ভারতের জলবায়ু অঞ্চলে ভাগ করে প্রত্যেকটির পরিচয় দাও।

Rohit

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ভারতের জলবায়ু অঞ্চলে ভাগ করে প্রত্যেকটির পরিচয় দাও।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারত” -এর “ভারতের জলবায়ু” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

ভারতের জলবায়ু অঞ্চলে ভাগ করে প্রত্যেকটির পরিচয় দাও
ভারতের জলবায়ু অঞ্চলে ভাগ করে প্রত্যেকটির পরিচয় দাও
Contents Show

ভারতের জলবায়ু অঞ্চলে ভাগ করে প্রত্যেকটির পরিচয় দাও।

ভারতের জলবায়ু অঞ্চল –

এল.ডি. স্ট্যাম্প, অধ্যাপক কেন্দ্রিই, ডব্লিউ কোপেন প্রখ্যাত জলবায়ুবিদরা ভারতকে বিভিন্ন জলবায়ু অঞ্চলে ভাগ করেছেন। এগুলির মধ্যে কোপেনের শ্রেণিবিভাগটি অধিক সামঞ্জস্যপূর্ণ। তিনি জলবায়ু দ্বারা নিয়ন্ত্রিত স্বাভাবিক উদ্ভিদের ওপর নির্ভর করে ভারতকে আটটি জলবায়ু অঞ্চলে ভাগ করেছেন।

ক্রান্তীয় অতি আর্দ্র মৌসুমি অঞ্চল (Amw) –

  • অবস্থান – ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে কর্ণাটক ও তামিলনাড়ুর কিছু অংশ নিয়ে গঠিত।
  • বৃষ্টিপাত – মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ প্রায় 300 সেমি।
  • উষ্ণতা – এই অঞ্চল সমভাবাপন্ন, বার্ষিক গড় উষ্ণতা 18° সেলসিয়াস থেকে 26° সেলসিয়াস।
  • অন্যান্য বৈশিষ্ট্য –
    • শীত ও গ্রীষ্মে উষ্ণতার প্রসর খুব কম।
    • শীতকাল শুষ্ক থাকে।
    • এখানে চিরহরিৎ অরণ্যের সৃষ্টি হয়েছে।

ক্রান্তীয় সাভানা অঞ্চল (Aw) –

  • অবস্থান – প্রায় সমগ্র মহারাষ্ট্র, ওড়িশা, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের কিছু অংশ নিয়ে এই জলবায়ু অঞ্চলটি গঠিত হয়েছে।
  • বৃষ্টিপাত – দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে এখানে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 75-125 সেমি।
  • উষ্ণতা – গ্রীষ্মকালীন গড় উষ্ণতা 34° সেলসিয়াস এবং শীতকালীন গড় উষ্ণতা 10° সেলসিয়াস। অর্থাৎ, শীত ও গ্রীষ্মের মধ্যে উষ্ণতার পার্থক্য খুব বেশি।
  • অন্যান্য বৈশিষ্ট্য –
    • শীতকাল অত্যন্ত শুষ্ক।
    • এখানে পর্ণমোচী বৃক্ষ জন্মায়।

ক্রান্তীয় শুষ্কপ্রায় ও উপক্রান্তীয় স্তেপ অঞ্চল (BShw) –

  • অবস্থান – পূর্ব রাজস্থান, কাশ্মীরের পশ্চিমাংশ, পাঞ্জাব এবং পশ্চিমঘাট পর্বতের বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চলে অবস্থিত। এ ছাড়া কর্ণাটক, তামিলনাড়ু ও মহারাষ্ট্রের অংশবিশেষ এই প্রকার জলবায়ু দেখা যায়।
  • বৃষ্টিপাত – স্বল্প বৃষ্টিপাতযুক্ত এই অঞ্চলের বার্ষিক বৃষ্টিপাত 12-25 সেমি।
  • উষ্ণতা – গড় বার্ষিক উষ্ণতা 18° সেলসিয়াস থেকে 30° সেলসিয়াস।
  • অন্যান্য বৈশিষ্ট্য –
    • গ্রীষ্মকাল ক্ষণস্থায়ী হলেও কাশ্মীরে উচ্চতার ফলে শীতলতা বেশি।
    • চিরহরিৎ মিশ্র বনভূমি দেখা যায়।

ক্রান্তীয় শুষ্ক গ্রীষ্ম ও শীতকালীন বৃষ্টিপাত যুক্ত অঞ্চল (As) –

  • অবস্থান – অন্ধ্রপ্রদেশের দক্ষিণাংশ এবং তামিলনাড়ুর পূর্ব উপকূল এই জলবায়ু অঞ্চলের অন্তর্গত।
  • বৃষ্টিপাত – গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সামান্য বৃষ্টিপাত হলেও প্রত্যাবর্তনকালীন মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে শীতকালে বৃষ্টিপাত হয়, গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 75-100 সেমি।
  • উষ্ণতা – শীত ও গ্রীষ্মের উষ্ণতার পার্থক্য খুব কম। বার্ষিক গড় উষ্ণতা 18° সেলসিয়াস থেকে 27° সেলসিয়াস। 
  • অন্যান্য বৈশিষ্ট্য –
    • ভারতের মধ্যে এটি একটি স্বতন্ত্র জলবায়ু অঞ্চল।
    • এখানে পর্ণমোচী অরণ্য দেখা যায়।
ভারতের জলবায়ু অঞ্চল
ভারতের জলবায়ু অঞ্চল

