এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ভারতের জলবায়ুতে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব আলোচনা করো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারত” -এর “ভারতের জলবায়ু” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

ভারতের জলবায়ুতে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব আলোচনা করো।
ভারতের জলবায়ুতে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব অপরিসীম। তাই ভারতকে ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ুর দেশ বলে। এই প্রভাবগুলি হল –
আর্দ্র গ্রীষ্মকাল ও শুষ্ক শীতকাল –
ভারতের গ্রীষ্মকালে আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় এবং শীতকালে শুষ্ক উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে তেমন বৃষ্টিপাত হয় না।
ঋতু পরিবর্তন –
মৌসুমি বায়ুর আগমন ও প্রত্যাগমন -এর ওপর নির্ভর করে ভারতে চারটি ঋতু বিরাজ করে, যেমন – গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ ও শীত। এই চারটি ঋতু চক্রাকারে আবর্তিত হয়।
বৃষ্টিপাত –
মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ভারতে 90% বৃষ্টিপাত হয়। মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জির মৌসিনরামে বৃষ্টিপাত সবথেকে বেশি হয়। এই মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ভারতের করমণ্ডল উপকূলে বর্ষাকালে এবং শীতকালে দুবার বৃষ্টিপাত হয়।
উষ্ণতা –
দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমনের ফলে গ্রীষ্মকালে বৃষ্টিপাতের প্রভাবে উষ্ণতা কিছুটা হ্রাস পায়। উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর ফলে শীতকালে শীতের প্রভাব বৃদ্ধি পায়।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ –
মৌসুমি বায়ুর অনিয়মিত ও অনিশ্চয়তার জন্য মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে কোথাও অতিবৃষ্টির ফলে বন্যা এবং কোথাও অনাবৃষ্টির ফলে খরার সৃষ্টি হয়।
ঘূর্ণবাত সৃষ্টি –
শরৎকালে প্রত্যাবর্তনকারী মৌসুমি বায়ু এবং সমুদ্রবায়ুর সংঘর্ষে বঙ্গোপসাগর বা আরবসাগরে ঘূর্ণবাত সৃষ্টি হয়।
বৃষ্টিপাতের অসম বণ্টন –
মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে পশ্চিম উপকূল, উত্তর-পূর্ব ভারত, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ প্রভৃতি স্থানে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটে। অপরদিকে রাজস্থানের মরু অঞ্চল ও পশ্চিমঘাট পর্বতের পূর্বঢালের বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল প্রভৃতি স্থানে বৃষ্টির পরিমাণ কম। তাই মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ভারতের জলবায়ুতে বৃষ্টিপাতে অসম বন্টন লক্ষ করা যায়।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
মৌসুমি বায়ু কী?
মৌসুমি বায়ু হল ঋতুভিত্তিক প্রবাহিত বায়ু, যা গ্রীষ্মকালে সমুদ্র থেকে স্থলভাগের দিকে এবং শীতকালে স্থলভাগ থেকে সমুদ্রের দিকে প্রবাহিত হয়। ভারতে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু (গ্রীষ্মকালীন) ও উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু (শীতকালীন) প্রধান।
ভারতের জলবায়ুতে মৌসুমি বায়ুর প্রধান প্রভাব কী?
1. আর্দ্র গ্রীষ্ম ও শুষ্ক শীতকাল সৃষ্টি করে।
2. বৃষ্টিপাতের প্রধান উৎস (ভারতের 90% বৃষ্টি মৌসুমি বায়ুর কারণে হয়)।
3. ঋতুচক্র নির্ধারণ করে (গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, শীত)।
4. তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে (গ্রীষ্মে বৃষ্টিতে উষ্ণতা কমে, শীতে শুষ্কতা বাড়ে)।
5. বৃষ্টিপাতের অসম বণ্টন সৃষ্টি করে (উদাহরণ – চেরাপুঞ্জিতে সর্বোচ্চ, রাজস্থানে ন্যূনতম বৃষ্টি)।
মৌসুমি বায়ুর কারণে ভারতে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা যায়?
1. বন্যা (অতিবৃষ্টি, যেমন – বিহার, অসমে)।
2. খরা (অনাবৃষ্টি, যেমন – রাজস্থান, মহারাষ্ট্রে)।
3. ঘূর্ণবাত (শরৎকালে বঙ্গোপসাগরে আম্ফান, ফণী ইত্যাদি)।
মৌসুমি বায়ু কখন ভারতে প্রবেশ করে ও প্রত্যাহরণ করে?
1. আগমন – জুনের শুরুতে কেরালা উপকূলে, জুলাইয়ের মধ্যে সমগ্র ভারতে ছড়িয়ে পড়ে।
2. প্রত্যাহরণ – সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু শুরু হয়।
মৌসুমি বায়ুর অসম বৃষ্টিপাতের কারণ কী?
1. ভূপ্রকৃতি – পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢালে বেশি বৃষ্টি, পূর্ব ঢালে বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল।
2. বায়ুর দিক – উপকূলীয় অঞ্চলে বেশি বৃষ্টি, অভ্যন্তরে কম।
3. সমুদ্র থেকে দূরত্ব – উপকূলের কাছে আর্দ্রতা বেশি, রাজস্থানের মতো অঞ্চলে শুষ্কতা।
ভারতের কোন অঞ্চলে মৌসুমি বৃষ্টি সবচেয়ে বেশি ও কম?
1. সর্বোচ্চ – মেঘালয়ের মৌসিনরাম ও চেরাপুঞ্জি (বিশ্বের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত)।
2. ন্যূনতম – রাজস্থানের থর মরুভূমি (জয়সলমেরে 10-20 সেমি)।
মৌসুমি বায়ুর অনিশ্চয়তা কী সমস্যা সৃষ্টি করে?
1. কৃষির ওপর প্রভাব – বৃষ্টি কম বা বেশি হলে ফসল নষ্ট হয়।
2. জলসংকট – অনাবৃষ্টিতে খরা, অতিবৃষ্টিতে বন্যা।
3. অর্থনৈতিক ক্ষতি – কৃষি, পরিবহন, জীবিকা ব্যাহত হয়।
“মৌসুমি ফাটল” কী?
মৌসুমি বায়ুর প্রবাহে বিরতি বা দুর্বলতা, যার ফলে কিছুদিন বৃষ্টি বন্ধ থাকে। এটি ফসলের জন্য ক্ষতিকর।
করমণ্ডল উপকূলে শীতকালে বৃষ্টি হয় কেন?
উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু বঙ্গোপসাগর থেকে আর্দ্রতা সংগ্রহ করে তামিলনাড়ু উপকূলে বৃষ্টি ঘটায় (ইথাই, ভারাই ইত্যাদি ঘূর্ণবাতের কারণেও)।
মৌসুমি বায়ুর প্রবাহ কীভাবে জলবায়ু পরিবর্তন দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে?
1. অনিয়মিত বৃষ্টিপাত – গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের কারণে মৌসুমি বায়ুর সময় ও পরিমাণে পরিবর্তন।
2. চরম আবহাওয়া – অতিবৃষ্টি বা খরার মাত্রা বাড়ছে।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ভারতের জলবায়ুতে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব আলোচনা করো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারত” -এর “ভারতের জলবায়ু” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন