মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – পরিবেশ তার সম্পদ এবং তাদের সংরক্ষণ – জীববৈচিত্র্য এবং সংরক্ষণ – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর(‘বিভাগ-ক’)

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান একটি বিষয় যা মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক জীবন বিজ্ঞানের সম্পর্কিত বিষয়গুলি সম্পর্কে শেখায়। এই পাঠে সম্পদ ও তাদের সংরক্ষণ, জীববৈচিত্র্য এবং সংরক্ষণ সম্পর্কিত বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করা হয়।

Table of Contents

পরিবেশ হলো আমাদের পাসের ও আমরা বসবাস করছি সবচেয়ে নিকটস্থ একটি উপাদান। এটি আমাদের উদ্ভিদ, প্রাণী এবং মানুষের জীবনপ্রদান করে এবং বিভিন্ন প্রকারের সম্পদ উৎপাদন করে। পরিবেশের সংরক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি আমাদের স্বাস্থ্য, উদ্ভিদ এবং প্রাণীর সংরক্ষণের জন্য জরুরি। পরিবেশের সংরক্ষণ সম্পর্কিত পরিবেশ সংরক্ষণ ও সামগ্রিক জীবন বিজ্ঞানের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করা হয়।

জীববৈচিত্র্য কাকে বলে? জীববৈচিত্র্যের গুরুত্ব লেখো।

জীববৈচিত্র্য হলো প্রাকৃতিক বিশ্বের অসাধারণ প্রাণীদের মহান বৈশিষ্ট্য ও বিপুল বগ্ধতা।

জীববৈচিত্র্য

স্থলভূমি, সমুদ্র বা অন্য জলাভূমির বাস্তুতন্ত্রে উপস্থিত বিভিন্ন জীবের প্রজাতিগত, আন্তঃপ্রজাতিগত এবং বাস্তুতান্ত্রিক বিভিন্নতাকে জীববৈচিত্র্য বা বায়োডাইভারসিটি বলে।

জীববৈচিত্র্যের গুরুত্ব

  • বাস্তুতান্ত্রিক মূল্য – বাস্তুতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে জীববৈচিত্র্য বিশেষ ভূমিকা পালন করে। প্রত্যেক জীব বাস্তুতান্ত্রিকভাবে একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। একটি জীবের বিনাশ অন্য কোনো জীবের বিপন্নতার কারণ হতে পারে, তাই প্রজাতি বৈচিত্র্য যত বাড়বে সেই বাস্তুতন্ত্র তত বেশি স্থিতিশীল হবে।
  • পরিবেশগত মূল্য – পরিবেশদূষণ রোধ করতে এবং পরিবেশদূষণ রোধের মাধ্যমে জীবমণ্ডল সার্বিক সংরক্ষণ ও তার কার্যকারিতা বজায় রাখার জন্য জীববৈচিত্র্য আবশ্যক।
জীববৈচিত্র্য কাকে বলে জীববৈচিত্র্যের গুরুত্ব লেখো।
  • বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষা – প্রত্যেক জীব বাস্তুতান্ত্রিকভাবে একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। একটি জীবের বিনাশ অন্য কোনো জীবের বিপন্নতার কারণ হতে পারে। তাই এই পৃথিবীতে মানুষের বেঁচে থাকার অন্যতম প্রধান শর্ত হল এই জীববৈচিত্র্যকে বাঁচিয়ে রাখা।
  • জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ – পরিবেশদূষণ রোধে জলবায়ু নিয়ন্ত্রণের জন্য এবং জীবমণ্ডলের সার্বিক সংরক্ষণ ও তার কার্যকারিতা বজায় রাখার জন্য জীববৈচিত্র্য আবশ্যক। যেমন — ক্রান্তীয় বন CO2 শোষণ করে বিশ্ব উষ্ণায়ণ হ্রাস করে। বনভূমি জলশোষণ ও বাষ্পমোচন দ্বারা বৃষ্টিপাত তথা জলচক্র বজায় রাখে। অনেক উদ্ভিদ দূষক গ্যাস শোষণ করে পরিবেশ পরিশুদ্ধ করে।
  • অর্থনৈতিক মূল্য – মানুষ তার খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, ওষুধপত্র, প্রভৃতির জন্য সরাসরি প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল, জীববৈচিত্র্যের জন্যই মানুষ তার ক্রমবর্ধমান খাদ্য চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয়। মানুষ বৈচিত্র্যময় উদ্ভিদ প্রজাতি থেকে বিভিন্ন প্রকার খাদ্যসামগ্রী ছাড়াও ড্রাগ ও ওষুধ, কাঠ, কাগজ, তন্তু, রবার, আঠা, রেজিন, ট্যানিন ইত্যাদি পেয়ে থাকে। অন্যদিকে মোম, সিল্ক, উল, মুক্তো, চামড়া, পালক, মধু, মাছ, মাংস ও দুগ্ধসামগ্রী প্রাণী বৈচিত্র্যের কারণেই আমাদের উপলব্ধ হয়।
  • নান্দনিক মূল্য – বিভিন্ন প্রজাতির জীব প্রকৃতিকে বৈচিত্র্যময় ও সুন্দর করে তোলে।
  • নৈতিক মূল্য – প্রত্যেক জীবের এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার অধিকার আছে। 1982 সালে রাষ্ট্রপুঞ্জের বিশ্বপ্রকৃতি সম্পর্কিত ঘোষণাপত্রে এই চিন্তাধারা স্বীকৃতি পেয়েছে।

জীববৈচিত্র্যের প্রকারভেদগুলি লেখো। ভারতের 4টি জীববৈচিত্র্য হটস্পটের নাম লেখো।

জীববৈচিত্র্য বৈশ্বিক পরিবেশে প্রাণীদের আদ্যতম এবং মহান বৈশিষ্ট্য যা জীবনের বিভিন্ন আকার, আচারগুলি ও সমগ্র বগ্ধতার উপাদান।

জীববৈচিত্র্যের প্রকার

জীববৈচিত্র্যকে প্রধান তিনভাগে ভাগ করা যায়, এগুলি সম্পর্কে নীচে লেখা হল।

  1. জিনগত বৈচিত্র্য – বিভিন্ন প্রজাতির জীবের মধ্যে জিনগত গঠনের সামান্য পরিবর্তন দেখা যায়, যার জন্য এরা একে অন্যের থেকে সামান্য আলাদা হয়। একে জিনগত বৈচিত্র্য বলে।
  2. প্রজাতিগত বৈচিত্র্য – প্রজাতিগত বৈচিত্র্য হল কোনো একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে বিবিধ প্রজাতির জীবের উপস্থিতি এবং তাদের আপেক্ষিক প্রাচুর্য।
  3. বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য – একটি বাস্তুতন্ত্রের সজীব উপাদান বিভিন্ন প্রকারের উদ্ভিদ, প্রাণী ও অণুজীবদের নিয়ে গঠিত। বিভিন্ন বাস্তুতন্ত্রের জীবের গঠন ও বৈচিত্র্যকেই বাস্তুতান্ত্রিক জীববৈচিত্র্য বলে।

ভারতের জীববৈচিত্র্য হটস্পট

ভারতের চারটি জীববৈচিত্র্য হটস্পট সম্পর্কে নীচে আলোচনা করা হল।

  1. পূর্ব হিমালয় – ভারতের উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলি, যেমন — সিকিম, পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাংশ, অসাম, অরুণাচল প্রদেশ এর অন্তর্গত। প্রাচীন সপুষ্পক উদ্ভিদের প্রাচুর্য্যের জন্য এই স্থানকে প্রজাতিভবনের উৎপত্তিস্থল বলে।
  2. ইন্দো-বার্মা – ভারতের উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলি, যেমন — মণিপুর, মিজোরাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড ও দক্ষিণ অসম এই অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত।
  3. পশ্চিমঘাট ও শ্রীলঙ্কা – দক্ষিণ-পশ্চিম ভারতের পশ্চিমঘাট পর্বতমালা অর্থাৎ গুজরাট, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক এবং কেরল রাজ্য এই অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত।
  4. সুন্দাল্যান্ড – এটি এশিয়া-প্যাসিফিক মহাদেশের অন্তর্গত যার মধ্যে আন্দামান নিকোবর দ্বীপগুলি পড়ে।

জীববৈচিত্র্য হ্রাসের বা বিনাশের কারণগুলি সংক্ষেপে লেখো।

জীববৈচিত্র্যের হ্রাস এর মাঝে প্রাথমিকভাবে পরিবেশের দুর্বলতা, জীবনযাপনের বিপর্যয় এবং মানব কার্যক্রমের প্রভাব সম্পর্কিত।

জীববৈচিত্র্য হ্রাসের বা বিনাশের কারণ

  1. জমি ব্যবহারের ধরন পরিবর্তন – জমি ব্যবহারের ধরন পরিবর্তনের ফলে উদ্ভিদের বিভিন্ন প্রজাতি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে ও তার সঙ্গে বিভিন্ন প্রাণীর আবাসস্থলগুলিও সংকুচিত হয়ে পড়ছে। এ ছাড়া পৃথিবীতে জনসংখ্যার অত্যধিক চাহিদা পুরণ করার জন্য নির্বিচারে বনভূমি ধ্বংস করা হচ্ছে।
  2. শিকার ও চোরাশিকার – খাদ্যের প্রয়োজনে, নিছক শিকারের আনন্দ উপভোগ করার জন্য অথবা চামড়া, শিং, চর্বি প্রভৃতি বিক্রি করে উপার্জনের লোভে বিভিন্ন বন্যজীবকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়। এর ফলে সেই প্রজাতিগুলি ক্রমশ বিপন্ন হয়ে পড়ছে।
  3. বিশ্ব উষ্ণায়ণ ও জলবায়ুর পরিবর্তন – ইচ্ছেমতো বৃক্ষছেদন এবং অতিমাত্রায় জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের ফলে বিশ্ব উষ্ণায়ণের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বিভিন্ন অঞ্চলের জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে। বহু প্রাণী ওই পরিবেশের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারছে না। ফলে তারা অবলুপ্ত হচ্ছে।
  4. দূষণ – সভ্যতার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতিতে জলদূষণ, বায়ুদূষণ ও মৃত্তিকাদূষণের মাত্রাও প্রভূত পরিমাণে বাড়ছে। দূষণের ফলে অনেক উদ্ভিদ ও প্রাণীর মৃত্যু ঘটছে। প্রকৃতিতে প্রাণীর সংখ্যা কমে যাওয়ার জন্য কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত কীটনাশককেই দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে।
  5. অতিব্যবহার – বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলি তাদের চাহিদা পূরণ করার জন্য বনাঞ্চল থেকে নির্বিচারে বিভিন্ন বৃক্ষলতা ও গুল্ম আহরণ করে। এর ফলে জীববৈচিত্র্যপূর্ণ বনাঞ্চল থেকে ভেষজ গুণসম্পন্ন উদ্ভিদগুলি সংখ্যায় অতিদ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। অর্থনৈতিক গুরুত্বসম্পন্ন প্রাণীগুলিও অতিব্যবহারে আজ বিনাশের সম্মুখীন।
  6. প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিপর্যয় – বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিপর্যয়ের ফলে বহু প্রজাতি চিরকালের মতো অবলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। বন্যা, ভূমিক্ষয়, ভূমিকম্প, সুনামি ইত্যাদি প্রাকৃতিক বিপর্যয়গুলি বিভিন্ন স্থানের বহু জীববৈচিত্র্যকে বিলুপ্ত করেছে।
  7. বহিরাগত প্রজাতির অনুপ্রবেশ – যে-কোনো বাস্তুতন্ত্রের নিজস্ব গঠনবৈচিত্র্য থাকে। বাইরে থেকে হঠাৎ কোনো প্রজাতি এলে সেখানকার বাস্তুতন্ত্রের গঠন বিনষ্ট হয়। যেমন — হাইব্রিড মাগুর প্রজাতিটির আবির্ভাবে দেশি মাগুর প্রায় বিপন্ন হয়ে পড়েছে।

আরো পড়ুন, মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – পরিবেশ তার সম্পদ এবং তাদের সংরক্ষণ – পরিবেশদূষন – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর – বিভাগ ২

সুন্দরবনের সমস্যাগুলি বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করো।

সুন্দরবন অঞ্চলের মধ্যে প্রধান সমস্যাগুলি হলো অপর্যাপ্ত অঞ্চল সংরক্ষণ, অকার্যকর জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ এবং বন্যার প্রতিষ্ঠানের অভাব।

সুন্দরবন অঞ্চলের সমস্যা

বর্তমানে সুন্দরবন অঞ্চলে বহু সমস্যা দেখা দিয়েছে। এই অঞ্চলের সমস্যাগুলি সম্পর্কে নীচে বর্ণনা করা হল।

  • নগরায়ণের জন্য লবণাম্বু উদ্ভিদের ধ্বংস – নগরায়ণের জন্য এবং গৃহনির্মাণ, চাষ-আবাদ জ্বালানি কাঠের চাহিদা পুরণের জন্য সুন্দরবনের তীরবর্তী অঞ্চলে লবণাম্বু উদ্ভিদকে ধ্বংস করা হচ্ছে।
  • কৃষি সংকট – ভূমিক্ষয়ের ফলে নদীর গভীরতা কমে যাচ্ছে। পলি জমে খাঁড়িগুলির গভীরতা হ্রাস পাচ্ছে। এর ফলে সমুদ্রের লবণাক্ত জল চাষের জমিকে প্লাবিত করে চাষ-আবাদের ক্ষতি করছে। এ ছাড়া পলি জমে চাষের জমির উর্বরতাও কমিয়ে দিচ্ছে।
  • মিষ্টি জলের সংকট – সমুদ্র তীরবর্তী এই অঞ্চলে মিষ্টি জল বা স্বাদুজলের অভাব অত্যন্ত প্রকট। নদীর গভীরতা হ্রাস পাওয়ার ফলে, লবণাক্ত জল, পুকুর-ডোবার জলের সঙ্গে মিশে মিষ্টি জলের সংকট সৃষ্টি করছে।
  • বাসস্থান ধ্বংস – অরণ্য ধ্বংসের ফলে বহু বন্যপ্রাণী ও কীটপতঙ্গ তাদের বাসস্থান হারাচ্ছে যা প্রকৃতপক্ষে সুন্দরবনের বাস্তুতন্ত্রকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এ ছাড়া জোয়ারভাটা, বন্যার কারণে সুন্দরবনে ভূমিক্ষয় হয়।
সুন্দরবনের সমস্যাগুলি বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করো।
  • দূষণ – হলদিয়া এবং কলকাতার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের কলকারখানাগুলি থেকে নির্গত শিল্পজাত বর্জ্য পদার্থগুলি নদী দ্বারা বাহিত হয়ে এই অঞ্চলে জলদূষণ ঘটায়। নদীর জলে এই সকল দূষণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় মাছ, মাছের ডিম, চিংড়ি ও অন্যান্য জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদ প্রভৃতি ধ্বংসের মুখোমুখি হচ্ছে। মাছের প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে। জাহাজ নির্গত তেল, গ্রিস জলে মুক্ত হয়ে দূষণ ছড়ায়।
  • খাদ্য-খাদকের ভারসাম্যে ব্যাঘাত – জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বর্তমানে পরিবেশ সমস্যা সুন্দরবনকে গ্রাস করছে। বহু প্রাণী অবলুপ্ত হওয়ার ফলে বাস্তুতন্ত্রের খাদ্যশৃঙ্খলে খাদ্য-খাদকের সংখ্যার ভারসাম্য বিঘ্নিত হচ্ছে, যা পরোক্ষভাবে মানুষের জীবনকে দুর্বিসহ করে তুলছে। মাছ, কাঁকড়া প্রভৃতি অতিরিক্ত সংগ্রহে বাঘেদের স্বাভাবিক খাদ্য হ্রাস পাচ্ছে, ফলে তারা সহজেই মানুষকে আক্রমণ করছে।
  • দ্বীপভূমির নিমজ্জন – বিশ্ব উষ্ণায়ণের ফলে মেরু অঞ্চলের বরফ দ্রুত গলে যাচ্ছে। সমুদ্রের জলের উচ্চতা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে সুন্দরবন অঞ্চলের বহু দ্বীপ জলে নিমজ্জিত হচ্ছে। যেমন — ভাঙ্গদুয়ানি দ্বীপটির 16.44% জলে নিমজ্জিত হয়ে গেছে। বিশ্ব উষ্ণায়ণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ না করলে ভবিষ্যতে এই সমস্যা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।

জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কাকে বলে? জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা লেখো।

জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের সম্পর্কে অবলম্বন করা হলে, আমাদের উপাদানগুলির সঠিক ব্যবহার এবং পরিবেশের সংরক্ষণের জন্য সম্পর্কিত প্রাথমিক প্রতিষ্ঠান এবং বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে হবে।

জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ

যে বিশেষ পদ্ধতির দ্বারা জীববৈচিত্র্যের বিজ্ঞানসম্মত ব্যবহার, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালন ব্যবস্থার সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করা হয় এবং জীববৈচিত্র্যকে বিভিন্ন ক্ষতিকর প্রভাব, অপব্যবহার এবং ধ্বংস থেকে রক্ষা করা হয়, তাকে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ বলে।

জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা

নানা কারণে জীববৈচিত্র্যকে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।নীচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করা হল।

  • খাদ্যের ভাণ্ডার – জীববৈচিত্র্য হল পৃথিবীর সমস্ত জীবের খাদ্যের ভাণ্ডার। তাই পৃথিবীর খাদ্য ভাণ্ডারকে অটুট রাখতে ও খাদ্য সুরক্ষা বজায় রাখার জন্য জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ অপরিহার্য।
  • শক্তি প্রদানকারী উৎস – সবুজ উদ্ভিদ সূর্যালোকের সাহায্যে পরিবেশ থেকে সংগৃহীত CO2 ও জলের রাসায়নিক বিক্রিয়ায় শর্করাজাতীয় খাদ্য প্রস্তুত করে। এক কথায় আলোক শক্তিকে রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে খাদ্য তৈরি করে। ওই শক্তি উদ্ভিদ থেকে বিভিন্ন স্তরের প্রাণীদেহে প্রবাহিত হয় এবং জীবনীশক্তি বজায় রাখে। তাই শক্তি প্রদানকারী হিসেবে জীববৈচিত্র্যের প্রয়োজনীয়তা জীবজগতের কাছে অপরিহার্য।
জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কাকে বলে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা লেখো।
  • জিনবৈচিত্র্যের ভাণ্ডার – জীববৈচিত্র্য জিনবৈচিত্র্যের ভাণ্ডার হিসেবে কাজ করে। জিনবৈচিত্র্য অটুট রাখার জন্য জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ বিশেষভাবে প্রয়োজনীয়।
  • ওষুধের উৎস – বিভিন্ন উদ্ভিদ এবং প্রাণী থেকে আধুনিক চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রস্তুত করা হয়। জানা গেছে প্রায় 70,000 প্রজাতির উদ্ভিদ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বিভিন্ন ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
  • শিল্পের কাঁচামালের ভান্ডার – বিভিন্ন শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল জীববৈচিত্র্য থেকে পাওয়া যায়। সেই কারণে জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণ বিশেষভাবে প্রয়োজন।
  • বাস্তুসংস্থানগত ভূমিকা – যে-কোনো বাস্তুতন্ত্রে জীবগোষ্ঠী পরস্পর নির্ভরশীল হয়ে বসবাস করে। এদের মধ্যে উৎপাদক, খাদক, বিয়োজক ও পরিবর্তক থাকে। কোনো একটি সম্প্রদায়ের অবলুপ্তি খাদ্যশৃঙ্খলে বিঘ্ন ঘটায়। তাই বাস্তুতান্ত্রিক সাম্যতা রক্ষার জন্য জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ অপরিহার্য।

সংরক্ষণ কাকে বলে? জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের পদ্ধতিগুলি সংক্ষেপে লেখো।

সংরক্ষণ হলো পরিবেশ, প্রাণীগুলি বা সম্পদের ভালবাসার এবং সুরক্ষার জন্য যোগ্য পরিচর্যা, প্রতিষ্ঠান ও পরিকল্পনা নিয়ে করা কার্যক্রম।

সংরক্ষণ

যে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার, তার নিয়ন্ত্রণ ও যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়, তাকে সংরক্ষণ বলে।

জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের পদ্ধতি

জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য মূলত দুই ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করা যায়, যথা — 1. ইন-সিটু সংরক্ষণ এবং 2. এক্স-সিটু সংরক্ষণ।

জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের পদ্ধতি
  1. ইন সিটু বা স্বস্থানিক সংরক্ষণ পদ্ধতি – এইজাতীয় পদ্ধতির মাধ্যমে জীবগোষ্ঠীকে তাদের সমস্ত পরিবেশে বেঁচে থাকার ও বংশবিস্তার করার সমস্ত সুবিধা প্রদান করে সংরক্ষণ করা হয়। জাতীয় উদ্যান, অভয়ারণ্য, সংরক্ষিত অরণ্য, বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ ইত্যাদি স্বস্থানিক সংরক্ষণের বিবিধ পথ বা ক্ষেত্র। 1. জাতীয় উদ্যান – এটি হল সরকার অধিগৃহীত ও নিয়ন্ত্রাধীন একটি অঞ্চল। এখানে বন্যপ্রাণী ও বনজ সম্পদসমূহকে চিরস্থায়ীভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। 2013 সালের তথ্য অনুযায়ী ভারতে 102টি জাতীয় উদ্যান সরকারিভাবে স্বীকৃত। জলপাইগুড়ির গোরুমারা এবং অসমের কাজিরাঙাতে এই ধরনের জাতীয় উদ্যান রয়েছে। 2. অভয়ারণ্য – এই বনাঞ্চল, কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারের আইন স্বীকৃত। এটি জাতীয় উদ্যানের তুলনায় ক্ষুদ্র। এখানে কাঠকাটা, চাষ- আবাদ করা এবং বনজ সম্পদ আহরণ করা অনুমতি সাপেক্ষ, তবে নিষিদ্ধ নয়। 2013 সালের তথ্য অনুযায়ী ভারতে 515টি অভয়ারণ্য রয়েছে। গুজরাটের গির অরণ্য হল একটি অভয়ারণ্যের উদাহরণ। 3. সংরক্ষিত অরণ্য – এইপ্রকার বনভূমি রাজ্য সরকারের আওতাধীন। এখানে গাছ কাটা, শিকার করা, গৃহপালিত পশুচারণ বিশেষ সরকারি অনুমতি ছাড়া নিষিদ্ধ। কর্ণাটকের হানাম সাগর একটি সংরক্ষিত অরণ্য। 4. বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ – এটি একটি বিশেষ অঞ্চল। এখানে বহুমুখী ব্যবহারের উপযোগী জমি অঞ্চলভিত্তিক ও নির্দিষ্ট ক্রিয়া কর্মভিত্তিক কতগুলি নির্দিষ্ট অংশে ভাগ করা হয়। এখানে সংরক্ষণ ও উন্নয়ন উভয় কার্যই সম্পাদন করা হয়। পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন এবং তামিলনাড়ুর নীলগিরি হল খুবই সুপরিচিত বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ।
  2. এক্স-সিটু বা অস্থানিক সংরক্ষণ পদ্ধতি – এইজাতীয় পদ্ধতির মাধ্যমে জীবগোষ্ঠীকে তার নিজস্ব প্রাকৃতিক পরিবেশের বাইরে কৃত্রিম উপায়ে সংরক্ষণ করা হয়। চিড়িয়াখানা, বোটানিক্যাল গার্ডেন, ক্রায়োসংরক্ষণ বা ক্রায়োপ্রিজারশেন প্রভৃতির মাধ্যমে এক্স-সিটু সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। 1. চিড়িয়াখানা – চিড়িয়াখানাতে বিভিন্ন ধরনের স্থলজ ও জলজ প্রাণীকে সংরক্ষণ করা হয়। 2. বোটানিক্যাল গার্ডেন – বোটানিক্যাল গার্ডেনের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার বিরল এবং বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদকে সংরক্ষণ করা হয়। 3. কায়োপ্রিজারভেশন বা ক্রায়োসংরক্ষণ – পরাগরেণু, বীজ, উদ্ভিদের বিভিন্ন অংশ প্রায় -196°C তাপমাত্রায় তরল নাইট্রোজেনে সংরক্ষণ করা যায়। এইপ্রকার সংরক্ষণ ক্রায়োসংরক্ষণ নামে পরিচিত।

পরিবেশ, তার সম্পদ এবং তাদের সংরক্ষণ, জীববৈচিত্র্য এবং সংরক্ষণ এমন মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের বিষয়গুলি যেটি আমাদের জীবনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং উপকারী জ্ঞান প্রদান করে। এই বিষয়গুলি আমাদের বুদ্ধি, সচেতনতা এবং জরুরি সচেতনতা বৃদ্ধি করে এবং আমাদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণের দিকে প্রেরণা দেয়।

মানবকেন্দ্রিক বিজ্ঞানের প্রয়োগ করে, আমরা পরিবেশ সংরক্ষণের প্রয়োজনতা ও গুরুত্বপূর্ণতার সম্পর্কে জানতে পারি। পরিবেশের উপাদানগুলির সংরক্ষণ ও সম্পদ এবং প্রাণীর জীবনপ্রদানের সংরক্ষণ আমাদের পরিবেশের সুস্থতার সম্পর্কে মানবজনিত পরিবেশের জন্য অপরিহার্য।

Share via:

মন্তব্য করুন