আর্দ্র উপক্রান্তীয় মৌসুমি অঞ্চল (CWg) –

  • অবস্থান – শতদ্রু, গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের বিস্তীর্ণ সমভূমি অঞ্চল এর অন্তর্গত।
  • বৃষ্টিপাত – গ্রীষ্মের শেষে মৌসুমি বায়ু প্রবাহের প্রভাবে বৃষ্টি হয়, গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাত 250 সেমি, শীতকাল শুষ্ক থাকে।
  • উষ্ণতা – গ্রীষ্মকালীন ও শীতকালীন গড় উষ্ণতা যথাক্রমে 45° সেলসিয়াস ও 24° সেলসিয়াস।
  • অন্যান্য বৈশিষ্ট্য –
    • সমুদ্র থেকে দূরবর্তী স্থানের জলবায়ু চরম প্রকৃতির।
    • এই অঞ্চলের বেশিরভাগ অঞ্চলে পর্ণমোচী এবং কোনো কোনো স্থানে চিরহরিৎ বনভূমি দেখা যায়।

শীতল পার্বত্য জলবায়ু (E) –

  • অবস্থান – পশ্চিম হিমালয়ের উচ্চভূমিতে এই জলবায়ু দেখা যায়।
  • বৃষ্টিপাত – বৃষ্টিপাত প্রায় হয় না বললেই চলে।
  • উষ্ণতা – গ্রীষ্মকালীন উষ্ণতা 0° সেলসিয়াস থেকে 10° সেলসিয়াস -এর মধ্যে।
  • অন্যান্য বৈশিষ্ট্য –
    • অধিক উচ্চতার জন্য সারাবছরই খুব শীতল আবহাওয়া বিরাজ করে।
    • পর্বতের নীচে সরলবর্গীয় ও ওপরে আল্পীয় তৃণভূমি দেখা যায়।

উষ্ণ মরু অঞ্চল –

  • অবস্থান – ভারতের পশ্চিমে থর মরুভূমি অঞ্চলে এই জলবায়ু দেখা যায়।
  • উষ্ণতা – গ্রীষ্মকালীন গড় উষ্ণতা 40° সেলসিয়াস পর্যন্ত চলে যায়। প্রায় সারাবছরই প্রচণ্ড উষ্ণতা থাকে।
  • বৃষ্টিপাত – বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 12.5 সেমির কম থাকে।
  • অন্যান্য বৈশিষ্ট্য – সামান্য কাঁটা ঝোপজাতীয় গাছপালা জন্মায়।

শীতল আর্দ্র জলবায়ু অঞ্চল (Dfc) –

  • অবস্থান – সমগ্র অরুণাচল প্রদেশ ও অসমের পূর্বদিকে এই ধরনের জলবায়ু দেখা যায়।
  • বৃষ্টিপাত – বৃষ্টিপাত খুব বেশি হয় এবং মোট বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 200-300 সেমি।
  • উষ্ণতা – গ্রীষ্মকালীন উষ্ণতা হয় 25° সেলসিয়াস থেকে 33° সেলসিয়াস এবং শীতকালীন উষ্ণতা থাকে 11° সেলসিয়াস থেকে 24° সেলসিয়াস। তবে গ্রীষ্মকাল ক্ষণস্থায়ী।
  • অন্যান্য বৈশিষ্ট্য – স্বাভাবিক উদ্ভিদরূপে এই অঞ্চলে চিরহরিৎ প্রজাতির গাছপালা জন্মায়।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

ভারতকে কয়টি জলবায়ু অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে এবং কারা এই শ্রেণিবিভাগ করেছেন?

প্রখ্যাত জলবায়ুবিদ ডব্লিউ. কোপেন ভারতের জলবায়ুকে আটটি প্রধান অঞ্চলে ভাগ করেছেন। তার শ্রেণিবিভাগ স্বাভাবিক উদ্ভিদের ওপর ভিত্তি করে তৈরি।

ক্রান্তীয় অতি আর্দ্র মৌসুমি অঞ্চল (Amw) কোথায় অবস্থিত?

1. অবস্থান – দক্ষিণ-পশ্চিম ভারত (কর্ণাটক ও তামিলনাড়ুর কিছু অংশ)।
2. বৃষ্টিপাত – 300 সেমি পর্যন্ত।
3. উষ্ণতা – 18°C–26°C (সমভাবাপন্ন)।
4. বৈশিষ্ট্য – চিরহরিৎ অরণ্য, শীতকাল শুষ্ক।

ক্রান্তীয় সাভানা অঞ্চল (Aw) -এর প্রধান বৈশিষ্ট্য কী?

