এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ভারতের কৃষির ওপর মৌসুমি বায়ুর প্রভাব লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারত” -এর “ভারতের জলবায়ু” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

ভারতের কৃষির ওপর মৌসুমি বায়ুর প্রভাব লেখো।
ভারতের কৃষির ওপর মৌসুমি বায়ুর প্রভাব –
ভারত একটি কৃষিপ্রধান দেশ। এদেশের 80% মানুষ প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। ভারতের অর্থনীতি কৃষিকেন্দ্রিক। ভারতের কৃষি সম্পূর্ণভাবে মৌসুমি জলবায়ুর ওপর নির্ভরশীল। মৌসুমি বায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্য ঋতুবৈচিত্র্য। মৌসুমি বৃষ্টিপাত মৌসুমি বায়ুর আগমন ও প্রত্যাগমন কালের ওপর নির্ভর করে। বৃষ্টিপাত প্রয়োজন অপেক্ষা বেশি বা অল্প হলে কৃষিকার্য বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে ভারতের কৃষিকার্যের সমৃদ্ধি নির্ভর করে বিভিন্ন অংশে বৃষ্টিপাতের সময় ও পরিমাণের ওপর। নিম্নে কৃষির ওপর মৌসুমি বায়ুর প্রভাব আলোচনা করা হল –
- বর্ষাকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়। মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ফলে উৎপন্ন উল্লেখযোগ্য খারিফ ফসলগুলি হল – ধান, জোয়ার, বাজরা, রাগি, ভুট্টা, বাদাম, ইক্ষু প্রভৃতি।
- কিছু কিছু খাদ্যশস্য আছে যেগুলি মার্চ-এপ্রিল মাসের শুরুতে চাষ শুরু হয় এবং বর্ষার শুরুতেই সেগুলিকে তুলে নেওয়া হয়। এগুলি হল – পটল, ঝিঙে, শশা প্রভৃতি।
- ভারতের যেসব অঞ্চলে বৃষ্টিপাত বেশি (অসম ও পশ্চিমবঙ্গ) সেখানে ধান, চা, কফি প্রভৃতির চাষ হয়।
- যেখানে মাঝারি বৃষ্টিপাত হয় সেখানে ইক্ষু, গম, তুলা প্রভৃতি চাষ হয়।
- শীতকালে ভারতে বিশেষ বৃষ্টিপাত না হলেও পশ্চিমে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল থেকে আসা নিম্নচাপের কারণে উত্তর-পশ্চিম ভারত ও গাঙ্গেয় উপত্যকায় স্বল্প বৃষ্টিপাত হয় এবং এই স্বল্প বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভর করে শীতকালে ভারতে রবিশস্যের চাষ হয়। শীত ঋতুতে রবিশস্য হিসেবে যেসব ফসলের চাষ হয় তাদের মধ্যে গম, যব, বার্লি, সরষে, ছোলা, আলু, তিসি প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
ভারতের প্রধান দুটি খাদ্যশস্য ধান ও গম চাষের ক্ষেত্রে মৌসুমি বায়ুর অনেকখানি প্রভাব রয়েছে। ধান চাষের ক্ষেত্রে অধিক বৃষ্টিপাত (100-200 সেমি) এবং গম চাষের ক্ষেত্রে মাঝারি বৃষ্টিপাতের (50-100 সেমি) প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ ভারতের খারিফ শস্যের উৎপাদন দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর ওপর নির্ভরশীল এবং রবিশস্যের উৎপাদন উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর ওপর নির্ভরশীল। যে বছরে মৌসুমি বায়ুর নির্দিষ্ট সময়ে আগমন ঘটে ও পরিমিত মাত্রায় বৃষ্টিপাত ঘটায় সে বছরে খাদ্যশস্য উৎপাদন বেশি হয় এর বিপরীতটি ঘটলে উৎপাদনের পরিমাণ কম হয়। তাই যথার্থই বলা হয় ‘ভারতের কৃষিকার্য মৌসুমি বায়ু দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।’
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
ভারতের কৃষি কেন মৌসুমি বায়ুর ওপর নির্ভরশীল?
ভারতের জলবায়ু প্রধানত মৌসুমি প্রকৃতির, যেখানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ও সময় মৌসুমি বায়ুর গতিপ্রকৃতির দ্বারা নির্ধারিত হয়। কৃষিকাজের জন্য পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত অপরিহার্য, তাই মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তা ও বণ্টন কৃষি উৎপাদনকে সরাসরি প্রভাবিত করে।
মৌসুমি বায়ু কীভাবে খারিফ ফসলকে প্রভাবিত করে?
দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু (জুন-সেপ্টেম্বর) ভারতে প্রবল বৃষ্টিপাত ঘটায়, যা খারিফ ফসল (ধান, জোয়ার, বাজরা, ভুট্টা, ইক্ষু, তুলা ইত্যাদি) চাষের জন্য অপরিহার্য। পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হলে ফসল ভালো হয়, কিন্তু বৃষ্টিপাত কম বা বেশি হলে ফসলের ক্ষতি হয়।
মৌসুমি বায়ুর অনিয়মিততা কীভাবে কৃষিকে প্রভাবিত করে?
1. বৃষ্টিপাতের অসম বণ্টন – কিছু অঞ্চলে বন্যা (অসম, বিহার) আবার কিছু অঞ্চলে খরা (রাজস্থান) দেখা দেয়।
2. বৃষ্টিপাতের বিলম্ব – ফসল বপন ও বৃদ্ধির সময়সীমা বিঘ্নিত হয়।
3. অতিবৃষ্টি বা অনাবৃষ্টি – ফসল নষ্ট হয়, মাটির উর্বরতা কমে, কীটপতঙ্গের আক্রমণ বাড়ে।
রবি ফসলের ওপর মৌসুমি বায়ুর প্রভাব কী?
শীতকালে উত্তর-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু (ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি) ভূমধ্যসাগরীয় নিম্নচাপের কারণে সামান্য বৃষ্টিপাত ঘটায়, যা রবি ফসল (গম, যব, সরষে, ছোলা, আলু) চাষের জন্য সহায়ক। তবে এই ফসলগুলি সেচের ওপর বেশি নির্ভরশীল।
কোন অঞ্চলে মৌসুমি বৃষ্টিপাত কৃষিকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করে?
1. অতিবৃষ্টি অঞ্চল (পশ্চিমবঙ্গ, অসম, কেরল) – ধান, চা, রবার চাষ ভালো হয়, কিন্তু বন্যার ঝুঁকি থাকে।
2. মাঝারি বৃষ্টিপাত অঞ্চল (মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক) – ইক্ষু, তুলা, ডাল চাষ হয়।
3. অনাবৃষ্টি অঞ্চল (রাজস্থান, গুজরাট) – বাজরা, বাদাম চাষ হয়, তবে সেচের প্রয়োজন হয়।
মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ভারতের প্রধান ফসল কী কী?
1. খারিফ ফসল – ধান, ভুট্টা, বাজরা, তুলা, সয়াবিন।
2. রবি ফসল – গম, যব, সরষে, মটর, আলু।
জলবায়ু পরিবর্তন মৌসুমি বায়ু ও কৃষিকে কীভাবে প্রভাবিত করছে?
1. মৌসুমি বায়ুর অনিশ্চয়তা বাড়ছে (বৃষ্টিপাতের সময় ও পরিমাণে পরিবর্তন)।
2. খরা ও বন্যার ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা ফসল উৎপাদনকে হ্রাস করছে।
3. নতুন কৃষি পদ্ধতি ও জলসঞ্চয় ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে।
মৌসুমি বায়ুর প্রভাব মোকাবিলায় ভারত কী ব্যবস্থা নিচ্ছে?
1. সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন (নদী সংযোগ প্রকল্প, ড্রিপ ইরিগেশন)।
2. ফসলের বৈচিত্র্যকরণ (শুষ্ক অঞ্চলে ডাল ও তেলবীজ চাষ)।
3. আবহাওয়া পূর্বাভাস ব্যবস্থা উন্নতকরণ।
4. জলসংরক্ষণ (বৃষ্টির জল সংরক্ষণ, মাইক্রো ইরিগেশন)।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ভারতের কৃষির ওপর মৌসুমি বায়ুর প্রভাব লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারত” -এর “ভারতের জলবায়ু” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন