগ্রিম প্রত্যাবর্তন – দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু নির্ধারিত সময়ের অনেক আগে ফিরে গেলে মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যায় এবং খরা হয়।
- বৃষ্টিপাতের সাময়িক বিরতি – কোনো কোনো বছরে বর্ষাকালের মাঝে দীর্ঘদিন বৃষ্টিপাত হয় না, ফলে খরার প্রাদুর্ভাব লক্ষ করা যায়।
- পরিবেশ দূষণ – নানা কারণে পরিবেশ দূষিত হলে বায়ুমণ্ডলের গড় উষ্ণতা বৃদ্ধি পায় এবং জলীয়বাষ্প ঘনীভূত না হলে বৃষ্টিপাত হয় না এবং খরার সৃষ্টি হয়।

ভারতে খরা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়?
ভারতের খরা নিয়ন্ত্রণের উপায় –
- বনভূমি বিস্তার – শুষ্ক অঞ্চলে এবং জমিতে নিয়মিত বৃক্ষরোপণ করলে বনভূমির বিস্তার ঘটবে এবং খরা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।
- জলের অপচয় রোধ – যথেচ্ছ পরিমাণে জলের অতিরিক্ত ব্যবহার বন্ধ করলে মাটিতে জলের পরিমাণ এবং মাটির আর্দ্রতা বজায় থাকবে।
- বৃক্ষচ্ছেদন রোধ – অনিয়ন্ত্রিতভাবে বৃক্ষচ্ছেদন করলে মাটি শুষ্ক হয়ে পড়বে। তাই বৃক্ষচ্ছেদন বন্ধ করলে মাটিতে আর্দ্রতা বজায় থাকবে এবং খরার প্রবণতা হ্রাস পাবে।
- বৃষ্টির জল সংরক্ষণ – বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করলে শুষ্ক আবহাওয়াতে মৃত্তিকায় জলের যোগান দেওয়া যাবে এবং খরা প্রতিরোধ সম্ভব হবে।
- শস্যাবর্তন – খরা প্রতিরোধী শস্যচাষ এবং শস্যাবর্তন করলে ভারতে খরা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
ভারতে প্রায়ই খরা হয় কেন?
ভারতে খরা হওয়ার প্রধান কারণগুলি হলো –
1. মৌসুমি বায়ুর বিলম্বিত আগমন – বর্ষাকালে মৌসুমি বায়ু দেরিতে এলে বৃষ্টিপাত কম হয়।
2. মৌসুমি বায়ুর অগ্রিম প্রত্যাবর্তন – বর্ষা নির্ধারিত সময়ের আগে চলে গেলে বৃষ্টিপাতের ঘাটতি দেখা দেয়।
3. বৃষ্টিপাতের দীর্ঘ বিরতি – বর্ষাকালে দীর্ঘ সময় বৃষ্টি না হলে খরা সৃষ্টি হয়।
4. পরিবেশ দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন – বায়ুদূষণ ও গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের কারণে বৃষ্টিপাতের স্বাভাবিক চক্র বিঘ্নিত হয়।
ভারতে খরা নিয়ন্ত্রণের উপায় কী?
খরা নিয়ন্ত্রণের কিছু কার্যকরী উপায় হলো –
1. বনায়ন বৃদ্ধি – বেশি করে গাছ লাগিয়ে মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখা।
2. জলের অপচয় রোধ – সেচ ও দৈনন্দিন কাজে জলের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা।
3. বৃষ্টির জল সংরক্ষণ – রেইনওয়াটার হার্ভেস্টিং করে ভূগর্ভস্থ জলস্তর বাড়ানো।
4. খরা-সহিষ্ণু ফসল চাষ – শস্যাবর্তন ও কম জলপ্রয়োজনীয় ফসলের চাষ করা।
খরার প্রভাব কী?
খরার ফলে –
1. কৃষি উৎপাদন কমে যায়।
2. মাটির উর্বরতা নষ্ট হয়।
3. গবাদি পশুর জন্য ঘাস ও জলের অভাব দেখা দেয়।
4. গ্রামীণ অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
জল সংরক্ষণের জন্য সরকারি উদ্যোগ কী?
ভারত সরকার বিভিন্ন প্রকল্প চালু করেছে, যেমন –
1. জল শক্তি অভিযান – গ্রামীণ এলাকায় জল সংরক্ষণে সহায়তা।
2. মিশন কাকটেইল – খরা-প্রবণ রাজ্যগুলিতে জল ব্যবস্থাপনা উন্নত করা।
3. নমামি গঙ্গে মিশন – নদী সংরক্ষণের মাধ্যমে জলসম্পদ রক্ষা।
সাধারণ মানুষ কীভাবে খরা প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে?
1. বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করা।
2. অপ্রয়োজনে গাছ না কাটা।
3. জল অপচয় রোধ করে সেচের আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করা।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ভারতে প্রায়ই খরা হয় কেন? ভারতে খরা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়?” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের জলবায়ু” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন