ভৌমজলের অতিরিক্ত ব্যবহার ও প্রভাব লেখো।

Rohit

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ভৌমজলের অতিরিক্ত ব্যবহার ও প্রভাব লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের নদনদী ও হ্রদসমূহ” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

ভৌমজলের অতিরিক্ত ব্যবহার ও প্রভাব লেখো-মাধ্যমিক ভূগোল
ভৌমজলের অতিরিক্ত ব্যবহার ও প্রভাব লেখো-মাধ্যমিক ভূগোল

ভৌমজলের অতিরিক্ত ব্যবহার ও প্রভাব লেখো।

ভূপৃষ্ঠের নীচে শিলা বা মাটির রন্ধ্রগুলির মধ্যে সঞ্চিত জলকে ভৌমজল বলে। মানুষের দৈনন্দিন জীবনে ভৌমজলের গুরুত্ব অপরিসীম। জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধি, কৃষিক্ষেত্রে জলসেচের প্রসার, শিল্পে জলের চাহিদা প্রভৃতি কারণে ভৌমজলের অতিরিক্ত ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে ভৌমজলের পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। ভৌমজলের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে অসংখ্য সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে, যেমন –

পানীয় জলের অভাব –

মানুষের পানীয় জলের প্রধান উৎস হল ভৌমজল। ভৌমজলের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে পানীয় জলের অভাব দেখা দেবে।

ভৌমজলস্তরের পতন –

মাটির নীচ থেকে অতিরিক্ত ভৌমজল সংগ্রহ করলে ভৌমজলস্তর ক্রমাগত মাটির ভেতরে প্রবেশ করবে। ফলে কূপ-নলকূপের সাহায্যে জল পাওয়া যাবে না এবং ভৌমজলস্তরের পতন ঘটবে।

মাটিতে লবণের পরিমাণ বৃদ্ধি –

কূপ বা নলকূপ থেকে জল সংগ্রহের সময় লবণ দ্রবীভূত হয়ে মাটির নীচের স্তর থেকে ওপরের স্তরে সঞ্চিত হয়। তাই ভৌমজল সেচের কার্যে যত বেশি ব্যবহৃত হবে মাটির লবণাক্ততা তত বৃদ্ধি পাবে।

সেচে জলের অভাব –

ভারতের কূপ ও নলকূপের সাহায্যে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে জমিতে জলসেচ করা হয়। ভৌমজলের অভাব দেখা দিলে প্রয়োজনীয় সেচের জল পাওয়া যাবে না।

রোগের প্রাদুর্ভাব –

মাটির নীচ থেকে অতিরিক্ত পরিমাণ ভৌমজল সংগ্রহের ফলে আর্সেনিক, ফ্লুওরাইড, আয়রন প্রভৃতি খনিজ জলের সঙ্গে মিশে যায়। ফলে এই খনিজ মিশ্রিত বিষাক্ত জল পান করলে নানা রোগের সৃষ্টি হয়।

উদ্ভিদের মৃত্যু –

ভৌমজলস্তর নীচে নেমে গেলে উদ্ভিদের মূল জলস্তরে পৌঁছোতে পারবে না, ফলে উদ্ভিদের পক্ষে পর্যাপ্ত জলের যোগান পাওয়া সম্ভব হবে না। জলের অভাবে উদ্ভিদের মৃত্যু হবে এবং বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বিঘ্নিত হবে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

ভৌমজল কী?

ভূপৃষ্ঠের নীচে শিলা বা মাটির ফাঁকে সঞ্চিত জলকে ভৌমজল বলে। এটি মানুষের পানীয় জল, সেচ ও শিল্পের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ভৌমজলের অতিরিক্ত ব্যবহারের প্রধান কারণ কী?

1. জনসংখ্যা বৃদ্ধি।
2. কৃষিক্ষেত্রে সেচের প্রসার।
3. শিল্পে জলের চাহিদা বৃদ্ধি।
4. নগরায়ণ ও ভূগর্ভস্থ জলের অবাধ উত্তোলন।

ভৌমজলের অতিরিক্ত ব্যবহারের প্রভাব কী?

