মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – পরিবেশ, তার সম্পদ এবং তাদের সংরক্ষণ – জীববৈচিত্র্য এবং সংরক্ষণ – জীববৈচিত্র্যের গুরুত্ব, জীববৈচিত্র্যের হটস্পট, জীববৈচিত্র্যের হ্রাস ও সুন্দরবনের পরিবেশগত সমস্যা – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

Rahul

আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের পঞ্চম অধ্যায় “পরিবেশ, তার সম্পদ এবং তাদের সংরক্ষণ” অধ্যায়ের ‘জীববৈচিত্র্য এবং সংরক্ষণ‘ বিভাগের উপ-অধ্যায় ‘জীববৈচিত্র্যের গুরুত্ব, জীববৈচিত্র্যের হটস্পট, জীববৈচিত্র্যের হ্রাস ও সুন্দরবনের পরিবেশগত সমস্যা‘ -এর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বা আপনি যদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন, তাহলে আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি যে এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হবে।

সুন্দরবনের পরিবেশগত সমস্যা – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
সুন্দরবনের পরিবেশগত সমস্যা – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
Contents Show

জীববৈচিত্র্য বা বায়োডাইভারসিটি কাকে বলে?

স্থলভূমি, সমুদ্র বা অন্য জলাভূমির বাস্তুতন্ত্রে উপস্থিত বিভিন্ন জীবের প্রজাতিগত, আন্তঃপ্রজাতিগত এবং বাস্তুতান্ত্রিক বিভিন্নতাকে জীববৈচিত্র্য বা বায়োডাইভারসিটি বলে।

প্রবাল প্রাচীর - জীববৈচিত্র্যের ভান্ডার
প্রবাল প্রাচীর – জীববৈচিত্র্যের ভান্ডার

জীববৈচিত্র্যকে কতগুলি আন্তঃসম্পর্কিত ধারণা দ্বারা প্রকাশ করা হয় এবং সেগুলি কী কী?

জীববৈচিত্র্যকে তিনটি আন্তঃসম্পর্কিত ধারণা দ্বারা প্রকাশ করা হয়। সেগুলি হল –

  1. জিনগত বৈচিত্র্য।
  2. প্রজাতি বৈচিত্র্য এবং।
  3. বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য।

জিনগত বৈচিত্র্য কী?

বিভিন্ন প্রজাতির জীবের জিন ও ক্রোমোজোমের বৈচিত্র্য এবং কোনো একটি প্রজাতির জিনের ভেদ বা ভেরিয়েশন হল জিনগত বৈচিত্র্য। একই প্রজাতির প্রত্যেক জীবের মধ্যে জিনগত গঠনের সামান্য পরিবর্তন দেখা যায়, যার জন্য এরা একে অন্যের থেকে সামান্য আলাদা হয়।

প্রজাতি বৈচিত্র্য কী?

কোনো একটি নির্দিষ্ট এলাকায় বিবিধ প্রজাতির জীবের উপস্থিতি এবং তাদের আপেক্ষিক প্রাচুর্যকে প্রজাতি বৈচিত্র্য বলে। এই পৃথিবীর প্রত্যেক প্রজাতির নিজস্ব জিনগত গঠন বর্তমান। এই কারণে একটি প্রজাতি থেকে অন্য প্রজাতি কিছুটা আলাদা হয়।

বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য কী?

একটি বাস্তুতন্ত্রের সজীব উপাদান বিভিন্ন প্রকারের উদ্ভিদ, প্রাণী ও অণুজীবদের নিয়ে গঠিত। বিভিন্ন বাস্তুতন্ত্রের জীবের গঠন ও বৈচিত্র্যকেই বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য বলে।

মানব সভ্যতার বিকাশে নিম্নলিখিত দুটি ক্ষেত্রে জীববৈচিত্র্যের ভূমিকা উল্লেখ করো। (1) খাদ্য উৎপাদন (2) ওষুধ প্রস্তুতি।

খাদ্য উৎপাদন –

মানুষসহ সকল জীব তার খাদ্যের জন্য সরাসরি প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল। জীববৈচিত্র্যের জন্যই মানুষ তার ক্রমবর্ধমান খাদ্য চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয়। বিভিন্ন খাদ্য-উপাদান, যেমন – ভিটামিন, খনিজ লবণ ও শক্তি-সমৃদ্ধ খাদ্যের সৃষ্টির মাধ্যমে পুষ্টিতে মানবসমাজকে সাহায্য করে জীববৈচিত্র্য। এ ছাড়া খরা, বন্যা রোগ প্রতিরোধী শস্য জীববৈচিত্র্যের ফলেই সৃষ্টি করা সম্ভব হয়েছে। মাছ ও জলজ প্রাণী, পোলট্রি পাখি, মাংস ও দুধ উৎপাদক প্রাণীবৈচিত্র্য সামগ্রিকভাবে পৃথিবীর খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

ওষুধ প্রস্তুতি –

চিকিৎসায় ব্যবহৃত বহু ওষুধ হল জীবজাত। সিনকোনা গাছের ছাল থেকে তৈরি কুইনাইন ম্যালেরিয়ার ওষুধরূপে, সর্পগন্ধা গাছের মূলের ছাল থেকে প্রাপ্ত রেসারপিন উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ তৈরিতে, ধুতুরা ফলের বীজ থেকে প্রাপ্ত ডাটুরিন হাঁপানির ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। তুলসী, কালমেঘ, নিম প্রভৃতি ভেষজ উদ্ভিদগুলিও বিভিন্ন ওষুধ প্রস্তুতিতে সাহায্য করে। Penicilium notatum (পেনিসিলিয়াম নোটেটাম) -সহ অন্যান্য উপকারী ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া এবং বিভিন্ন প্রাণীজ উপাদানও ওষুধ প্রস্তুতিতে ব্যবহার করা হয়।

ভারতের কোন্ কোন্ অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে জীববৈচিত্র্য লক্ষ করা যায়?

ভারতের উত্তর-পূর্ব হিমালয় অঞ্চল, ইন্দো-বার্মা অঞ্চল, পশ্চিমঘাট বনাঞ্চল, আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, গুজরাট ও তামিলনাড়ুর সামুদ্রিক প্রবাল প্রাচীরে প্রচুর পরিমাণে জীববৈচিত্র্য লক্ষ করা যায়।

অতিবৈচিত্র্যশালী দেশ বা মেগা ডাইভারসিটি কানট্রি কাকে বলে?

পৃথিবীর জীববৈচিত্র্যের প্রায় 8০ ভাগ, 17টি দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এই দেশগুলিকে অতি বৈচিত্র্যশালী দেশ বা মেগাডাইভারসিটি কানট্রি বলে। মেগাবায়োডাইভারসিটি সম্পন্ন দেশগুলির মধ্যে ব্রাজিল প্রথম স্থান অধিকার করে। ভারতবর্ষও একটি মেগাডাইভারসিটি কানট্রি।

মেগাডাইভারসিটি দেশসমূহ
মেগাডাইভারসিটি দেশসমূহ

প্রজাতি কাকে বলে?

জিনতত্ত্বগতভাবে স্বতন্ত্র একই বৈশিষ্ট্যযুক্ত জীবগোষ্ঠী, যারা নিজেদের মধ্যে প্রজননশীল এবং প্রজননগতভাবে অন্য জীবগোষ্ঠী থেকে পৃথক, তাদের প্রজাতি বলে।

এনডেমিক প্রজাতি কাকে বলে?

যে উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতি কেবলমাত্র একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে বাস করে, তাকে ওই অঞ্চলের এনডেমিক প্রজাতি বলে। যেমন – ভারতীয় সিংহ (গির), মুগা রেশম মথ (অসম)।

এনডেমিক প্রজাতি - অসমের মুগা রেশম মথ
এনডেমিক প্রজাতি – অসমের মুগা রেশম মথ

কোন্ বিজ্ঞানী কত খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম বায়োডাইভারসিটি হটস্পট কথাটি ব্যবহার করেন?

জীববিজ্ঞানী নরম্যান মায়ার্স, 1988 খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম, বায়োডাইভারসিটি হটস্পট কথাটি ব্যবহার করেন।

কনজারভেশন ইনটারন্যাশনাল সংস্থা একটি অঞ্চলের জীববৈচিত্র্যের হটস্পট-রূপে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য কোন্ দুটি শর্ত তুলে ধরেছে?

অথবা, কোনো অঞ্চলকে কখন হটস্পট বলে গণ্য করা হয়?

অনুরূপ প্রশ্ন, দুটি অঞ্চলের মধ্যে একটিকে জীববৈচিত্র্য হটস্পট বলে ঘোষণা করতে চাইলে কী কী শর্ত তুমি বিবেচনা করবে?

পরিবেশ-সংক্রান্ত সংস্থা কনজারভেশন ইনটারন্যাশনাল, একটি অঞ্চলের জীববৈচিত্র্যের হটস্পট-রূপে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য যে দুটি শর্ত তুলে ধরেছে, সেগুলি হল –

  1. নির্দিষ্ট হটস্পট অঞ্চলে অন্তত 1500টি সংবহনকলাযুক্ত এনডেমিক উদ্ভিদ প্রজাতির অস্তিত্ব থাকতে হবে।
  2. হটস্পট অঞ্চলের আদি বাসিন্দাদের অন্তত 70% প্রজাতিই বিলুপ্ত হয়ে গিয়ে থাকতে হবে।

পূর্ব হিমালয়কে বায়োডাইভারসিটি হটস্পট বলার কারণ কী?

অথবা, পূর্ব হিমালয় হটস্পটে পাওয়া যায় এমন জীববৈচিত্র্যের উদাহরণ দাও।

পূর্ব হিমালয় বহু এনডেমিক প্রজাতির উৎপত্তিস্থল। এখানে প্রায় 5800 প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। এদের মধ্যে 2000টি প্রজাতি এনডেমিক। এখানে 45টি স্তন্যপায়ী, 50টি পাখি, 17টি সরীসৃপ এবং 36টি উদ্ভিদ প্রজাতিসহ মোট 163টি বিপন্ন প্রজাতি বাস করে। এখানে কলসপত্রী (উদ্ভিদ), একশৃঙ্গ গন্ডার, সোনালি লেঙুর (প্রাণী) ইত্যাদি জীব বেশি দেখা যায়।

ওয়েস্টার্ন ঘাটস্ ও শ্রীলঙ্কা -এই অংশে ভারতের কোন্ কোন্ রাজ্য অন্তর্ভুক্ত?

ওয়েস্টার্ন ঘাটস্ বা পশ্চিমঘাট ও শ্রীলঙ্কা অংশে ভারতের যে রাজ্যগুলি অন্তর্ভুক্ত তা হল –

  • গুজরাট।
  • মহারাষ্ট্র।
  • কর্ণাটক।
  • কেরল।

পশ্চিমঘাট ও শ্রীলঙ্কা কে বায়োডাইভারসিটি হটস্পট বলার কারণ কী?

অথবা, পশ্চিমঘাট-শ্রীলঙ্কা হটস্পটে পাওয়া যায় এমন জীববৈচিত্র্যের উদাহরণ দাও।

পশ্চিমঘাট ও শ্রীলঙ্কা অংশে প্রায় 5000 প্রজাতির সংবহনকলাযুক্ত উদ্ভিদ জন্মায়, যাদের মধ্যে 1700টি প্রজাতি এনডেমিক। এ ছাড়া, প্রাণীদের মধ্যে 140টি স্তন্যপায়ী প্রজাতির মধ্যে 20টি প্রজাতি এনডেমিক। পাখির ক্ষেত্রে 450টি প্রজাতির মধ্যে 35টি প্রজাতি এনডেমিক। সরীসৃপের ক্ষেত্রে 260টি প্রজাতির মধ্যে 175টি প্রজাতি এবং উভচরের ক্ষেত্রে 135টি প্রজাতির মধ্যে 130টি প্রজাতি এনডেমিক। এখানে Magnolia nilagirica (ম্যাগনোলিয়া নিলাগিরিকা), Ixora elongata (ইক্সোরা ইলংগাটা) প্রভৃতি উদ্ভিদ এবং মালাবার লার্জ-স্পটেড সিভেট ও লায়ন-টেলড ম্যাকাক ইত্যাদি প্রাণীর উপস্থিতি লক্ষ করা যায়।

পশ্চিমঘাট ও শ্রীলঙ্কা হটস্পটে প্রাপ্ত জীব-
পশ্চিমঘাট ও শ্রীলঙ্কা হটস্পটে প্রাপ্ত জীব-

ইন্দো-বার্মা অংশে ভারতের কোন্ কোন্ রাজ্য অন্তর্ভুক্ত?

ইন্দো-বার্মা অংশে ভারতের যে সকল রাজ্য অন্তর্ভুক্ত সেগুলি হল –

  • মণিপুর।
  • মিজোরাম।
  • ত্রিপুরা।
  • মেঘালয়।
  • অরুণাচল প্রদেশ।
  • দক্ষিণ অসম।

সুন্দাল্যান্ড হটস্পটের অবস্থান ও এর জীববৈচিত্র্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রজাতির নাম লেখো।

সুন্দাল্যান্ড দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সুমাত্রা ও বোর্নিও এবং ভারতের নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে গঠিত। সুন্দাল্যান্ডের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রজাতি হল – সুন্দরী গাছ (উদ্ভিদ) অথবা ওরাংওটাং (প্রাণী)।

পৃথিবীর উষ্ণায়নের ফলে জীববৈচিত্র্যের যে ক্ষতি হচ্ছে তার চারটি উদাহরণ দাও।

অথবা, জলবায়ু পরিবর্তনে জীববৈচিত্র্য হ্রাস পাচ্ছে – ব্যাখ্যা করো।

অথবা, দূষণ জীববৈচিত্র্য হ্রাসের কারণ – ব্যাখ্যা করো।

অনুরূপ প্রশ্ন, বিশ্ব উষ্ণায়ন জীববৈচিত্র্যে কী প্রভাব ফেলবে তা উদাহরণসহ লেখো।

পৃথিবীর উষ্ণায়নের ফলে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতির 4টি উদাহরণ হল –

  1. অস্ট্রেলিয়ার সমুদ্র সংলগ্ন প্রবাল প্রাচীরের ক্ষতি এবং সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য হ্রাস।
  2. পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা 1°C-2°C বৃদ্ধির ফলে উত্তর মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যাওয়ায় আজ মেরু ভল্লুক খাদ্যের অভাবে সংকটাপন্ন, তেমনই সিন্ধুঘোটক, মেরু শেয়াল, পেঙ্গুইন প্রভৃতিও বিপদগ্রস্ত।
  3. বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি ম্যানগ্রোভ অরণ্যের ক্ষতি করছে।
  4. বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে বিভিন্ন মাছের প্রজাতি, ওয়ালরাস, পরিযায়ী পাখি, শামুক-ঝিনুকের প্রজাতি, উভচরেরা আজ বিপদের সম্মুখীন।
পৃথিবীর উষ্ণায়নের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত জীব
পৃথিবীর উষ্ণায়নের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত জীব

জলজ ও স্থলজ বাস্তুতন্ত্রে অবস্থিত স্থানীয় জীব-বৈচিত্র্যের ক্ষতিসাধন করে এমন একটি করে বহিরাগত প্রজাতির উদাহরণ দাও।

জলজ বাস্তুতন্ত্রে অবস্থিত স্থানীয় বৈচিত্রের ক্ষতিসাধনকারী বহিরাগত উদ্ভিদ প্রজাতি – কচুরিপানা।

স্থলজ বাস্তুতন্ত্রে অবস্থিত স্থানীয় বৈচিত্র্যের ক্ষতিসাধনকারী বহিরাগত প্রাণী প্রজাতি – আমেরিকান আরশোলা।

চোরাশিকার ভারতের প্রাণীবৈচিত্র্যের বিপন্নতার একটি প্রধান কারণ – যে যে কারণে এই চোরাশিকার ঘটে তার চারটি কারণ নির্ধারণ করো।

চোরাশিকারের চারটি কারণ হল –

  1. কিছু কিছু পশুর দেহ উপাদান যেমন – বাঘের চামড়া, হরিণ বা বুনো মোষের শিং ইত্যাদি গৃহসজ্জার নান্দনিক উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
  2. পশুর দেহজ উপাদান আয়ুর্বেদিক ওষুধের অনুপাত হিসেবে ব্যবহার করা হয়। যেমন – বাঘের হাড়, গন্ডারের খড়গ।
  3. বিভিন্ন প্রাণীর মাংস, যেমন – বুনো মোষ, হরিণ, বুনো শুয়োর ইত্যাদি খাদ্য হিসেবে চড়া দামে বিক্রয় হয়।
  4. চোরাশিকারের মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণ বেআইনি অর্থ সহজে রোজগার করা হয়।

মানুষের জনসংখ্যার অতিবৃদ্ধির কারণে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হয় এমন দুটি উদাহরণ দাও।

মানুষের জনসংখ্যার অতিবৃদ্ধির কারণে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হয় তা নীচের উদাহরণ দুটি থেকে বোঝা যায়।

অরণ্য বিনাশ –

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, সুমাত্রা প্রভৃতি দেশে পাম তেল উৎপাদনের বৃদ্ধির জন্য পাম গাছ চাষের উদ্দেশ্যে বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল কেটে ফেলা হয়েছে। এর ফলে ওরাংওটাং, সুমাত্রার হাতি, গন্ডার প্রভৃতির জীবের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়েছে।

অতিব্যবহার –

খাদ্য, চামড়া ইত্যাদি আহরণের উদ্দেশ্যে মানুষ জীববৈচিত্র্যের ওপর নির্ভরশীল। অতীতে রাশিয়ার স্টেলারস সিকাউ, প্যাসেঞ্জার পায়রা অত্যধিক শিকারের কারণে বিলুপ্ত হয়েছে। বর্তমানে সামুদ্রিক মাছের বিভিন্ন প্রজাতি মানুষের অতিরিক্ত আহরণের কারণে বিলুপ্তপ্রায়।

বহিরাগত প্রজাতির অনুপ্রবেশ ঘটলে স্থানীয় জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হয় – দুটি উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করো।

বিদেশ থেকে নতুন প্রজাতির জীবের অনুপ্রবেশ ঘটলে বা আমদানি করা হলে, দেশীয় দুর্বল প্রজাতিগুলি বহিরাগত প্রজাতিগুলির সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারে না ও অবলুপ্ত হয়। যেমন –

  1. জাহাজে আগত আমেরিকান আরশোলা (Periplaneta ameri-cana) দ্রুত ভারতীয় আরশোলা (Blatta orientalis) প্রজাতিকে বিনষ্ট করেছে।
  2. সৌন্দর্যবর্ধক হিসেবে কচুরিপানা গাছটিকে ব্রাজিল থেকে আনা হয়। কিন্তু খুব শীঘ্রই গাছটি তার হ্রস্বধাবক বা অফসেট দ্বারা বংশবিস্তার করে খালবিল নদীনালায় ভরে গেছে, ফলে অন্যান্য দেশীয় জলজ প্রজাতিগুলির বিলুপ্তি ঘটেছে।

জীববৈচিত্র্য চুক্তি (biodiversity treaty) কী?

1992 খ্রিস্টাব্দে ব্রাজিলের রিও ডি জেনেইরোতে যে বসুন্ধরা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, তাতে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের বা কনজারভেশন অফ বায়োলজিক্যাল ডাইভারসিটি (CBD) -এর জন্য 150টি দেশ ঐক্যমতের ভিত্তিতে একটি দলিলে স্বাক্ষর করে, যা বায়োডাইভারসিটি চুক্তি নামে পরিচিত।

আন্তর্জাতিক বায়োডাইভারসিটি চুক্তি বা CBD -এর গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য কী কী?

বায়োডাইভারসিটি চুক্তি নামক দলিলের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যগুলি হল –

  1. জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণ করা।
  2. জীববৈচিত্র্য থেকে প্রাপ্ত সম্পদ আহরণের দীর্ঘস্থায়ী বন্দোবস্ত করা।
  3. জিনগত সম্পদের পক্ষপাতহীন ব্যবহারের সুযোগের ব্যবস্থা করা।

সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্যের অবদান বা গুরুত্ব উল্লেখ করো।

সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্যের অবদান বা গুরুত্ব হল –

  1. এই অরণ্য সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলকে ভূমিক্ষয় থেকে রক্ষা করে।
  2. ঝড়ের প্রাবল্য থেকে নিকটবর্তী অঞ্চলকে রক্ষা করে।
  3. মানুষের অর্থনৈতিক চাহিদা পূরণ করে, যেমন – গৃহ নির্মাণের সামগ্রী, জ্বালানি, মধু ও ফল জোগান দেয়।

সুন্দরবনের কয়েকটি বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ ও প্রাণীর নাম লেখো।

সুন্দরবনের বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ হল – সুন্দরী, ক্যাওড়া (Sonneratia sp.) প্রভৃতি এবং বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী হল – রয়‍্যাল বেঙ্গল টাইগার, মেছোবিড়াল প্রভৃতি।

সুন্দরবন কোন কোন অঞ্চল জুড়ে অবস্থিত এবং এর ভৌগোলিক অবস্থান ও মোট আয়তন কত?

পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার এবং বাংলাদেশের খুলনা জেলার দক্ষিণ প্রান্ত জুড়ে সুন্দরবন অবস্থিত। এর ভৌগোলিক অবস্থান 21°32′ থেকে 21°55′ উত্তর অক্ষাংশে এবং 88°42′ থেকে 89°04′ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে। সুন্দরবনের মোট আয়তন প্রায় 9630 km²।

ক্ষুদ্র সবুজ তথ্য বই বা লিট্ল গ্রিন ডাটা বুক বলতে কী বোঝ?

বিশ্ব ব্যাংক প্রতিবছর পরিবেশ-সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য সংবলিত একটি বই প্রকাশ করে। একে ক্ষুদ্র সবুজ তথ্য বই (little green data book) বলে। এই বইয়ে পৃথিবীর বন ও জীববৈচিত্র্য, পরিবেশ ও স্বাস্থ্য, কৃষি প্রভৃতি প্রায় 50 টির অধিক বিষয়ে তথ্য প্রকাশিত হয়।

জীববৈচিত্র্য রক্ষা করার প্রস্তাব উপস্থাপন করো।

  1. কোনো অঞ্চলের বিপন্ন প্রাণীদের চিহ্নিত করা এবং তাদের প্রজনন, খাদ্য ও বাসস্থান সুনিশ্চিত করা।
  2. স্থানীয় উদ্ভিদ বিনষ্ট না করা, বনোন্নয়ন ও বৃক্ষরোপণ করা।
  3. স্থানীয় জনগণ ও সরকারের যৌথ উদ্যোগে বন পরিচালন করা ও বনজ উপাদানের পরিমিত ব্যবহার সুনিশ্চিত করা।

সুন্দরবনের যে দ্বীপগুলি জলে নিমজ্জিত তাদের নাম লেখো।

সুন্দরবনের নিমজ্জিত দ্বীপগুলি হল –

  • ঘোরামারা।
  • নিউ মুর দ্বীপ।
  • সুপারিভাঙা।
  • লোহাচারা।
  • বেডফোর্ড প্রভৃতি।

হটস্পট কী? উদাহরণ দাও।

হটস্পট –

পৃথিবীর যে বৃহত্তর অঞ্চলগুলিকে যথেষ্ট মাত্রায় জীববৈচিত্র্য থাকলেও তা মানুষ দ্বারা বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কাগ্রস্থ, তাদের জীববৈচিত্র্যের হটস্পট বা জীববৈচিত্রের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল বলে।

উদাহরণ –

পূর্ব হিমালয় ও সুন্দাল্যান্ড, পশ্চিমঘাট ও শ্রীলঙ্কা।

সুন্দরবন সমস্যা সমাধানে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?

  1. সমস্ত বনাঞ্চল সরকারী ব্যবস্থাপনার নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে।
  2. ম্যানগ্রোভ গাছের বৃক্ষরোপণ করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
  3. বাঘ ও অন্যান্য বন্য প্রজাতি সংরক্ষণে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

সুন্দরবনে ম্যানগ্রোভ বিনাশের কারণ কী?

সুন্দরবনে ম্যানগ্রোভ বিনাশের কারণগুলি হল –

  1. মানববসতি নির্মাণ ও জ্বালানির প্রয়োজনে ম্যানগ্রোভ কাটা হয়ে থাকে।
  2. প্রাকৃতিক ঝঞ্ঝা ম্যানগ্রোভ অরণ্য বিনাশ করে।
  3. দূষণ, বিশ্ব উষ্ণায়নজনিত জলতল বৃদ্ধির ফলে ম্যানগ্রোভ অরণ্য বিনষ্ট হচ্ছে।
  4. চিংড়ি চাষের জন্য নতুন জলাভূমি প্রস্তুতের উদ্দেশ্যে বহু ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ কাটা হয়ে থাকে।

সুন্দরবন উন্নয়নে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত বলে তুমি মনে করো?

অনুরূপ প্রশ্ন, সুন্দরবন বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ রক্ষা করার দুটি পদক্ষেপ প্রস্তাব করো।

সুন্দরবন উন্নয়নে যে সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত, সেগুলি হল –

  1. ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদের বনসৃজন ও আদি বাস্তুতন্ত্র বজায় রেখে বনজ উপাদানের পরিমিত ও সুসংহত ব্যবহার ও তার পুনর্নির্মাণের সুযোগ সৃষ্টি করা। ভারত ও বাংলাদেশ উভয়দেশের বিজ্ঞানী ও পরিবেশবিদেরা মিলিত হয়ে যৌথ উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ প্রয়োজন।
  2. স্থানীয় জনগণকে ওই বনাঞ্চল ও তার বন্যাপ্রাণের প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে সচেতন করা প্রয়োজন। বন্যপ্রাণ বিনাশের চরম পরিণতি সম্বন্ধে তাদের জ্ঞাত হতে হবে।
  3. সুন্দরবন অঞ্চলের নদীদূষণ ও মাটি দূষণ যথাসম্ভব কমিয়ে ফেলতে হবে।
  4. সুন্দরবনে পরিবেশ বিনাশ না করে কেবলমাত্র ইকোটুরিজমের ব্যবস্থা করতে হবে।

আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের পঞ্চম অধ্যায় “পরিবেশ, তার সম্পদ এবং তাদের সংরক্ষণ” অধ্যায়ের ‘জীববৈচিত্র্য এবং সংরক্ষণ‘ বিভাগের উপ-অধ্যায় ‘জীববৈচিত্র্যের গুরুত্ব, জীববৈচিত্র্যের হটস্পট, জীববৈচিত্র্যের হ্রাস ও সুন্দরবনের পরিবেশগত সমস্যা‘ -এর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বা আপনি যদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন তাহলে আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি যে এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জন যার এটি প্রয়োজন হবে তার সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

ভারতের পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলের সমভূমির তুলনা-

ভারতের পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলের সমভূমির তুলনা করো।

ভারতের পশ্চিম উপকূলীয় সমভূমি ও পূর্ব উপকূলীয় সমভূমি-

ভারতের পশ্চিম উপকূলীয় সমভূমি ও পূর্ব উপকূলীয় সমভূমি সম্বন্ধে আলোচনা করো।

ভারতের উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চল-

ভারতের উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চলের বিস্তারিত বিবরণ দাও।

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

ভারতের পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলের সমভূমির তুলনা করো।

ভারতের পশ্চিম উপকূলীয় সমভূমি ও পূর্ব উপকূলীয় সমভূমি সম্বন্ধে আলোচনা করো।

ভারতের উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চলের বিস্তারিত বিবরণ দাও।

ভারতের প্রাকৃতিক অঞ্চল রূপে মরু অঞ্চলের পরিচয় দাও।

দাক্ষিণাত্য মালভূমি অঞ্চলের ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।