ভারতকে স্বাভাবিক উদ্ভিদ অঞ্চলে ভাগ করে প্রত্যেকটির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

Rahul

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ভারতকে স্বাভাবিক উদ্ভিদ অঞ্চলে ভাগ করে প্রত্যেকটির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদ” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

ভারতকে স্বাভাবিক উদ্ভিদ অঞ্চলে ভাগ করে প্রত্যেকটির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও
ভারতকে স্বাভাবিক উদ্ভিদ অঞ্চলে ভাগ করে প্রত্যেকটির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও
Contents Show

ভারতকে স্বাভাবিক উদ্ভিদ অঞ্চলে ভাগ করে প্রত্যেকটির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

অথবা, ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদের শ্রেণিবিভাগ করো এবং যে-কোনো একটির বিবরণ দাও।

ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় –

ভূগোলবিদ লেগ্রিস, চ্যাম্পিয়ন, পুরি প্রমুখ ভারতকে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন প্রকার স্বাভাবিক উদ্ভিদ অঞ্চলে ভাগ করলেও সকল শ্রেণি বিভাগের মধ্যে সামঞ্জস্য রেখে ভারতকে নিম্নলিখিত ছয়টি স্বাভাবিক উদ্ভিদ অঞ্চলে ভাগ করা হয়। যথা –

ক্রান্তীয় চিরহরিৎ বৃক্ষের বনভূমি –

  • অবস্থান – উত্তর-পূর্বের পার্বত্য অঞ্চল, পূর্ব হিমালয়ের তরাই অঞ্চল, পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিমঢাল, ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা, লাক্ষা দ্বীপপুঞ্জ এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে এই অরণ্য দেখা যায়। এই অরণ্যের বৃক্ষগুলি সারাবছরই সবুজ থাকে বলে এর নামকরণ হয়েছে চিরহরিৎ অরণ্য।
  • প্রধান বৃক্ষ – এই অরণ্যের প্রধান প্রধান বৃক্ষগুলি হল – গর্জন, শিশু, আবলুস, চাপলাস, তূণ, জারুল, রোজউড, আয়রন উড প্রভৃতি।
  • বৃষ্টিপাত – গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাত 200 সেমির বেশি হওয়া আবশ্যক।
  • উষ্ণতা – শীতকালীন উষ্ণতা 18° সেলসিয়াস থেকে 25° সেলসিয়াস এবং গ্রীষ্মকালীন উষ্ণতা 27° সেলসিয়াস থেকে 30° সেলসিয়াস এর মধ্যে থাকা দরকার।
  • আর্দ্রতা – কমপক্ষে 70%-95% বার্ষিক আর্দ্রতার প্রয়োজন।

ক্রান্তীয় পর্ণমোচী অরণ্য –

  • অবস্থান – ব্রহ্মপুত্র সমভূমি, উচ্চ, মধ্য ও নিম্ন গঙ্গা সমভূমি, মধ্য ভারতের উচ্চভূমি, পশ্চিমঘাট পর্বতের বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল, শতদ্রু সমভূমি প্রভৃতি অঞ্চল পর্ণমোচী গাছের বনভূমি দেখা যায়।
  • প্রধান বৃক্ষ – শাল, সেগুন, মহুয়া, শিমুল, পলাশ, শিরীষ, বট, অশ্বত্থ, আম, জাম, কাঁঠাল, অর্জুন, তেঁতুল প্রভৃতি।
  • বৃষ্টিপাত – গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাত 100-150 সেমি হওয়া আবশ্যক।
  • উষ্ণতা – প্রধানত 26°-30° সেলসিয়াস উষ্ণতাযুক্ত অঞ্চলে পর্ণমোচী উদ্ভিদ জন্মায়।
  • আর্দ্রতা – পর্ণমোচী উদ্ভিদ জন্মানোর জন্য 50%-70% আর্দ্রতা প্রয়োজন।

ক্রান্তীয় মরুউদ্ভিদ –

  • অবস্থান – রাজস্থান, দাক্ষিণাত্য মালভূমির বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল এবং কচ্ছ কাথিয়াবাড় উপদ্বীপ অঞ্চলে এই বনভূমি দেখা যায়।
  • প্রধান বৃক্ষ – বাবলা, ফণীমনসা, তেশিরামনসা এবং সামান্য নিকৃষ্টমানের তৃণ জন্মায়। বেশি শুষ্কতাজনিত কারণেই এখানে গুল্ম কাঁটাঝোপ জন্মায়। এদের জেরোফাইট বলে।
  • বৃষ্টিপাত – মরু বা মরুপ্রায় অঞ্চলে যেখানে গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাত 50 সেমির কম সেখানে এই অরণ্যের সৃষ্টি হয়েছে।
  • শীতকালীন উষ্ণতা – 12°-25° সেলসিয়াস এবং গ্রীষ্মকালীন উষ্ণতা 27° সেলসিয়াস থেকে 35° সেলসিয়াস অর্থাৎ যেখানে উষ্ণতার প্রসর বেশি সেখানে এই জাতীয় উদ্ভিদ জন্মায়।
  • আর্দ্রতা – গড় বার্ষিক উষ্ণতার পরিমাণ 45%-60%।

ম্যানগ্রোভ অরণ্য –

  • অবস্থান – উপকূলীয় অংশ ও গঙ্গা, গোদাবরী, কাবেরী প্রভৃতি নদীর বদ্বীপ অঞ্চলে এই বনভূমি দেখা যায়।
  • প্রধান বৃক্ষ – সুন্দরী, গরান, গেঁওয়া, হোগলা, গোলপাতা প্রভৃতি। এই বনভূমির বৃক্ষ লবণাক্ত জলাভূমিতে শ্বাসমূলের সাহায্যে শ্বাসগ্রহণ করে এবং কর্দমাক্ত নরম মাটিতে ঠেসমূলের সাহায্যে দণ্ডায়মান থাকে বলে এদের ম্যানগ্রোভ অরণ্য বলে।
  • বৃষ্টিপাত – গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাত 100 সেমির বেশি হওয়া প্রয়োজন।
  • উষ্ণতা – কমপক্ষে 25°-30° সেলসিয়াস উষ্ণতার প্রয়োজন হয়।
  • আর্দ্রতা – এই বনভূমিতে 60% এর অধিক আর্দ্রতার প্রয়োজন হয়।
ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদের বণ্টন
ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদের বণ্টন

পার্বত্য বনভূমি –

  • অবস্থান – এই অরণ্য প্রধানত দুটি স্থানে দেখা যায় – দক্ষিণ ও মধ্য ভারতের পার্বত্য বনভূমি ও হিমালয়ের পার্বত্য বনভূমি।
  • প্রধান বৃক্ষ –
    • দক্ষিণ ও মধ্য ভারতের পার্বত্য বনভূমি – এখানে প্রধানত দু-প্রকারের উদ্ভিদ দেখা যায়, যথা –
      • নীলগিরি, সাতপুরা, বিন্ধ্য, মহাদেব, মহাকাল প্রভৃতি পর্বতের 1000-1500 মিটার উচ্চতায় চিরহরিৎ বনভূমি দেখা যায়।
      • 1500 মিটারের বেশি উচ্চতায় নাতিশীতোষ্ণ বনভূমি দেখা যায়। এখানকার উল্লেখযোগ্য বৃক্ষগুলি হল – রডোডেনড্রন, লরেন্স, ম্যাগনোলিয়া, সিঙ্কোনা, এলম প্রভৃতি।
    • হিমালয়ের পার্বত্য বনভূমি – এখানকার ভিন্ন ভিন্ন উচ্চতায় ভিন্ন ভিন্ন গাছপালা দেখা যায় যেমন –
      • চিরহরিৎ অরণ্য – পর্বতের পাদদেশ থেকে 1000 মিটার উচ্চতা পর্যন্ত শিশু, বাঁশ, গর্জন প্রভৃতি বৃক্ষ জন্মায়।
      • নাতিশীতোষ্ণ অরণ্য – 1000-2500 মিটার উচ্চতায় ওক, ম্যাপল, বার্চ প্রভৃতি বৃক্ষ জন্মায়।
      • সরলবর্গীয় অরণ্য – 2500-4000 মিটার উচ্চতায় এই অরণ্যে পাইন, ফার, দেবদারু প্রভৃতি বৃক্ষ জন্মায়।
      • আল্পীয় তৃণভূমি – 4000 মিটারের বেশি উচ্চতায় এই তৃণভূমি দেখা যায়। তা ছাড়া জুনিপার, রূপালি ফার, রডোডেনড্রন প্রভৃতি বৃক্ষ দেখা যায়।
পার্বত্য বনভূমি
পার্বত্য বনভূমি

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

ভারতকে কয়টি স্বাভাবিক উদ্ভিদ অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে?

ভারতকে প্রধানত ছয়টি স্বাভাবিক উদ্ভিদ অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে –
1. ক্রান্তীয় চিরহরিৎ বৃক্ষের বনভূমি।
2. ক্রান্তীয় পর্ণমোচী অরণ্য।
3. ক্রান্তীয় মরুউদ্ভিদ।
4. ম্যানগ্রোভ অরণ্য।
5. পার্বত্য বনভূমি।

ক্রান্তীয় চিরহরিৎ বনভূমি কোথায় দেখা যায়?

উত্তর-পূর্ব ভারত (আসাম, অরুণাচল প্রদেশ), পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢাল, আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ এবং লাক্ষাদ্বীপে এই বনভূমি দেখা যায়।

পর্ণমোচী অরণ্যের প্রধান বৃক্ষগুলি কী কী?

শাল, সেগুন, মহুয়া, পলাশ, শিমুল, বট, অশ্বত্থ, আম, জাম, কাঁঠাল ইত্যাদি।

ম্যানগ্রোভ অরণ্যের বৈশিষ্ট্য কী?

1. অবস্থান – সুন্দরবন (পশ্চিমবঙ্গ), গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র বদ্বীপ, গোদাবরী ও কাবেরী নদীর বদ্বীপে।
2. প্রধান উদ্ভিদ – সুন্দরী, গরান, গেঁওয়া, হোগলা।
3. বিশেষতা – লবণাক্ত জল সহ্য করতে পারে, শ্বাসমূল (Pneumatophores) থাকে।

রাজস্থানে কোন ধরনের উদ্ভিদ দেখা যায়?

রাজস্থানে ক্রান্তীয় মরুউদ্ভিদ (জেরোফাইট) দেখা যায়, যেমন — বাবলা, ফণীমনসা, খেজুর, ক্যাকটাস ইত্যাদি।

পার্বত্য বনভূমিতে উচ্চতা অনুযায়ী কী কী উদ্ভিদ দেখা যায়?

1. 1000 মিটার পর্যন্ত – চিরহরিৎ বৃক্ষ (শিশু, বাঁশ, গর্জন)।
2. 1000–2500 মিটার – ওক, ম্যাপল, বার্চ (নাতিশীতোষ্ণ অরণ্য)।
3. 2500–4000 মিটার – পাইন, ফার, দেবদারু (সরলবর্গীয় অরণ্য)।
4. 4000 মিটারের উপরে – আল্পীয় তৃণভূমি ও জুনিপার।

পশ্চিমঘাট পর্বতে কী ধরনের বনভূমি দেখা যায়?

পশ্চিমঘাটের পশ্চিম ঢালে ক্রান্তীয় চিরহরিৎ বনভূমি এবং বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চলে পর্ণমোচী অরণ্য দেখা যায়।

মরু উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য কী?

1. শুষ্কতা সহ্য করতে পারে (জেরোফাইট)।
2. পাতায় মোমের প্রলেপ বা কাঁটা থাকে (যেমন — বাবলা, ক্যাকটাস)।
3. গভীর শিকড়যুক্ত।

সুন্দরবনে কেন ম্যানগ্রোভ অরণ্য গড়ে উঠেছে?

নদীর বদ্বীপে লবণাক্ত জল ও কর্দমাক্ত মাটি থাকায় ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ (সুন্দরী, গরান) জন্মায়, যা লবণ সহ্য করতে পারে এবং জোয়ার-ভাটা অঞ্চলে বেঁচে থাকতে পারে।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ভারতকে স্বাভাবিক উদ্ভিদ অঞ্চলে ভাগ করে প্রত্যেকটির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদ” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

সক্রিয় সেনসর ও নিষ্ক্রিয় সেনসর বলতে কী বোঝো

সক্রিয় সেনসর ও নিষ্ক্রিয় সেনসর বলতে কী বোঝো? সক্রিয় সেনসর ও নিষ্ক্রিয় সেনসরের মধ্যে পার্থক্য

জিওস্টেশনারি ও সান-সিনক্রোনাস উপগ্রহ বলতে কী বোঝো

জিওস্টেশনারি ও সান-সিনক্রোনাস উপগ্রহ কী? জিওস্টেশনারি ও সান-সিনক্রোনাস উপগ্রহের মধ্যে পার্থক্য

ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র ও উপগ্রহ চিত্র বলতে কী বোঝো

ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র ও উপগ্রহ চিত্র কী? ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র ও উপগ্রহ চিত্রের পার্থক্য

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

প্রিজমের মধ্য দিয়ে সাদা আলোর বিচ্ছুরণ চিত্রসহ আলোচনা করো।

উত্তল লেন্স কীভাবে সদ্‌, অবশীর্ষ ও খর্বাকার প্রতিবিম্ব গঠন করে তা রেখাচিত্রের সাহায্যে দেখাও।

অবতল লেন্সকে কিছু প্রিজমের সমন্বয়রূপে কল্পনা করে অপসারী ক্রিয়ার ব্যাখ্যা করো।

স্বল্পদৃষ্টিজনিত ত্রুটি কাকে বলে? কীভাবে স্বল্পদৃষ্টিজনিত ত্রুটি দূর করা যায়?

দীর্ঘদৃষ্টিজনিত ত্রুটি কী? এই ত্রুটি কীভাবে দূর করা যায়?