1. পানীয় জলের অভাব।
2. ভৌমজলস্তরের নিম্নগামিতা (জলস্তর নিচে নেমে যাওয়া)।
3. মাটির লবণাক্ততা বৃদ্ধি।
4. সেচের জলের অভাব।
5. আর্সেনিক, ফ্লুরাইড দূষণ (বিষাক্ত জল)।
6. উদ্ভিদের মৃত্যু ও বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি।

ভৌমজলস্তর নিচে নেমে গেলে কী সমস্যা হয়?

1. কূপ ও নলকূপ শুকিয়ে যায়।
2. জল উত্তোলন খরচ বাড়ে।
3. মরুভূমিকরণের সম্ভাবনা তৈরি হয়।

মাটির লবণাক্ততা কীভাবে বাড়ে?

অতিরিক্ত জল উত্তোলনের সময় লবণ মাটির উপরের স্তরে জমা হয়, ফলে মাটি অনুর্বর হয়ে পড়ে এবং ফসল উৎপাদন কমে যায়।

আর্সেনিক ও ফ্লুরাইড দূষণ কীভাবে হয়?

অতিরিক্ত জল উত্তোলনের সময় ভূগর্ভস্থ খনিজ (আর্সেনিক, ফ্লুরাইড) জলের সাথে মিশে যায়, যা পান করলে ত্বক, হাড় ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করে।

ভৌমজল সংরক্ষণের উপায় কী?

1. বৃষ্টির জল সংরক্ষণ (রেইনওয়াটার হার্ভেস্টিং)।
2. সেচের জন্য ড্রিপ বা স্প্রিংকলার পদ্ধতি ব্যবহার।
3. ভূগর্ভস্থ জল পুনর্ভরণ (রিচার্জিং)।
4. জলের অপচয় রোধ।

ভৌমজল সংরক্ষণ কেন গুরুত্বপূর্ণ?

এটি পানীয় জল, কৃষি ও শিল্পের ভিত্তি। এর অভাবে খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।

উদ্ভিদের ওপর ভৌমজল হ্রাসের প্রভাব কী?

জলস্তর নিচে নেমে গেলে গাছের শিকড় জল পায় না, ফলে গাছ মারা যায় এবং বনভূমি ধ্বংস হয়।

ভারতে ভৌমজল সংকট সবচেয়ে বেশি কোথায়?

পাঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান, গুজরাট ও তামিলনাড়ুতে ভৌমজল অত্যধিক উত্তোলনের কারণে সংকট দেখা দিয়েছে। এই সমস্যা সমাধানে সচেতনতা ও টেকসই জল ব্যবহার প্রয়োজন।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ভৌমজলের অতিরিক্ত ব্যবহার ও প্রভাব লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের নদনদী ও হ্রদসমূহ” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

সক্রিয় সেনসর ও নিষ্ক্রিয় সেনসর বলতে কী বোঝো

সক্রিয় সেনসর ও নিষ্ক্রিয় সেনসর বলতে কী বোঝো? সক্রিয় সেনসর ও নিষ্ক্রিয় সেনসরের মধ্যে পার্থক্য

জিওস্টেশনারি ও সান-সিনক্রোনাস উপগ্রহ বলতে কী বোঝো

জিওস্টেশনারি ও সান-সিনক্রোনাস উপগ্রহ কী? জিওস্টেশনারি ও সান-সিনক্রোনাস উপগ্রহের মধ্যে পার্থক্য

ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র ও উপগ্রহ চিত্র বলতে কী বোঝো

ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র ও উপগ্রহ চিত্র কী? ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র ও উপগ্রহ চিত্রের পার্থক্য

About The Author

Rohit

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

প্রিজমের মধ্য দিয়ে সাদা আলোর বিচ্ছুরণ চিত্রসহ আলোচনা করো।

উত্তল লেন্স কীভাবে সদ্‌, অবশীর্ষ ও খর্বাকার প্রতিবিম্ব গঠন করে তা রেখাচিত্রের সাহায্যে দেখাও।

অবতল লেন্সকে কিছু প্রিজমের সমন্বয়রূপে কল্পনা করে অপসারী ক্রিয়ার ব্যাখ্যা করো।

স্বল্পদৃষ্টিজনিত ত্রুটি কাকে বলে? কীভাবে স্বল্পদৃষ্টিজনিত ত্রুটি দূর করা যায়?

দীর্ঘদৃষ্টিজনিত ত্রুটি কী? এই ত্রুটি কীভাবে দূর করা যায়?