1. অবস্থান – মহারাষ্ট্র, ওড়িশা, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের কিছু অংশ।
2. বৃষ্টিপাত – 75–125 সেমি।
3. উষ্ণতা – গ্রীষ্মে 34°C, শীতে 10°C (বেশি পার্থক্য)।
4. বৈশিষ্ট্য – পর্ণমোচী বৃক্ষ, শীতকাল শুষ্ক।

ক্রান্তীয় শুষ্কপ্রায় অঞ্চল (BShw) কোথায় দেখা যায়?

1. অবস্থান – রাজস্থান, পাঞ্জাব, পশ্চিমঘাটের বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল।
2. বৃষ্টিপাত – 12–25 সেমি।
3. উষ্ণতা – 18°C–30°C।
4. বৈশিষ্ট্য – চিরহরিৎ মিশ্র বনভূমি, শীতল শীতকাল (কাশ্মীরে)।

ক্রান্তীয় শুষ্ক গ্রীষ্ম ও শীতকালীন বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চল (As) -এর বৈশিষ্ট্য কী?

1. অবস্থান – তামিলনাড়ুর পূর্ব উপকূল ও অন্ধ্রপ্রদেশের দক্ষিণাংশ।
2. বৃষ্টিপাত – 75–100 সেমি (শীতকালে বেশি)।
3. উষ্ণতা – 18°C–27°C (অল্প পার্থক্য)।
4. বৈশিষ্ট্য – পর্ণমোচী অরণ্য, স্বতন্ত্র জলবায়ু।

আর্দ্র উপক্রান্তীয় মৌসুমি অঞ্চল (CWg) -এর অবস্থান ও জলবায়ু কী?

1. অবস্থান – গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র সমভূমি (পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরপ্রদেশ, বিহার)।
2. বৃষ্টিপাত – 250 সেমি পর্যন্ত।
3. উষ্ণতা – গ্রীষ্মে 45°C, শীতে 24°C (চরম প্রকৃতি)।
4. বৈশিষ্ট্য – পর্ণমোচী ও চিরহরিৎ বন।

শীতল পার্বত্য জলবায়ু (E) কোথায় দেখা যায়?

1. অবস্থান – পশ্চিম হিমালয়ের উচ্চভূমি।
2. বৃষ্টিপাত – অতি অল্প।
3. উষ্ণতা – গ্রীষ্মে 0°C–10°C।
4. বৈশিষ্ট্য – আল্পীয় তৃণভূমি, সারাবছর শীতল।

থর মরুভূমির জলবায়ু কী ধরনের?

1. প্রকার – উষ্ণ মরু অঞ্চল (BWh)।
2. বৃষ্টিপাত – 12.5 সেমির কম।
3. উষ্ণতা – গ্রীষ্মে 40°C+।
4. বৈশিষ্ট্য – কাঁটা ঝোপ, অতি শুষ্ক।

শীতল আর্দ্র জলবায়ু (Dfc) কোন অঞ্চলে দেখা যায়?

1. অবস্থান – অরুণাচল প্রদেশ ও অসমের পূর্বাংশ।
2. বৃষ্টিপাত – 200–300 সেমি।
3. উষ্ণতা – গ্রীষ্মে 25°C–33°C, শীতে 11°C–24°C।
4. বৈশিষ্ট্য – চিরহরিৎ বন, অত্যধিক আর্দ্রতা।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ভারতের জলবায়ু অঞ্চলে ভাগ করে প্রত্যেকটির পরিচয় দাও।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারত” -এর “ভারতের জলবায়ু” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

ভারতের জলবায়ুতে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব আলোচনা করো

ভারতের জলবায়ুতে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব আলোচনা করো।

ভারতের কৃষির ওপর মৌসুমি বায়ুর প্রভাব লেখো

ভারতের কৃষির ওপর মৌসুমি বায়ুর প্রভাব লেখো।

ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদের ওপর মৌসুমি বায়ুর প্রভাব উদাহরণসহ আলোচনা করো।

ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদের ওপর মৌসুমি বায়ুর প্রভাব উদাহরণসহ আলোচনা করো।

About The Author

Rohit

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

ভারতের জলবায়ুতে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব আলোচনা করো।

ভারতের কৃষির ওপর মৌসুমি বায়ুর প্রভাব লেখো।

ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদের ওপর মৌসুমি বায়ুর প্রভাব উদাহরণসহ আলোচনা করো।

ভারতের মৃত্তিকার ওপর মৌসুমি বায়ুর প্রভাব আলোচনা করো।

ভারতের জলবায়ু অঞ্চলে ভাগ করে প্রত্যেকটির পরিচয় দাও।